678
Published on ডিসেম্বর 11, 2022আশরাফ সিদ্দিকী বিটু:
যত গর্জে তত বর্ষে না। এ প্রবাদের প্রমাণ ১০ ডিসেম্বর আবারও দিল বিএনপি। যত হুমকি ধামকি দিয়েছিল তার তেমন কিছুই ফলাতে পারেনি। যতই সরকারের বিরুদ্ধে স্লোগান দিক, মূলত বিএনপি নিজেদের গণ্ডি অতিক্রম করতে পারেনি। ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সভা না করার জন্য যেসব হাস্যকর অজুহাত দিয়েছিল, তার চেয়েও বদ্ধ স্থানেই তাদের সমাবেশ করার অনুমতি নিতে হয়েছে। নিজেদের ভুলে বৃত্তেই বিএনপি ঘুরপাক খাচ্ছে।
বাংলাদেশ অনেক এগিয়ে গেছে। জনগণও উন্নয়ন চায়, রাজনৈতিক সহিংসতার নামে দলকে চাঙ্গা করার ভোতা অস্ত্র এখন আর কার্যকর না।
নানান মেঠো বক্তৃতা দিয়ে সরকারের অযৌক্তিক সমালোচনা কেউ গ্রাহ্য করে না। বিএনপি কি তাদের অতীত ভুলে গেছে? তাদের মানুষ পুড়িয়ে মারা, বাসে ট্রেনে ট্রাকে লঞ্চে আগুন দেওয়া ভুলে গেছে? বিরোধীদলকে দমন করা ভুলে গেছে? বিএনপি ভুলে গেলেও রাজনীতি সচেতন কোনও মানুষ এখনও ভুলেনি। রাজনৈতিক সভা, সমাবেশ প্রতিবাদকে সহিংসতা বা বর্বরতার পরিণত করেছিল বিএনপি। নির্বাচনে জয়ের পরপরই বিরোধীদলকে নির্বিচারে নিধন, ধর্ষণ, হত্যা, নির্যাতন, ভুয়া মামলা দেওয়া, এলাকা থেকে বিতাড়ন, বাড়ির ভিটায় পুকুর কাটার ইতিহাস বিএনপির। অথচ নির্বাচনে জয়ী হয়েও আওয়ামী লীগ কোনও প্রতিহিংসামূলক পদক্ষেপ নেয়নি। সহিংসতার বিরুদ্ধে সহিংসতা উসকে দেয়নি আওয়ামী লীগ। ভুলে গেলে চলবে না এই দেশে শান্তিপূর্ণভাবে একমাত্র আওয়ামী লীগই ক্ষমতা হস্তান্তর করেছিল।
বিএনপি জামায়াত জোট সরকার ২০০১-২০০৬ পর্যন্ত যে অত্যাচার নির্যাতন করেছিল তা তাদের বারবার মনে করা দরকার। এতে আত্মশুদ্ধি হতে পারে তাদের কিন্তু বিএনপি সে পথে হাঁটেনি। উল্টো নির্বাচনে হেরে আগুন সন্ত্রাসের পথ বেছে নিয়েছিল। অবরোধের নামে মানুষকে জিম্মি করে পুড়িয়ে মেরেছিল, এমনকি পবিত্র কোরআন শরীফ পোড়াতেও তারা দ্বিধা করেনি। যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষায় সকল অপকর্মই তারা করেছে, বিদেশে লবিস্টও নিয়োগ করেছিল। সেই বিএনপির চরিত্র সহজে পাল্টে যাবে তা প্রত্যাশা করাই বোকামি। বরং প্রত্যক্ষ পরোক্ষভাবে বিভিন্ন দেশবিরোধী গুজবকে উসকে দেওয়া হয়েছে। বিএনপি নেত্রী বলেছিলেন, জোড়াতালি দিয়ে পদ্মা সেতু করা হচ্ছে। অথচ সেই পদ্মা সেতু ব্যবহার করেই বিএনপি নেতারা সভা করে ঢাকায় ফিরেছেন।
বিএনপিকে বুঝতে হবে তাদের বেকায়দায় ফেলে আওয়ামী লীগ সরকারের লাভবান হওয়ার সুযোগ নেই। যদি থাকতো তবে খালেদা জিয়াকে বাসায় থাকতে দিত না বরং কারাগারেই পাঠাত। এই উদারতার বিষয়ে বিএনপির কোনও সাধুবাদ নেই, উল্টো খালেদা জিয়ার চিকিৎসার নামে দেশের সহিংসতা করতে চেয়েছে। খালেদা জিয়ার অসুস্থতা নিয়ে তারা নোংরা রাজনীতি করে গেছে, যদিও পরে পিছু হটেছে। আসলে দলকে চাঙ্গা করার নানান পরিকল্পনা তাদের ব্যর্থ হয়েছে।
বাংলাদেশে গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে বলেই বিএনপি নিয়মিত দেশে সভা-সমাবেশ করতে পারছে। অথচ আওয়ামী লীগ বিরোধী দলে থাকার সময় এমন কোনও সহযোগিতা পায়নি বরং বারবার সভাস্থল পাল্টাতে হয়েছে, সমাবেশে বোমা মেরেছে। একদিনেই ৮/১০ হাজার নেতাকর্মীকে বিনা কারণে গ্রেফতার করেছে। অথচ সরকার গঠন করে আওয়ামী লীগ প্রতিশোধ নেয়নি। বরং কেউ যাতে ফায়দা নিতে না পারে বা বিএনপির সভায় হামলা করে কোনও অশুভ শক্তি যেন সুবিধা করতে না পারে সেজন্য এত নিরাপত্তা। নিরাপত্তা সঠিক না হলে সবাই সরকারকেই দোষ দিত।
বিএনপি যুগপৎ আন্দোলনের নামে সেই পুরাতন সঙ্গীদেরই সঙ্গে নেবে। এর মানে হলো পরাজিত শক্তির দোসররাই তাদের সঙ্গী। মূলত পুরাতন বৃত্ত থেকে তারা বের হতে পারেনি।
