431
Published on সেপ্টেম্বর 26, 2014তিনি বলেন, আমাদের সর্বাত্মক নিষ্ঠা ও পেশাদারিত্বের কারণে শান্তিরক্ষা অভিযানে বাংলাদেশ একটি ব্র্যান্ডে পরিণত হয়েছে। তাই আমি শান্তিরক্ষা সংক্রান্ত জাতিসংঘ মহাসচিবের কৌশল পর্যালোচনার প্রতি আমাদের পূর্ণ সমর্থনের কথা পুনরায় জোরালোভাবে জানাতে চাই। সর্বসময় দ্রুত সমর্থনের মাধ্যমে আমরা তার হাতকে শক্তিশালী করতে চাই।
তিনি আরো বলেন, একটি পরীক্ষিত ও আস্থাভাজন শান্তিরক্ষাকারী দেশ হিসেবে বাংলাদেশ সংকটাপন্ন দেশগুলোর সঙ্গে অংশীদারিত্ব গড়ে তুলতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
আজ জাতিসংঘ সদর দফতরে শান্তিরক্ষা সংক্রান্ত একটি উচ্চ পর্যায়ের শীর্ষ সম্মেলনে ভাষণে শেখ হাসিনা একথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্বব্যাপী শান্তি ও স্থিতিশীলতা জোরদারে জাতিসংঘের আহ্বানে দ্রুত ও ইতিবাচক সাড়া দিতে বাংলাদেশ কখনো ব্যর্থ হয়নি। তিনি বলেন, বাংলাদেশের ১১৯ জন বীর সন্তানের সর্বোচ্চ ত্যাগের মাধ্যমে শান্তিরক্ষার অঙ্গীকারের প্রতি এদেশের জোরালো সমর্থন পুনর্ব্যক্ত হয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা অভিযানে সক্ষমতা বাড়াতে বর্তমানে আমরা একটি জাতীয় শান্তিরক্ষা কৌশল নিয়ে কাজ করছি। তিনি বলেন, বাংলাদেশ ত্রিপক্ষীয় সহযোগিতার জন্যও প্রস্তুত রয়েছে। শরিক দেশগুলোর সমর্থনসহ উদীয়মান সৈন্য প্রদানকারী দেশগুলোর বাহিনীকে আমরা প্রশিক্ষণ প্রদান করবো।
তিনি আরো বলেন, আমরা দক্ষ, প্রশিক্ষিত ও নির্ভরযোগ্য পদাতিক ইউনিট প্রদান এবং সকল মহিলা পুলিশ ইউনিটসহ পুলিশ ইউনিট গঠনেও অঙ্গীকারাবদ্ধ।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ স্বল্পসময়ের নোটিশে বিমান শক্তি, হেলিকপ্টার এবং এয়ারক্রাফট প্রদানেও প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমরা স্বল্পসময়ের নোটিশে ইঞ্জিনিয়ারিং, সিগন্যাল, মেডিকেল টিম, নদী ও সাগরভিত্তিক ইউনিট পাঠাতেও প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমরা জাতিসংঘ সদর দফতর এবং মাঠপর্যায়ের মিশনেও ঊর্ধ্বতন পদে নেতৃত্ব দিতে আগ্রহী।
তিনি বলেন, আফ্রিকান পিসকিপিং র্যা্পিড রেসপন্স পার্টনারশীপসহ মিশনসমূহে বাংলাদেশ লজিস্টিক ও সার্ভিস সাপ্লাই পার্টনারশীপে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশে একটি পিস সাপোর্ট অপারেশন এন্ড ট্রেনিং ইনস্টিটিউট (বিআইপিএসওটি) রয়েছে। আমরা সব দেশের মহিলা শান্তিরক্ষীসহ এটিকে শান্তিরক্ষীদের প্রশিক্ষণের একটি বৈশ্বিক কেন্দ্রে পরিণত করার পরিকল্পনা নিয়েছি। তিনি বলেন, প্রশিক্ষণ, যৌথ মহড়া এবং অন্যান্য দেশকে প্রয়োজনীয় কারিগরী সমর্থন প্রদানের মাধ্যমে আমরা আমাদের অভিজ্ঞতা বিনিময় করতে চাই।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের লক্ষ্য হচ্ছে বেসামরিক লোকজনকে রক্ষা করা। আমাদের নিয়মিত শান্তিরক্ষা প্রশিক্ষণে জেন্ডার ও মানবাধিকার ইস্যু একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আমরা আমাদের শান্তিরক্ষীদের ভাষাগত দক্ষতা আরো বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিনিয়োগে আগ্রহী।
তিনি বলেন, আমাদের অঙ্গীকার এগিয়ে নিয়ে যেতে আমরা যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য দেশের সঙ্গে আমাদের অংশীদারিত্বকে মূল্য দেই। মিশনে সৈন্য পাঠানোর আমাদের দীর্ঘ অভিজ্ঞতার আলোকে বাংলাদেশ শান্তিরক্ষা অভিযানের প্রকৃতি অনুযায়ী অবিরাম সৈন্য মোতায়েন সক্ষমতা হালনাগাদ করে যাচ্ছে। দ্রুত সাড়া দেয়া এবং ঝুঁকিপূর্ণ ও জটিল মিশনসমূহে সৈন্য মোতায়েনের সক্ষমতার ফলে বাংলাদেশ একটি নির্ভরযোগ্য অবদানকারীতে পরিণত হয়েছে।
গত ডিসেম্বরে জাতিসংঘ মহাসচিব আমাকে জরুরি ফোন করেন। এর ফলে আমরা মাত্র ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে দক্ষিণ সুদানে একটি পদাতিক ইউনিট মোতায়েনের জন্য প্রস্তুত করি।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ দুই থেকে তিন সপ্তাহের মধ্যে মেডিকেল ও ইঞ্জিনিয়ারিং ইউনিট মোতায়েন করেছে। খুব অল্প সময়ের নোটিশে আমরা কঙ্গো থেকে দক্ষিণ সুদানে আমাদের বিমানবাহিনীর হেলিকপ্টার ও পুলিশ ইউনিট মোতায়েন করেছি।
নীল হেলমেটের অধীনে বাংলাদেশ মালি, পূর্ব কঙ্গো এবং মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্রে দ্রুত সৈন্য মোতায়েন করেছে।
তিনি বলেন, সিয়েরালিওন ও কঙ্গোতে কোন দেশ সৈন্য পাঠাতে রাজি হয়নি। আমাদের শান্তিরক্ষীরা সেখানে আলোচনা করে বিদ্রোহীদের নিয়ন্ত্রিত এলাকায় প্রবেশ করে এবং শান্তি বজায় রাখে। ভবিষ্যতেও বাংলাদেশ দ্রুত মোতায়েনের এই দক্ষতা বজায় রাখবে বলে প্রধানমন্ত্রী আশ্বাস দেন।
শেখ হাসিনা বলেন, শান্তিরক্ষীরা প্রতিনিয়ত নতুন নতুন চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হচ্ছে। জাতিসংঘ ও শান্তিরক্ষীদের জন্য এটি আরো জটিল এবং বিপজ্জনক হয়ে উঠছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সৈন্য ও পুলিশদের জন্য আরো প্রচুর ব্যয় প্রয়োজন এবং ব্যাপক প্রশিক্ষণ প্রয়োজন। তারা বড় ধরনের নিরাপত্তার হুমকির সম্মুখীন।
-বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাসস)