1549
Published on মার্চ 2, 2020১৯৭১ সালের ২ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, ‘বাংলাদেশে যদি একবার আগুন জ্বলে ওঠে, তাহলে সে আগুনে চক্রান্তকারীরা ভস্মীভূত হয়ে যাবে।’ একাত্তরের মার্চের প্রথম দিন থেকেই প্রতিবাদে মুখর হয়ে ওঠে বাংলাদেশ। এদিন বঙ্গবন্ধু বিবৃতি দিয়ে কর্মসূচি ঘোষণা করেন। এর ঠিক একবছর পর ১৯৭২ সালের এই দিনে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে সোভিয়েত ইউনিয়নে সফররত ছিলেন বঙ্গবন্ধু। সেখানে দুই দেশ বেশ কয়েকটি বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছায় এবং যৌথ ঘোষণা প্রস্তুত করে। ১৯৭২ সালের ৩ মার্চ দেশে কোনও পত্রিকা বের না হওয়ার কারণে ৪ মার্চ পত্রিকায় এসব খবর প্রকাশিত হয়।
বঙ্গবন্ধুর ডাক
বঙ্গবন্ধু ১৯৭১ সালের ২ মার্চ দেশবাসীকে ডাক দিলেন এবং সারাদেশে হরতাল পালনের ঘোষণার মধ্য দিয়ে তিনি কর্মসূচি ঘোষণা করেন। এ দিন এক বিবৃতিতে বঙ্গবন্ধু হুঁশিয়ার করে দেন—‘বাংলাদেশে যদি একবার আগুন জ্বলে ওঠে, তাহলে সেই আগুনে চক্রান্তকারীরা ভস্মীভূত হয়ে যাবে।’ এ ধরনের নির্যাতনমূলক অপতৎপরতা থেকে বিরত থাকার জন্য জান্তার প্রতি আহ্বান জানান তিনি। জাতীয় পরিষদের অধিবেশন স্থগিত রাখাকে তিনি বাঙালি জাতির প্রতি অবমাননাকর বলে আখ্যায়িত করেন।
শোভাযাত্রায় ভরে ওঠে রাজপথ
পাকিস্তান সরকারের হঠকারিতায় বিক্ষুব্ধ ঢাকা নগরীতে ১৯৭১ সালের ১ মার্চ পালিত হয় সর্বাত্মক হরতাল। বাঙালিদের প্রস্তুতি ছিল ঘরে ঘরে। শত মিছিলে মুখরিত হয়েছিল সারা শহর। প্রত্যেকের মুখে মুখে ‘আর ষড়ষন্ত্র নয়, বাঙালি রুখে দাঁড়াও, চাই স্বাধীনতা, চাই মুক্তি’ স্লোগানে ভরে ওঠে রাজপথ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ভবনে ছাত্রলীগ সভাপতি নুরে-আলম সিদ্দিকীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৃহত্তম ছাত্রসভায় বাংলাদেশের পূর্ণ স্বাধিকার প্রতিষ্ঠার কথা ঘোষিত হয়।
আমরা একটা পতাকা পেলাম
একাত্তরের সেই দিনের সেই সভাতে ছাত্রসমাজ সর্বপ্রথম উড়িয়ে ছিলেন স্বাধীন বাংলার পতাকা। সেই যে পতাকা উড়েছিল, তা আর নামেনি। তাইতো আজও সগর্বে উড্ডীন রয়েছে বাঙালির অহঙ্কার লাল-সবুজের সেই পতাকা বাংলার মানচিত্রে। এই পতাকার জন্য রক্ত দিয়েছে বাংলার মানুষ, রঞ্জিত রক্তে মিলেছে ভূখণ্ড—তবু সেই পতাকাকে প্রতিষ্ঠিত করেছে এদেশের মানুষ।
রক্তাক্ত রাজপথ, জনতা কারফিউ মানেনি
১৯৭১ সালের এই দিনে (২ মার্চ) ইয়াহিয়া চক্র বাধা দিয়েছে মিছিলে-মিটিংয়ে। তবু শত বাধা উপেক্ষা করে ঢাকার রাজপথে বীর বাঙালি এগিয়েছিল। প্রাণকে তুচ্ছ করে রক্ত দিয়েছে বাঙালি, রক্ত ঝরেছে রাজপথে। সেদিন থেকেই শুরু সর্বাত্মক আন্দোলনের। মিছিলে মিছিলে স্লোগানে প্রকম্পিত হয়েছিল ঢাকা নগরী। গুলিবর্ষণে কমপক্ষে ৯ জন হতাহত হওয়ার পর কারফিউ জারি করে সামরিক জান্তা। কিন্তু জনতা কারফিউ মানেনি। ব্যারিকেড ভেঙেছে সর্বত্র। সান্ধ্য আইন জারি করে বেপরোয়া গুলি চালায় সামরিক জান্তা। তাতে আবারও প্রাণ ঝরলো অনেকের। দৈনিক বাংলা (তখনকার দৈনিক পাকিস্তান) অফিসের কিছু দূরে গুলিবিদ্ধ হয়ে পড়ে যায় এক কিশোর। পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ছাত্র আজিম মোর্শেদও এদিন শহীদ হন।
প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুর সফর সফল
১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সফর সফল হয়েছে বলেই পত্রিকায় প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। শীর্ষ পর্যায়ে অনুষ্ঠিত আলোচনার সাফল্য ভারতীয় উপমহাদেশের স্থায়ী শান্তি ও সমৃদ্ধির সম্ভাবনাকে উজ্জ্বলতর করবে বলে অনুমান করা হচ্ছিল। প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী কোসিগিন ক্রেমলিনের এক অনুষ্ঠানে যুক্ত ঘোষণায় স্বাক্ষর করেন। লেনিন গ্রাদের পথে মস্কো ত্যাগের প্রাক্কালে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুস সামাদ বলেছেন—বঙ্গবন্ধুর সোভিয়েত সফরের ফলাফলে তিনি সন্তুষ্ট। আলোচনা সফল ও ফলপ্রসূ হয়েছে। সব প্রধান প্রধান বিষয়ে দুই বন্ধু দেশের নেতাদের চিন্তার ঐক্য শান্তি ও ন্যায়ের সপক্ষে তাদের বলিষ্ঠ প্রতিশ্রুতি, বিশেষ করে এশিয়ায় সামগ্রিকভাবে শান্তি প্রতিষ্ঠায় আরও সম্ভাবনাময় ও বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত করে তুলেছে।
শর্তহীন সাহায্য
তুষারপাতের রেকর্ড হৃদয়ের উষ্ণতাকে প্রভাবিত করতে পারেনি। সোভিয়েত দেশে বাংলাদেশ সাহায্যের আবেদন জানিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেন, ‘সোভিয়েত ইউনিয়নের মতো অন্যান্য বন্ধুদের কাছে বাংলাদেশ সাহায্য প্রত্যাশা করে। তবে সেই সাহায্য কোনও শর্ত দিয়ে নয়।’
বঙ্গবন্ধু রাশিয়ায় এক সাক্ষাৎকারে এই উক্তি করেন। দুই দেশের মধ্যকার যৌথ ঘোষণাটি ৫ মার্চ ঢাকা ও মস্কোতে একসঙ্গে প্রকাশিত হবে বলেও জানানো হয়।