বঙ্গবন্ধু ও আওয়ামীলীগ: বাংলা ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতির মিলিত স্রোতধারা

1630

Published on জুন 15, 2021
  • Details Image

বাংলাদেশের স্বাধীনতার মহান স্থপতি, জাতির পিতা, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্বব্যাপী একজন মুক্তিসংগ্রামী এবং মহান রাজনীতিবিদ হিসেবে পরিচিত। তিনি রাজনীতির মানুষ, রাজনীতিই তার জীবনের ধ্যান-জ্ঞান। তিনিই বাঙালি জাতির শ্রেষ্ঠ জাতীয়তাবাদী নেতা। রাজনৈতিক সত্তাই বঙ্গবন্ধুর সবচেয়ে বড় পরিচয়। তবে শুধু রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক মুক্তিই নয়; বাংলাদেশের ভাষা, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির মুক্তিসংগ্রামের অন্যতম নেতা হিসেবেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন বঙ্গবন্ধু। মূলত তার ঐকান্তিক প্রচেষ্টার মধ্য দিয়েই বাংলা ভাষা, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকেন্দ্রিক বাঙালি জাতীয়তাবাদের পূর্ণাঙ্গ ভিত্তি রচনা করেছে তার দল আওয়ামী লীগ।

রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের সময়ও ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করেছেন তরুণ শেখ মুজিবুর রহমান। আধুনিক বিশ্বের বুকে ভাষা, সংস্কৃতি ও রাষ্ট্রভিত্তিক বাঙালি জাতীয়তাবাদের প্রতিষ্ঠাতা তিনি। তবে লেখক হিসেবেও তার জুড়ি মেলা ভার। ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ (২০১২), ‘কারাগারের রোজনামাচা’ (২০১৭) এবং ‘আমার দেখা নয়াচীন’ (২০২০) গ্রন্থগুলো মূলত বঙ্গবন্ধুর লেখালেখির ফসল। বাংলাদেশ, বাঙালি জাতি, বাংলা ভাষা এবং বাংলা সাহিত্য- সবকিছুর প্রতিই ছিল বঙ্গবন্ধুর গভীর ভালোবাসা।

বঙ্গবন্ধুর বিভিন্ন ভাষণের মাধ্যমেও তার দর্শন, ভাষা ও সাহিত্যচিন্তা সম্পর্কেই ধারণা পাওয়া যায়। ১৯৭৪ সালের ১৮ জানুয়ারি আওয়ামী লীগের দ্বিবার্ষিক অধিবেশনে দেওয়া তার ভাষণ থেকে বাংলার ভাষা সাহিত্য ও সংস্কৃতি নিয়ে বঙ্গবন্ধুর ভাবনার একটা নির্যাস পাওয়া যায়। সেদিন তিনি বলেন, ‘আমরা বাঙালি। আমরা জাতীয়তাবাদে বিশ্বাস করি। আমি যদি ভুলে যাই আমি বাঙালি, সেদিন আমি শেষ হয়ে যাবো। আমি বাঙালি, বাংলা আমার ভাষা, বাংলা আমার দেশ, বাংলার মাটি, আমার প্রাণের মাটি, বাংলার মাটিতে আমি মরবো, বাংলার কৃষ্টি, বাংলার সভ্যতা আমার কৃষ্টি ও সভ্যতা।’

বাংলা ভাষার বিকাশ নিয়ে ভাবনা

বাংলা ভাষার উন্নতি ও বিকাশের ক্ষেত্র একজন ভাষাতাত্ত্বিকের মতোই ভাবতেন বঙ্গবন্ধু। ১৯৭১ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি বাংলা একাডেমি আয়োজিত ভাষা আন্দোলনের স্মরণ সপ্তাহের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে তিনি বলেছেন, ‘মুক্ত পরিবেশেই ভাষার বিকাশ হয়। ঘরে বসে ভাষার পরিবর্তন-পরিবর্ধন করা যায় না। এর পরিবর্তন-পরিবর্ধন হয় ব্যবহারের ভেতর দিয়ে। ভাষার গতি নদীর স্রোতধারার মতো। ভাষা নিজেই তার গতিপথ রচনা করে নেয়। কেউ এর গতি রোধ করতে পারে না। এই মুক্ত পরিবেশে বুদ্ধিজীবীরা নিজেদের অতীত ভূমিকা ভুলে, স্বাজাত্যবোধে উদ্দীপ্ত হয়ে, বাংলা ভাষাকে গণমুখী ভাষা হিসেবে গড়ে তুলুন। জনগণের জন্যেই সাহিত্য। এ দেশের মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে নিজেদের লেখনীর মধ্যে নির্ভয়ে এগিয়ে আসুন, দুঃখী মানুষের সংগ্রাম নিয়ে সাহিত্য সৃষ্টি করুন। কেউ আপনাদের বাধা দিতে সাহস করবে না।’

বঙ্গবন্ধু বাংলা ভাষায় বক্তব্য দিতে ভালোবাসতেন। বাংলা ভাষার প্রতি শ্রদ্ধাবোধ ও ভালোবাসা থেকেই তিনি বাংলায় বক্তৃতা করতেন। ১৯৫২ সালের অক্টোবরে চীন ভ্রমণকালে, বেইজিংয়ে আয়োজিত দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় দেশগুলোর প্রতিনিধিদের শান্তি সম্মেলনে, বঙ্গবন্ধু অংশগ্রহণ করেন। সেখানেও তিনি বাংলা ভাষায় বক্তৃতা করেন; যা ইংরেজি, চীনা, রুশ ও স্প্যানিশ ভাষায় অনুবাদ করে উপস্থিত প্রতিনিধিদের শোনানো হয়। এ প্রসঙ্গে বঙ্গবন্ধু লিখেছেন, ‘পূর্ব পাকিস্তান থেকে আতাউর রহমান খান ও আমি বক্তৃতা করলাম। আমি বাংলায় বক্তৃতা করলাম। আতাউর রহমান সাহেব ইংরেজি করে দিলেন। ... কেন বাংলায় বক্তৃতা করব না? ভারত থেকে মনোজ বসু বাংলায় বক্তৃতা করেছেন। পূর্ব বাংলার ছাত্ররা জীবন দিয়েছে মাতৃভাষার জন্য। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে না জানে এমন শিক্ষিত লোক শুধু চীন কেন, দুনিয়ার অন্যান্য দেশেও আমি খুব কম দেখেছি। আমি ইংরেজিতে বক্তৃতা করতে পারি। তবু আমার মাতৃভাষায় বলা কর্তব্য।’

স্বাধীনতার পর, ১৯৭৪ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর, জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনেও বঙ্গবন্ধু তার প্রিয় বাংলা ভাষায় বক্তৃতা করেছেন। 

শুধু তাই নয়, সর্বোচ্চ শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে মাতৃভাষার প্রচলন চাইতেন বঙ্গবন্ধু। ১৯৬৯ সালের ১ আগস্ট, পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগের খসড়া ম্যানিফেস্টো প্রকাশ উপলক্ষে, দেওয়া ভাষণে বঙ্গবন্ধুর ভাষা-ভাবনার সুস্পষ্ট প্রকাশ ঘটে। সেদিনের ভাষণে তিনি বলেন, ‘পাকিস্তানের সর্ব অঞ্চলে মাতৃভাষাকে সর্বোচ্চ শিক্ষার মাধ্যম রূপে গ্রহণ করিতে হইবে। পূর্ব পাকিস্তানে শিক্ষার সর্বস্তরে বাংলা ভাষাকে যত শিগগিরই সম্ভব শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে প্রচলন করিতে হইবে এবং পাকিস্তানের সরকারি ও বেসরকারি সকল প্রতিষ্ঠানের এবং ব্যবসা বাণিজ্য ও ব্যবসায়িক জীবনে বাংলা ভাষার ব্যাপক প্রসারের চেষ্টা করিতে হইবে। বাংলা ভাষা, সাহিত্য, সংস্কৃতি ও শিল্পকলার উন্নতি ও বিকাশের জন্য কার্যকরী উৎসাহ প্রদান করিতে হইবে এবং সকল প্রকার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা অবলম্বন করিতে হইবে।’

স্বাধীনতার পর অতি অল্প সময়ে বাংলা ভাষায় সংবিধান রচনা করার ক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধুর কঠোর নির্দেশ ছিল। এছাড়াও, আদালতের রায় বাংলা ভাষায় লেখার নির্দেশও দিয়েছেন বঙ্গবন্ধু। যথাযথ পরিভাষা না থাকার কারণেই রাষ্ট্রের সর্বত্র বাংলা ভাষা ব্যবহারে সমস্যা দেখা দিতে পারে, এ কথা অনুধাবন করে ১৯৭১ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘আমি ঘোষণা করছি, আমাদের হাতে যেদিন ক্ষমতা আসবে, সেদিন থেকেই দেশের সর্বস্তরে বাংলা ভাষা চালু হবে। বাংলা ভাষার পণ্ডিতরা পরিভাষা তৈরি করবেন, তারপর বাংলা ভাষা চালু হবে, সে হবে না। পরিভাষাবিদরা যত খুশি গবেষণা করুন, আমরা ক্ষমতা হাতে নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বাংলা ভাষা চালু করে দেবো, সে বাংলা যদি ভুল হয়, তবে ভুলই চালু হবে, পরে তা সংশোধন করা হবে।’

