84
Published on জুন 23, 2024অজয় দাশগুপ্ত
কতবার ঝড় এসেছে আওয়ামী লীগ ভাসিয়ে নিতে, তবুও টিকে থেকেছে এবং শক্তি সঞ্চয় করে বিকশিত হয়েছে দলটি। কোন সে জাদুমন্ত্র কাজ করেছে?
১৯৪৯ সালেল ২৩ জুন দলটি গঠনের পরপরই প্রথম ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকে গঠনতন্ত্র ও কর্মসূচি অনুমোদিত হয়। বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করতে হবে, এ দাবি ছিল সর্বাগ্রে। দেশরক্ষা, বৈদেশিক নীতি ও মুদ্রা কেন্দ্রের হাতে রেখে আর সব ক্ষমতা পূর্ব পাকিস্তানের হাতে দিতে হবে- পূর্ণ আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসনের প্রস্তাব এভাবে সুনির্দিষ্ট করা হয়। বিনা ক্ষতিপূরণে জমিদারি প্রথা বিলোপের দাবি সামনে আসে। কৃষি প্রধান এ ভূখণ্ডে কৃষকের স্বার্থ দেখতে হবে, সহজ শর্তে ঋণ দিতে হবে, পাট-তামাকের ন্যায্য মূল্য দিতে হবে- এ সব দাবি প্রথম থেকেই গুরুত্ব পায়।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের উপর যে ১৪ খণ্ডের গোয়েন্দা প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে, তার প্রথম খণ্ডেই আমরা দেখি যে, আওয়ামী লীগ গঠনের এক বছর আগে ১৯৪৮ সালের ১ জুন মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী ও শেখ মুজিবুর রহমান নরসিংদীতে এক সমাবেশে অভিযোগ করেন- মুসলিম লীগ সরকার জমিদারদের ৬০ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ প্রদানের ষড়যন্ত্র করছে। জমিদাররা কলিকাতায় বিলাসি জীবনযাপন করে। তাদের কেন কৃষকদের কাছ থেকে আদায় করা খাজনার অর্থ অপচয় করতে দেওয়া হবে?
এরও আগে ২৮ মে (১৯৪৮) শেরপুর শহরের জে কে স্কুলে প্রগ্রেসিভ মুসলিম লীগ নাম দিয়ে অনুষ্ঠিত সভায় মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী (তিনি সে-সময় পূর্ব পাকিস্তান আইনসভার নির্বাচিত সদস্য ছিলেন, পরে অন্যায়ভাবে তাঁর সদস্যপদ বাতিল করা হয়), শামসুল হক, শেখ মুজিবুর রহমান ও অন্যান্য নেতা দাবি করেন- মুষ্টিমেয় প্রভাবশালী নবাব, নাইট, খান বাহাদুরের স্বার্থের কথা ভুলে যেতে হবে, বৃহত্তর মুসলিম জনগোষ্ঠীর স্বার্থ রক্ষার জন্য পূর্ব পাকিস্তানে মুসলিম লীগের সদস্য ১ কোটিতে উন্নীত করতে হবে।
সে সময় পূর্ব পাকিস্তানের লোকসংখ্যা ছিল চার কোটির কিছু বেশি। বলা যায়, আওয়ামী লীগ গঠনের আগে মুসলিম লীগকে জমিদার-নবাবদের কব্জা থেকে মুক্ত করার চেষ্টা করেছিলেন মওলানা ভাসানী এবং তাঁর সহযোগীরা। এ উদ্যোগ সফল হয়নি। তারা সময়ের দাবি মেটাতে আওয়ামী লীগ গঠন করেন এবং দলটিকে গণমুখী করার জন্য শুরু থেকেই সচেষ্ট থাকেন।
