432
Published on সেপ্টেম্বর 17, 2014তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের সরকার অর্থনৈতিক উন্নয়নের লক্ষ্যে এফডিআই আকর্ষণকে আরো বিনিয়োগবান্ধব ও সহজতর করতে বদ্ধপরিকর।’
প্রধানমন্ত্রী আজ এখানে প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে বিনিয়োগ বোর্ড আয়োজিত আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ ফোরাম-২০১৪ উদ্বোধন করেন।
বাংলাদেশকে একটি গতিশীল ও বিকাশমান অর্থনীতির দেশ হিসেবে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে অংশ নেয়ায় বিনিয়োগকারীদের অভিনন্দন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা বিনিয়োগ আকর্ষণে কি কি সুবিধা দিচ্ছি তা আপনারা প্রত্যক্ষভাবে যাচাই করুন।’
বাংলাদেশ সরকারের বিনিয়োগ সুবিধা ও প্রণোদনার মাধ্যমে সম্ভাবনাময় খাতগুলোতে বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার লক্ষ্যে বিনিয়োগ বোর্ড আয়োজিত এ ফোরামে ২১ দেশের ২৭৩ জন দেশী ও বিদেশী বিনিয়োগকারী যোগ দিয়েছেন।
অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত, ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বারস অব কমার্স এন্ড ইন্ড্রাস্টির (এফবিসিসিআই) সভাপতি কাজী আকরাম উদ্দিন আহমেদ, ফ্রান্স-বাংলাদেশ চেম্বারস অব কমার্স এন্ড ইন্ড্রাস্টির (সিসিআইএফবি) সভাপতি ও লাফার্জ সুরমা সিমেন্টের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা তারেক আহমেদ ইএলবিএ, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব আবুল কালাম আজাদ অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন। এতে সভাপতিত্ব করেন বিনিয়োগ বোর্ডের নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. এস এ সামাদ।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্বমন্দা ও অর্থনৈতিক মন্থরতা সত্ত্বেও বিগত দুই দশক ধরে এশিয়ার দেশগুলোর উদীয়মান অর্থনীতিগুলো ব্যাপক প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। এরমধ্যে বাংলাদেশ গত পাঁচ বছর ধরে গড়ে ৬ দশমিক ২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করছে।
তিনি বলেন, আমাদের অনেক প্রতিবেশীও নিম্ন আয়ের দেশ থেকে উন্নয়নশীল অর্থনীতির পথে যাত্রা শুরু করেছে। অধিক দেশীয় ও বৈদেশিক বেসরকারী বিনিয়োগ আকর্ষণ, আঞ্চলিক বাণিজ্য প্রবৃদ্ধি বাড়ানো এবং বিনিয়োগ ধরে রাখা চলমান অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রায় বিশেষ অবদান রেখেছে। পাশাপাশি বিনিয়োগের জন্য উন্মুক্ত গতিশীল অর্থনীতিগুলো বিভিন্ন দেশকে আঞ্চলিক ও সমন্বিত উৎপাদন প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণের সুযোগ করে দিয়েছে।
দক্ষিণ এশিয়াকে বিশ্বের সবচেয়ে কম সংযুক্ত অঞ্চলগুলোর মধ্যে একটি হিসেবে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, বিশ্বের প্রায় এক-চতুর্থাংশ জনসংখ্যা থাকা সত্ত্বেও এ অঞ্চলে বৈদেশিক বিনিয়োগের পরিমাণ সার্বিক বৈশ্বিক বিনিয়োগের মাত্র ২ শতাংশ। বিশ্বে গড়ে মাথাপিছু বৈশ্বিক বৈদেশিক বিনিয়োগ আকর্ষণের পরিমাণ ৬৪৩ ডলার হলেও এ অঞ্চলে এর পরিমাণ মাত্র ২০ ডলার। এ সঙ্গে আন্তঃআঞ্চলিক বৈদেশিক বিনিয়োগের পরিমাণ হচ্ছে বছরে গড়ে মাত্র ৩০০ মিলিয়ন ডলার। যা এ অঞ্চলের মোট বিনিয়োগের মাত্র ১ শতাংশ। অথচ দক্ষিণ এশিয়াতে বিনিয়োগকারীদের জন্য রয়েছে বাজার সুবিধা এবং মধ্যম আয়ের ক্রমবর্ধমান জনগোষ্ঠী। এখানে স্থানীয় ভোক্তা চাহিদা ও বহুমুখী রপ্তানী বৃদ্ধির ফলে অভ্যন্তরীণ বাজারের সম্প্রসারণ ও বিনিয়োগ আকর্ষণীয় হচ্ছে। এছাড়া বাংলাদেশের মত দক্ষিণ এশীয় দেশগুলো বৈশ্বিক উন্নয়নের ধারণা থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে অর্থনৈতিক সংস্কারের মাধ্যমে প্রবৃদ্ধির পথে এগিয়ে যাচ্ছে।
তিনি বঙ্গোপসাগর প্রবৃদ্ধি ত্রিভুজের ওপর বিশেষ গুরুত্বারোপের কথা উল্লেখ করে বলেন, এই প্রবৃদ্ধি ত্রিভূজ চীন ও জাপানসহ বাংলাদেশকে দক্ষিণ ও পূর্ব এশিয়ার প্রতিবেশীদের সাথে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাড়াতে অনুঘটকের কাজ করতে পারে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের বাণিজ্য প্রত্যাশা সরাসরি সমুদ্রের সাথে সম্পৃক্ত। কিন্তু এক্ষেত্রে ভারত ও মিয়ানমারের সাথে অচিহ্নিত সমুদ্রসীমা ছিল উন্নয়নের পথে বড় ধরনের বাধা। বর্তমান সরকারের উদ্যোগে প্রতিবেশীদের সাথে এ বিষয়ে একটি বন্ধুত্বপূর্ণ সমাধান হয়েছে এবং সবাই তাদের প্রযোজ্য অংশ পেয়েছে। এখন প্রাকৃতিক সম্পদ অনুসন্ধানে তটরেখা থেকে ৩৫৪ নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত বাংলাদেশের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এই “সুনীল অর্থনীতি” (ব্লু ইকোনমি) সমুদ্র সম্পদ ব্যবহারের অসীম সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত করেছে।
শেখ হাসিনা এ ফোরামকে আঞ্চলিক প্রতিবেশীদের সাথে আরও নিবিড় সহযোগিতা এবং আলোচনার মাধ্যমে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধির উল্লেখযোগ্য ধাপ হিসেবে বিবেচনা করার কথা উল্লেখ করে বলেন, বাংলাদেশে বিনিয়োগের অপার সম্ভাবনা রয়েছে। বিশ্বখ্যাত সংস্থা গোল্ডম্যান সাচস একবিংশ শতাব্দীতে যে ১১টি দেশ বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধিতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখবে তাদের মধ্যে বাংলাদেশকে অন্তর্ভুক্ত করেছে। সিটিগ্রুপ বাংলাদেশকে গ্লোবাল গ্রোথ জেনারেটর হিসেবে চিহ্নিত করেছে। গত পাঁচ বছর ধরে বাংলাদেশের সার্বভৌম ঋণমানও স্থিতিশীল রয়েছে।
বাংলাদেশে দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে প্রতিযোগিতামূলক ও বিনিয়োগবান্ধব বৈদেশিক বিনিয়োগ নীতি প্রবর্তন করার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা শতভাগ বৈদেশিক পুঁজি, অবারিত রেমিট্যান্স পলিসি এবং সহজেই মুনাফা, কারিগরি সহায়তা ফি ও রয়্যালটি ফি প্রত্যাবাসনের সুবিধা দিয়েছি। প্রায় সকল খাতই বৈদেশিক বিনিয়োগের জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে।
তিনি বলেন, তাঁর সরকার ২০০৯ সাল থেকে ব্যবসায়ী ও বিনিয়োগকারীদের চাহিদা অনুযায়ী ব্যাপক সংস্কার কর্মসূচী বাস্তবায়ন করেছে এবং প্রণোদনামূলক বিশেষ পদক্ষেপ নিয়েছে। এসব পদক্ষেপের মধ্যে বিদ্যুৎ ও অবকাঠামো খাতকে অগ্রাধিকার দেয়ার পাশাপাশি আধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থা ও বিশ্বমানের আইটি সেক্টর গড়ে তোলা এবং ৫টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত করতে তাঁর সরকার দিন-রাত অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানে বিনিয়োগ বোর্ড প্রকাশিত কিছু প্রকাশনার মোড়ক উন্মোচন করেন।
-বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাসস)