535
Published on নভেম্বর 12, 2014তিনি বলেন, ‘শিক্ষা সমাপনের পর চাকরির জন্য এখানে সেখানে লোকজনকে ধরাধরি করা শিক্ষিত লোকজনের জন্য অবমাননাকর। আমরা চাই না আমাদের যুবসমাজ তাদের চাকরির জন্য এখানে সেখানে ঘুরাফেরা করুক। অন্যের ওপর নির্ভর করার পরিবর্তে আমাদের যুবসমাজ স্ব-উদ্যোক্তায় পরিণত হোক, নিজের পায়ে দাঁড়াক এবং অন্যের জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করুক।’
প্রধানমন্ত্রী আজ রাজধানীর জাতীয় প্যারেড স্কোয়ারে ডিজিটাল সেন্টার উদ্যোক্তাদের সম্মেলনে ভাষণে এ কথা বলেন। ইউনিয়ন তথ্য ও সেবা কেন্দ্র (ইউআইএসসি) হিসেবে পরিচিত ৪ হাজার ৫০০ ডিজিটাল সেন্টারের প্রায় ১১ হাজার উদ্যোক্তা এ সম্মেলনে যোগ দেন।
স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব এম মঞ্জুর হোসেনের সভাপতিত্বে এ অনুষ্ঠানে এলজিআরডি ও সমবায় মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, বিশিষ্ট আইটি বিশেষজ্ঞ ও প্রধানমন্ত্রীর আইসিটি উপদেষ্টা সজিব ওয়াজেদ জয়, আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক এবং ইউএনডিপি’র কান্ট্রি ডিরেক্টর পাওলিন তামেসিস বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তৃতা করেন।
এ ছাড়া অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আবদুস সোবহান শিকদারও বক্তৃতা করেন। এতে স্বাগত বক্তৃতা করেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব মো. আবুল কালাম আজাদ এবং ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন এটুআই কর্মসূচির প্রকল্প পরিচালক কবির বিন আনোয়ার। এ ছাড়া রাঙামাটি সদরের পক্ষে বিকাশ চাকমা ও রংপুর সদরের আরিফুজ্জামান তাদের অভিজ্ঞতা উপস্থাপন করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রতিটি ব্যক্তিকে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর ব্যবস্থা করার লক্ষ্যেই ইউনিয়ন তথ্য ও সেবা কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিলো। নিজের পায়ে দাঁড়ানো শুধু বাংলাদেশেই সীমাবদ্ধ থাকবে নাÑ আমরা আমাদের বেকার যুবকদের জন্য এমন প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করবো যাতে তারা বিদেশে গিয়েও কর্মসংস্থান করতে পারে।
প্রধানমন্ত্রী ডিজিটাল সেন্টার উদ্যোক্তাদের দেশের ‘ডিজিটাল সন’ হিসেবে উল্লেখ করে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্ন সোনাবাংলা গড়তে নিজেদের আত্মনিয়োগ করতে তাদের প্রতি আহ্বান জানান।
প্রধানমন্ত্রী এ প্রসঙ্গে বলেন, দেশের তরুণরা কর্মসংস্থান ব্যাংক থেকে এখন জামানতবিহীন এক লাখ টাকা ঋণ গ্রহণ এবং তাদের নিজস্ব ব্যবসা শুরু করতে পারে। তিনি বলেন, ভবিষ্যতে এই ঋণের পরিমাণ বাড়িয়ে দু’লাখ টাকা করা হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, ডিজিটাল সেন্টারের এ সকল উদ্যোক্তাদের উচ্ছেদ করার কিছু হীন চক্রান্ত চলছে। তিনি দৃঢ়তার সঙ্গে বলেন, এ সকল ডিজিটাল উদ্যোক্তাদের সরানো হবে না। তারা তাদের নিজ নিজ স্থানে বহাল থাকবে।
প্রধানমন্ত্রী এ প্রসঙ্গে পৌরসভা মেয়র ও কাউন্সিলর, উপজেলা চেয়ারম্যান, ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও সদস্যসহ জনপ্রতিনিধিদের প্রতি কড়া হুঁশিয়ারি জানিয়ে বলেন, এ সকল ডিজিটাল সেন্টারে কেউ কোন প্রকার হস্তক্ষেপ করার চেষ্টা করবেন না।
প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, রাজধানীতে প্রধান হাই-টেক পার্কের পাশপাশি দেশের প্রতিটি জেলায় হাই-টেক পার্ক প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা রয়েছে তাঁর সরকারের।ু
তিনি বলেন, ‘প্রধান হাই-টেক পার্ক প্রতিষ্ঠিত হবে ঢাকায় এবং প্রতিটি জেলায় আমরা এ ধরনের একটি পার্ক নির্মাণ করবো।’