১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারির ভাষা আন্দোলনের পর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড অনেক বেড়ে যায়, একইসঙ্গে চলতে থাকে ব্যাপক জনসংযোগ। গোয়েন্দা প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, বিভিন্ন সভায় আওয়ামী লীগ নেতারা পাটের ন্যায্য দাম না পাওয়া পর্যন্ত কৃষি ঋণ আদায় স্থগিত, পাটচাষীদের কাছ থেকে সরাসরি পাট ক্রয়, পাট জাতীয়করণ- এ সবের পাশাপাশি ভাল শিক্ষানীতি প্রণয়ন, সকল ও রাজবন্দির মুক্তি, দরিদ্র ও মেধাবী ছাত্রছাত্রীদের উচ্চশিক্ষার জন্য সরকারি বৃত্তি প্রদান, বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করা প্রভৃতি দাবি সামনে আনে।
স্বায়ত্তশাসনের দাবির প্রতি আওয়ামী লীগ কতটা আন্তরিক ও সংকল্পবদ্ধ ছিল সেটা জনগণের কাছে স্পষ্ট করা হয় প্রথম থেকেই। গোয়েন্দা রিপোর্ট থেকে জানা যায়, ১৯৫৩ সালের প্রথম দিকেই বিভিন্ন সমাবেশে শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানের দুই অংশের মধ্যে পার্লামেন্টে সমান আসন বণ্টনের জন্য মূলনীতি কমিটির সুপারিশের তীব্র বিরোধিতা করতে থাকেন। তিনি স্পষ্ট করে বলেন- বাঙালিরা সংখ্যাসাম্য মানতে পারে যদি কেন্দ্রীয় রাজধানী ও সশস্ত্র বাহিনীর সদর দফতর পশ্চিম পাকিস্তান থেকে ঢাকায় এবং নৌবাহিনীর সদর দফতর চট্টগ্রামে স্থানান্তর করা হয়। বাঙালিরা পশ্চিম পাকিস্তানের দাস হতে চায় না।
১৯৫৪ সালের মার্চ মাসে পূর্ব পাকিস্তানের আইনসভা নির্বাচনে যুক্তফ্রন্টের ২১ দফায় প্রকৃতপক্ষে আওয়ামী লীগের দাবিদাওয়াই স্থান পেয়েছিল।
১৯৫৪ সালের নির্বাচনের স্বল্প সময়ের মধ্যে শেরে বাংলা একে ফজলুল হকের নেতৃত্বাধীন যুক্তফ্রন্ট সরকারকে অন্যায়ভাবে ভেঙে দেওয়া হয়। কিন্তু প্রবল গণআন্দোলন সৃষ্টি করে আওয়ামী লীগ ১৯৫৬ সালের সেপ্টেম্বর মাসে প্রদেশের ক্ষমতায় আসতে পারে। কেন্দ্রেও নিখিল পাকিস্তান আওয়ামী লীগ নেতা হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নেন। সরকার যে কেবল মুষ্টিমেয় ধনবান গোষ্ঠীর স্বার্থরক্ষা করে চলে না, তারা জনকল্যাণে কাজ করতে পারে সেটা প্রমাণ হয়ে যায় পূর্ব পাকিস্তানে মাত্র দুই বছরের আওয়ামী লীগ শাসনকালে।
১৯৫৮ সালে পাকিস্তানে সামরিক শাসন জারি হলে শেখ মুজিবুর রহমান এবং তাঁর ঘনিষ্ঠ আওয়ামী লীগ নেতারা নিশ্চিত হয়ে যান যে পাকিস্তানি শাসকরা বাঙালিদের কোনো দাবি মানবে না। তিনি কমিউনিস্ট নেতা মণি সিংহকে বলেন, বৈদেশিক নীতির ব্যাপারে (পাক-মার্কিন সামরিক চুক্তি ও সিয়াটো-সেন্টো চুক্তি বাতিল) আপনাদের বক্তব্য আমি মেনে নিলাম। তবে এই সঙ্গে আমার একটা কথা, আমি স্বাধীন পূর্ব বাংলার স্লোগান দেব। [জীবন-সংগ্রাম, মণি সিংহ-পৃষ্ঠা ২২৩-২২৪]
১৯৬৬ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে স্বায়ত্তশাসনের যে ছয় দফা কর্মসূচি ঘোষণা করেন, তা আকস্মিক ছিল না। দলের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী ১৯৫৭ সালে স্বায়ত্তশাসন ও পররাষ্ট্রনীতির প্রশ্নে আওয়ামী লীগ আপস করছে, এমন অভিযোগ তুলে প্রচুর অনুসারী নিয়ে আওয়ামী লীগ ত্যাগ করলে শেখ মুজিবুর রহমান প্রাদেশিক মন্ত্রিসভার পদ ছেড়ে দিয়ে সর্বক্ষণ দলীয় কর্মকাণ্ডে আত্মনিয়োগ করেন। সামরিক শাসনের সময়ে নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগকে তিনি উদ্যোগী হয়ে ১৯৬৪ সালের শুরুর দিকে পুনরুজ্জীবিত করেন। প্রবীণ নেতাদের কেউ কেউ এতে সম্মত ছিলেন না। ১৯৬৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে ছয় দফা উত্থাপনের সময় দলের সভাপতির দায়িত্বে ছিলেন মওলানা আবদুর রশীদ তর্কবাগীশ। তিনিসহ একটি অংশ ছয় দফা নিয়ে অগ্রসর হতে আগ্রহী ছিলেন না। তারা মনে করেছেন, এতে নিপীড়নের শঙ্কা প্রবল। পাকিস্তান ভেঙে বাংলাদেশ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা যাবে কী-না, এ নিয়েও সংশয় ছিল অনেকের। কিন্তু শেখ মুজিবুর রহমান সময়ের দাবি পূরণ করতে পারেন। তিনি ১৯৫৪ সালের স্বায়ত্তশাসনের কর্মসূচি থেকে অনেকটাই সরে আসেন। ২১ দফায় অর্থ ছিল কেন্দ্রের হাতে। কিন্তু পাকিস্তানের প্রায় দুই দশকের অভিজ্ঞতায় বুঝে যান যে প্রদেশের হাতে রাজস্ব আদায় ও ব্যয়ের ক্ষমতা না আসলে সম্পদ পাচার ও শোষণ বন্ধ হবে না। চয় দফার চারটি দফাই তাই ছিল অর্থ বিষয়ে।
লক্ষ্য অর্জনের জন্য তিনি জনগণকে সচেতন করেন, সংগঠন গড়ে তোলেন।
এ কারণে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ পাকিস্তানি হানাদাররা গণহত্যা শুরু করলেও আওয়ামী লীগ বিচলিত হয়নি। গ্রেফতার করতে ট্যাংক, মেসিনগান, কামান নিয়ে এগিয়ে আসা হানাদার বাহিনীর গোলাগুলির মুখে বঙ্গবন্ধু ঘোষণা করেন বাংলাদেশের স্বাধীনতা।
আওয়ামী লীগ স্বাধীনতার জন্য এতটাই প্রস্তুত ছিল যে ২৫ মার্চ থেকেই সর্বত্র তারা প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারে। গোটা বাংলাদেশ যখন বধ্যভূমি, দুই সপ্তাহ যেতে না যেতেই আওয়ামী লীগ নেতারা নির্বাচিত জন প্রতিনিধিদের নিয়ে সরকার গঠন এবং তিন সপ্তাহের মধ্যে শপথ নিতে পারে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে রাষ্ট্রপতি, সৈয়দ নজরুল ইসলামকে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি ও তাজউদ্দীন আহমদকে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত করে গঠিত এ সরকার মুক্তিযুদ্ধ চলাকালেই ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ রাষ্ট্র পরিচালনার কর্মপন্থা চূড়ান্ত করে ফেলেছিল। এ কাজ সম্ভব হয়েছিল আওয়ামী লীগের সত্তর সালের নির্বাচনকালে প্রকাশিত ইশতেহার এবং বিভিন্ন সময়ে প্রকাশ করা নেতাদের বক্তব্য ও অঙ্গীকার থেকে। এতে বাঙালির অধিকার প্রতিষ্ঠা যেমন গুরুত্ব পেয়েছিল, তেমনি শ্রমজীবী-মেহনতী মানুষের কল্যাণেই যে সরকারের বেশি গুরুত্ব দেবে সেটাও স্পষ্ট করা হয়।
