বিএনপি-জামাতের কর্মকান্ড রাজনীতির পর্যায়ে পড়ে নাঃ প্রধানমন্ত্রী

604

Published on জানুয়ারি 14, 2015
  • Details Image

তিনি রংপুরের মিঠাপুকুরে মঙ্গলবার একটি বাসে পেট্রোল বোমা হামলা চালিয়ে শিশুসহ চারজন লোকের হত্যাকাণ্ডের ঘটনার উল্লেখ করে বলেন, বিএনপি ও জামায়াত মানুষকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করছে এবং স্কুল ছাত্রছাত্রী ও শিক্ষকও তাদের হামলার শিকার হচ্ছে।

শেখ হাসিনা বলেন, তাদের কর্মকান্ড কোন রাজনীতির পর্যায়ে পড়ে না। অথচ তারা সর্বোচ্চ সন্ত্রাসী কর্মকান্ড করে যাচ্ছে। তিনি বলেন, এভাবে সাধারণ মানুষকে হত্যা করার নিন্দা জানানোর ভাষা আমার নেই।

তিনি এ ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকান্ড থেকে বিরত থাকতে বিএনপি’র প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, অন্যথায় সরকার জনগণের যানমালের নিরাপত্তায় আরো কঠোর ব্যবস্থা নেবে।

প্রধানমন্ত্রী সন্ত্রাসী ও জঙ্গিদের কবল থেকে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে রক্ষা করতে এগিয়ে আসতে জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, বছরের শুরুতেই বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে শিক্ষার্থীদের শিক্ষা জীবন ধ্বংস হতে চলেছে।

তিনি বলেন, আমরা শিক্ষা বছরের প্রথম দিনে সকল শিক্ষার্থীর হাতে বই তুলে দিয়েছি। আর বিএনপি-জামায়াত শিক্ষা বছরের শুরুতেই লাগাতার অবরোধ কর্মসূচি দিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে হতাশার সৃষ্টি করেছে। বিএনপি-জামায়াত পবিত্র ঈদ-ই-মিলাদুন্নবীর দিনেও হরতাল ডেকেছে এবং বিশ্ব ইজতেমার সময়ে অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। তারা নিজেদেরকে ধর্মের নামে রাজনীতি করার দাবি করে উল্লেখ করে এ ধরনের নির্মমতার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে তিনি দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানান।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী এড. মোস্তাফিজুর রহমান এমপির সভাপতিত্বে ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত এই অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে মন্ত্রণালয়ের সচিব আখতার হোসেন এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক মোহম্মদ আলমগীর বক্তব্য রাখেন।

প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানে ক্রীড়া, সাংস্কৃতিক ও অন্যান্য বিষয়ে আন্তঃস্কুল প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ করেন। এ ছাড়া তিনি ২০১৪ সালে প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়নে বিশেষ অবদান রাখায় সেরা বিদ্যালয়, সরকারি কর্মকর্তা, নির্বাচিত প্রতিনিধি, ইনস্ট্রাকটর, শিক্ষক, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের কর্মচারীদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ করেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, তাঁর সরকার দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গঠনের প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছে, যা একটি শিক্ষিত সমাজ ছাড়া বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয়।

তিনি বলেন, শিক্ষা হচ্ছে মানুষের মৌলিক অধিকার। একটি শিক্ষিত জনগোষ্ঠীর তৈরির মূল্য ভিত্তি হচ্ছে মানসম্মত ও যুগোপযোগী প্রাথমিক শিক্ষা।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বর্তমান সরকার ছেলে-মেয়ে উভয়কে শিক্ষিত করার ওপর সমান গুরুত্ব দিয়েছে। কারণ, নারীদের শিক্ষা বঞ্চিত করে কোনো জাতি উন্নতি করতে পারে না।

