580
Published on জুন 22, 2014বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ মানেই ‘স্বাধীনতার স্বপ্নদেখা’ জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর সুদূরপ্রসারী দৃষ্টি, পঞ্চান্ন হাজার বর্গ মাইল ভূখন্ডের একটি নতুন ইতিহাস সৃষ্টি। ইতিহাস বিনির্মানেই থেমে থাকেনি দেশের ঐতিহ্যবাহী এ দলটি, অদম্য বাসনা আর বিসর্জনের ক্যানভাসে নিজ জাতির মুক্তির মানচিত্র এঁকে সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার পথে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ক্রমেই সমৃদ্ধ করে চলেছে আমাদের প্রাণাধিক প্রিয় জন্মভূমিকে।
বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ এক মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ, আর মুদ্রাটি হলো বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলার স্বপ্ন বাস্তবায়নে একের পর এক বিপর্যয় সামাল দিয়ে দেশরত্ন শেখ হাসিনার উন্নয়নের পতাকাবাহী নৌকা তরতর করে এগিয়ে যাচ্ছে সামনের দিকে- প্রান্তিক মানুষের অন্ন-কর্ম-স্বাস্থ্য-শিক্ষা নিশ্চিত করার মাধ্যমে যে নতুন অভিযান শুরু হয়েছিল তা এখন আধুনিক সুখী সমৃদ্ধ ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার প্রয়াসে এক নতুন অধ্যায়ের রচনা করেছে। হ্যা, এটাই বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ- জাতির আকাঙ্খা ও স্বপ্ন পূরণের আনন্দ-বেদনার চিরন্তর সঙ্গী।
আজ গণমানুষের প্রিয় দল আওয়ামী লীগের জন্মদিন ।বাঙালি জাতির মুক্তির মূলমন্ত্রে দীক্ষিত হয়ে গণতান্ত্রিকভাবে জন্ম নেয়া উপমহাদেশের ঐতিহ্যবাহী বৃহৎ রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ আজ ৬৬ বছরে পা রাখল। ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন ঢাকার বিখ্যাত রোজ গার্ডেনে দলটি প্রতিষ্ঠালাভ করেছিল ‘পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ’ নামে। ১৯৫৬ সালে ময়মনসিংহে অনুষ্ঠিত দলীয় কাউন্সিলে ‘মুসলিম’ শব্দটি বাদ দিয়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ’ নামকরণের মাধ্যমে দলটি অসাম্প্রদায়িক রূপলাভ করে।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও জন্মভূমি বাংলাদেশ: আওয়ামী লীগের জন্মলাভের পর মহান ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে '৫৪ সালে যুক্তফ্রন্টের নির্বাচন, '৬৬ সালের ঐতিহাসিক ছয়দফা, '৬৯ সালের গণঅভূস্থান এবং '৭০ সালের নির্বাচনের মাধ্যমে এই দলের নেতৃত্বে বাঙালি জাতি ক্রমশ এগিয়ে যায় স্বাধীনতার দিকে। এই দলের নেতৃত্বেই ১৯৭১ সালে সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভ করে। বিশ্ব মানচিত্রে স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসাবে বাংলাদেশ নিজেদের স্থান দখল করে। আর এসব আন্দোলনের পুরোধা ও একচ্ছত্র নায়ক ছিলেন ইতিহাসের মহানায়ক সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
১৯৭৫ সালে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর দীর্ঘ ২১ বছর বিরোধী দলে অবস্থান করে আওয়ামী লীগ। এরপর ১৯৯৬ সালের ২৩ জুন দেশরত্ন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ আবার সরকার গঠন করে। এর আগে এই দলের স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন সংগ্রামেই দেশে প্রতিষ্ঠিত হয় সংসদীয় গণতন্ত্র।২০০১ সালের ২১ আগস্ট ভয়াল গ্রেনেড হামলায় দলীয় প্রধান শেখ হাসিনাসহ দলের শীর্ষস্থানীয় অনেক নেতা অলৌকিকভাবে প্রাণে বেঁচে গেলেও ঝরে যায় অসংখ্য তাজা প্রাণ। ওয়ান ইলেভেনের পর আবারও ঝড় আসে আওয়ামী লীগের ওপরে। আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাকে দীর্ঘ ১১ মাস কারাগারে বন্দী রেখেও বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া আওয়ামী লীগকে ভাঙতে পারেনি ষড়যন্ত্রীরা। সর্বশেষ ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের তিন-চতুর্থাংশেরও বেশি আসনে দেশের জনগণ ভোট দিয়ে ক্ষমতায় বসিয়েছে আওয়ামী লীগকে। পরে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি আবারো টানা দ্বিতীয় বারের মতো নির্বাচিত হয়ে, উন্নয়নের রাজনীতিকে নতুন উচ্চতায় তুলে, এখনো জনগনের সেবা করে যাচ্ছে ঐতিহাসিক এ দলটি।
ইতিহাসের চোখে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এর ক্রম বিকাশ: ১৯৪৯ সাল, ২৩-২৪ জুন, পুরান ঢাকার কেএম দাস লেনে বশির সাহেবের রোজ গার্ডেনের বাসভবনে তরুণ মুসলিম লীগ নেতাদের উদ্যোগে রাজনৈতিক কর্মী সম্মেলনের ভেতর দিয়ে প্রতিষ্ঠিত হয় পাকিস্তানের প্রথম প্রধান বিরোধী দল পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ।
প্রথম কাউন্সিলে সভাপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী এবং সাধারণ সম্পাদক হয়েছিলেন শামসুল হক। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন প্রথম কমিটির যুগ্ম-সম্পাদক। দলের দ্বিতীয় কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয় ১৯৫৩ সালে ময়মনসিংহে। এতে সভাপতি হন মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী এবং সাধারণ সম্পাদক শেখ মুজিবুর রহমান।
১৯৫৫ সালের ২১-২৩ অক্টোবর ঢাকার সদরঘাটের রূপমহল সিনেমা হলে দলের তৃতীয় কাউন্সিল অধিবেশনে আওয়ামী লীগ অসাম্প্রদায়িক সংগঠনে পরিণত হয়। দলের নতুন নামকরণ হয় পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগ। নিখিল পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগের সভাপতি হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী এ প্রসত্মাবটি উত্থাপন করেন। পরে কাউন্সিল অধিবেশনে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে মাওলানা ভাসানী ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বহাল থাকেন।
'৫৭ সালে কাগমারী সম্মেলনে সোহরাওয়ার্দী-ভাসানীর মতপার্থক্যের কারণে প্রথমবারের মতো আওয়ামী লীগ ভেঙ্গে যায়। ভাসানীর নেতৃত্বে গঠিত হয় ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ)। আর মূল দল আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন মাওলানা আবদুর রশীদ তর্কবাগীশ ও সাধারণ সম্পাদক শেখ মুজিবুর রহমান অপরিবর্তিত থাকেন। '৫৮ সালে পাকিস্তানে সামরিক শাসন জারি হলে আওয়ামী লীগের কর্মকান্ড স্থগিত করা হয়। দীর্ঘ ছয় বছর 'আন্ডারগ্রাউন্ড' রাজনীতি করার পর '৬৪ সালে দলটির কর্মকান্ড পুনরুজ্জীবিত করা হয়। এতে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে তর্কবাগীশ-মুজিব অপরিবর্তিত থাকেন।
১৯৬৬ সালের কাউন্সিলে দলের সভাপতি পদে নির্বাচিত হন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তাঁর সঙ্গে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন তাজউদ্দীন আহমেদ। এর পরে '৬৮ ও '৭০ সালের কাউন্সিলে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক অপরিবর্তিত থাকেন। এই কমিটির মাধ্যমেই পরিচালিত হয় মহান মুক্তিযুদ্ধ। দেশ স্বাধীন হবার পর ১৯৭২ সালে ৰমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রথম কাউন্সিলে সভাপতি হন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান। '৭৪ সালে বঙ্গবন্ধু সভাপতির পদ ছেড়ে দিলে সভাপতির দায়িত্ব দেয়া হয় এএইচএম কামরুজ্জামানকে। সাধারণ সম্পাদক পদে বহাল থাকেন জিল্লুর রহমান।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট আসে আওয়ামী লীগের ওপর মারণাঘাত। বঙ্গবন্ধু সপরিবারে হত্যার পর রাজনৈতিক পটপরিবর্তন হলে আওয়ামী লীগের রাজনীতি আবারও স্থগিত করা হয়। '৭৬ সালে ঘরোয়া রাজনীতি চালু হলে আওয়ামী লীগকেও পুনরুজ্জীবিত করা হয়। এতে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক করা হয় মহিউদ্দিন আহমেদ ও বর্তমান সংসদের উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীকে। '৭৭ সালে এই কমিটি ভেঙ্গে করা হয় আহ্বায়ক কমিটি। এতে দলের আহ্বায়ক করা হয় সৈয়দা জোহরা তাজউদ্দীনকে।
'৭৮ সালের কাউন্সিলে দলের সভাপতি করা হয় আবদুল মালেক উকিলকে এবং সাধারণ সম্পাদক হন আবদুর রাজ্জাক। দলীয় কার্যক্রমে গতি আনার জন্য নির্বাসনে থাকা বঙ্গবন্ধুর কন্যা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে আনা হয়। দেশে ফেরার আগেই '৮১ সালের কাউন্সিলে শেখ হাসিনাকে আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদক পদে বহাল রাখা হয় আবদুর রাজ্জাককে। আবারও আঘাত আসে দলটির ওপর।
'৮৩ সালে আবদুর রাজ্জাকের নেতৃত্বে দলের একটি অংশ বাকশাল গঠন করলে সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীকে আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দেয়া হয়। '৮৭ সালের কাউন্সিলে শেখ হাসিনা সভাপতি ও সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী সাধারণ সম্পাদক হন।
'৯২ ও '৯৭ সালের সম্মেলনে শেখ হাসিনা এবং জিল্লুর রহমান দলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ২০০০ সালের বিশেষ কাউন্সিলে একই কমিটি বহাল থাকে।
২০০২ সালের ২৬ ডিসেম্বর জাতীয় কাউন্সিলে শেখ হাসিনা এবং আবদুল জলিল দলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্বে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ দেশের একক বৃহত্তম রাজনৈতিক দলে পরিণত হয়। তিন-চতুর্থাংশেরও বেশি আসনে বিজয়ী হওয়ার পর সর্বশেষ ২০০৯ সালের ২৪ জুলাই আওয়ামী লীগের সর্বশেষ কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়। শেখ হাসিনা সভাপতি পদে বহাল থাকেন এবং নতুন সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন বর্তমান এলজিআরডি মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। আর এই কাউন্সিলের মাধ্যমে তারুণ্যনির্ভর কেন্দ্রীয় কমিটি গড়ে তোলেন আধুনিক বাংলাদেশের স্বপ্ন-কারিগর এবং আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ হাসিনা।