1972
Published on মে 2, 2020শতাব্দী শোষণের সমস্যা আমাদের সামনে। এর সমাধানের জন্য কঠোর পরিশ্রম এবং আরও আত্মত্যাগের প্রস্তুতি থাকতে হবে। তাহলেই সোনার বাংলা গড়ার ভিত্তি রচিত হবে। ভবিষ্যৎ বংশধরদের শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ নিশ্চিত হবে। সমৃদ্ধির পথে কোনও শর্টকাট রাস্তা আমার জানা নেই। ১৯৭২ সালের মে দিবসে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান লাল বাহিনীর এক জনসভায় এসব কথা বলেন।
তিনি সমাজতন্ত্রের শত্রুদের রুখে দাঁড়াতে আহ্বান জানান। প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশের শ্রমিক শ্রেণির প্রতি সরকারের সঙ্গে একযোগে কাজ করে সমাজতন্ত্রের শত্রুদের মোকাবিলা করার আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, ‘সমাজতন্ত্রের শত্রুরা সমাজতন্ত্রের লক্ষ্য অর্জনে বাধা ও জাতীয়করণ কর্মসূচি বাস্তবায়নের অন্তরায় সৃষ্টি করতে চায়। এই পরিস্থিতিতে শ্রমিকদের দৃষ্টিভঙ্গি ও আচরণের আমূল পরিবর্তন ঘটাতে হবে। পুঁজিবাদী অর্থনৈতিক ব্যবস্থার ভূমিকা পালন করেছেন, এখন তাদের সেই ভূমিকা রাখলে চলবে না। তাদের অবশ্যই উৎপাদন বাড়াতে হবে এবং সম্পদকে রক্ষা করতে হবে।’
মে দিবসের জনসভায় তিনি বলেন, ‘মনে রাখা দরকার, শিল্পোৎপাদনের সুফল সমাজের সব শ্রেণির মানুষকে দিতে হবে। সংখ্যাগরিষ্ঠ চাষি ভাইদেরও এর সুফলের ভাগ দিতে হবে। জাতীয় স্বার্থের প্রতিকূল দাবি-দাওয়া পেশের মনোভাব ত্যাগ করা দরকার। কারণ, সমাজতান্ত্রিক শৃঙ্খলা ছাড়া সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতি কায়েম করা সম্ভব নয়।’ বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘আমরা আর পুঁজিপতি প্রভুদের ভোগের জন্য সম্পদ উৎপাদন করতে যাচ্ছি না। এখন যা উৎপাদন হবে তা শ্রমিক-কৃষক ও বাংলাদেশের সব মানুষের কল্যাণের জন্য।’
বঙ্গবন্ধু আরও বলেন, ‘কিছু সংখ্যক বিদেশি দুষ্কৃতিকারী স্বার্থান্বেষী মহল মানুষের দুঃখ-দুর্দশার সুযোগে মাঠে নামতে চাইছে। এদের অতীত কাজ-কারবার জনগণ জানে। এইসব সাম্রাজ্যবাদের দালাল সম্পর্কে সতর্ক থাকতে হবে। দুষ্কৃতিকারীরা বিভিন্ন স্থানে শান্তি-শৃঙ্খলা নষ্ট করার চেষ্টা করছে। তাদের ওপর কড়া নজর রাখতে হবে।’ এসব দুষ্কৃতিকারীদের বিষয়ে বঙ্গবন্ধু আগেও একাধিক জনসভায় দেশের জনগণকে সতর্ক করে দিয়েছেন।
তিনি মে দিবস উপলক্ষে এই বক্তৃতায় আশ্বস্ত করে বলেন, ‘সরকার তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।’ বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘শ্রমিকদের দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টানোই নয়, সরকারি প্রশাসন যন্ত্রকেও নতুন করে ঢেলে সাজাতে হবে। সমাজতান্ত্রিক সমাজের প্রয়োজন মেটানোর জন্য সরকারি কর্মচারীদের দৃষ্টিভঙ্গির মৌলিক পরিবর্তন প্রয়োজন আছে।’ তিনি বলেন, উচ্চ ও নিম্ন বেতনভোগী কর্মচারীদের বেতনের বিরাট ব্যবধান কমানোর জন্য বেতন কাঠামো পুনর্বিন্যাস করা হবে। সেজন্য সরকারি জাতীয় বেতন কমিশন গঠন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।’ চাকরিরত কর্মচারীরা জাতীয় পুনর্গঠনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে পারবেন বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘মিথ্যে প্রতিশ্রুতি তিনি দেবেন না। কোনও অঙ্গীকার করলে প্রাণের বিনিময়ে হলেও আমি তা পালনের চেষ্টা করি। অতীতেও তাই করেছি, কিন্তু আমার হাতে আলাদিনের-আশ্চর্য-প্রদীপ নেই যে, রাতে সব ঠিকঠাক করে ফেলবো।’