467
Published on অক্টোবর 19, 2014তিনি বলেন, ‘আলাদা কমিশন ছাড়া যোগ্য শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে বিদ্যমান সমস্যার সমাধান হবে না।’ শিক্ষক নিয়োগের বিষয়টি প্রতিদিনের কাজ বিধায় এটা একটা জটিল ব্যাপার বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
গতকাল প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় পরিদর্শনকালে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিষয়টি নিয়ে ইতোমধ্যে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। এ ব্যাপারে যে কোন ধরণের জটিলতা এড়াতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের মতামত নেয়া হবে।
বাংলাদেশ সচিবালয়ে মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে এক বৈঠকে তিনি বলেন, সরকার শিক্ষকদের বেতন-ভাতা বৃদ্ধি করেছে এবং নতুন পে কমিশন বিভিন্ন বেতন স্কেলের মধ্যকার পার্থক্য নিরসন করবে।
এছাড়া সরকারি চাকরিজীবীদের পরিবারের সদস্য সংখ্যা চারের পরিবর্তে ছয় হিসাব করে শিক্ষকদের বেতন ও অন্যান্য সুবিধাদি নির্ধারণ করা হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মন্ত্রণালয়কে বাংলাদেশ সচিবালয়ে শিশুদের জন্য ডে কেয়ার সেন্টারে একটি প্রাক-প্রাথমিক স্কুল চালু করার প্রস্তাব দিয়েছেন। ডে কেয়ার সেন্টার থেকে শিশুদের প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষার সুযোগ সৃষ্টি করতে তিনি এ প্রস্তাব দেন।
তিনি ঢাকার বাইরে আন্তঃস্কুল ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা আয়োজনের মাধ্যমে ক্রীড়া ক্ষেত্রে ও পাঠ্য বহির্ভূত কার্যক্রমে শিশুদের মানসিক ও শারীরিক সক্ষমতা গঠন এবং মেধা বিকাশে পদক্ষেপ নিতে মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দেন।
মন্ত্রণালয়গুলোর কর্মকান্ডে আরো গতিশীলতা আনতে প্রত্যেক মন্ত্রণালয় পরিদর্শনের পরিকল্পনার অংশ হিসেবে তিনি প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে আসেন।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রী অ্যাডভোকেট মোস্তাফিজুর রহমান অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তৃতা করেন। মন্ত্রণালয়ের সচিব কাজী আখতার হোসেন এবং মন্ত্রণালয় ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশকে নিরক্ষরমুক্ত করতে এবং শিক্ষা নিতে আগ্রহী চাকরিজীবীদের শিক্ষাদানের লক্ষ্যে সরকার ইতোমধ্যে আনানুষ্ঠানিক শিক্ষা আইন প্রণয়ন করেছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ বিনির্মাণে তাঁর সরকার প্রাথমিক শিক্ষার ওপর সর্বাধিক গুরুত্ব আরোপ করছে। কারণ শিক্ষিত সমাজ গঠনের মূল ভিত্তি হচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষা।
তিনি বলেন, স্বাধীনতা অর্জনের পর দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা অত্যন্ত দুর্বল হওয়া সত্ত্বেও প্রাথমিক শিক্ষার গুরুত্ব উপলব্ধি করে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রাথমিক শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক ও অবৈতনিক করেন।
তিনি আরো বলেন, বঙ্গবন্ধু শিক্ষার গুরুত্ব বিবেচনা করে সংবিধানে জনগণের অন্যতম মৌলিক অধিকার হিসেবে শিক্ষাকে অন্তর্ভুক্ত করেন।
শেখ হাসিনা বলেন, স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু ৩৬ হাজার ১৬৫টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সবগুলো সরকারি করার পর দেশের ইতিহাসে দ্বিতীয় বারের মতো তার সরকার ২৬ হাজার প্রাথমিক বিদ্যালয় সরকারিকরণ করেন।
তিনি বলেন, স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু বিশিষ্ট বিজ্ঞানী ড. কুদরত-ই-খুদার তত্ত্বাবধানে গঠিত কমিশনের দেখানো পথেই আওয়ামী লীগ সরকার ২০০৯ সালে একটা শিক্ষানীতি প্রণয়ন করে।
তিনি বলেন, এ শিক্ষা নীতিতে সরকার প্রাথমিক শিক্ষার ওপর গুরুত্বারোপ করেছে এবং প্রাথমিক পর্যায়ে ধর্ম শিক্ষা বাধ্যতমূলক করেছে। কারণ ধর্মীয় শিক্ষা ছাড়া পূর্ণাঙ্গ শিক্ষা সম্ভব নয়। তাছাড়া ব্যক্তি জীবনে ধর্মীয় শিক্ষার গুরুত্বও অপরিসীম। অতএব কেউ ধর্মের নামে জনগণকে বিভ্রান্ত করতে পারবে না।
প্রধানমন্ত্রী অশিক্ষা দূরীকরণে তাঁর সরকারের প্রচেষ্টার কথা তুলে ধরে বলেন, জনগণকে শিক্ষিত করতে মোবাইল ফোনের ব্যবহারের বিরাট অবদান রয়েছে। প্রযুক্তিই তাদের শিক্ষা গ্রহণে বাধ্য করছে। তিনি বলেন, এ প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করতে সরকার মোবাইল ফোনের কি প্যাডে বাংলা ফন্ট চালু করেছে।
তিনি প্রাথমিক স্কুল পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়ার হার হ্রাসে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ভূমিকার প্রশংসা করে বলেন, প্রায় শতভাগ ছেলে ও মেয়ে এখন প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যায়। তিনি এ মন্ত্রণালয়কে স্কুল পর্যায়ে ঝরে পড়া রোধে স্কুল ফিডিং কর্মসূচি এগিয়ে নিতে সর্বস্তরের জনগণ, অভিভাবক, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও সম্প্রদায়ের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে কাজ করার আহ্বান জানান।
এ প্রসঙ্গে তিনি শিক্ষা ও স্বাস্থ্য সেবা খাতে দেয়া অনুদানের ক্ষেত্রে কর রেয়াতে তাঁর সরকারের সিদ্ধান্তের কথা স্মরণ করেন। তিনি বলেন, সরকার শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে ব্যয়ের লক্ষ্যে মোবাইল ফোন কলের ওপর সারচার্জ বসিয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী স্কুল শিক্ষার্থীদের মাঝে পাঠ্যবই বিতরণ প্রসঙ্গে বলেন, এটি গোটা বিশ্বেই এক নজিরবিহীন দৃষ্টান্ত। এ বইয়ের মান সম্পর্কে তিনি বলেন, বইয়ের ছাপা ও মান ক্রমাগত উন্নত হচ্ছে। তিনি সরকারের সমালোচকদের প্রতি এ উদ্যোগের কেবলমাত্র সমালোচনা না করে সরকারের এ মহতি কর্মযজ্ঞের সহায়তায় হাত বাড়িয়ে দেয়ার আহ্বান জানান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ডিগ্রি পর্যায় পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্ট তহবিল থেকে বৃত্তি প্রদানে সরকার পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। মোট ৭৮ লাখ ৭০ হাজার ১২৯ শিক্ষার্থীকে বৃত্তি এবং মাধ্যমিক পর্যায়ে ৪০ লাখ বৃত্তি প্রদান করা হয়েছে।
তিনি বলেন, ২০১৩ সালে এক লাখ ৩৩ হাজার পরিবারকে বৃত্তি প্রদান এবং ২০১৪ সালে এক লাখ ৭৫ হাজার ছাত্রছাত্রী বৃত্তি লাভ করেছে।
তিনি আরো বলেন, দরিদ্র শিক্ষার্থীদের মায়েরা ব্যাংক একাউন্টের মাধ্যমে এককালীন ভাতা পেয়ে থাকেন, যাতে গরিব পরিবারগুলো তাদের শিশুদের স্কুলে পাঠাতে অনুপ্রাণিত হয়।
তিনি বলেন, প্রতিটি নতুন স্কুল ভবনে মেয়ে শিক্ষার্থীদের জন্য আলাদা টয়লেট সুবিধা রয়েছে।
তিনি শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের ওপর জোর দেয়ার পাশাপাশি স্কুল নির্মাণের ক্ষেত্রে ভবনের ভিতরে অবাধে বায়ু চলাচলের পথ রাখা ও মান বজায় রাখার জন্য সরকারি কর্মকর্তাদের প্রতি নির্দেশ দেন।
-বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাসস)
ছবিঃ সাইফুল ইসলাম কল্লোল