489
Published on জুন 22, 2014আওয়ামী লীগের ৬৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে আজ এক বাণীতে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন।
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ২০০৯ থেকে ২০১৩ পর্যন্ত পাঁচ বছরে আওয়ামী লীগ সরকার দেশের কৃষি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, যোগাযোগ, তথ্যপ্রযুক্তি, অবকাঠামো, বিদ্যুৎ, গ্রামীণ উন্নয়ন, পররাষ্ট্র নীতি ও কৌশলসহ প্রতিটি ক্ষেত্রে নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ব্যাপক উন্নয়ন বাস্তবায়ন করে, যা বাংলাদেশের ইতিহাসে মাইলফলক। এ উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে দেশের জনগণ পুনরায় তাদের প্রাণের সংগঠন আওয়ামী লীগকে বিজয়ী করে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
আওয়ামী লীগ সরকারের রূপকল্প ২০২১ ও রূপকল্প ২০৪১ বাস্তবায়ন সম্পর্কে তিনি বলেন, এই রুপকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে আওযামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকার একটি ক্ষুধা-দারিদ্র্য-সন্ত্রাস-দুর্নীতি-নিরক্ষরতামুক্ত, সমৃদ্ধ, অসাম্প্রদায়িক ও কল্যাণমুখী রাষ্ট্র বিনির্মাণে নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের কালরাত প্রসঙ্গে স্মৃতি রোমন্থনে তিনি বলেন,’১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের কালরাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী নিরস্ত্র বাঙালির উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে নির্মমতম গণহত্যা শুরু করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারের আগে ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু তৎকালীন ইপিআর-এর ওয়ারলেসের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা করেন।
এছাড়া, ১৯৫২’র ঐতিহাসিক ভাষা আন্দোলন, ১৯৫৪’র যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, ১৯৬২’র আইয়ুবের সামরিক শাসন বিরোধী আন্দোলন, ১৯৬৪’র দাঙ্গার পর সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠা, ১৯৬৬’র ৬ দফা আন্দোলন, ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান সবই পরিচালিত হয়েছে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে।
১৯৭০’র নির্বাচনে বাঙালি জাতি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের পক্ষে নিরঙ্কুশ রায় দেয় উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ’এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৭১ এর ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঘোষণা করেন- ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে আওয়ামী লীগ ১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল মুজিবনগরে প্রথম অস্থায়ী সরকার গঠন করে। ১৭ এপ্রিল মেহেরপুরের মুজিবনগরে সরকার শপথগ্রহণ করে। আওয়ামী লীগ সরকারের নেতৃত্বে পরিচালিত সফল মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাঙালি জাতি ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর চূড়ান্ত বিজয় অর্জন করে। প্রতিষ্ঠিত হয় বাঙালির হাজার বছরের লালিত স্বপ্নের ফসল-স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশ।
যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশকে যখন জাতির পিতা তাঁর স্বপ্নের সোনার বাংলায় রূপান্তরের সংগ্রামে ব্যস্ত তখনই ঘাতকরা ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট কালরাতে তাঁকে সপরিবারে হত্যা করে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগকে একেবারে নেতৃত্বশূন্য করতে ৩ নভেম্বর কারাগারে হত্যা করা হয় জাতীয় চার নেতাকে।’ জাতীয় ও আন্তর্জাতিক চক্রান্ত এবং নির্যাতন আর নিপীড়নের মাধ্যমে ধ্বংস করার চেষ্টা করা হয় জনগণের সংগঠন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে।
কিন্তু এ অপচেষ্টা কখনোই সফল হয়নি। বরং খাদ্য ঘাটতির দেশ বাংলাদেশকে আওয়ামী লীগ সরকারই খাদ্য উদ্বৃত্তের দেশে পরিণত করে। আওয়ামী লীগ সরকারের আন্তরিক উদ্যোগ ও প্রচেষ্টায় মহান ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের মর্যাদা পায়। ভারতের সঙ্গে গঙ্গার পানি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। কারও মধ্যস্থতা ছাড়াই স্বাক্ষরিত হয় পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তি।
আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও জাতীয় চার নেতাকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করার পাশাপাশি সংগঠনের অগণিত নেতা-কর্মী, সমর্থক ও শুভানুধ্যায়ীসহ দেশবাসীকে শুভেচ্ছা জানান। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠার পর এ ভূখন্ডে যা কিছু বিশাল অর্জন তা আওয়ামী লীগের নেতৃত্বেই হয়েছে।
শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী ও সাধারণ সম্পাদক শামসুল হক এবং হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীকেও শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন। তিনি বলেন, বিএনপি-জামাত জোট সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সকল ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করেই বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ পুনরায় ২০০৮ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জনগণের ভোটে বিশাল বিজয় অর্জন করে। এ বিজয় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের আত্মত্যাগ ও জনগণের ধৈর্য্যের ফসল।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রবিরোধী অপশক্তি এখনও জনগণের এই উন্নয়নকে নস্যাৎ করার অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে। তিনি দৃঢ় আস্থা ব্যক্ত করে বলেন, বাংলাদেশের শান্তিপ্রিয় জনগণ এসব অপশক্তির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবে এবং সকল ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করে দেবে।