786
Published on জুলাই 10, 2014বিএনপি পাঁচ বছর ক্ষমতায় থাকলেও এ নিয়ে তারা তাদের দায়িত্ব ঠিকমত পালন করেনি অভিযোগ করে তিনি বলেন, “বিএনপির এক নেতা বলেছেন আমরা তালপট্টি পাইনি। তাকে উচিত বঙ্গোপসাগরে পাঠিয়ে দেয়া। তালপট্রি কোথায় আছে খুঁজে বের করুক।”
তিনি আজ সকালে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় পরিদর্শনকালে কর্মকর্তাদের উদ্দেশে ভাষণ দিচ্ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ৫ জানুয়ারির নির্বাচন যদি জয়ী না হতাম তাহলে ভারতের কাছ থেকে সমুদ্রসীমা আনতে পারতাম কীনা সন্দেহ। কারণ অতীতে কোন সরকার এ ব্যাপারে কোন উদ্যোগ নেয়নি।
ভারত ও মিয়ানমারের বিরুদ্ধে সমুদ্র বিজয়কে সরকারের বিরাট সাফল্য উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই বিজয়ের ফলে অর্জিত সম্পদ যথাযথ কাজে লাগানো হবে।
দ্য হেগ এর সালিশী ট্রাইব্যুনাল গত ৭ জুলাই বঙ্গোপসাগরে ২০০ নটিক্যাল মাইলের একচ্ছত্র অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং ২০০ নটিক্যাল মাইলের বাইরে মহীসোপান অঞ্চলে বাংলাদেশের নিরঙ্কুশ ও সার্বভৌম অধিকার সুনিশ্চিত করে বাংলাদেশ-ভারত সমুদ্রসীমা নির্ধারণী মামলার রায় ঘোষণা করে।
রায়ের ফলে বাংলাদেশ বঙ্গোপসাগরের বিতর্কিত জলসীমানায় ২৫ হাজার ৬০২ বর্গ কিলোমিটার এলাকার মধ্যে ১৯ হাজার ৬শ ৬৭ বর্গ কিলোমিটার এলাকা পেয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সকালে সচিবালয়ে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় পরিদর্শন করেন। মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি এ সময় প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানান। মহিলা ও শিশু বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ফজিলাতুন্নেছা ইন্দিরা , প্রধানমন্তীর মুখ্য সচিব আবদুস সোবহান সিকদার, মন্ত্রণালয়ের সচিব তারিকুল ইসলাম, প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব এ কে এম শামীম চৌধুরী ও মন্ত্রণালয়ের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা এসময় উপস্থিত ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশকে দ্রুত এগিয়ে নিতে পুরুষের পাশাপাশি নারীকেও সমান অবদান রাখার আহবান জানিয়ে বলেছেন, নারীরা জাতীয় উৎপাদনে সমানভাবে এগিয়ে আসলে আমরা সমৃদ্ধ জাতিতে পরিণত হতে পারবো।
তিনি বলেন,“ আমরা চাই, নারীরা জাতীয় উৎপাদনে সমানভাবে এগিয়ে আসুক। তাহলেই আমরা উন্নত, সমৃদ্ধ জাতিতে পরিণত হতে পারবো। জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠা করতে পারবো।
নারীকে সেভাবে তৈরি হওয়ার আহবান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, অধিকার আদায় করে নিতে হবে। সেজন্য দেশের প্রতিটি নারীকে সামর্থ্য অর্জন করতে হবে। শিক্ষিত হতে হবে।
সরকারের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহায়তা দেয়া হবে উল্লেখ করে তিনি নারীদের আরও উদ্যোমী হওয়ার আহবান জানান। প্রধানমন্ত্রী বলেন,“নারীদের আরও উদ্যোমী হতে হবে। নিজস্ব সামর্থ্যরে ওপর আস্থা-বিশ্বাস রাখতে হবে। যোগ্যতা দিয়েই সমাজে জায়গা করে নিতে হবে। সরকার থেকে আমরা সব ধরনের সহায়তা দিয়ে যাবো। ”
প্রধানমন্ত্রী বলেন, নারী ও শিশুর উন্নয়নের মাধ্যমেই দেশের টেকসই অগ্রগতি নিশ্চিত করা সম্ভব। তাই আমরা নারী ও শিশুর উন্নয়নে সর্বাত্মক কর্মসূচী বাস্তবায়ন করছি। শহরের পাশাপাশি গ্রামের নারীদের উন্নয়নেও কাজ করছি।
এজন্য পুরুষদের মানসিকতার পরিবর্তন সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন-একথা উল্লেখ করে তিনি বলেন,“ নারীরাই কন্যা, জায়া, জননী। নারীর সেই মর্যাদা সমাজের সর্বস্তরে নিশ্চিত করতে হবে। এ কাজটি শুরু করতে হবে পরিবার থেকে। বাইরে নারী মুক্তির কথা বলবেন আর ঘরে গিয়ে নারী নির্যাতন করবেন - এ হিপোক্রেসি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।”
