456
Published on জুন 23, 2024২৩ জুন ২০২৪ বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন ঢাকার টিকাটুলীতে পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ নামে মাওলানা ভাসানীর নেতৃত্বে যে দল আত্মপ্রকাশ করেছিল, সেই দলই আজকের আওয়ামী লীগ। আত্মপ্রকাশের ছয় বছরের মাথায় দলের নাম থেকে মুসলিম শব্দটি বাদ দেওয়া হয়। উদ্দেশ্য, দলে ধর্মনিরপেক্ষতার চর্চা এবং অসাম্প্রদায়িকতা প্রতিষ্ঠা। প্রথম সম্মেলনে আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী এবং সাধারণ সম্পাদক শামসুল হক। এ সময় শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন কারাগারে। প্রথম কমিটিতে তিনি কারাগারে থেকেই যুগ্ম সম্পাদক পদ পান। নেতৃত্বের ধারাবাহিকতার একপর্যায়ে শেখ মুজিবুর রহমানই আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে আসেন।
১৯৫২-এর ভাষা আন্দোলন, ১৯৫৪-এর যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনে বিজয়ের পথ ধরে ধারাবাহিক আন্দোলন-সংগ্রাম নিয়ে দলটি অগ্রসর হয়। ১৯৬৬-এর ছয় দফা আন্দোলন, এরপর ১৯৬৮ সালে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় শেখ মুজিবকে এক নম্বর আসামি করে একটি রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা করা হয়। ১৯৬৮ সালের শেষদিকে এই মামলার বিরুদ্ধে রাজনৈতিক ও ছাত্র ঐক্য গড়ে ওঠে। ফলে ১৯৬৯ সালে গণঅভ্যুত্থান সৃষ্টি হয় সেকারণে সরকার বাধ্য হয় মামলা প্রত্যাহার করে রাজবন্দিদের মুক্তি প্রদান করতে। এর মধ্য দিয়ে শেখ মুজিবুর রহমান বঙ্গবন্ধু উপাধিতে ভূষিত হন। পাকিস্তানের রাজনীতিতে শেখ মুজিব এবং পূর্ব বাংলা তখন পশ্চিম পাকিস্তানিদের ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে প্রভাব বিস্তারের নিয়ামক শক্তিতে রূপান্তরিত হয়। ১৯৭০-এর নির্বাচনে বিপুল বিজয় লাভ করে। কিন্তু ক্ষমতা হস্তান্তর না করার ষড়যন্ত্র থেকেই বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ ও ২৫ মার্চ অপারেশন সার্চলাইটের বিরুদ্ধে বঙ্গবন্ধুর ২৬ মার্চে স্বাধীনতার ঘোষণা ও মুক্তিযুদ্ধের সূচনা হয়। ১৯৭১ সালে ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে আবির্ভূত হয়।
বঙ্গবন্ধু স্বাধীন দেশ পুনর্গঠনে সফলভাবে নেতৃত্ব প্রদান করছিলেন। কিন্তু দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রকারী গোষ্ঠী ১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ড, ক্ষমতা দখল, জেলের অভ্যন্তরে চার জাতীয় নেতাকে হত্যা এবং পুরোপুরি সামরিক স্বৈরতন্ত্র প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে দেশকে পাকিস্তানি ধারায় ফিরিয়ে নেয়ার চেষ্টা করে। ১৯৮১ সালে শেখ হাসিনাকে দলের সম্মেলনে সভাপতি নির্বাচিত করা হয়। তিনি ৬ বছর পর দেশে ফিরে আসেন এবং আওয়ামী লীগের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। সেই সময় সামরিক শাসক জিয়াউর রহমান অভ্যুত্থানে নিহত হলে দেশের রাজনীতিতে ঘোলাটে পরিস্থিতি তৈরি হয়। এরপর সামরিক বাহিনীর প্রধান এরশাদ ক্ষমতা গ্রহণ করেন এবং দেশে পুনরায় সামরিক শাসন জারি হয়।
শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দ্বিধা-বিভক্ত আওয়ামী লীগ আবার ঐক্যবদ্ধ হয়। চার দশকেরও বেশি সময় ধরে তাঁর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ পরিচালিত হচ্ছে। এই সময়ে দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলন-সংগ্রামের পাশাপাশি পাঁচবার রাষ্ট্রক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হতে পেরেছে আওয়ামী লীগ। তবে ৭৫ বছরের মধ্যে প্রায় ৫০ বছরই আওয়ামী লীগকে থাকতে হয়েছে রাষ্ট্রক্ষমতার বাইরে, রাজপথ, আন্দোলন-সংগ্রামে। একুশ বছর রাষ্ট্রক্ষমতার বাইরে থাকা আওয়ামী লীগ আবার ক্ষমতায় আসে ১৯৯৬ সালে। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু সরকারের সাড়ে তিন বছর এবং ১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে পাঁচ বছর এবং বর্তমানে টানা সাড়ে ১৬ বছর আওয়ামী লীগ রাষ্ট্রক্ষমতায় আছে।
আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশেই প্রবেশ করেনি, অর্থনৈতিক উন্নয়নে পৃথিবীতে রোল মডেল হয়েছে। করোনাযুদ্ধে তাঁর সাফল্য দেখার মতো। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের শত ব্যর্থতার মধ্যেও তিনি তাঁর নেতৃত্ব, দূরদর্শিতা, মেধা ও প্রজ্ঞায় সংকট মোকাবিলা করছেন। খাবারের জন্য কাউকে কষ্ট করতে হচ্ছে না। আওয়ামী লীগ আজ রাষ্ট্র পরিচালনায় আছে, কিন্তু ক্ষমতা চিরস্থায়ী থাকবে না। বিরোধী দলের কঠিন রাজনীতি মোকাবিলা করার মতো সাংগঠনিক শক্তি ও কাঠামো কি তৈরি আছে? এ নিয়ে কি কেউ ভাবছেন? সুতরাং সময় এসেছে দলের ত্যাগী এবং পরীক্ষিত নেতাদের মূল্যায়ন করার।
আওয়ামী লীগকে তৃণমূল বিস্তৃত জনপ্রিয় রাজনৈতিক দলে পরিণত করেছিলেন বঙ্গবন্ধু। তার নৃশংস হত্যাকাণ্ডের পর নির্বাসিত তার কন্যা শেখ হাসিনা চরম দুঃসময়ে ঐক্যের প্রতীক হিসেবে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী হিসেবে হাল ধরেছেন। গণতন্ত্রের সংগ্রামে দীর্ঘ পথ হেঁটেছেন। বার বার মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে এসেছেন। আওয়ামী লীগকে জনপ্রিয় দল হিসেবে ২১ বছর পর ক্ষমতায় এনেছেন এবং গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়ার জন্য নিরলস কাজ করছেন। বঙ্গবন্ধুকন্যার দুঃসময়ে যাঁরা আওয়ামী লীগের সঙ্গে যুক্ত থেকেছেন তারাই প্রকৃত আওয়ামী লীগার। কারণ তাদের ত্যাগ অনেক বেশি। তাঁরাই দুঃশাসনের বিরুদ্ধে এবং ওয়ান ইলেভেনে ভূমিকা রেখেছেন। এটাই দলের কঠিন বাস্তবতা।
সুবিধাবাদীরা যখন যে ক্ষমতায়, সেখানেই ভিড় করে। কিন্তু রাজনৈতিক বাণিজ্যিকীকরণ ও দুর্নীতির নেটওয়ার্কে সুবিধাবাদীরা যেভাবে নিজেদের জড়িয়ে আছে তাতে আদৌ কি সরানো যাবে? আওয়ামী লীগে বিভিন্ন দল থেকে এসে অনেকেই ক্ষমতা ভোগ করছেন। তারা আওয়ামী লীগার হতে পারেননি, দলের ত্যাগী কর্মীদেরও হৃদয় দিয়ে ভালোবাসতে পারেননি। সংগঠন হিসেবে আওয়ামী লীগের সামনে এটি একটি বড় চ্যালেঞ্জ। আওয়ামী লীগ এ দেশের স্বাধিকার আন্দোলন থেকে শুরু করে বাংলাদেশের যে কোনো গণতান্ত্রিক আন্দোলনে মানুষের অর্থনৈতিক, সামাজিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক মুক্তির পাশাপাশি সব রকম শোষণ, বঞ্চনা, অন্যায়, অবিচার, জুলুমের বিরুদ্ধে সবসময় রাজনৈতিকভাবে সোচ্চার, প্রতিবাদী ভূমিকা রেখে এসেছে এবং এখনও রাখছে।
এই টানা শাসনের চতুর্থ মেয়াদে এসে দলটির সামনে অনেক চ্যালেঞ্জ। বড় চ্যালেঞ্জ দলের নীতি-আদর্শের ভিত্তি মজবুত করা। অসাম্প্রদায়িক রাজনীতির পক্ষেও দলের সকল পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের অবস্থান সমান দৃঢ় নয়। বিভিন্ন কারণে এই পর্যায়ে আশংকা জাগে নব্য আওয়ামী লীগারই হয়ে উঠেতে আওয়ামী লীগের বড় চ্যালেঞ্জ। নীতিহীনদের দাপটে আওয়ামী লীগ বিপর্যস্ত হতে পারে এই আশঙ্কাও পোষণ করেন অনেকে। শেখ হাসিনাকে দুর্বল করার চেষ্টা হতে পারে। দলের ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে দাঁড়িয়ে আরো অনেকগুলো বিষয় সামনে আছে সেগুলো নিয়ে ভাবতে হবে।
কোথাও কোথাও দলের নামে চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, অন্যের জমি-জায়গা, বাড়িঘর, দোকানপাট, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দখল করার খবরও পত্রিকায় আসে। যদিও আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসব বিষয়ে দলের অবস্থান, সরকারের অবস্থান, মনোভাব জানিয়ে কড়া হুঁশিয়ারি দিয়ে বক্তব্য দেন, সাংগঠনিকভাবে কখনও কখনও ব্যবস্থাও নেওয়া হয়। কিন্তু পরিস্থিতির খুব যে উন্নতি হচ্ছে বা অবস্থান বদলাচ্ছে তা সকলে মনে করেনা। তাই আওয়ামী লীগের সামনে এই চ্যালেঞ্জগুলো রয়েছে। পরপর চারবার ক্ষমতায় থাকার কারণে মানুষের প্রত্যাশা অনেক বেড়েছে। আওয়ামী লীগকে এ বিষয়গুলো নিয়ে মূল্যায়ন করতে হবে। সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড ও উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের সুফল সম্পর্কে বিশেষ করে জনগণের উন্নয়ন ও কল্যাণে গৃহীত কর্মসূচি দেশের প্রতিটি মানুষের কাছে তুলে ধরা অপরিহার্য।
মানি লন্ডারিং বন্ধ করা, দুর্বল ব্যাংকিং ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করা, দেশি-বিদেশি অপ-প্রচার রোধ, আন্তর্জাতিক চাপ মোকাবিলা করা, অভ্যন্তরীণ বিরোধ মেটানো, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি রোধ করা, নেতা কর্মীদের দূরত্ব কমানো, প্রশাসন এবং বিভিন্ন স্থানে ঘাপটি মারাদের ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করা, অনেকের অভিযোগ সরকার আওয়ামী লীগের হলেও প্রশাসন আওয়ামী লীগের নয়। গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে উঠে এসেছে দেশ থেকে সম্পদপাচারকারীদের তালিকায় সাবেক আমলারাই শীর্ষে। আমলাদের পর এসেছে রাজনীতিকদের নাম। এ বিষয়গুলো নিয়ে আরো সতর্ক হয়ে কাজ করতে হবে।
ধনী-গরিবে সীমাহীন বৈষম্য দূর করা, দেশে কোটিপতির সংখ্যা যেমন বেড়েছে, তেমনি দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধিও কারণে সংসার চালাতে হিমশিম খাওয়া মানুষের সংখ্যাও বাড়ছে। অভ‚তপূর্ব উন্নয়ন যেমন হচ্ছে, তেমনি অভাব-অনটনে চলা পরিবারের সংখ্যাও বাড়ছে। এই বৈষম্য কিভাবে কমানো যায় তাই সবাইকে ভাবতে হবে। আমাদের মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল বৈষম্যহীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য নিয়েই। বৈষম্য বাড়িয়ে বা অব্যাহত রেখে আমরা যখন মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন করার কথা চিন্তা করি তখন তা কঠিন হয়ে যাচ্ছে। রাষ্ট্রক্ষমতায় আছেন মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী দল আওয়ামী লীগ এবং প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বে আছেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা শেখ হাসিনা এদশের মানুষের আস্থা রয়েছে তাঁর ওপর। তিনি নিরলস প্রষ্টো চালিয়ে যাচ্ছেন। ২৩জুন দেশজুড়ে বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন করা হবে।
তবে এই দল যখন ক্ষমতায় থাকে, তখন মানুষের ভাগ্যের উন্নতি ঘটে। এ দলের জন্মকাল থেকে শুরু করে এই ৭৫ বছরের ইতিহাস সেই সত্যের সাক্ষ্য বহন করে। এখন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে পঞ্চম বারের মতো রাষ্ট্রক্ষমতায় অধিষ্ঠিত আছেন। মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের অন্যতম কাণ্ডরি আওয়ামী লীগকে দলের তৃণমূলের কোন্দল ও বিরোধ মিটিয়ে স্থানীয় সব উন্নয়ন কর্মকাণ্ড, সমাজসেবা ও মানবসেবাধর্মী কাজে সবাইকে সম্পৃক্ত করা একান্ত প্রয়োজন। এতে স্থানীয়ভাবে উন্নয়ন কাজে গতি আসবে, কাজের মানও ভালো হবে। অন্যদিকে সাধারণ মানুষের সঙ্গে দলের নেতাকর্মীদের সম্পৃক্ততা ও সখ্য বাড়বে, বাড়বে দল ও সরকারের জনপ্রিয়তা। তবে হাইব্রিড বা নব্য আওয়ামী লীগারদের কারণে ত্যাগী নেতারা অন্তরালে চলে যাচ্ছেন যা ভবিষ্যৎ ও দলের জন্য অশনিসংকেত হয়ে দেখা দিতে পারে, এটা অনেক বিশ্লেষক মনে করেন এটা নিয়ে দৃষ্টি দিতে হবে।
তবে গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো প্রধানমন্ত্রী নিজে তদারকি এবং মোকাবিলা করছেন, তা সত্যিই প্রশংসার দাবিদার। এমপি-মন্ত্রীদের অনেকেই সাধারণ মানুষ, বিশেষ করে নিজ নিজ নির্বাচনী এলাকার মানুষের সঙ্গে তেমন একটা সম্পৃক্ততা তৈরি করতে পারছেন না গণমাধ্যমে সেরকম প্রতিবেদন দেখা যায় মাঝে মাঝে। হাইব্রিড ও নব্য আওয়ামী লীগারদের দিয়ে কাজ হবে নাকি ত্যাগীদের দায়িত্ব দিতে হবে সেটা পরিস্কার করতে হবে বলেও বিশ্লেষকদের পরামর্শ।
বঙ্গবন্ধুর আদর্শের নামে রাজনীতি করা অনেক সুযোগসন্ধানী ব্যক্তি এখন নিজেদের জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন করে রাখেন। বিভিন্ন অপকর্ম করে মিডিয়ায় আসেন দল ও নেতাকর্মীরা, বিব্রত হন সরকার, বিব্রত হয় দেশ-জাতি। বিপথগামী নেতাকর্মীরা এমন কাজ থেকে বিরত থাকবেন এবং মানুষের কল্যাণে কাজ করবেন। বাঙালি জাতির পিতার আদর্শের রাজনীতির বাহক হবে আওয়ামী লীগ ও আওয়ামী লীগের সব অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মী, সমর্থক এবং দলমত নির্বিশেষে দেশের তরুণরা। তারা দেশের জন্য বঙ্গবন্ধুর মতোই নিঃস্বার্থে কাজ করবে, অহঙ্কারমুক্ত থাকবে, মানুষের সঙ্গে মানুষের ভেদাভেদ না করে সব ধর্মের মানুষের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান নিশ্চিতের মাধ্যমে সম্প্রীতির বাংলাদেশ গড়বে।
সততা, নিষ্ঠা, পরিশ্রমী ও পরোপকারী মনোভাব, মানবদরদি-সহমর্মিতা, নির্লোভ-নিরহংকার এবং সাহস নিয়ে সকল নেতা কর্মীদেও কাজ করতে হবে। বঙ্গবন্ধু নিজে ছিলেন একজন আদর্শবাদী মানুষ। বাংলার শোষিত-নির্যাতিত ও নিপীড়িত মানুষের মুক্তিই ছিল তার জীবনের মূল লক্ষ্য ও আদর্শ।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তিল তিল করে গত এক দশকে দেশকে উন্নয়নের দিকে নিয়ে যেতে এবং ভিশন ২০২১ অর্জনের পর ভিশন ২০৪১ বা স্মার্ট বাংলাদেশ অর্জনে দৃঢ় নেতৃত্বে নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। তিনি বিভিন্ন সময়ে তার বক্তব্যে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছেন, অপরাধীদের পরিচয় একটাই তারা অপরাধী। তাদের আইনের আওতায় এনে শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে এবং কতিপয় হীনস্বার্থবাদীদের অপচেষ্টা, যারা ব্যক্তিগতভাবে সুবিধাভোগীদের চিহ্নিত করে শাস্তির আওতায় নিয়ে আসা জরুরি হয়ে পড়েছে। এর মধ্য দিয়ে প্রধানমন্ত্রী এবং তার সরকারের অনেক ভালো কাজ চাপা পড়ে যাচ্ছে, যা নিয়ে হীনস্বার্থবাদীরা মোটেও চিন্তিত নয়।
বর্তমানে স্মার্ট বাংলাদেশ প্রশ্নে মানুষের মধ্যে অভূতপূর্ব ঐক্য তৈরি হয়েছে। ডিজিটাল বাংলাদেশ তৈরি হয়েছে। প্রযুক্তির প্রবেশগম্যতাকে ব্যবহার করে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে হবে। অর্থনৈতিক এই রূপান্তরের জন্য শিক্ষাব্যবস্থায়ও রূপান্তর প্রয়োজন। প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেন, নেতাকর্মীদের মধ্যে থাকবে সততা, নিষ্ঠা, পরিশ্রম ও পরোপকারী মনোভাব, মানবদরদি-সহমর্মিতা, নির্লোভ-নিরহংকার এবং সাহস। বঙ্গবন্ধু নিজে একজন আদর্শবাদী মানুষ ছিলেন। আগামী দিনে বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে ধারণ করে রাজপথে অগ্রণী ভূমিকা রাখবে এবং শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ও দিকনির্দেশনায় কাজ করে ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলবে-এটাই সবার প্রত্যাশা।
আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশেই প্রবেশ করেনি, অর্থনৈতিক উন্নয়নে পৃথিবীতে রোল মডেল হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বাঙালি জাতীয়তাবাদ প্রতিষ্ঠা, গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির লালন, শোষণ মুক্ত সমাজ বিনির্মাণ এবং একটি উন্নত সমৃদ্ধ আধুনিক, প্রগতিশীল রাষ্ট্রব্যবস্থা বিনির্মাণের লক্ষ্যে কাজ করে চলেছেন। বাংলাদেশ নানা দিক থেকেই এগিয়ে যাচ্ছে। আর এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না, অগ্রগতির মধ্যদিয়েই একটি দেশ সমৃদ্ধ হয়। যদি বিশ্বের অন্যান্য দেশ বাংলাদেশের অগ্রগতির স্বীকৃতি দেয় এবং প্রশংসা করে, তবে তা অত্যন্ত ইতিবাচক এবং অনুপ্রেরণার।
আওয়ামী লীগ সরকার অবকাঠামোগত উন্নয়নে ও নাগরিক সেবাকে জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিয়েছে, সহজ করে দিয়েছে এবং এতে সরকার প্রধানের কঠোর নির্দেশনা আছে এটা মানতেই হবে। গ্রাম ও প্রত্যন্ত অঞ্চলে যোগাযোগ ব্যবস্থা এবং সড়ক কাঠামো চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা যাবে না যে, এসব অঞ্চলের মানুষ জীবন-জীবিকাকে কতটা সহজভাবে গ্রহণ করতে পেরেছেন, অভ্যন্ত হয়ে উঠেছেন। শেখ হাসিনার স্বপ্ন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া, দেশের মানুষকে উন্নয়নের স্বাদ পাইয়ে দেয়ার লক্ষ্যে কাজ করছেন। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস রচনা, বঙ্গবন্ধুর অস্তিত্বকে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে স্থান দিয়ে যথাযথ মর্যাদার আসনে বসানোই ছিল মূল লক্ষ্য।
ক্ষুধা ও দারিদ্রমুক্ত একটি প্রগতিশীল, গণতান্ত্রিক ও অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলার জন্য চারটি ভিত্তি সফলভাবে বাস্তবায়নে কাজ করে যাচ্ছে আওয়ামী লীগ সরকার। এগুলো হলো-স্মার্ট সিটিজেন, স্মার্ট ইকোনমি, স্মার্ট গভর্নমেন্ট ও স্মার্ট সোসাইটি। এর পাশাপাশি হাতে নেওয়া হয়েছে ২১০০ সালের বদ্বীপ কেমন হবে- সেই পরিকল্পনা। স্মার্ট বাংলাদেশে সব কাজ, সম্পাদন করা হবে প্রযুক্তির মাধ্যমে। যেখানে প্রত্যেক নাগরিক প্রযুক্তি ব্যবহারে হবে দক্ষ। ২০৪১ সালের স্মার্ট বাংলাদেশ হবে সাশ্রয়ী, টেকসই, বুদ্ধিভিত্তিক, জ্ঞানভিত্তিক এবং উদ্ভাবনী বাংলাদেশ। স্মার্ট সিটি ও স্মার্ট ভিলেজ বাস্তবায়নের জন্য স্মার্ট স্বাস্থ্যসেবা, স্মার্ট ট্রান্সপোর্টেশন, স্মার্ট ইউটিলিটিজ, নগর প্রশাসন, জননিরাপত্তা, কৃষি, ইন্টারনেট কানেকটিভিটি ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা হবে। শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী হিসেবে গত ১৬ বছরেরও বেশি সময় ধরে দেশকে যেভাবে নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন ও বাংলাদেশ বর্তমান বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকটেও অন্য দেশগুলোর মতো বড় ধরনের কোনো অর্থনৈতিক সংকটে না পড়ার অন্যতম কারণ হচ্ছে তিনি এই সময়ে দেশের অর্থনৈতিক ভিত্তিকে শক্ত অবস্থানে নিতে পেরেছেন। তা না হলে ১৭ কোটি মানুষের দেশটাকে এই সংকটকালেও বিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষা করা বেশ কঠিন হতো।
হীরেন পণ্ডিত : প্রাবন্ধিক, গবেষক ও কলামিস্ট।