বাংলাদেশের স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে যাত্রা শুরুর সময়ে আওয়ামী লীগ কোনো সমস্যায় পড়েনি দলের লক্ষ্য, উদ্দেশ্য ও কর্মপন্থা স্পষ্ট থাকার কারণে। এ রাষ্ট্র আমাদের, তাই গণতন্ত্র কায়েম ও সংবিধান প্রণয়নের পাশাপাশি আমাদেরকেই তা গড়ে তুলতে হবে- এটাই ছিল পণ। খাদ্য ঘাটতি প্রকট, শিল্প বলে কিছু নেই, যোগাযোগ কাঠামো অপ্রতুল, বিদ্যুৎ সুবিধা সামান্য কিছু লোকের মধ্যে সীমিত, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের সামনে লেখা ‘শূন্য’- এমন একটি দেশকে পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ করেছিল বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে গঠিত সরকার।
এ অবস্থাতেও পুনর্গঠনের কাজে তারা সফল হয়েছিল। কিন্তু চরম আঘাত আসে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ও ৩ নভেম্বর। দলটিকে ফের নিশ্চিহ্ন করার ঘৃণ্য ষড়যন্ত্র চলে। দলটি ক্ষমতাচ্যূৎ হয়, শত শত নেতাকে গ্রেফতার করা হয়। জবরদখল করে রাষ্ট্রের ক্ষমতাসীনরা জয় বাংলা নিষিদ্ধ করে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নাম উচ্চারণ পর্যন্ত বেআইনি ঘোষণা করা হয়। আওয়ামী লীগ এই চরম দুঃসময় মোকাবিলা করতে পারে। কারণ তারা ষাটের দশকে দুই দফা সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর কৌশল রপ্ত করেছিল। জিয়াউর রহমান ও এইচ এম এরশাদের সামরিক স্বৈরশাসন এবং খালেদা জিয়া ও জামায়াতে ইসলামের অপশাসন তারা মোকাবিলা করে জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য রাজনৈতিক কর্মসূচি উপস্থাপনের মাধ্যমে। আন্দোলনের কৌশল প্রণয়ন এবং প্রতিটি ক্ষেত্রে জনগণকে সম্পৃক্ত করার ক্ষেত্রেও দলটি বিচক্ষণতা ও দক্ষতার পরিচয় দেয়।
বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা ১৯৯৬ ও ২০০৬ সালে স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে সফল আন্দোলনের নেতৃত্ব প্রদান করেন। আওয়ামী লীগের চেয়ে অনেক বেশি হরতাল-অবরোধ করেও খালেদা জিয়া এবং তার মিত্ররা কেন সফল হতে পারেনি, এর উত্তর খুঁজতে আমাদের বেশি কষ্ট করতে হয় না। তারা জনগণকে সম্পৃক্ত করতে পারেনি, জনগণ তাদের আস্থায় নেয়নি। সর্বোপরি তারা যা চায়, জনগণ তা চায় না।