শেখ হাসিনা বলেন, তাঁর সরকার ইন্টারনেটের স্পিড বাড়ানোর জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে এবং ভবিষ্যতে হাইস্পিড ইন্ডারনেট পাওয়া যাবে।
এ প্রসঙ্গে তিনি একনেক কর্তৃক বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট প্রকল্প অনুমোদনের কথা উল্লেখ করে বলেন, এতে ডিজিটাল সেবার আরো সম্প্রসারিত হবে বলে আশা করা হচ্ছে। তিনি বলেন, আমরা শিগগিরই এ প্রকল্পের কাজ শুরু করতে যাচ্ছি। এ বিশাল প্রকল্পের দরপত্র আহবানের প্রক্রিয়া চলছে।
ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার থেকে এ পর্যন্ত ৫ কোটি সেবা প্রদান করা হয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অনলাইনে প্রায় ৭ কোটি জন্মনিবন্ধন করা হয়েছে। পাশাপাশি এসব কেন্দ্রের মাধ্যমে ২০ লাখ নারী ও পুরুষ বিদেশে যাওয়ার জন্য তাদের নাম নিবন্ধন করেছে।
ডিজিটাল সেন্টারের উদ্যোক্তাদের মধ্য থেকে বিভ্রান্তি দূরীকরণে শেখ হাসিনা দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলেন, জন্মনিবন্ধন ডিজিটাল সেন্টারের মাধ্যমেই করা হবে।
ডিজিটাল সেন্টারের উদ্যোক্তাদের মুহুর্মুহু করতালির মধ্যে তিনি বলেন, আমি জানি ডিজিটাল সেন্টারের মাধ্যমে জন্মনিবন্ধনের ব্যাপারে বিভ্রান্তি অব্যাহত রয়েছে। এখন থেকে এসব সেন্টারের মাধ্যমে জন্মনিবন্ধন হবে এবং ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকবে।
এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী জন্মনিবন্ধনের পাশাপাশি মানুষের মৃত্যুও নিবন্ধন করার প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন।
গ্রামীণ জনগণের জন্য প্রায় দুইশ’ ই-সার্ভিসসহ ডিজিটাল সেন্টার থেকে বিভিন্ন ধরনের সেবার কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ৪০ লাখের মতো ছাত্র-ছাত্রী ২৩ হাজার ৫০০ মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুমের মাধ্যমে শিক্ষা গ্রহণে অংশ নিয়েছে। তিনি বলেন, পর্যায়ক্রমে সারাদেশের সকল স্কুলে মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম প্রতিষ্ঠা করা হবে।
তিনি বলেন, ডিজিটাল সেন্টারগুলো যুবকদের আউট সোর্সিং ও প্রশিক্ষণের প্রস্তাব দিয়েছে যাতে তারা আরো দক্ষতা অর্জন করতে পারে এবং তাদের আয় বাড়াতে পারে।
প্রধানমন্ত্রী ২০২১ সালের আগে দেশকে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত এবং মধ্যম আয়ের এবং ২০৪১ সাল নাগাদ উন্নত দেশে পরিণত করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন ।
তিনি বলেন, একটি বিজয়ী জাতি হিসেবে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে এবং শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও কর্মসংস্থানসহ সকল ক্ষেত্রে দেশ আরো সমৃদ্ধি অর্জন করবে।
প্রধানমন্ত্রীর আইসিটি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় বলেন, এটি সত্যি যে ইন্টারনেট সার্ভিসের গতি এবং মানে দেশব্যাপী ৪৫০০ ডিজিটাল সেন্টার পিছিয়ে রয়েছে, তবে সরকার উদ্যোগ নিয়েছে এবং আগামী ৪ বছরের মধ্যে প্রত্যেক ইউনিয়নে দ্রুতগতির ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সুবিধা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।
তিনি বলেন, ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তোলার ঘোষণা দেয়া হয়, তখন অনেকেই এটিকে অসম্ভব মনে করতো। কিন্তু পাঁচ বছর পর ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ ’ এখন একটি বাস্তবতা।
প্রধানমন্ত্রীর পুত্র বলেন, সম্প্রতি তিনি রংপুর সফর করেছেন এবং ডিজিটাল সেন্টারের উদ্যোক্তাদের সঙ্গে কথা বলেছেন, তারা তাকে জানান যে এখানে জনগণকে বিভিন্ন ধরনের সেবা দিয়ে মাসে তারা ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা আয় করেন।