515
Published on ফেব্রুয়ারি 17, 2015প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি দেশের সব সচেতন মানুষ, বিশেষ করে যারা দেশের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে, তাদের দুর্বৃত্তায়নের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হতে আহ্বান জানাচ্ছি। মানুষ হত্যা ও লাশ নিয়ে খালেদা জিয়াকে রাজনীতি বন্ধ করার কথাটুকু বলার জন্যও আমি সকলের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।
প্রধানমন্ত্রী আজ সকালে জাতীয় যাদুঘরে ‘বিএনপি-জামায়াতের অগ্নি সন্ত্রাস - লুণ্ঠিত মানবতা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় এ আহ্বান জানান।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় প্রচার ও প্রচার উপ-কমিটির আয়োজনে এ অনুষ্ঠানে এ কমিটির চেয়ারম্যান প্রধানমন্ত্রীর রাজনীতি বিষয়ক উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম সভাপতিত্ব করেন।
এতে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম ও প্রচার সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বক্তৃতা করেন। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন দলের সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক আসাদুজ্জামান নূর।
অনুষ্ঠানে বিএনপি-জামায়াত চক্রের চলমান নির্মম সন্ত্রাসে চৌদ্দগ্রামে বাসে পেট্রোল বোমা হামলায় কন্যাসহ নিহত নূরুজ্জামান পপলুর স্ত্রী মাফরুহা বেগম, যাত্রাবাড়ীতে পেট্রোল বোমা হামলায় নিহত নূর আলমের স্ত্রী চম্পা বেগম, যাত্রাবাড়ীতে অগ্নিদদ্ধ হয়ে নিহত মা ও ছোট ভাই হারা মোহাম্মাদ সুমন এবং শ্যামলীতে ককটেল হামলায় গুরুতর আহত পুলিশ সার্জেন্ট গোলাম মাওলা তাদের যন্ত্রনা ও কষ্টের কথা বলেন।
সভায় মন্ত্রীবর্গ, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টাবৃন্দ, সংসদ সদস্যবৃন্দ, কূটনীতিক ও বিভিন্ন বিদেশী মিশনের প্রধানগণ, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও শিক্ষকবৃন্দ, গণমাধ্যমের সম্পাদকবৃন্দ ও সিনিয়র আইনজীবীগণ উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানের শুরুতে গত দেড় মাসে বিএনপি-জামায়াতের নৃশংসতা ও অগ্নিসন্ত্রাসের ওপর একটি প্রামাণ্য চিত্র প্রদর্শিত হয়।
শেখ হাসিনা অনুষ্ঠানে এই প্রামাণ্য চিত্র দেখে এবং বিএনপি-জামায়াত চক্রের নিষ্ঠুর সন্ত্রাসের শিকার অগ্নিদগ্ধদের মর্মস্পর্শী করুণ বক্তব্য শুনে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। তাঁকে বার বার রুমাল দিয়ে অশ্রুজল মুছতে দেখা গেছে।
প্রমাণ্য চিত্রের দৃশ্য দেখে ও অগ্নিদগ্ধদের মর্মস্পর্শী বক্তব্যে অনুষ্ঠানে উপস্থিত অন্যদেরও কাঁদতে দেখা গেছে।
তাঁর সরকার জনগণের জানমাল রক্ষায় প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ নেবে একথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বিএনপি-জামায়াত চক্রের নৃশংস ও নির্মম সন্ত্রাস বন্ধে সবার সহযোগিতা কামনা করেন।
তিনি বিএনপি-জামায়াতের তথাকথিত আন্দোলনকে আবারো সন্ত্রাস ও জঙ্গী কর্মকান্ড হিসেবে অভিহিত করে বলেন, এদেশে জঙ্গী ও সন্ত্রাসীদের কোন ঠাঁই নেই। পেট্রোল বোমা দিয়ে মানুষ হত্যাকারীদের কর্মকান্ড রাজনীতি হতে পারে না। এটা সম্পূর্ণভাবে সন্ত্রাস ও জঙ্গী তৎপরতা।
প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা আবেগঘন কণ্ঠে বলেন, রাজনীতিবিদরা সাধারণ মানুষের জন্য রাজনীতি করেন। যদি মানুষই হত্যা করা হয়, তবে রাজনীতি কার জন্য।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারা সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদী তৎপরতা চালাচ্ছে। বাংলাদেশের জনগণ ও রাষ্ট্র জঙ্গীবাদ ও সহিংসতার কাছে নতি স্বীকার করতে পারে না। তারা জনসমর্থন লাভে ব্যর্থ হয়ে জনগণের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নিচ্ছেন।
তিনি বলেন, দেশ যখন আর্থ-সামাজিক সূচকে শান্তিপূর্ণভাবে এগিয়ে যাচ্ছে, তখন কার স্বার্থে এবং কোন্ উদ্দেশ্যে এই বাধার সৃষ্টি করা হচ্ছে। কোনো রক্ত-মাংসের মানুষ এ ধরনের হিং¯্র ও নিষ্ঠুর কর্মকান্ড বরদাশত করতে পারে না। যারা মানুষ পুড়িয়ে হত্যা করছেন, তাদের বিচার সর্বশক্তিমান আল্লাহ নিশ্চয়ই করবেন।
পিনপতন নিস্তব্ধতায় প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি-জামায়াত দুর্বৃত্তদের হাতে নিহত এই হতভাগ্য মানুষগুলো সম্পূর্ণভাবে নিরাপরাধ। তারা অবশ্যই শহীদ হিসেবে স্বীকৃতি পাবে।
ভাষণের শুরুতে প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রামাণ্যচিত্র দেখে এবং বিএনপি-জামায়াতের বিবেকহীন সহিংসতায় ক্ষতিগ্রস্ত ও অগ্নিদগ্ধদের মর্মান্তিক কাহিনী শোনার পর বক্তব্য রাখার মানসিক অবস্থা নেই।
তিনি বলেন, বিএনপি-জামায়াত জোটের ছড়িয়ে দেয়া নৃশংস ও অমানবিক সহিংসতা তাকে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময়ের পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর ধ্বংসযজ্ঞকেই স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের জনগণ কখনোই ১৯৭১ সালের পর এ ধরনের হিং¯্রতা প্রত্যক্ষ করেনি এবং বিশ্বের মানুষও একটি বিবেকবর্জিত রাজনৈতিক দলের অপকর্মের কথা শুনেনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ অতীতে জনগণকে সম্পৃক্ত করে, আন্দোলন করেছে, মানুষ হত্যা করে নয়। ‘আমরা জনগণের কল্যাণে রাজনীতি করি।’
শেখ হাসিনা বরেন, পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, মৃত্যুর পর পাপীদের দোযখে পাঠানো হবে। ‘তবে যারা মানুষকে পুড়িয়ে মারছে- তারা আল্লাহর বিচারের ভার নিজেরাই নিয়ে নিয়েছেন।’
প্রধানমন্ত্রী প্রশ্ন তুলে বলেন, কেন এই হত্যাকা- এবং কেন মানুষকে পুড়িয়ে মারা হচ্ছে। কেন মৃত্যুর আগেই মানুষকে দোযখের ভয়াবহ যন্ত্রনা ভোগ করতে হবে?
নিরীহ লোকদের হত্যা করে কি লাভ? দেশের অর্থনীতি ধ্বংসের মাধ্যমে বিএনপি-জামায়াত কি অর্জন করতে চায়? মানুষের জীবনযাত্রা ব্যহত করে তারা কার প্রতি প্রতিশোধ নিতে চায় ?