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৯৬ সালের সরকারের সময় থেকেই নারীর অর্থনৈতিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক ক্ষমতায়নে কাজ করে যাচ্ছেন। ২০১১ সালে জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতি প্রণয়ন করা হয়েছে। এর বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। সকল মন্ত্রণালয়ে নারী উন্নয়ন সংক্রান্ত ফোকাল পয়েন্ট নির্ধারণ করা হয়েছে। ৪০টি মন্ত্রণালয়ের জন্য জেন্ডার বাজেট প্রণয়ন করা হয়েছে।
তিনি বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সংবিধানের ১৯(৩) অনুচ্ছেদে সর্বস্তরে নারীর অংশগ্রহণ ও সম-সুযোগ নিশ্চিত করেন। তিনি বাঙালি নারীকে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর পথ দেখিয়েছেন। দেশের জনসংখ্যার অর্ধেক নারী উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, সমাজের এ অর্ধেক অংশকে দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে কার্যকরভাবে সম্পৃক্ত করাই এই মন্ত্রণালয়ের প্রধান দায়িত্ব।
নারীর উন্নয়নে তার সরকারের উদ্যোগ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, পারিবারিক সহিংসতা প্রতিরোধ ও সুরক্ষা আইন ২০১০, এসিড নিয়ন্ত্রণ আইন ২০১০, মানবপাচার প্রতিরোধ ও দমন আইন ২০১২ প্রণয়ন করা হয়েছে। ইভটিজিং বন্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেয়া সহ মাতৃত্বকালীন ছুটির মেয়াদ স্ববেতনে ৬ মাসে উন্নীত করা হয়েছে। ন্যাশনাল আইডি ও পাসপোর্টে বাবার পাশাপাশি মায়ের নাম সংযুক্ত করা হয়েছে।
এছাড়াও নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ প্রণয়ন করা হয়েছে। নারী ও শিশুর আইনগত সহায়তা দেয়া হচ্ছে। সারা দেশে স্থানীয় পর্যায়ে ৪৪টি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল স্থাপন করা হয়েছে। নারী নির্যাতন প্রতিরোধ কমিটি গঠন এবং নির্যাতিত নারীদের সার্বিক সহায়তার জন্য ৭টি জেলায় ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টার স্থাপন করা হয়েছে বলে তিনি তার বক্তব্যে উল্লেখ করেন।
নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, সংসদ নেতা, স্পীকার, সংসদ উপনেতা ও বিরোধীদলীয় নেতা চারজনই নারী। বিশ্বে এর দ্বিতীয় নজির নেই। ২০ জন নির্বাচিত সংসদ সদস্যসহ ৭০ জন নারী এমপি আছেন। ২০ শতাংশ নারী সংসদ সদস্য বিশ্বের খুব কম দেশেই আছে।
তিনি বলেন, “আমরা আইন করে স্থানীয় সরকারগুলোতে নারীর জন্য আসন সংরক্ষণ করেছি। পুরুষের সাথে প্রতিযোগিতা করেও অনেক নারী নির্বাচিত হচ্ছেন। ফলে গ্রাম পর্যন্তÍ নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন হয়েছে।
২০১৩ সালে প্রকাশিত গ্লোবাল জেন্ডার গ্যাপ রির্পোট অনুযায়ী নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবস্থান এখন বিশ্বে ৭ম বলে উল্লেখ করেন তিনি।
নারী শিক্ষা নিয়ে তিনি বলেন,মেয়ে শিক্ষার্থীদের জন্য স্নাতক পর্যায় পর্যন্ত উপবৃত্তি চালু করা হয়েছে। দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত মেয়েদের শিক্ষা অবৈতনিক করা হয়েছে। শিক্ষাক্ষেত্রে নারী-পুরুষ সমতা নিশ্চিত করা হয়েছে। এর ফলে এমডিজি ২ ও ৩ এর লক্ষ্য অর্জিত হয়েছে।
জাতিসংঘসহ বিভিন্ন দেশ এ ব্যাপারে বাংলাদেশের প্রশংসা করেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা এমডিজি পুরস্কার ও সাউথ-সাউথ পুরস্কার পেয়েছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোতে নারীর স্বাস্থ্য, পুষ্টি ও পরিবার পরিকল্পনা সেবা প্রদান করা হচ্ছে। জেলা ও উপজেলা হাসপাতালে মোবাইল ফোন স্বাস্থ্য সেবা চালু করা হয়েছে। এখান থেকে নারী ও শিশু রোগীরাই বেশি উপকৃত হচ্ছে। নারী ও শিশুর প্রতি বৈষম্য হ্রাসে জনসচেতনতা সৃষ্টি করা হচ্ছে।
এছাড়াও কর্মজীবী মায়েদের জন্য ৬টি বিভাগীয় শহর ও ১৩টি জেলা শহরে মোট ৪৪টি ডে-কেয়ার সেন্টার চালু করা হয়েছে। ৭টি কর্মজীবী মহিলা হোস্টেল চালু এবং গার্মেন্টন্স কর্মীদের জন্য ঢাকা ও চট্টগ্রামে ডরমিটরি নির্মাণ করা হচ্ছে বলে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।