478
Published on ফেব্রুয়ারি 22, 2015তিনি আরো বলেন, খালেদা জিয়া দাবি করেছেন, তারা গণতন্ত্রের জন্য আন্দোলন করছেন। কিন্তু তিনি গণতন্ত্রে বিশ্বাস করেন না। তিনি অবৈধভাবে ক্ষমতায় যেতে চান। তিনি একটি বিশেষ জায়গার দিকে তাকিয়ে আছেন। সেখান থেকে কেউ একজন এসে তাকে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় বসিয়ে দেবে। আমরা সংবিধানে সংশোধনী এনেছি। বর্তমান সংবিধান অনুযায়ী অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারীদের কঠোর শাস্তির সম্মুখীন হতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, অসাংবিধানিকভাবে ক্ষমতা দখলের পরিণতি প্রত্যেকের জানা আছে। জেনারেল জিয়া, জেনারেল এরশাদ, ফখরুদ্দিন ও মঈনউদ্দিন পরিণতি ভোগ করেছেন। তাই আমি বিশ্বাস করি, এখন আর কেউ এই আগুনের দিকে পা বাড়াতে আগ্রহী হবে না।
অমর একুশে ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে গতকাল বিকেলে রাজধানীর ফার্মগেটে বাংলাদেশ কৃষিবিদ ইনস্টিটিউটে আওয়ামী লীগ আয়োজিত এক আলোচনা সভায় ভাষণে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা এ আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন।
এতে আরো বক্তৃতা করেন আওয়ামী লীগ উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ ও সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, বিশিষ্ট সাংবাদিক ও কলামিস্ট রাহাত খান, আওয়ামী লীগ সভাপতিম-লী সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী, শেখ ফজলুল করিম সেলিম ও এডভোকেট সাহারা খাতুন, দলের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব-উল আলম হানিফ ও ডা. দীপু মনি, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমেদ হোসেন ও কৃষিবিদ আফম বাহাউদ্দিন নাছিম, ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এম এ আজিজ ও সাধারণ সম্পাদক মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, খাদ্যমন্ত্রী এডভোকেট কামরুল ইসলাম এবং আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আমিনুল ইসলাম আমিন।
আলোচনা সভা সঞ্চালনা করেন আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ ও উপ-প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক অসীম কুমার উকিল।
আলোচনা শুরুতেই জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, চার জাতীয় নেতা, মুক্তিযুদ্ধ ও ভাষা আন্দোলনের শহীদদের স্মরণে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বেগম খালেদা জিয়া যে আশা নিয়ে দেশের বিপুলসংখ্যক মানুষের সঙ্গে ছিনিমিনি খেলছেন তা কখনো পূর্ণ হবে না।
তিনি বলেন, ‘দুয়েকটি ককটেলে সরকার পতন হবে না। আমরা গণতন্ত্র ফিরিয়ে এনেছি এবং এটা রক্ষাও করবো।’
শেখ হাসিনা বলেন, বেগম খালেদা জিয়া যে প্রভুদের মাধ্যমে ক্ষমতায় যেতে চান তারা বিএনপির জালিয়াতি ও প্রতারনা সম্পর্কে বুঝতে পেরেছে। তাদের জালিয়াতি ও প্রতারনা দেশবাসীর কাছেও বর্তমানে পরিষ্কার হয়ে গেছে।
এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হরতাল-অবরোধের নামে জনগণের ওপর হামলা বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে অনেকেরই সহযোগিতা পায়নি। এরপরও এই দেশ অনেক এগিয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, আমরা যখন পদ্মা সেতু শুরু করি, তখন নানা প্রতিবন্ধকতা তৈরি করা হয়। সে সময় ষড়যন্ত্রকারীরা পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতির অপবাদ দিয়ে আমাকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেয়ার ষড়যন্ত্র করে। কিন্তু ষড়যন্ত্রকারীদের সেই আশা পূরণ হয়নি। তারা পদ্মা সেতু প্রকল্পে কোন দুর্নীতি প্রমাণ করতে পারেনি। আমরা বলেছিলাম নিজস্ব তহবিল থেকেই আমরা পদ্মা সেতু নির্মাণ করবো, ইনশাআল্লাহ আমরা আমাদের কথা রাখবো।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সুদখোর ও ঘুষখোরের মাধ্যমে দেশের অনেক মানুষের পরিবর্তন হয়নি। তবে আওয়ামী লীগ সেই দল যার মাধ্যমে বহু মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন এসেছে।
বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাসী ও জঙ্গি তৎপরতার নিন্দা করে তিনি বলেন, তারা স্বাধীনতা যুদ্ধের সময়ের হানাদার বাহিনীর কায়দায় গণহত্যা চালাচ্ছে।
শেখ হাসিনা বলেন, তাদের তথাকথিত আন্দোলনের প্রতি কোন গণসমর্থন নেই। ফলে খালেদা জিয়া পাকিস্তানী দখলদার বাহিনীর কায়দায় গণহত্যা শুরু করেছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারা একই কায়দায় ২০১৩ সালে নির্বাচন প্রতিহত করার নামে নৈরাজ্য চালায়। সে সময় ৫৫ বাস ও ট্রাক ড্রাইভার বিএনপি-জামায়াতের দুষ্কৃতিকারীদের হাতে নিহত হয়। এমনকি তাদের হামলা থেকে গবাদি পশু বহনকারী ট্রাকও রেহাই পায়নি।
শেখ হাসিনা বলেন, পুড়িয়ে মানুষ হত্যার মতো ঘৃণ্য কাজ আর কিছু হতে পারে না। কেন সাধারণ মানুষের প্রতি এ ধরনের হামলা করা হচ্ছে। বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাসীরা এমনকি গর্ভবতী মহিলাদেরও ছাড় দিচ্ছে না বলে তিনি উল্লেখ করেন।
বেগম জিয়ার সঙ্গে আইএসআই এবং আইএসের সঙ্গে সম্পর্ক রয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, হরতাল-অবধের নামে দেশের সাধারণ মানুষের ওপর এর চেয়ে নির্দয় ও নির্মম নির্যাতন আর কিছু হতে পারে না। পুড়িয়ে মানুষ হত্যা করে দিয়ে তিনি কোন ধরনের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে চান- প্রধানমন্ত্রী প্রশ্ন করেন।
শেখ হাসিনা বলেন, যারা মানুষ পুড়িয়ে মারছে, অবশ্যই তাদের শাস্তি পেতে হবে। তিনি বলেন, আমরা বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের বিচার করেছি, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চলছে এবং জাতিকে কলঙ্কমুক্ত করার মাধ্যমে এটি শেষ হবে।
তিনি বলেন, যারা আন্দোলনের নামে মানুষ হত্যা করছে, একইভাবে তাদের অবশ্যই বিচার হবে। প্রধানমন্ত্রী পেট্রোল বোমা হামলায় জড়িত দুষ্কৃতকারীদের গ্রেফতারে সহায়তার জন্য জনগণের প্রতি আহ্বান জানান।
শেখ হাসিনা শহীদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানান। তিনি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। তিনি বলেন, মহান ২১ শে প্রতিটি বাঙালির জীবনে শোক, শক্তি ও গৌরবের প্রতীক। এটি আমাদের গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ, বাঙালি জাতীয়তাবাদ, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা এবং ধর্মনিরপেক্ষতার প্রতীক।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, মহান ২১ শে’র গৌরব এখন বাংলাদেশের সীমা ছাড়িয়ে বিশ্বের ১৯৩টি দেশে মানুষের হৃদয়ে প্রতিধ্বনিত হচ্ছে।
তিনি বলেন, মহান ২১শে এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনার আলোকে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়ায় ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানান।
ছবিঃ ইয়াসিন কবির জয়