1474
Published on নভেম্বর 12, 2014এ উপলক্ষে চট্টগ্রাম সেনানিবাসে বাংলাদেশ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টাল সেন্টারে এক কুচকাওয়াজে ভাষণদানকালে প্রধানমন্ত্রী আশাবাদ ব্যক্ত করেন, রেজিমেন্টের সদস্যরা অতীতের মত আগামীতেও দেশের নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষাসহ অর্পিত দায়িত্ব সফলতার সাথে পালনে সক্ষম হবেন।
রেজিমেন্টের সদস্যরা কর্মজীবনের সকলক্ষেত্রে পেশাদারিত্ব ও দক্ষতার উন্নয়ন ঘটিয়ে জাতি গঠনে বলিষ্ঠ অবদান রাখবেন বলেও তিনি আশা প্রকাশ করেন।
জাতীয় পতাকা প্রাপ্ত ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের (ইবিআর) তিনটি ইউনিট হল-রংপুর সেনানিবাসের ৩৪ ই বেঙ্গল, শহীদ সালাউদ্দীন সেনানিবাসের ৩৬ ই বেঙ্গল ও জালালাবাদ সেনানিবাসের ৩৮ ই বেঙ্গল।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, জাতীয় পতাকা হল জাতির স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, সম্মান এবং মর্যাদার প্রতীক। আর আবহমান কাল থেকেই যুদ্ধের ময়দানে প্রতিটি জাতির জাতীয় মর্যাদার প্রতীক পতাকা বহন করার রীতি প্রচলিত আছে।
তিনি বলেন, ‘জাতীয় পতাকা পাওয়ার যোগ্যতা অর্জন করা যেকোন ইউনিটের জন্য একটি বিরল সম্মান ও গৌরবের বিষয়। আজ সেই স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতীক জাতীয় পতাকা আপনাদের হাতে তুলে দেওয়া হল।’ এই বিরল সম্মান ও গৌরব অর্জন করায় তিনি ৩৪, ৩৬ ও ৩৮ ইস্ট বেঙ্গলকে আন্তরিক অভিনন্দন জানান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, কর্মদক্ষতা, কঠোর অনুশীলন এবং কর্তব্যনিষ্ঠার স্বীকৃতি হিসেবে যে পতাকা আজ আপনারা পেলেন, আমি আশা করি তার মর্যাদা রক্ষার জন্য যে কোন ত্যাগ স্বীকারে আপনারা সবসময় প্রস্তুত থাকবেন। আপনাদের প্রতি জাতির এই আস্থা অটুট রাখার জন্য আপনারা সর্বদা সচেষ্ট থাকবেন।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সবচেয়ে বড় রেজিমেন্ট ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট পদাতিক বাহিনী হিসেবে তাদের নিয়মিত দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখে চলেছে। পাশাপাশি এ রেজিমেন্টের সদস্যদের যখনই তলব করা হয়েছে তখনই বেসামরিক সরকারকে সহায়তা করছেন এবং বিশ্ব পরিম-লেও তাঁদের কর্মদক্ষতার স্বাক্ষর রেখে উজ্জ্বল করে তুলছেন দেশের ভাবমূর্তি।
১৯৭১ সালের মার্চে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের সাধারণ মানুষের ওপর সামরিক অভিযানের জবাবে ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের পাঁচটি ব্যাটালিয়ন বিদ্রোহ করে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে যোগ দেয় এবং দেশকে পরাধীনতার শিকল থেকে মুক্ত করতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ প্যারেড গ্রাউন্ডে এসে পৌঁছলে সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ইকবাল করিম ভূঁইয়া তাঁকে অভ্যর্থনা জানান।
জাতীয় পতাকা প্রদান অনুষ্ঠান উপলক্ষে সেন্টারে ইবিআরের তিনটি ইউনিটের একটি মনোজ্ঞ কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠিত হয়। এতে কমান্ড দেন লে. কর্নেল মোহাম্মাদ বশিরুল হক।
প্রধানমন্ত্রী কুচকাওয়াজ পরিদর্শন এবং সালাম গ্রহণ করেন। এ সময় জাতীয় সঙ্গীত বাজানো হয়। প্রধানমন্ত্রী ইউনিট কমান্ডারদের হাতে জাতীয় পতাকা তুলে দেন।
মন্ত্রিপরিষদের সদস্যবৃন্দ, সংসদ সদস্যগণ, নৌবাহিনী প্রধান, উর্ধ্বতন বেসামরিক ও সামরিক কর্মকর্তাগণ, কূটনীতিকবৃন্দ এবং বিশিষ্ট বেসামরিক ব্যক্তিবর্গ এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
ইবিআরের দেশ সেবার প্রশংসা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘সৌম্য, শক্তি, ক্ষিপ্রতা’- এ মূলমন্ত্রে দীক্ষিত ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের ইতিহাস অত্যন্ত গৌরবময় এবং ঐতিহ্যপূর্ণ। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ঐতিহ্যবাহী এ রেজিমেন্টের ইতিহাস আমাদের প্রিয় সেনাবাহিনীর চেয়েও পুরানো, যার সূচনা হয়েছিল ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক যুগে। তবে বর্তমানে এই রেজিমেন্টের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম।
