603
Published on ফেব্রুয়ারি 14, 2015শেখ হাসিনা বলেন, জনগণ সকল ক্ষমতার উৎস। ফলে মানুষ হত্যাকারী,সাধারন নিরিহ মানুষকে নির্যাতনকারীদের বিরুদ্ধে জনমত গঠনে তিনি আলেম উলেমা ও সুফীদের প্রতি আহ্বান জানান।
প্রধানমন্ত্রী আজ রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত আন্তর্জাতিক সুফী সম্মেলন-২০১৫ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে এই আহ্বান জানান।
বাংলাদেশে এই প্রথমবারের মতো ‘সুফীবাদ বিশ্ব শান্তির একমাত্র পথ’ এই শ্লোগান নিয়ে বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশন (বিটিএফ) দিনব্যাপী এই সম্মেলনের আয়োজন করে।
বিটিএফ’র সভাপতি আলহাজ সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারি এমপি’র সভাপতিত্বে সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন বিটিএফ’র সেক্রেটারি জেনারেল লায়ন এম এ আওয়াল এমপি, বিটিএফ’র আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক সৈয়দ তায়াবুল বাশার মাইজভান্ডারি, বাংলাদেশে কূটনৈতিক কোরের ডীন শের মোহাম্মদ মিনহাজুল কোরআন ইন্টারন্যাশনালের প্রতিনিধি আফজাল হোসেন সাঈদী, দরগা-ই-নিজাম উদ্দিন ফাউন্ডেশনের প্রতিনিধি সৈয়দ নাজিম আলী নিজামি এবং ভারতের আজমীরের খাজা মঈনউদ্দিন চিশ্তি ফাউন্ডেশনের সেক্রেটারি জেনারেল খাজা ওয়াহিদ হোসেন চিশ্তি, সম্মেলনের আহ্বায়ক ড. সৈয়দ রেজাউল হক চাঁদপুরী শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন।
ভারত, জামার্নী, ইংল্যান্ড, রাশিয়া ও বাংলাদেশসহ দেশী-বিদেশী ইসলামিক চিন্তাবিদ এই সম্মেলনে যোগ দেন।
প্রধানমন্ত্রী ইসলামকে শান্তি ও সম্প্রীতির ধর্ম হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, এটি একটি দুর্ভাগ্যের বিষয়। বাংলাদেশে মানুষ হয়ে মানুষ হত্যা করছে। তিনি বলেন, তথাকথিত আন্দোলনের নামে নারী ও শিশুসহ নিরীহ মানুষদেরকে পেট্রোল বোমা দিয়ে হত্যা করা হচ্ছে। এতে জনমনে আতংক সৃষ্টি হচ্ছে।
তিনি বলেন ,আমি জানি না, একজন মুসলমান কি করে মানুষ হত্যা করতে পারে।
শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি-জামায়াত ইসলামের নামে রাজনীতি করছে। কিন্তু আমি যখন দেখি তাদের ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপ থেকে মসজিদও রক্ষা পায় না তখন বিষ্মিত হই। এর চেয়ে আর জঘণ্য কোন কাজ হতে পারে না। বিএনপি-জামায়াত পবিত্র কোরআন শরীফ আগুন দিয়ে পুড়িয়ে অবমাননা করেছে। তারা শত শত কোরআন শরীফ আগুন দিয়ে পুড়িয়েছে। এ ধরনের কোরআন পোড়ানোর ঘটনা ইসলামের ইতিহাসে আর নেই।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যাচ্ছে। জনগণ যখন শান্তিতে বসবাস করছে তারা আস্থা ফিরে পেয়েছে, ঠিক সে মুহূর্তে বিএনপি-জামায়াত কোন কারণ ছাড়াই আবার মানুষ হত্যা করছে।
শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি-জামায়াত পেট্রোল দিয়ে নির্মমভাবে মানুষ পুড়িযে মারছে। আমার জিজ্ঞাসা এই সকল নিরীহ মানুষ কি অপরাধ করছে এবং তারা এ ধরনের জঘণ্য কাজ করে কি পেয়েছে ?
শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি-জামায়াত তাদের নিজেদের ধর্মের লোকদেরকেও ছাড় দিচ্ছে না। এমনকি তারা মহানবী হযরত মুহম্মদ (সা.) এর নির্দেশও মানে না।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা পবিত্র কোরআনে শিখেছি, অপকর্মের জন্য মৃত্যুর পর তাদের কঠিন সাজা হবে। কিন্তু বিএনপি-জামায়াত মানুষদেরকে পুড়িয়ে মেরে মৃত্যুর আগেই শাস্তি দিচ্ছে।
শেখ হাসিনা মাশায়েখ-সুফিদের উদ্দেশে বলেন, তিনি বুঝতে পারছেন না, একজন মুসলমান কি করে অপর একজন মুসলমানকে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে মারতে পারে। এ ধরনের জঘণ্য অপরাধের বিচারের ভার আমি আপনাদের হাতে ছেড়ে দিলাম।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজকের সম্মেলনে আগত আলেম-ওলামা ও সুধীদের আন্তরিক ধন্যবাদ জানানোর পাশাপাশি তারা যেনো প্রত্যন্ত এলাকায় গ্রামের লোকদের সামনে এই বিষয়টি তুলে ধরেন যে, ‘আমরা এ ধরনের মৃত্যু পুনরায় দেখতে চাই না।’
তিনি বলেন, ‘হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে আমরা যে নির্মমতা ও বর্বরতা দেখেছি তা সহ্য করা যায় না।’
এ সম্পর্কে শেখ হাসিনা বলেন, শুধু বাংলাদেশেই নয়- দেশের বাইরেও এ ধরনের বর্বরতার বিরুদ্ধে তিনি সোচ্চার এবং এর প্রতিবাদ জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ভাষণে তিনি ইসরাইলী আগ্রাসন এবং শিশু ও নারীসহ নিরীহ ফিলিস্তিনীদের ওপর নৃশংসতার বিষয় তুলে ধরেছেন।’
শেখ হাসিনা বলেন, যারা সন্ত্রাসী ও জঙ্গীদের সন্ত্রাসী জঙ্গী কার্যক্রম ছড়িয়ে দিয়েছেন- ‘তাদের কোনো ধর্ম ও সীমান্ত নেই। তারা সংখ্যায় অতি কম, তাদের অপকর্মের কারণে ইসলাম কলঙ্কিত হচ্ছে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে আন্দোলনের নামে যা ঘটছে তা অত্যন্ত দুঃখজনক ও বেদনাদায়ক। ‘ব্যক্তিগত স্বার্থে কেনো বিএনপি-জামায়াত এ ধরনের বর্বরতা ছড়িয়ে দিচ্ছে।’
শেখ হাসিনা বলেন, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের নামে বেগম খালেদা জিয়া অর্থ সংগ্রহ করেছেন, তবে একটি পয়সাও তিনি এতিমদের জন্য খরচ করেননি এবং এই অর্থ তসরুফ করেছেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, গত তত্ত্বাবধাযক সরকার খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করে। এই মামলার বিচার কার্যক্রম চলছে। তবে খালেদা জিয়া এই মামলার মোকাবেলা করতে ভয় পাচ্ছেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘সততা ও আত্মবিশ্বাস নিয়ে খালেদা জিয়াকে এই মামলার মোকাবেলা করতে হবে। মামলার মোকাবেলার পরিবর্তে তিনি এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি করছেন যাতে দেশের গণতন্ত্র ও দেশের মানুষ শেষ হয়ে যায়। তিনি কেবল তার চোরাই অর্থ রক্ষা করতে চান।’
তিনি বলেন, অপরদিকে জামায়াতের সন্ত্রাসীরা যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষার জন্য নিরীহ লোকদের হত্যা করছে। মানবতার বিরুদ্ধে আটক অপরাধীদের বিচার চলছে।
তিনি বলেন, তারা শিরশ্ছেদ করছে, যে কোনো ইসলামিক দেশেই তারা এ ধরনের অপরাধ কর্মকা- চালাতে পারে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ৫ জানুয়ারির নির্বাচন বানচার করতে বিএনপি-জামায়াত ২শ’র বেশি লোককে হত্যা করেছে। হরতাল ও অবরোধের নামে গত দেড় মাসে তারা প্রায় একশ’ লোক হত্যা করেছে।
ইসলামের কল্যাণে আওয়ামী লীগ সরকারের গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ইসলাামিক ফাউন্ডেশন ও মাদ্রাসা বোর্ড গঠন করেছেন এবং তার বর্তমান সরকার গত ৬ বছরে ইসলামিক শিক্ষা ও আদর্শের প্রসারে ব্যাপক কার্যক্রম বাস্তবায়ন করেছে।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘তাঁর সরকার প্রতিটি উপজেলায় অন্তত একটি মডেল মসজিদ নির্মাণের পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে এবং প্রতিটি স্কুলে একজন ধর্মবিষয়ক শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হবে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে গঠিত সরকার সবসময়ই সুফী, আলেম-ওলামা ও মাশায়েখদের মার্যদা ও সম্মান জানিয়ে আসছে।
এ প্রসঙ্গে তিনি উল্লেখ করেন যে, বিমানবন্দর, ব্রিজ ও সড়কসহ দেশের প্রধান স্থাপনার নামকরণ ধর্মীয় চিন্তাবিদদের নামে করা হচ্ছে।