বিএনপির মাত্র ৭ জন এমপি সংসদে। তারা পদত্যাগ করবেন। এটা কি কোনও প্রভাব ফেলবে দেশের গণতন্ত্রে বা সংসদ কার্যক্রমে। পড়বে না। কারণ বিএনপি সংসদে প্রধান বিরোধী দল না। এমনকি তারা পদত্যাগ করলেও সংসদের ম্যাজরিটি আওয়ামী লীগই থাকবে এবং বিএনপির সঙ্গে অন্য কোনও দল পদত্যাগ করছে না। এই পদত্যাগ মূলত একটা স্থুল অবস্থান নেওয়া ছাড়া কিছু না। এর মাধ্যমে হয়ত কোনও বিদেশি চক্রের সিমপ্যাথি তারা নিতে চায়। যা কোনও গুরুত্ব বহন করবে না। ইতোমধ্যে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বিএনপি পদত্যাগ করলে সংসদ অচল হবে না।
বিএনপি নেতারা ১০ ডিসেম্বরের সভায় ১০ দফা ঘোষণা করেছে। কিন্তু ১০ দফা দাবির কথাই তারা ঘুরিয়ে ফিরিয়ে গত কয়েক বছর যাবত বলে আসছেন। দেশে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থায় ফেরার কোনও সুযোগ নেই। এই দেশে সংবিধান সংশোধন করে এই তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করা হয়েছে এবং অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করলে সর্বোচ্চ শাস্তির ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
সংসদ বিলুপ্ত করার মতো কোনও পরিস্থিতি এই দেশে তৈরি হয়নি। সরকার পদত্যাগ করার মতো কোনও অবস্থাও নেই-এমন কোনও জনদাবি সৃষ্টি হয়নি যে সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে। বরং যথাসময়েই দেশে নির্বাচন হবে সেই ঘোষণা কক্সবাজারে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষণা দিয়েছেন। তাই সরকার পদত্যাগের দাবি অযৌক্তিক।
আওয়ামী লীগই এই দেশ নির্বাচনি ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করেছে এবং এখন ‘আজিজ মার্কা’ কোনও নির্বাচন কমিশন নেই, ১ কোটি ২৩ লাখ ভুয়া ভোটারও নেই। দেশে এখন স্বচ্ছ ব্যালেট পেপারে জনগণ ভোট দেয়। এমনকি ইভিএম নিয়ে নির্বাচন কমিশন ও জনগণও সন্তুষ্ট। বিভিন্ন দেশে স্থানীয় সরকার নির্বাচন দলীয় প্রতীকেই হয় তা বাংলাদেশে হলে কোনও সমস্যা নেই। বরং এতে অভ্যন্তরীণ গণতন্ত্র শক্তিশালী হয়েছে।
সরকারের সমালোচনা করার ক্ষেত্রে কারও কণ্ঠরোধ করা হচ্ছে না। বরং এত উন্নয়ন করার পরও ছোটখাটো বিষয়কে বেশি গুরুত্ব দিয়ে অনেকেই প্রচার করছেন–এসব বিষয়ে আওয়ামী লীগ যথেষ্ট উদারতা দেখিয়ে যাচ্ছে।
খালেদা জিয়ার মুক্তির কোনও বিধান এই দেশের আইনে সম্ভবত নেই। যদি খালেদা জিয়া দোষ স্বীকার করে রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে তবেই খালেদা জিয়ার সাজা মওকুফ হতে পারে। তাই বিএনপি জেনেশুনে এই বিষয়টি নিয়ে শুধু রাজনৈতিক কারণে দাবি তুলছে। অন্যান্য বিরোধী দলীয় নেতাকর্মী কারা? তার তালিকা কি বিএনপি করেছে, তবে কি বিএনপি পরোক্ষভাবে যুদ্ধাপরাধীদেরই মুক্তি চাচ্ছে? বিএনপি এর মাধ্যমে প্রমাণ দিল তাদের মিত্র সেই জামায়াত এবং যুদ্ধাপরাধীরাই।
বিএনপি দুর্নীতি দমন কমিশনকে কোনোদিন শক্তিশালী করেনি। এখন এই কমিশন যথেষ্ট স্বাধীন ও শক্তিশালী। যাদের আমলে ৫ বছরে ৫ বারই দুর্নীতিতে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ছিল তাদের মুখে দুর্নীতি দমনের দাবি মানুষ কখনই মেনে নেবে না। কারণ যে দলে মনোনয়নের নামে দুর্নীতি হয় তারা কী করে দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার হবে। গোপনে যারা দলের গঠনতন্ত্র সংশোধন করে তারা আর কি সততার পরিচয় দেখাবে? এখনও তাদের নেতার বিলাসী জীবনের আয়ের উৎস নিয়েই মানুষের নানা প্রশ্ন।
বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। কোনও অপশক্তির প্রতিভূ হয়ে অপরকে ঘায়েল করার রাজনীতি বন্ধ করতে হবে। বিএনপির ১০ ডিসেম্বরের ১০ দফা দাবি তাদের পূর্বের ভিশন ২০৩০ এর মতোই অচিরেই মুখ থুবড়ে পড়বে।
লেখক: রাজনৈতিক কর্মী
সৌজন্যেঃ বাংলা ট্রিবিউন