বাংলাদেশকে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত করার ভিশন নিয়ে কাজ করতে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের প্রতি প্রধানমন্ত্রীর আহবান

466

Published on নভেম্বর 9, 2014
  • Details Image

প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রত্যেক নাগরিকের জন্য খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সব ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলার পাশাপাশি সংরক্ষণ, প্রক্রিয়াকারণ, বাজারজাত এবং দরিদ্র জনগোষ্ঠীর খাদ্যপ্রাপ্তি সহজলভ্য করতে খাদ্য উৎপাদন অবশ্যই বাড়াতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী তাঁর মন্ত্রণালয়সমূহ পরিদর্শনে কর্মসূচির অংশ হিসেবে আজ খাদ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে একথা বলেন। এ সময় তিনি মন্ত্রণালয়টির নেয়া বিভিন্ন প্রকল্প ও এর বাস্তবায়নের খোঁজ-খবর নেন এবং সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাজের গতিশীলতায় প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেন।

শেখ হাসিনা বলেন, ঘন ঘন প্রাকৃতিক দুর্যোগের মাঝে সবার জন্য খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সত্যিই এক দুরূহ কাজ। দেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করতে বঙ্গবন্ধু প্রদর্শিত নির্দেশনা ও রূপরেখা অনুসরণ করে এ যাবত নেয়া আমাদের পদক্ষেপগুলোর ভাল ফল পাওয়া গেছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রত্যেক রাজনৈতিক দলের একটি লক্ষ্য আছে। আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে সর্বক্ষেত্রে দেশকে স্বয়ংসম্পূর্ণ করা। আমরা অন্যের কাছে হাত পাততে চাই না। এই দৃষ্টিভঙ্গি থেকে আমরা খাদ্য উৎপাদন বাড়াতে, কৃষকদের কাছে কৃষি উপকরণ সহজলভ্য করতে, কৃষির আধুনিকায়নে এবং গবেষণার উপর যথাযথ গুরুত্ব দিতে পদক্ষেপ নিয়েছি।

এ প্রসঙ্গে তিনি তাঁর দল ও পূর্ববর্তী বিএনপি’র মধ্যকার পার্থক্য উল্লেখ করে বলেন, আমাদের নীতি হচ্ছে খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি করে নিজের পায়ে দাঁড়ানো। কিন্তু বিএনপি ও তার সাবেজক অর্থমন্ত্রীর নীতি ছিল সম্পূর্ণ বিপরীত- দাতাদের কাছে সাহায্য চাওয়া।

অনুষ্ঠানে খাদ্যমন্ত্রী এডভোকেট কামরুল ইসলাম প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানিয়ে বক্তৃতা দেন। এছাড়া এ মন্ত্রণালয়ের সচিব মুশফিকা ইকফাত বক্তৃতা করেন।

এতে খাদ্যমন্ত্রী দারিদ্র্য হ্রাসে সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার সময়সীমার আগে সাফল্য অর্জনের জন্য এফএও কর্তৃক ৩৮ দেশের সঙ্গে বাংলাদেশকে দেয়া ‘ডিপ্লোমা এ্যাওয়ার্ড’ প্রধানমন্ত্রীর হাতে তুলে দেন।

শেখ হাসিনা স্মরণ করিয়ে দেন যে, বাংলাদেশ ১৯৯৮ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে প্রথম খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছিল। ভয়াবহ বন্যার পর নীতি নির্ধারণী পর্যায়ে কিছু দ্রুত সিদ্ধান্ত নেয়ার ফলশ্রুতিতে এটা সম্ভব হয়েছিল একথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, তাঁর সরকার চিরকাল অন্যের কাছে হাত পাতার নীতিতে বিশ্বাস করে না।

শেখ হাসিনা বলেন, বর্তমান সরকার যারা খেতে পারতো না তাদের জন্য এক বেলা, যারা একবেলা খেতো, তাদের জন্য দু’বেলা এবং যারা দু’বেলা খেতো তাদের জন্য দিনে তিন বেলা খাবার নিশ্চিত করেছে। এখন সরকার সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার অক্ষ্যানুযায়ী সব মানুষের পুষ্টি নিশ্চিতে লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ হচ্ছে খাদ্য উৎপাদনে উদাহরণ সৃষ্টিকারী দেশগুলোর মধ্যে একটি। অথচ এফএও’র মহাপরিচালক এক সময় খাদ্য উৎপাদন খাতে সংস্থাটির প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়নের দৈন্যতায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছিল।