তিনি রেজিমেন্টের দুই বীর সেনানী বীরশ্রেষ্ঠ সিপাহী মোহাম্মদ মোস্তফা কামাল ও বীরশ্রেষ্ঠ সিপাহী মোহাম্মদ হামিদুর রহমান এবং বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে আত্মদানকারী বাহিনীর অন্যান্য সদস্যদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
প্রধানমন্ত্রী ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের প্রতিষ্ঠাতা মেজর এম এ গনি এবং রেজিমেন্টের অন্যতম পথিকৃত জেনারেল এম এ জি ওসমানীসহ পদাতিক বাহিনীতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখা অন্যান্যদেরও স্মরণ করে বলেন, তাদের অক্লান্ত পরিশ্রমে ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট আজকের এই সুদৃঢ় অবস্থানে এসে পৌঁছেছে।
এ প্রসঙ্গে তিনি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করে বলেন, স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু একটি শক্তিশালী সশস্ত্র বাহিনী গড়ে তোলার উদ্যোগ নেন। জাতির পিতার হাতে গড়া সেই সেনাবাহিনী আজ একটি চৌকস ও পেশাদার বাহিনীতে পরিণত হয়েছে।
তাঁর সরকারের বর্তমান ও বিগত আমলে সশস্ত্র বাহিনীর সামগ্রিক উন্নয়নে নেয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকারের রূপকল্প ২০২১ এর আলোকে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ফোর্সেস গোল ২০৩০ চূড়ান্ত করা হয়েছে। ফোর্সেস গোল ২০৩০ এর আলোকে সেনাবাহিনীর সাংগঠনিক কাঠামো বিন্যাস ও পরিবর্তনের পাশাপাশি এই বাহিনীর আধুনিকায়নের প্রক্রিয়া ইতোমধ্যেই শুরু হয়েছে।
তিনি বলেন, সশস্ত্র বাহিনীকে আধুনিক ও পেশাগতভাবে দক্ষ বাহিনীতে রূপান্তরে করতে ন্যাশনাল ডিফেন্স কলেজ, মিলিটারি ইনস্টিটিউট অব সাইন্স অ্যান্ড টেকনোলজি, আর্মড ফোর্সেস মেডিক্যাল কলেজ, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব পিস সাপোর্ট অপারেশন ট্রেনিং-এর মত প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।
সশস্ত্র বাহিনীর বিভিন্ন নতুন ইউনিট গঠনের উল্লেখ করে তিনি বলেন, আরও ডিভিশন ও ইউনিট প্রতিষ্ঠার প্রক্রিয়া এগিয়ে চলেছে। ইবিআর প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের সুযোগ সুবিধা বাড়ানোর জন্য পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সেবা ও কর্তব্যপরায়ণতার মাধ্যমে সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যগণ জনগণের শ্রদ্ধা ও ভালাবাসা এবং সমগ্র জাতির আস্থা অর্জন করেছেন। তিনি বলেন, ‘বর্তমান সরকারেরও সশস্ত্র বাহিনীর ওপর অগাধ বিশ্বাস ও আস্থা রয়েছে।’
তিনি আরো বলেন, ‘দেশ ও জাতির প্রয়োজনে জনকল্যাণমূলক কাজে সশস্ত্র বাহিনীকে অবদান রাখতে হবে।’
যশোর সেনানিবাসে ১৯৭৭ সালের জানুয়ারিতে ‘ডেডলি টাইগার্স’ বলে খ্যাত ৩৪ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট প্রতিষ্ঠা করা হয়। এটি ২০০০ সালের এপ্রিলে রেজিমেন্টাল কালার অর্জন করে। ইউনিটটি বর্তমানে রংপুর সেনানিবাসে ৬৬ পদাতিক ডিভিশনের অধীনে নিয়োজিত রয়েছে।
বগুড়া সেনানিবাসে ১৯৭৭ সালের নভেম্বরে ‘ড্যাশিং টাইগার্স’ নামে পরিচিত ৩৬ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট প্রতিষ্ঠা করা হয়। এটি ১৯৯৯ সালের মার্চে রেজিমেন্টাল কালার অর্জন করে। ইউনিটটি বর্তমানে বঙ্গবন্ধু সেতু এলাকায় শহীদ সালাউদ্দীন সেনানিবাসে ১৯ পদাতিক ডিভিশনের অধীনে নিয়োজিত রয়েছে।
রংপুর সেনানিবাসে ১৯৮০ সালের ডিসেম্বরে ‘পারদর্শী আটত্রিশ’ নামে পরিচত ৩৮ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট প্রতিষ্ঠা করা হয়। এটি ২০১১ সালের এপ্রিলে রেজিমেন্টাল কালার অর্জন করে। ইউনিটটি বর্তমানে জালালাবাদ সেনানিবাসে ১৭ পদাতিক ডিভিশনের অধীনে নিয়োজিত রয়েছে।
-বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাসস)