507
Published on ডিসেম্বর 25, 2014
শেখ হাসিনা সদ্য কমিশনপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তাদের উদ্দেশে বলেন, আজ থেকে মাতৃভূমির স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার দায়িত্ব আপনাদের ওপর অর্পিত হলো। ফলে এই দায়িত্ব পালনের জন্য আপনাকে সর্বদাই সতর্ক ও প্রস্তুত থাকতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী আশা প্রকাশ করে বলেন, জীবনের শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে হলেও দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা করাই হবে সেনা সদস্যদের জীবনে প্রথম ও প্রধান ব্রত।
তিনি সেনা সদস্যদের উদ্দেশে বলেন, আপনাদেরকে নিঃস্বার্থভাবে দেশ ও জনগণের সেবা করতে হবে। এ কাজে কখনোই পিছ পা হবে না। আপনাদের জন্য আমার দোয়া ও শুভ কামনা রইল।
প্রধানমন্ত্রী গতকাল চট্টগ্রামের ভাটিয়ারিতে বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমি (বিএমএ) প্যারেড গ্রাউন্ডে আয়োজিত ৭১তম বিএমএ লংকোর্স এবং ৪২তম বিশেষ কোর্সের রাষ্ট্রপতি কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে ভাষণে এ কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী এর আগে একটি খোলা জীপে করে প্যারেড পরিদর্শন করেন এবং সালাম গ্রহণ করেন।
প্রধানমন্ত্রী সফলভাবে প্রশিক্ষণ সমাপ্ত করা ক্যাডেটদের মধ্যে পদক বিতরণ করেন এবং তাদের অভিনন্দন জানান। সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ইকবাল করিম ভূইয়া এবং বিএমএ কমান্ড্যান্ট মো. জাহাঙ্গীর কবির তালুকদার এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে মন্ত্রিবর্গ, উপদেষ্টাগণ, সংসদ সদস্যবর্গ, কূটনীতিক এবং উচ্চপদস্থ বেসামরিক ও সামরিক কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে প্রধানমন্ত্রী বিএমএ প্যারেড গ্রাউন্ডে এসে পৌঁছলে সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ইকবাল করিম ভূইয়া, জেনারেল অফিসার কমান্ডিং (জিওসি), আর্মি ট্রেনিং এন্ড ডকট্রিন কমান্ড লে. জেনারেল চৌধুরী হাসান সরওয়ারদী, জিওসি, ২৪ ইনফ্যান্ট্রি ডিভিশন ও এরিয়া কমান্ডার, চট্টগ্রাম এরিয়া, জেনারেল সাব্বির আহমেদ এবং বিএমএ কমান্ড্যান্ট মেজর জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর কবির তালুকদার তাঁকে অভ্যর্থনা জানান।
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী দেশে ও বিদেশে তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালনে তাদের দক্ষতা ও পেশাদারিত্বের জন্য সকল মহলের প্রশংসা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, বিশ্বের যেকোন এলাকার জনগণ বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে শান্তি ও সমৃদ্ধির প্রতীক হিসেবে জানে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কর্মকর্তারা দেশের জনগণের একটি অবিচ্ছিন্ন অংশ। আপনারা গণমানুষের সুখ-দুঃখ এবং হাসি-কান্নার সমঅংশীদার।
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী সব সময় দেশের যেকোন প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় অসহায় মানুষের পাশে থাকে।
তিনি বলেন, পাশাপাশি এই বাহিনী পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তি প্রতিষ্ঠায়, সড়ক, ফ্লাইওভার এবং অবকাঠামো নির্মাণ, জলাবদ্ধতা দূরিকরণ ও ট্রাফিক জ্যাম নিরসনে, হাতিরঝিল প্রকল্প বাস্তবায়নে, ভোটার তালিকা প্রণয়ন ও মেশিন রিড্যাবল পাসপোর্ট তৈরিতে দক্ষতা ও সফলতা দেখিয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, একটি রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর জন্ম হয়েছিল। সুমহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত বাংলাদেশ সেনাবাহিনী আমাদের সকলের গর্ব ও অহংকার।
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ বিশ্বে এখন একটি প্রতিশ্রুতিশীল ও শান্তিপূর্ণ দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে। আমাদের দেশ এখন জাতিসংঘ শান্তি মিশনে সর্বোচ্চসংখ্যক সৈন্য পাঠিয়ে বিশ্বে শান্তি বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সশস্ত্র বাহিনী আধুনিকায়ন ও সহয়োপযোগী করতে তাঁর সরকার গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপের উল্লেখ করে বলেন, ১৯৯৬-২০০১ সালের মেয়াদকালে তাঁর সরকার ন্যাশনাল ডিফেন্স কলেজ, মিলিটারি ইনস্টিটিউট অব সাইন্স এন্ড টেকনোলজি, সশস্ত্র বাহিনী মেডিক্যাল কলেজ, বাংলাদেশ পিস সাপোর্ট অপারেশনের ট্রেনিং ইনস্টিটিউট, এনসিও একাডেমি, বাংলাদেশ ইনফ্যান্ট্রি রেজিমেন্টাল সেন্টার ও ট্রাস্ট ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করেছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু প্রণীত প্রতিরক্ষা নীতি-১৯৭৪-এর আলোকে ফোর্সেস গোল-২০৩০ নির্ধারণ করা হয়েছে। এই লক্ষ্য বাস্তবায়নের জন্য আমরা ইতোমধ্যেই সিলেটে একটি ইনফ্যান্ট্রি ডিভিশন গঠন করা হয়েছে।
তিনি বলেন, পাশাপাশি এরিয়া সদর দফতরসহ ৬টি নতুন ইউনিট প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। এ ছাড়া রামুতে একটি নতুন ইনফ্যান্ট্রি ডিভিশন গঠনের প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়েছে। দেশের দক্ষিণাঞ্চলে এ ধরনের একটি ডিভিশন গঠন করা হবে। পদ্মা সেতুর নিরাপত্তা ও তদারকির জন্য ৯৯ কম্পোজিট ব্রিগেড গঠন করা হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, শুধুমাত্র নতুন স্থাপনাই প্রতিষ্ঠা করা নয়- বাংলাদেশ সামরিক বাহিনীকে আরো আধুনিক ও সময়োপযোগী করতে অত্যাধুনিক সামরিক সরঞ্জামও ক্রয় করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের সরকার রাশিয়ার সাথে প্রায় এক বিলিয়ন ডলার মূল্যের অস্ত্র চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। এটি সামরিক বাহিনীর সক্ষমতাকে অনেকাংশে বৃদ্ধি করবে এবং জাতিসংঘে আমাদের সেনা সদস্যদের মনোবলকে উজ্জীবিত করবে।
শেখ হাসিনা বলেন, পাশাপাশি চীন, সার্বিয়া এবং অন্যান্য দেশ থেকে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ সামরিক সরঞ্জামাদি ক্রয়ের প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
তিনি বলেন, আমরা সেনা বাহিনীর সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে নতুন ট্যাংক, এপিসি, মাল্টি-ব্যারেল রকেট লাঞ্চারসহ বহু অত্যাধুনিক অস্ত্রশস্ত্র সংযোজন করেছি।
প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমিকে (বিএমএ) একটি সর্বাধুনিক ও আন্তর্জাতিক মানের একাডেমিতে রূপান্তর করতে তাঁর সরকার গৃহীত পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করে বলেন, সরকার একাডেমিতে বঙ্গবন্ধু কমপ্লেক্স নির্মাণ করছে।
তিনি বলেন, ক্যাডেটদের প্রশিক্ষণের জন্য সকল প্রকার আধুনিক সুযোগ-সুবিধা রয়েছে। এতে বিএমএ’র প্রশিক্ষণ ও প্রশাসনিক কর্মকাণ্ডে গতিশীলতার সৃষ্টি হবে। এ ছাড়া বিভিন্ন বিষয়ে ৪ বছর মেয়াদী অনার্স ও ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রি কোর্স চালু হতে যাচ্ছে। ক্যাডেটদের কমিশন লাভের মেয়াদকাল ২ বছর থেকে ৩ বছরে উন্নীত করা হচ্ছে। একটি উচ্চ প্রশিক্ষিত ও আধুনিক সেনাবাহিনী গঠনে এ উদ্যোগ যুগান্তকারী ভূমিকা পালন করবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ একটি মধ্য আয়ের দেশ এবং ২০৪০ সালের মধ্যে একটি উন্নত দেশ হবে বলে তিনি আশা করছেন।
প্রধানমন্ত্রী সদ্য কমিশনপ্রাপ্ত তরুণ সেনা কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে বলেন, আপনাদের জীবনে আজকের এ দিনটি অত্যন্ত আনন্দের এবং একটি গুরুত্বপূর্ণ দিন। আজ আপনারা বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একজন গর্বিত কর্মকর্তা হিসেবে বৃহত্তর কর্মজীবনে প্রবেশ করছেন।
আজ ১৪ জন নারী ক্যাডেটসহ মোট ১৫৯ জন ক্যাডেট ৭১তম বিএমএ লং কোর্স এবং ৪২ বিএমএ বিশেষ কোর্স থেকে ৪ জন নারী ক্যাডেটসহ ১৭ জন ক্যাডেট বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে কমিশন লাভ করেন।
ব্যাটালিয়ন সিনিয়র আন্ডার অফিসার মো. খালেদ হোসেন সকল বিষযে শ্রেষ্ঠত্ব লাভের জন্য সোর্ড অব অনার, জুনিয়র আন্ডার অফিসার এস এম জিয়াউল ইসলাম চীফ অব আর্মি স্টাফ গোল্ড মেডেল পদক লাভ করেন।
বিভিন্ন আন্তঃকোম্পানী প্রতিযোগিতার ভিত্তিতে রউফ কোম্পানি বিএমএ কালার লাভ করে।
পরে ক্যাডেটরা শপথবাক্য পাঠ করেন এবং তাদের স্ব স্ব পিতা-মাতা ও অভিভাবক তাদের র্যাংমক ব্যাজ পরিয়ে দেন।