525
Published on জুন 27, 2014প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ দেশের মানুষের শক্তিতে বলীয়ান হয়েই দেশ পরিচালনা করে। এদেশ সামনের দিকে এগিয়ে যাবে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার সম্পন্ন করে জাতি কলংকমুক্ত হবে। আওয়ামী লীগই পারবে বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশকে মর্যদার আসনে প্রতিষ্ঠিত করতে।
শেখ হাসিনা আজ বিকালে রাজধানীর সোহরাওয়ার্র্দী উদ্যানে আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে আলোচনা সভায় সভাপতির ভাষণে একথা বলেন।
গত ২৩ জুন ছিল আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। এ উপলক্ষে তিন দিনব্যাপী আলোচনা সভার আজ ছিল শেষ দিন। এতে অন্যান্যের মধ্যে বক্তৃতা করেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য ও শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ ও সুরঞ্জিত সেন গুপ্ত এমপি, সভাপতি মন্ডলীর সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী, এডভোকেট সাহারা খাতুন এমপি, দলের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা. দীপু মনি এমপি, মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এম এ আজিজ এবং যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও খাদ্যমন্ত্রী এডভোকেট কামরুল ইসলাম। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন দলের প্রচার সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ এবং সহ প্রচার সম্পাদক অসীম কুমার উকিল।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগের জন্ম, প্রতিষ্ঠা সংগ্রাম-আন্দোলন সব কিছু হয়েছিল বাংলাদেশের মানুষের স্বাধীনতা অর্জনের জন্য। স্বাধীন জাতি হিসাবে বিশ্বের বুকে মর্যদার আসনে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য। আর এই স্বাধীনতা অর্জনে অগ্রনী ভূমিকা রেখেছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
আওয়ামী লীগকে তিনি হীরার টুকরোর সাথে তুলনা করে বলেন, ‘আওয়ামী লীগ হচ্ছে হীরের টুকরোর মত। যতই কাটবে ততই রশ্মি বেরুবে। আর এই রশ্মি হচ্ছে বাঙ্গালী জাতি। আওয়ামী লীগ হচ্ছে বাঙ্গালী জাতির দ্বারা গঠিত সংগঠন। অতীতে এ দলের বিরুদ্ধে অনেক ষড়যন্ত্র হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নিয়ে এ দেশ যেন দাঁড়াতে না পারে সেই জন্য অনেক ষড়যন্ত্র হয়েছে, অনেক আঘাত এসেছে কিন্তু আওয়ামী লীগকে কেউ ধংস করতে পারেনি।
তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগের ইতিহাস পর্যলোচনা করলে দেখা যায় বাঙ্গালী জাতি আজ পর্যন্ত যা কিছু পেয়েছে আওয়ামী লীগের কাছ থেকেই পেয়েছে। বাঙ্গালীর যতটুকু প্রাপ্তি তার সবটুকুই আওয়ামী লীগের কাছ থেকেই। এ প্রসঙ্গে তিনি ৫২’র ভাষা আন্দোলন, ৫৪’র যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন এবং ৫৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকার সময় শাসনতন্ত্রে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষার মর্যদা দেয়ার কথা উল্লেখ করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, মাওলানা ভাসানী যখন আওয়ামী লীগ ছাড়েন তখন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মন্ত্রীত্ব ছেড়ে দিয়ে দলের হাল ধরেন যার দৃষ্টান্ত কমই আছে। আর বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া দলই হচ্ছে আওয়ামী লীগ।
বিএনপি’র প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান হত্যার ব্যাপারে বিএনপির অভিযোগের জবাবে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘আমরা কেন জিয়াকে হত্যা করতে যাবো? খালেদা জিয়াকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, যদি জিজ্ঞাসা করি আপনি কোথায় ছিলেন ?’