কবি সাহিত্যিকদের প্রতি বঙ্গবন্ধুর আহ্বান

কেবল মাতৃভাষা বাংলা নয়, বাংলা সাহিত্যের প্রতিও ছিল বঙ্গবন্ধুর গভীর অনুরাগ। বক্তৃতায় বঙ্গবন্ধু রবীন্দ্রনাথ আর নজরুলের কবিতা অবলীলায় উচ্চারণ করতেন। সাহিত্যের মাধ্যমে তিনি গণমানুষের উন্নতির কথা ভেবেছেন, সাহিত্যিকদের সাধারণ মানুষের কাতারে নেমে আসার আহ্বান জানিয়েছেন। বঙ্গবন্ধু মনে করতেন, জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে কোনোদিনই মহৎ সাহিত্য রচিত হতে পারে না। কেবল শহর নয়, গ্রামীণ জীবন ও জনপদকেও সাহিত্যের মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলার কথা বলেছেন বঙ্গবন্ধু। ১৯৭৪ সালে বাংলা একাডেমি আয়োজিত জাতীয় সাহিত্য সম্মেলনে প্রধান অতিথির ভাষণে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সাহিত্য প্রসঙ্গে বলেন, 'আজকে যখন দেশ স্বাধীন হয়েছে; তখন সাহিত্যিক, শিল্পী ও সংস্কৃতিসেবীদের কাছে আমার প্রত্যাশা আরও অধিক। যারা সাহিত্য সাধনা করছেন, শিল্পের চর্চা করছেন, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির সেবা করছেন, তাদেরকে দেশের জনগণের সঙ্গে গভীর যোগসূত্র রক্ষা করে অগ্রসর হতে হবে। দেশের জনগণের চিন্তাভাবনা, আনন্দ-বেদনা এবং সামগ্রিক তথ্যে তাদের জীবনপ্রবাহ আমাদের সাহিত্যে ও শিল্পে অবশ্যই ফুটিয়ে তুলতে হবে।'

তিনি আরো বলেন, 'সাহিত্যশিল্পকে কাজে লাগাতে হবে তাদের (সাধারণ মানুষের) কল্যাণে। আজ আমাদের সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে যে দুর্নীতির শাখা-প্রশাখা বিস্তার করেছে, আপনাদের লেখনির মাধ্যমে তার মুখোশ খুলে ফেলুন; দুর্নীতির মূলোচ্ছেদে সরকারকে সাহায্য করুন। আমি সাহিত্যিক নই, শিল্পী নই, কিন্তু আমি বিশ্বাস করি যে, জনগণই সব সাহিত্য ও শিল্পের উৎস। জনগণ থেকে বিচ্ছন্ন হয়ে কোনোদিন কোনো মহৎ সাহিত্য বা উন্নত শিল্পকর্ম সৃষ্টি হতে পারে না।' 

এমনকি ১৯৬৯ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা থেকে মুক্ত হওয়ার পর, পরদিন (২৩ ফেব্রুয়ারি) ঢাকার সোহরাওয়ার্দী ময়দানে বঙ্গবন্ধু উপাধিতে ভূষিত করা হয় বাঙালির সর্বোচ্চ নেতা শেখ মুজিবুর রহমানকে। সেদিনের সংবর্ধনা সভায় বাঙালির সংস্কৃতি সম্পর্কে বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘আমরা মীর্জা গালিব, সক্রেটিস, শেকসপিয়র, এরিস্টটল, দান্তে, লেনিন, মাও সে তুং পড়ি জ্ঞান আহরণের জন্য। আর দেউলিয়া সরকার আমাদের পাঠ নিষিদ্ধ করে দিয়েছে রবীন্দ্রনাথের লেখা, যিনি একজন বাঙালি কবি এবং বাংলায় কবিতা লিখে যিনি বিশ্বকবি হয়েছেন। আমরা রবীন্দ্রনাথের বই পড়বই, আমরা রবীন্দ্রসঙ্গীত গাইবই এবং রবীন্দ্রসঙ্গীত এই দেশে গীত হবেই।’ স্বাধীনতার পর, রবীন্দ্রনাথের ‘আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি’ গানটিকে বঙ্গবন্ধু নির্বাচন করেন বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত হিসেবে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মর্মে-মর্মে রাজনীতিবিদ হয়েও ভাষা-সাহিত্য-সংস্কৃতি সম্পর্কে গভীর দর্শন বহন করতেন। যা ফুটে উঠতো তার বিভিন্ন বক্তব্য। এমনি এমনি তো তিনি রাজনীতির কবি হয়ে ওঠেননি। তার লেখা ও বক্তৃতায়ও লোকভাষা এবং আঞ্চলিক ভাষা ব্যবহারের বিস্ময়কর সার্থকতা লক্ষ করা যায়। এর সর্বোৎকৃষ্ট উদারহরণ হলো ১৯৭১ সালের ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণটি।

বাংলা ভাষাও সংস্কৃতি বিকাশে পৃষ্ঠপোষকতা

১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ বিপুল ভোটে জয়লাভ করে। কেন্দ্রীয় আইনসভায় (জাতীয় পরিষদ) আওয়ামী লীগ ৩১৩ টি আসনের মধ্যে ১৬৭ টি আসন লাভ করে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। নির্বাচনের পরপরই বঙ্গবন্ধু বাংলার কবি সাহিত্যকদের বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির বিকাশে আত্মনিয়োগ করার আহ্বান জানান।

তিনি তৎকালীন সংস্কৃতি ও চলচিত্র বিষয়ক সাপ্তাহিকী পূর্বানীর ষষ্ঠ প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে, ৩১ ডিসেম্বর ১৯৭০ ঢাকার হোটেল পূর্বানীর এক অনুষ্ঠানে বলেন, 'জনগণের স্বার্থে এবং বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতিকে নতুন করে গড়ে তুলতে সাহিত্যকদের প্রাণ খুলে আত্মনিয়োগ করার জন্য আমি আবেদন জানাচ্ছি। আমি তাদের আশ্বাস দিচ্ছি- শিল্পী, কবি এবং সাহিত্যকদের সৃষ্টিশীল বিকাশের যেকোনো অন্তরায় আমি এবং আমার দল প্রতিহত করবে। আজ আমাদের সংস্কৃতির সামনে কোনো চক্রান্ত নেই, শাসন বা নিয়ন্ত্রণের বেড়াজাল নেই। শিল্পী সাহিত্যিকরা আর মুষ্টিমেয় সুবিধাভোগী ব্যক্তিবর্গের জন্যে সংস্কৃতি চর্চা করবেন না। দেশের সাধারণ মানুষ, যারা আজও দুঃখী, যারা আজও নিরন্তন সংগ্রাম করে বেঁচে আছে, তাদের হাসি কান্না, সুখ দুঃখকে শিল্প সাহিত্য সংস্কৃতির উপজীব্য করার জন্যে শিল্পী, সহিত্যিক সংস্কৃতি সেবীদের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।'

১৯৭১ সালের ৪ জানুয়ারি, ছাত্রলীগের ২৩ তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর অনুষ্ঠানে, অত্যন্ত ক্ষোভের সাথে বঙ্গবন্ধু বলেন, 'অতীতে বাংলাদেশের গৌরবময় ইতিহাসকে বিকৃত করার সুপরিকল্পিত চেষ্টা করা হয়েছে। বাংলা ভাষা, সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্যকে ধ্বংস করার চেষ্টা করা হয়েছে। আমার মুখের ভাষাকে কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। আমরা আন্দোলন করে তা রুখেছি। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও কাজী নজরুল ইসলামকে বাদ দিয়ে বাংলাভাষা এবং সাহিত্যের কথা ভাবা যায় না। কিন্তু এর ওপর বারবার হামলা এসেছে। ভেবে অবাক হতে হয়- কাজী নজরুলের কবিতার শব্দ পরিবর্তন করা হয়েছে। গানের শব্দ বদল করে রেডিওতে গাওয়া হয়েছে।'

বঙ্গবন্ধু বাংলার কবি সাহিত্যিকদের বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির বিকাশে আত্মনিয়োগের আহ্বান জানিয়েই কেবল ক্ষান্ত থাকলেন না, তিনি ঘোষণা করলেন ক্ষমতা গ্রহণের দিন থেকেই তিনি সরকারি অফিস আদালতে বাংলা ভাষা চালু করবেন। ১৯৭১ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি বাংলা একাডেমির একুশের অনুষ্ঠানের উদ্বোধনী ভাষণে তিনি বললেন, 'ভাষা আন্দোলনের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করে আমি ঘোষণা করছি যে, আমার দল ক্ষমতা গ্রহণের দিন থেকেই সকল সরকারি অফিস-আদালত ও জাতীয় জীবনের অন্যান্য ক্ষেত্রে বাংলা চালু করবে। এ ব্যাপারে আমরা পরিভাষা সৃষ্টির জন্যে অপেক্ষা করবো না। কারণ তাহলে সর্বক্ষেত্রে কোনোদিনই বাঙলা চালু করা সম্ভব হবে না। এই অবস্থায় কিছু কিছু ভুল হবে, কিন্তু তাতে কিছু যায় আসে না। এভাবেই অগ্রসর হতে হবে।'

বঙ্গবন্ধু ৭ কোটি বাঙালিকে দেওয়া তার প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেছিলেন। দেশ স্বাধীনের পরপরই, ১৯৭২ সালের সংবিধানের ৩ নম্বর অনুচ্ছেদে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করেন বঙ্গবন্ধু।

 

 

Live TV

আপনার জন্য প্রস্তাবিত