তিনি বলেন, খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধির সাফল্য আমাদের সেসব পদক ভালে সহায়তা করেছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বছরের পর বছর জনসংখ্যা বেড়েছে। অথচ আবাদী জমি কমেছে। কিন্তু আমাদের কৃষি উৎপাদন কখনো কমেনি। বরং বৃদ্ধি পেয়েছে। ১৯৯৬ সালে মোট খাদ্য উৎপাদন ছিল ১.৯০ কোটি মেট্রিক টন, যা বর্তমানে ৩.৬৮ কোটি মেট্রিক টনে উন্নীত হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জুতা বানানোর জন্য একটি বেসরকারি ইপিজেড প্রমোটারের কাছে মাত্র এক টাকায় চট্টগ্রামে সিএসডি গুদামের জমি বিক্রি করে দেয়ায় বিএনপি সরকারের তীব্র সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, স্বাধীনতার পর জাপানের আর্থিক সহযোগিতায় ৫০টি গুদাম পুনঃনির্মাণ করা হয়। কিন্তু বিক্রির পর গুদামগুলো ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, ২০০৯ সালের পর আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতা গ্রহণ করে ৬ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দিয়ে গুদামগুলো ফেরত নেয় এবং কারখানাগুলো অন্যত্রে স্থানান্তর করে।

শেখ হাসিনা বলেন, দুর্যোগপ্রবণ দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে সব সময় সংকট মোকাবেলায় পর্যাপ্ত খাদ্য মজুদ নিয়ে প্রস্তুত থাকতে হবে। যে কোন জরুরি মুহূর্তে খাদ্য আমদানি এড়াতে পর্যাপ্ত খাদ্য মজুদের জন্য আমাদের আধুনিক মজুদ সুযোগ-সুবিধা থাকা দরকার।

তিনি বলেন, খাদ্য শস্য উঠা-নামা করা এবং দেশের উত্তরাঞ্চলে নিয়ে যাওয়ার জন্য ড্রেজিং-এর মাধ্যমে তাঁর সরকার মংলা বন্দরকে কার্যকর করে তুলেছে। তিনি আরো বলেন, খাদ্য মজুদের জন্য একটি সাইলোও নির্মাণ করা হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, গবেষণার মাধ্যমে তাঁর সরকার কৃষি উৎপাদনে বৈচিত্র্য এনেছে। লবণাক্ততা, পানি ও খরা সহিষ্ণু বিভিন্ন জাতের ধান উৎপাদনে সাফল্যের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের দক্ষিণাঞ্চলকে ধান উৎপাদন এবং উত্তরাঞ্চলের স্বল্প পানি এলাকাকে গম, ভুট্টা ও অন্যান্য সবজি উৎপাদনে ব্যবহারের পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার।

তিনি বলেন, কৃষিভিত্তিক শিল্প স্থাপনেরও একটি পরিকল্পনা নিয়েছে তাঁর সরকার। এ লক্ষ্যে সাতটি বিভাগে সাতটি এলাকা চিহ্নিত করা হয়েছে। এসব এলাকার যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত করা হবে, যাতে খুব অল্প খরচে এসব এলাকায় পণ্য পরিবহন করা যায়।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, জনগণের খাদ্য চাহিদা পূরণ করা সরকারের মৌলিক দায়িত্ব এবং তাঁর সরকার তাই করছে।

তিনি বলেন, নতুন জাতের ধান বাংলার মাটি উদ্ভাবন করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমরা এবার একটি সুগন্ধি জাতের ধান উৎপাদনের দিকে মনোযোগ দিয়েছি। কয়েক বছর আগে যে জাতটি আমরা হারিয়ে ফেলেছিলাম।’

-বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাসস)

TAGS:

Live TV

আপনার জন্য প্রস্তাবিত