তিনি বলেন, জামায়াত ইসলামের নামে রাজনীতি করছে। তারা নিরীহ লোকদের শাস্তি দিচ্ছে, আল্লাহ কি তাদের সেই অধিকার দিয়েছে, তারা কি আল্লাহর চেয়েও শক্তিশালী ? এর অর্থ হলো তারা ধর্মে বিশ্বাস করে না এবং তারা জনগণের সঙ্গে ভাওতাবাজি করছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি-জামায়াতের নৃশংস ও অমানবিক সহিংসতায় যারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে- তাদের তো কোন দোষ নেই। কোভাবেই নিরীহ লোকদের পুড়িয়ে মারা গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। তিনি জনগণকে সোচ্চার হওয়ার এবং এ ধরনের জঘণ্য কার্যক্রমে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, তাঁর দল জনগণকে রক্ষার জন্য রাজনীতি করে। অপরদিকে খালেদা জিয়া অব্যাহত মানুষ হত্যা করছেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দয়া করে আমাদের এক পর্যায়ে ফেলবেন না। আমি রাজনীতি নিজের জন্য করি না, কোন চাওয়া-পাওয়া নেই আমার।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি মর্মযাতনা ও দুঃখবোধ করছি তাদের জন্য যারা বিএনপি-জামায়াতের নির্মমতার শিকার। এই দেশের মানুষের জন্য তিনি তার আপন ঘনিষ্ঠজনদের হারিয়েছেন। তিনি বলেন, বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাসে ক্ষতিগ্রস্তদের মৃত্যু-যন্ত্রণা নিয়ে বেঁচে থাকতে হবে।
তিনি বলেন, বিএনপি জামায়াতের নৃশংসতায় অনেক মা তাদের শিশু হারিয়েছেন, অনেক স্ত্রী তাদের স্বামী হারিয়েছে, অনেক শিশু তার মা ও বাবাকে হারিয়েছে। কেন নিরীহ লোকদের হত্যা করা হবে এবং কেন তাদের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলা হচ্ছে। কি তাদের অপরাধ ?
শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি-জামায়াত জোট ৫ জানুয়ারির নির্বাচন প্রতিরোধে সন্ত্রাসী কার্যক্রমে আইন-শৃংঙ্খলা বাহিনীর ২০ জন সদস্যসহ ২শ’র মতো লোককে পেট্রোল বোমা ও অন্যান্য সহিংসতায় হত্যা করেছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারা শত শত গাড়ি জ্বালিয়ে দিয়েছে এবং সড়কের পাশের হাজার হাজার গাছ উপড়ে ফেলেছে। তারা ছোট দোকান, সরকারি ও বেসরকারি স্থাপনা এবং বিদ্যুৎ কেন্দ্রে হামলা চালিয়েছে।
তিনি বলেন, বিএনপি-জামায়াতের দুর্বৃত্তরা মসজিদ, মন্দির, প্যাগোডা ও চার্চে ভাংচুর করেছে এবং পবিত্র কোরআনের কয়েক’শ কপি পুড়িয়ে দিয়েছে।
তিনি বলেন, নির্বাচনের দিনে তারা প্রিজাইডিং অফিসারসহ ২৬ ব্যক্তিকে হত্যা করে এবং দেশব্যাপী ৫৮২টি স্কুল পুড়িয়ে দিয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি-জামায়াত জোট চলতি বছরের ৫ জানুয়ারি পর থেকে পুনরায় একই ধরনের সহিংসতা শুরু করেছে।
শেখ হাসিনা বলেন, তারা ৪০০’র বেশি গাড়ি ও ২৮টি স্থাপনায় আগুন দিয়েছে এবং রেলওয়ে ও নৌপথে ২৮টি নাশকতার ঘটনা ঘটেছে।
এর আগে জাতীয় যাদুঘরের নিচ তলায় বিএনপি-জামায়াতের ভয়াবহ অপকর্মের ফটো প্রদর্শনী প্রত্যক্ষ করেন প্রধানমন্ত্রী।
ছবিঃ ইয়াসিন কবির জয়