495
Published on অক্টোবর 12, 2014
তিনি আজ সচিবালয়ে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে এসব কথা বলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, কিছু বিবেকহীন ব্যক্তির কারণে প্রাইভেটাইজেশনের সুযোগ-সুবিধা গ্রহণ করার পরও এইসব মিল-কারখানাগুলোকে চালু করতে পারেনি। পরে ওইসব ব্যক্তি সরকারি সম্পত্তিকে অর্থ উপার্জনের কাজে ব্যবহার করে।
তিনি আরো বলেন, তারা শুধু মূল্যবান যন্ত্রপাতি আত্মসাৎ করেই ক্ষান্ত হয়নি, বরং তারা ভূসম্পত্তিও বিক্রি করে দেয়। তিনি দৃঢ়তার সঙ্গে বলেন, এইসব সম্পত্তি অবশ্যই উদ্ধার করা হবে এবং ক্ষুদ্র, মাঝারী শিল্প স্থাপনে আগ্রহীদের মধ্যে বরাদ্দ দেয়া হবে।
তিনি বলেন, ভবিষ্যতে কোন সরকারি মিল-কারখানা বেসরকারি খাতে ছেড়ে দেয়া হবে না। তিনি মন্ত্রণালয়কে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার মাধ্যমে যেসব শিল্পের মালিক নির্ধারিত সময়ের মধ্যে মিল-কারখানা চালু করতে ব্যর্থ হয়েছে তা উদ্ধারের নির্দেশ দেন।
প্রধানমন্ত্রী পর্যায়ক্রমে সকল মন্ত্রণালয় ধারাবাহিক পরিদর্শনের অংশ হিসেবে আজ বস্ত্র মন্ত্রণালয়ে আসেন। বস্ত্র ও পাট মন্ত্রী ইমাজ উদ্দিন প্রামাণিক প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানিয়ে সূচনা বক্তব্য দেন এবং মন্ত্রণালয়ের ভবিষ্যত কর্মপরিকল্পনা সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করেন।
প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের সচিব ফনী ভূষণ চৌধুরী, বিভিন্ন বিভাগের প্রধানগণ, মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের কর্মকর্তারা এসময় উপস্থিত ছিলেন।
শেখ হাসিনা অধিক সম্ভাবনাময় বস্ত্র ও পাট খাতের ব্যাপারে উচ্চ আকাঙ্খা প্রকাশ করে বলেন, এই খাত দেশের অর্থনীতি উন্নয়নের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ অবদান রাখতে পারে। আমাদের পাট ও পাটজাত দ্রব্য বিদেশে রফতানি করার পরিকল্পনা গ্রহন করতে হবে।
এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী মসলিন সূতা তৈরির ব্যাপারে প্রয়োজনীয় গবেষণার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন। হাতে তৈরি এই সুক্ষ সূতায় তৈরি মসলিন কাপড় সপ্তদশ ও অষ্টদশ শতাব্দীতে ইউরোপসহ বিশ্বের অন্যান্য দেশে খ্যাতি অর্জন করে।
শেখ হাসিনা বাংলাদেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখার লক্ষ্যে সর্বোচ্চ ত্যাগ, সততা ও সাহসের সঙ্গে কাজ করার জন্য এই মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের প্রতি আহ্বান জানান।
প্রধানমন্ত্রী পাটশিল্পের ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, এ পণ্য পরিবেশবান্ধব হওয়ায় এবং বিশ্বব্যাপী এর বিরাট চাহিদা থাকার কারণে অবশ্যই একে এগিয়ে নিতে হবে। তিনি বলেন, ‘চীন ও আরো বহু দেশ উন্নতমানের সুতা তৈরি করছে এবং এর পাশাপাশি পাট থেকে আরো ৩৬ ধরনের পণ্যও উৎপাদন করছে।’
শেখ হাসিনা বলেন, পাট ও পাটজাত পণ্য উৎপাদনে আগ্রহীদের জন্য সরকার জমি বরাদ্দ দেবে। তিনি আরো বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকার ৯টি পাটকল ওইসব প্রতিষ্ঠানের শ্রমিকদের মালিকানায় ছেড়ে দিয়েছিলো। কিন্তু প্রয়োজনীয় মনিটরিং ও তত্ত্বাবধানের অভাবে সেগুলো ভালোভাবে চলছে না।’