শেখ হাসিনা ১৯৯৬ ও ২০০৯ সালে সরকার গঠনের পর যুগের চাহিদা অনুযায়ী যথাযথ আর্থ-সামাজিক পরিকল্পনা প্রণয়ন এবং তা বাস্তবায়নে মনোযোগী হয়েছেন। বাংলাদেশের অর্থনীতি ছোট আকারের, তাই কেবল ছোট উন্নয়ন প্রকল্প নিতে হবে, পরনির্ভরতা কাটানোর চিন্তা বাস্তবসম্মত নয়- এ সব ধারণা থেকে আওয়ামী লীগ সরে আসে। দলটি শেখ হাসিনার নেতৃত্বে পদ্মা সেতু নিজস্ব অর্থে নির্মাণসহ অনেক মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করে। খাদ্য ও বিদ্যুতে দেশকে স্বয়ংসম্পূর্ণ করে তোলে। ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠন করে স্মার্ট বাংলাদেশ গঠনের কর্মপন্থা হাজির করে। বাংলাদেশের আর কোনো দল নেই যারা যথাসময়ে স্বাধীনতার কর্মসূচি উপস্থাপন করতে পেরেছে, দেশকে উন্নত করার মতো লক্ষ্যও নির্ধারণ করতে পারেনি কেউ। বাংলাদেশকে আর কোনো দল বিশ্বে এমন মর্যাদার আসনেও প্রতিষ্ঠা করতে পারেনি। যুক্তরাষ্ট্রসহ উন্নত কয়েকটি দেশ এবং বিশ্বব্যাংকসহ কোনো কোনো সংস্থা একটি পরনির্ভর বাংলাদেশকেই দেখতে চেয়েছে। আওয়ামী লীগ এ থেকে বাংলাদেশকে মুক্ত করতে পেরেছে, এটাই বড় সাফল্য। বাংলাদেশ কারও অনুকম্পা-অনুগ্রহপ্রার্থী নয়, এগিয়ে যাবে নিজের শক্তি ও সামর্থ্যরে জোরে- এ যে অনেক বড় অর্জন। এ শক্তির উৎস জনগণ। আওয়ামী লীগ ৭৫ বছর ধরে জনসম্পৃক্ত থেকেছে, ক্ষমতার বাইরে কিংবা ক্ষমতায় থাকার সময়ে- কখনওই তারা জনগণ থেকে দূরে সরে যায়নি।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৫৭ সালে কাগমারি সম্মেলনে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের প্রতিবেদন পেশকালে বলেন, পূর্ব পাকিস্তানে ও কেন্দ্রে মন্ত্রিত্ব গ্রহণ করা হয়েছে বলে আওয়ামী লীগের বৈপ্লবিক রূপ বদলানো চলবে না। মন্ত্রিত্ব গ্রহণের পূর্বে আওয়ামী লীগ যেমন জনসাধারণের সকল আন্দোলনের পুরোধায় রয়েছে এখনও তেমন পুরোধায় থাকতে হবে তাকে। একমাত্র এই পন্থায় আওয়ামী লীগ দেশের রাজনীতির জীবনে জীবিত থাকবে।
কী সত্য ভাষণই না তিনি উচ্চারণ করেছিলেন!
তিনি আরও পাঁচ বছর আগে ১৯৫২ সালে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীকে এক চিঠিতে লিখেছিলেন- ‘দয়া করে আমার কথা ভাববেন না। আমার জন্মই হয়েছে কষ্ট সহ্য করার জন্য- I have born to suffer.’
এভাবেই ৩২ বছর বয়সী নেতা শেখ মুজিবুর রহমান কেবল নিজের নয়, আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের বৈশিষ্ট্য-আচরণ কেমন হওয়া উচিত, তার ধারণা দিয়েছিলেন। তিনি গ্রাম বাংলার পথে-প্রান্তরে ঘুরে ঘুরে জনগণকে সচেতন করেছেন, দল ও নেতৃত্ব গড়ে তুলেছেন। এ কষ্ট তিনি সহ্য করেছিলেন যেন আমাদের এ ভূখণ্ড স্বাধীন দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে, উন্নত ও সমৃদ্ধ হয়ে ওঠে এবং দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফুটিয়ে তোলা সম্ভব হয়।
আওয়ামী লীগের শক্তির উৎস তো এটাও।
লেখকঃ অজয় দাশগুপ্ত, একুশে পদকপ্রাপ্ত সাংবাদিক ও গবেষক