জিয়াউর রহমান নিহত হওয়ার পর শেখ হাসিনাই প্রথম বিবৃতি দিয়েছিলেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘যখন ক্যু হলো একমাত্র আমি জিল্লুর চাচার (সাবেক রাষ্ট্রপতি) শ্বশুর বাড়িতে বসে বিবৃতি লিখলাম- গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা যেন অক্ষুণ্ণ থাকে। কারণ আমাদের ভয় ছিলো এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে মার্শাল ল’ জারি করা হতে পারে। আমি ঢাকায় এসে সেজো ফুপুর বাসায় উঠলাম। এর আগে জিয়াউর রহমান আমাকে ৩২ নাম্বারের বাড়িতে ঢুকতে দেয়নি। আমার বাবা-মা’র নামে মিলাদ পড়াতে দেয়নি। আমি যাযাবরের মতো ঘুরেছি।’
সেই সময় কারও কথা বলার সাহস ছিল না উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বেগম জিয়াকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘এরশাদ ক্ষমতা দখল করার সাহস কোথায় পেলো আপনি যদি মদদ দিয়ে না থাকেন’।
বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের সঙ্গে বিএনপি’র প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমান সম্পৃক্ত এমন ইঙ্গিত দিয়ে বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, এই ষড়যন্ত্রের সঙ্গে জড়িত আর কেউ নয়, আওযামী লীগের কুলাঙ্গার খন্দকার মোশতাক। এই মোশতাকের ষড়যন্ত্রে কারা মদদ দিয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জিয়াউর রহমানের হাতে আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগ-এর অনেক নেতা-কর্মী নিহত হয়েছেন। জিয়া অনেক সেক্টর কমান্ডারকে হত্যা করেছে। এতবড় গাদ্দারি সে (জিয়াউর রহমান) বাংলার মানুষের সঙ্গে করেছে। ১৯৭৫-৯৬ পর্যন্ত হত্যা-গুম আর ষড়যন্ত্র পেয়েছে বাংলার মানুষ। এ সময়ে স্বাধীনতার শেষ চিহ্নও মুছে ফেলার চেষ্টা করা হয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, খুন করতে তারাই পারদর্শি। যেমন তার স্বামী খুনি, নিজে খুনি এবং তার ছেলেও খুনি-বাংলাদেশের মানুষ এটা জানে। একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলা করে মানুষ হত্যা করা হয়েছে। কিবরিয়া, আহসানউল্লাহ মাষ্টার খুন হয়েছেন। নির্বাচন ঠেকানোর নামে বাসে ট্রেনে সিএনজিতে আগুন দিয়ে মানুষ হত্যা করা হয়েছে কার নির্দেশে? বিএনপির নেত্রীইতো এর হোতা। ৫ জানুয়ারির নির্বাচন ঠেকাতে পারেনি।
বর্তমান সরকারের উন্নয়ন চিত্র তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি বলেছিলাম নিজেদের অর্থে পদ্মা সেতু করবো, কারও কাছে মাথা নত করবো না। আজকে পদ্মা সেতুর কাজ শুরু হয়েছে। এই ঢাকা শহরের অনেক সমস্যা আমরা দূর করেছি। আরও যে সকল সমস্যা আছে তাও পর্যায়ক্রমে দূর করবো। আমরা করি কেন? আমরা করি মনের টানে। এই আওয়ামী লীগ জাতির পিতার নেতৃত্বে দেশ স্বাধীন করতে ত্যাগ স্বীকার করেছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা বাংলাদেশকে প্রাচ্যের সুইজারল্যান্ড হিসেবে গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখতেন। সুইজারল্যন্ড হিসেবেই বাংলাদেশ গড়ে উঠবে। আমাদের রিজার্ভ এখন ২১ বিলিয়ন ডলার। আমাদের এখন কারো কাছে হাত পাততে হবে না। ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে বিশ্বের মানচিত্রে একটি উন্নত দেশ হিসেবে দাঁড় করাবো ইনশাআল্লাহ। ২০২১ সালের মধ্যেই বাংলাদেশ হবে মধ্যম আয়ের দেশ।
তিনি আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী, প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক সামসুল হক এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানান।