2108
Published on আগস্ট 28, 2017আজ থেকে ৪৬ বছর আগে দেশের মানুষের স্বপ্ন ছিলো স্বাধীনতা। রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগ তখন দেশের মানুষের সেই স্বপ্ন পুরনে নেতৃত্ব দিয়ছিলো। আজ, দেশের মানুষের স্বপ্ন - ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করা।
আবারো আওয়ামীলীগ দেশের মানুষের সেই স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে কাজ করে যাচ্ছে। আমরা দেশের প্রত্যেকটি নাগরিকের জীবনমান পরিবর্তনের লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছি। আমাদের দুরদর্শী পরিকল্পনার কারনেই আজ দেশের জিডিপি বেড়ে ৭.২৪% হয়েছে, মাথাপিছু আয় বেড়ে ১৬০২ মার্কিন ডলার হয়েছে, দারিদ্র্য আগের চেয়ে অর্ধেকে কমে ২২% এ নেমে এসেছে।
আমরা সামাজিক নিরাপত্তা জালের মাধ্যমে প্রায় ৬ কোটি মানুষের জীবন মান বদলে দিয়েছি। ২০১৭ এপ্রিলের হিসেব অনুযায়ী, দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ইতিহাসের সর্বোচ্চ ৩২০০ কোটি ডলারে উন্নীত হয়। মাছ, ধান এবং শীতকালীন সবজীর বাম্পার ফলনে দেশ খাদ্য নিরাপত্তায় স্বয়ংসম্পুর্ণ হয়েছে।
আমাদের সরকার প্রবাসে কাজের নতুন ক্ষেত্র তৈরি করে প্রায় ৩০ লক্ষ লোক বিদেশে পাঠিয়েছে। গত ৫ বছরে প্রবাসীরা নয় হাজার কোটি মার্কিন ডলারের বেশি দেশে পাঠিয়েছে।
আমাদের প্রতিশ্রুতি ছিল ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ তৈরি করা। আমরা সেই লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছি। দেশের প্রত্যেকটি নাগরিককে ইন্টানেটের সুবিধা দেয়ার লক্ষ্যে কাজ করছে সরকার।
স্বাধীনতার ৪৬ বছর পরে, আমরা যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্যে ট্রাইব্যুনাল গঠন করে তাঁদের বিচার করছি। তাঁদের পাঁচজনের মৃত্যুদণ্ড ইতোমধ্যেই কার্যকর করা হয়েছে।
আমরাই বিশ্বে প্রথম জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতি গ্রহণ করেছি। লিঙ্গভিত্তিক সমতায় আমরা বৈশ্বিক মাপকাঠিতে ভারতকেও ছাড়িয়ে গেছি।
‘২০২১ সালের মধ্যে সবার জন্যে বিদ্যুৎ’ এই প্রতিশ্রুতিতে আমরা ইতোমধ্যেই দেশের ৮০% জনগণের জন্যে বিদ্যুতের ব্যবস্থা করেছি।
সকল প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের জন্যে ২২৮ কোটি বই বিনামূল্যে বিতরণ করা হয়েছে। সাক্ষরতার হার বেড়ে হয়েছে ৭০%।
বিএনপিকে জনগণ দুই বার বিশ্বাস করে সরকার গঠন করতে দিয়ে বুঝেছে তাদেরকে আর বিশ্বাস করা যায় না। তাঁদের গতবারের শাসনামলে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপরে গ্রেনেড হামলা করা হয়। ৬৪ জেলায় জঙ্গিরা বোমা হামলা করে। দেশে নারী স্বাধীনতার অবস্থা ছিলো করুণ। তাঁদের এই শাসনামলে, ৩০ লক্ষ শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত বাংলাদেশের পতাকা সেই স্বাধীনতা বিরোধীদের গাড়িতে তুলে দেয়া হয়েছিলো তাদেরকে মন্ত্রী করে। এখন সেইসব যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চলছে বিশেষ ট্রাইব্যুনালে।
স্বাধীনতার চেতনা সমুন্নত রাখতে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের সাথে থাকুন। উন্নত অর্থনীতি, নারী স্বাধীনতা ও রূপকল্প ২০২১ অর্জন করতে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ নিরলস কাজ করে যাচ্ছে।
ইতিহাসের পাতায় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগঃ
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ বিশ্বের ইতিহাসে একমাত্র রাজনৈতিক দল, যারা একটি জাতির ভাষা, স্বাধীনতা এবং পতাকার জন্যে সংগ্রাম করেছে। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার আগে থেকেই দলটি জনগণের পছন্দে পরিণত হয়। ১৯৭১ সালে যখন আওয়ামী লীগ স্বাধীনতা যুদ্ধে নেতৃত্ব দেয় তখন এই দলটিই দেশের মানুষের আশা ভরসার কেন্দ্রে পরিণত হয়।
বর্তমানে, স্বাধীনতার চার দশক পরে এখনো দলটি দেশের জনগণের পছন্দের শীর্ষে। দেশের গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা এবং মানবাধিকারের সবচেয়ে বড়ো ধারক ও বাহক। এই দলটির স্বপ্ন অতীতে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দি, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান এবং বর্তমানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হাত ধরে বাস্তবায়িত হয়ে চলেছে। এই দলটিকে কে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাবে? - আপনারা। ষোলো কোটি বাংলাদেশীর জন্যে বাংলাদেশ শুধুই একটি মানচিত্র নয় বরং ৩০ লক্ষ শহীদের রক্ত এবং তিনলক্ষ বীরাঙ্গনার সম্ভ্রমের বিনিময়ে পাওয়া এক সম্পদ। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে লক্ষ লক্ষ বাঙ্গালী মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়।
প্রত্যেকটি যুদ্ধেরই একটি পটভূমি থাকে। ১৯৭১ এর মুক্তিযুদ্ধও ১৯৬৬ এ বঙ্গবন্ধুর ছয় দফা, ১৯৭০ এ আওয়ামীলীগের নির্বাচনে বিপুল ব্যবধানে জয়লাভসহ কয়েকটি ঘটনার পর্যায়ক্রমিক রূপান্তর। । ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন যেখানে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও ছাত্র সংগঠনের সদস্যরা অংশ নেয়, সেই আন্দোলনও এই যুদ্ধের পটভূমি রচনায় সহায়তা করে। ৬৭ বছরের দীর্ঘ যাত্রায়, এই দলটি বাংলাদেশের ইতিহাসের সকল সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়েছে যা বাংলাদেশকে আজকের অবস্থানে নিয়ে এসেছে।
১৯৪৭ সালে ভারত ও পাকিস্তান ২০০ বছরের ব্রিটিশ শাসনের অবসান ঘটিয়ে দুইটি স্বাধীন দেশের স্বীকৃতি পায়। তখন থেকেই, পাকিস্তানের ক্ষমতার কেন্দ্র হয় পশ্চিম পাকিস্তান আর তৎকালীন পুর্ব পাকিস্তান পায় সবক্ষেত্রে অবহেলা। পুর্ব এবং পশ্চিমের মধ্যে সাংস্কৃতিক ব্যবধান, অংশ দুইটির হাজার মাইলের ভৌগোলিক ব্যবধানের মতোই বিশাল ছিলো। ১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি, শেখ মুজিবর রহমানের দুরদর্শী নেতৃত্বে তৎকালীন সরকার বিরোধী ছাত্র সংগঠন পুর্ব পাকিস্তান ছাত্র লীগের জন্ম হয়।
এক বছর পরে, ২৩শে জুন, মূল রাজনৈতিক দলের জন্ম হয় যার প্রাথমিক নাম ছিলো, অল পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ, বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে প্রথম বিরোধী দল। ১৯৫৫ সালে নাম বদলে করা হয় ‘আওয়ামী লীগ’, যার মাধ্যমে বাংলাদেশে ধর্ম নিরপেক্ষ রাজনীতির সূচনা হয়। পথ সবসময় মসৃণ ছিলো না। অনেক বার নিকষ অন্ধকার ঘিরে ধরেছে। কিন্তু গণমানুষের নৌকা সকল ঝড় ঝঞ্ঝা পেরিয়ে এগিয়ে চলেছে।
১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে তাঁর পুরো পরিবার সহ হত্যা করা হয়। তাঁর পরে জাতীয় চার নেতাকে জেলের ভিতরে হত্যা করা হয় যারা মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। শুধু বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা এই বিভীষিকা থেকে বেঁচে যান তখন বিদেশে থাকার কারনে। বঙ্গবন্ধুর বিদায়ের সাথে সাথে গণতন্ত্রেরও বিদায় ঘণ্টা বেজে যায় দেশে।
১৯৮১ সালে শেখ হাসিনা দেশে ফেরার আগে দেশে গণতন্ত্রের কোন চর্চাই ছিলো না। সেই থেকে তিনি টানা দীর্ঘ নয় বছর সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে সংগ্রাম শুরু করেন। ১৯৯৬ সালে, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসে সুদীর্ঘ ২১ বছর পরে। অতীতের গৌরবময় সাফল্য গাঁথার মতো, এইবারও আওয়ামী লীগের সরকার বেশ কয়েকটি স্মরণীয় সাফল্য এনে দেয় দেশকে। তাঁর মধ্যে আছে, পার্বত্য চট্টগ্রামের শান্তিচুক্তি, যমুনাসেতু উদ্বোধন, খাদ্য নিরাপত্তা অর্জন।
২০০৪ এ, তৎকালীন বিরোধী দলের নেত্রী শেখ হাসিনাকে প্রকাশ্য জনসভায় গ্রেনেড মেরে হত্যার চেষ্টা করা হয়। অল্পের জন্যে তিনি বেঁচে গেলেও, কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতা মারা যান। ২০০৮ এ, আওয়ামীলীগ ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় নিয়ে, রূপকল্প ২০২১ এর প্রতিশ্রুতি দিয়ে নির্বাচনে বিশাল ব্যবধানে জয়লাভ করে। এই শাসনামলে, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয় ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের শাস্তির জন্যে। আওয়ামীলীগের অগ্রযাত্রার সাথে সাথে লাল সবুজের পতাকার অগ্রযাত্রা অব্যহত থাকে। পদ্মা সেতুর নির্মাণ শুরু করা হয় রাজধানী ঢাকার সাথে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের যোগাযোগ সহজ ও দ্রুততর করার জন্যে।
রূপকল্প ২০২১ আমাদের সবার। এটাকে আমাদের বাস্তবে রূপান্তরিত করতে হবে। ২০২১ সালে বাংলাদেশের সুবর্ণ জয়ন্তীতে আমারা আমাদের দেশের সবচেয়ে বড় উৎসবটি করতে চাই।