তিনি বলেন, স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধুর নেয়া পরিকল্পনা যথাযথাভাবে বাস্তবায়িত হলে বাংলাদেশ আজ পরিপূর্ণভাবে শিক্ষিত জাতিতে পরিণত হতো।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিপুল আত্মত্যাগের মধ্যদিয়ে বাংলাদেশের মতো স্বাধীনতা অর্জনকারী একটি দেশের আরো সমৃদ্ধ হওয়া উচিত ছিলো । কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে ১৯৭৫ সালের পর ২১ বছর ধরে উন্নয়নের বিভিন্ন ক্ষেত্রে দেশ পিছিয়ে পড়ে। বিএনপি ও বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ৭ বছরেও দেশ এগিয়ে যেতে পারেনি।

প্রাথমিক শিক্ষার সঙ্গে সম্পৃক্ত কর্মকর্তা, শিক্ষক ও কর্মচারীদের ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, জাতিসংঘের ২০১৫ সালের মধ্যে সবার জন্য শিক্ষা নিশ্চিত করার ঘোষণা থাকলেও বাংলাদেশে ২০১১ সালের মধ্যে শতভাগ শিশুর বিদ্যালয়ে ভর্তি নিশ্চিত হয়েছে। প্রাথমিক শিক্ষার প্রতি সরকারের গুরুত্ব প্রদান এবং সকল কর্মকর্তা, শিক্ষক ও কর্মচারীদের আন্তরিক সেবার জন্য এ লক্ষ্য অর্জন সম্ভব হয়েছে এ কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, শিক্ষা খাতে আওয়ামী লীগ সরকার সবসময় গুরুত্ব প্রদান করেছে।

তিনি বলেন, তাঁর ১৯৯৬-এর সরকারের আমলে শিক্ষা খাতের উন্নয়নে ব্যাপক পদক্ষেপ নেয়া হয়েছিলো। এর ফলে স্বাক্ষরতার হার বেড়ে ৬৫ শতাংশে উন্নীত হয়। এ বিশাল অর্জনের সম্মানজনক স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ ‘ইউনেস্কো স্বাক্ষরতা পুরস্কার-১৯৯৮’ লাভ করে।

তিনি দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, বিশ্বের সকল দেশে যখন সময়ের সাথে স্বাক্ষরতার হার বাড়ে তখন বিএনপি-জামায়াতের ২০০১-২০০৬ আমলে স্বাক্ষরতার হার কমে দাঁড়ায় ৪৪ শতাংশে।

শেখ হাসিনা বলেন, ২০০৯ সালে পুনরায় দায়িত্ব নেয়ার পর তাঁর সরকারের চেষ্টায় স্বাক্ষরতার হার বেড়ে দাঁড়ায় ৬৭ শতাংশ।

সকল বিদ্যালয়ে ‘মিড-ডে মিল’ চালুর ওপর গুরুত্ব আরোপ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার এটাকে ঝরেপড়ার অন্যতম কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে। এই মিড-ডে মিল চালুর জন্য জনপ্রতিনিধি, স্কুল কমিটি, অভিভাবক, স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের এগিয়ে আসা উচিত আহবান জানান তিনি।

শেখ হাসিনা বলেন, সরকার বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক, বৃত্তি ও উপ-বৃত্তি প্রদানের মাধ্যমে শিক্ষার ব্যয়ভার নিজ কাঁধে নিয়েছে। উপবৃত্তির সুবিধাভোগীর সংখ্যা ৭৮ লাখ ৭০ হাজার ১২৯ জনে উন্নীত করা হয়েছে। এ সঙ্গে ৯৬টি দারিদ্র্যপীড়িত উপজেলার ২৯ লাখ শিক্ষার্থীর মধ্যে পুষ্টিমান সম্পন্ন বিস্কুট বিতরণ করা হচ্ছে।

শেখ হাসিনা বলেন, শিক্ষার্থীরা যেনো ধর্মের চেতনা অনুধাবন করতে পারে এবং ভবিষ্যতে কেউ তাদের ধর্মের নামে জঙ্গীবাদ ও সন্ত্রাসবাদে সম্পৃক্ত করতে না পারেÑ এ জন্য ধর্মীয় শিক্ষা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রাথমিক শিক্ষা সম্পূর্ণভাবে জাতীয়করণের পরিকল্পনার অংশ হিসেবে আরো ৯৫১ প্রাথমিক বিদ্যালয়কে সরকারি করা হবে।

TAGS:

Live TV

আপনার জন্য প্রস্তাবিত