486
Published on ফেব্রুয়ারি 9, 2015চলমান সহিংস অবরোধ কর্মসূচির কারণে অধিকাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই শিক্ষাকর্ম ব্যাহত হচ্ছে প্রবলভাবে, ঠিকমতো ক্লাস অনুষ্ঠিত হতে পারছে না, যার ফলে পরীক্ষাসমূহও পিছিয়ে যাচ্ছ। তদুপরি, কচিকাচা শিক্ষার্থীরা যথাযথ প্রস্তুতি নিতে পারছে না, তাদের উপরও পড়ছে মাত্রাতিরিক্ত মানসিক চাপ।
দেশের ১৫ লাখ কোমলমতি শিক্ষার্থীদের অভিভাবক ও শিক্ষামন্ত্রীর সনির্বন্ধ অনুরোধ অন্ধভাবে উপেক্ষা করে এবছরের মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষার মাত্র দুইদিন আগে চলমান অবরোধ প্রত্যাহারের পরিবর্তে দেশব্যাপী ৭২ ঘণ্টার অযৌক্তিক হরতালের ঘোষণা দেয়। এর প্রেক্ষিতে সরকার পরীক্ষার সময়সূচিতে পরিবর্তন আনলে এই জোট আবারও পাঁচদিনের একটানা হরতাল ডেকে দেয়, যাতে ইংরেজি ১ম পত্র ও ইংরেজি দ্বিতীয় পত্রের পরীক্ষার সময়সূচিও পড়ে। ফলতঃ সকল পরীক্ষার্থী ও অভিভাবকগণ উৎকণ্ঠায় থাকেন আবারও পরীক্ষাকালীন সময়ে অবরোধের ব্যাপ্তী বাড়াবার ঘোষণা আসে কিনা। তবে, সকল বাধা কাটিয়ে শেষপর্যন্ত এসএসসি ও সমমানের দুটি পেপারের পরীক্ষা কড়া নিরাপত্তায় শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হয়।
পরীক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মনের ভয় দূর করতে পুলিশ কেন্দ্রগুলো পাহারা দেয় ও র্যাপবের সদস্যরা সকল রাস্তা, সড়ক ও গলিতে সদাসতর্ক থাকে। মিডিয়ার প্রতিবেদন অনুযায়ী, সরকার ৩২৬ প্লাটুন বিজিবি (প্রায় ১০,০০০) সদস্য নামিয়েছিল দেশব্যাপী শিক্ষার্থীদেরকে নিরাপত্তা দিতে।আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার পরীক্ষার আগামী দিনগুলোতেও সর্বোচ্চ স্তরের নিরাপত্তা বিধান করার ব্যাপারে জনগণকে আশ্বস্ত করেছে।
বিএনপি-জামাতের বর্বর কর্মীদের হাতে রক্ষা পাচ্ছে না পাঠ্যবইও
এখন বিএনপি জামাতের অবরোধকারীদের লক্ষ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পাঠ্যপুস্তক। প্রাক-প্রাথমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের ৩৮,০০০টি পুস্তক বহনকারী একটি ট্রাক ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া উপজেলা দিয়ে যাবার সময় বোমা হামলার শিকার হয় গত ৯ ফেব্রুয়ারী, ফলে প্রায় সকল পুস্তকই নষ্ট হয়ে যায়।
বিভিন্ন মিডিয়ার প্রতিবেদনে প্রকাশিত শুকতারা ট্রান্সপোর্ট এজেন্সীর ব্যবস্থাপক ফরিদ হোসেন এর বক্তব্যে জানা যায় ঢাকার একটি ছাপাখানা থেকে ৩৭,৮০৮টি পুস্তক নিয়ে ট্রাকটি যাচ্ছিল। লক্ষ্মীপুরের উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছিল ভোর চারটা নাগাদ। পুস্তকগুলো রায়পুর, রামগাতি এবং কামালনগর উপজেলার শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিনামূল্যে বিতরণের জন্য নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল।ভোর ৫টা নাগাদ যখন তা গজারিয়া উপজেলার জামালদি বাসস্টপে পৌঁছে এর প্রতি একটি পেট্রোল বোমা ছুঁড়ে মারা হয় যা বিস্ফোরিত হয়নি, এরপর আরেকটি পেট্রোল বোম ছুঁড়ে মারলে ট্রাকটিতে আগুন লেগে যায়।
আগুন লেগেছিল ১০ শতাংশ পুস্তকে কিন্তু অগ্নিনির্বাপনের জন্য পানি নিক্ষেপের ফলে বাকি সকল পুস্তকও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ছাপাখানাগুলোর ১৬ জানুয়ারীর মধ্যে সকল উপজেলায় প্রাক-প্রাথমিক পর্যায়ের পাঠ্যপুস্তক পৌঁছে দেবার কথা ছিল, কিন্তু অব্যাহত অবরোধের কারণে কিছুস্থানে সময়রক্ষা হয়নি।
২০১৪ জুড়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিএনপি-জামাতের নাশকতা
৫৬৮টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ৮০,০০০ এর অধিক শিক্ষার্থীর বেশ কিছুদিন পোড় ধ্বংসাবশেষের মাঝেই ক্লাস করতে হয়, কারণ তাদের বিদ্যালয়গুলো গত ৫ জানুয়ারীর নির্বাচনের আগে বিএনপি-জামাতের কর্মীরা পুড়িয়ে লণ্ডভণ্ড করে দিয়ছিল।
সরকারী তথ্য মতে, এর মধ্যে ৪৪৩টি ছিল প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং ১১৩টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় যার মধ্যে রয়েছে কিছু মাদ্রাসাও বাকিগুলো কলেজ। প্রায় ২০টি জেলার এই প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রায় প্রতিটিতেই নির্বাচন কেন্দ্র স্থাপিত হয়েছিল।
পরবর্তীতে, সরকার তৃণমূল পর্যায়ের প্রতিবেদন থেকে ক্ষয়ক্ষতির ব্যাপ্তী ও আনুমানিক সংস্কার ব্যয় পরিমাপ করে এবং দগ্ধ ও ভাংচুরকৃত বিদ্যালয়গুলো মেরামত করে।