বস্ত্র ও পাট সেক্টরের উন্নয়নে সরকারের গৃহীত পদক্ষেপের উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকারি খাতের শিল্পগুলোতে বেতন-ভাতা বাড়ানো হয়েছে এবং বেসরকারি খাতের শিল্পগুলোতে সহায়তা দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, ‘যে অনুপাতে গার্মেন্ট শ্রমিকদের বেতন বাড়ানো হয়েছে, তা বিশ্বে নজিরবিহীন।’
শেখ হাসিনা বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার পর তাঁর সকল পিতামাতার মত ¯েœহ দিয়ে পাটকল ও কারখানাগুলো গড়ে তুলেছিলেন। কিন্তু বিএনপি সরকার এই পাট সেক্টর ধ্বংস করতে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে বিশ্ব ব্যাংকের নীতি অনুসরণ করে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ওই পরিকল্পনা অনুযায়ী বিএনপি সরকার ১৯৯১ সালে খুবই অল্প দামে দুর্নীতির মাধ্যমে বহু পাটকল বিক্রি করে দেয়। ২০০১ সালে বিএনটি-জামাত দেশের সর্ববৃহৎ পাটকল ‘আদমজী’ বন্ধ করে দেয়। এতে প্রায় এক কোটি লোকের জীবন-জীবিকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৯৬-২০০১ মেয়াদে আওয়ামী লীগ সরকার আদমজী জুট মিলের পতিত জায়গায় ক্ষুদ্র পাট পণ্য শিল্প স্থাপনের কাজে ব্যবহারের পরিকল্পনা গ্রহণ করে। কিন্তু পরবর্তী বিএনপি সরকার তাও বন্ধ করে দেয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকার ‘বাংলার সোনালী আঁশ’ হিসেবে খ্যাত পাটের সেই অতীত গৌরব ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। ২০০৯ সালে তাঁর সরকার জাতিসংঘের সাথে সংহতি প্রকাশ করে ‘আন্তর্জাতিক প্রাকৃতিক তন্তু’ দিবস উদযাপন করেছে।
শেখ হাসিনা বলেন, তাঁর সরকারের গৃহীত পদক্ষেপের প্রেক্ষিতে দেশে পাট চাষে পুনরায় গতি সঞ্চার হয়েছে। তিনি আরো বলেন, আওয়ামী লীগ তার নির্বাচনী ম্যানিফেস্টোতে পাট ও বস্ত্র সেক্টরের উন্নয়নের ওপর বিশেষ গুরুত্বারোপ করেছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশ তৈরি পোশাক খাত থেকে সবচেয়ে বেশি রফতানি আয় করেছে। তিনি বলেন, ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ শিল্প হিসেবে বস্ত্র শিল্প আরএমজি রফতানিতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।
বস্ত্র ও তৈরী পোশাক খাতের উন্নয়নে বেসরকারি খাতের ভূমিকার প্রশংসা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, পাট খাতের উন্নয়নেও বেসরকারি খাতকে এগিয়ে আসতে হবে।
তিনি বলেন, সরকার বস্ত্র বিভাগকে বস্ত্র শিল্পের সঙ্গে সম্পর্কিত সব শিল্পের পোষক কর্তৃপক্ষ নিয়োগ করেছে। এর কার্যক্রম ত্বরান্বিত করতে ওয়ান স্টপ সার্ভিস ও অনলাইন নিবন্ধন সেবাগুলো চালু করা হয়।
শেখ হাসিনা বলেন, বর্তমান সরকার ২০২১ সালের মধ্যে দেশকে একটি মধ্যম আয়ের দেশ হিসেব গড়ে তোলার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। এ ক্ষেত্রে পাট খাতেরও একটি গুরুত্বপুর্ণ ভূমিকা রয়েছে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশী বিজ্ঞানীরা পাটের জন্মরহস্য (জেনোম সিকোয়েন্স) উদ্ভাবন করেছে। এ সাফল্যকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য আরো গবেষণা চালিয়ে যেতে হবে।
বস্ত্র ও পাট মন্ত্রী ইমাজ উদ্দিন প্রামাণিক তার স্বাগত বক্তব্যে পাটের ব্যাগ ব্যবহার করতে জনগণকে উৎসাহিত করার প্রতি জোর দিয়ে পলিথিন ব্যবহার, উৎপাদন, মজুদ করা ও এর কাঁচামাল নিষিদ্ধ সংক্রান্ত আইন কঠোরভাবে প্রয়োগের প্রয়োজনীয়তার কথা বলেন।
এ ছাড়াও তিনি পাট খাতের উন্নতি সাধনে আন্তর্জাতিক পাট গবেষণা গ্রুপের স্থলে একটি নতুন গবেষণা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলারও আহ্বান জানান।
-বাসস
ছবিঃ সাইফুল ইসলাম কল্লোল