বন্যা কবলিত মানুষের কষ্টলাঘবে সবধরণের ব্যবস্থা নিয়েছে সরকারঃ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

667

Published on জুন 19, 2022
  • Details Image

সিলেট ও সুনামগঞ্জের বন্যার খবর নিয়মিত রাখছেন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, পরিস্থিতি মোকাবেলার সব ধরনের প্রস্তুতি তার সরকারের রয়েছে। তিনি বলেছেন, “আমাদের প্রশাসন, আমাদের সেনাবাহিনী, নৌ বাহিনী, বিমান বাহিনী থেকে শুরু করে আমাদের অন্য সকল প্রতিষ্ঠাগুলোকে আমি মানুষকে উদ্ধার করা, তাদের ত্রাণ দেওয়া… সব ব্যবস্থা আমরা নিয়েছি।

“সেই সাথে আমাদের দলের যারা আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, প্রত্যেক নেতাকর্মী, বিভিন্ন এলাকায় তারাও সহযোগিতা করছেন। খাবার বিতরণ থেকে শুরু করে উদ্ধার কাজে ব্যবস্থা নিচ্ছেন। তাছাড়া স্যালাইনের ব্যবস্থা, পানির ব্যবস্থাসহ অন্যান্য যা যা দরকার হতে পারে তার জন্য প্রস্তুতি আমরা নিয়েছি।”

রোববার সকালে নিজের কার্যালয়ে ‘সাফ চ্যাম্পিয়ন ২০২১ বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ নারী জাতীয় ফুটবল দল’-এর সংবর্ধনা ও আর্থিক সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানে কথা বলছিলেন প্রধানমন্ত্রী।

কৃতি খেলোয়াড়দের সংবর্ধনা দিতে পারায় আনন্দের কথা উল্লেখ করতে গিয়ে শেখ হাসিনা অনুষ্ঠানে বলেন, “যদিও এখন একটা অস্বাভাবিক পরিস্থিতির ভেতরে, একদিকে যেমন করোনার প্রাদুর্ভাব ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পাচ্ছে, অপরদিকে এটা বর্ষাকাল, আষাঢ় মাস, আমাদের, বিশেষ করে সিলেট বিভাগে সিলেট এবং সুনামগঞ্জে ব্যাপক বন্যা। এবারের বন্যাটা একটু বেশিই ব্যাপক হারে এসেছে। প্রতিনিয়ত খবর রাখছি।”

বন্যার সর্বশেষ পরিস্থিতি তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সুনামগঞ্জ থেকে পানি এখন কিছুটা ‘নামতে শুরু করেছে’।

“কিন্তু পানিটা যখন নামবে, তখন আমাদের অন্যান্য অঞ্চল প্লাবিত হতে শুরু করেছে, এটা হবে। এটা আমাদের প্রাকৃতিক নিয়ম। কাজেই আমাদের বিশেষ করে ময়মনসিংহ বিভাগ, রংপুর বিভাগেও বন্যার সম্ভাবনা আছে। সেটা আগে থেকেই সতর্কতা আমরা নিচ্ছি এবং সেই ব্যাপারে যথাযথ ব্যবস্থা নিচ্ছি। পানি নিষ্কাশনের জন্য যা যা করণীয় আমরা সেটাও করে যাচ্ছি।”

প্রকৃতির এই নিয়ম মেনেই ‘বাঁচতে হবে’ মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, “আমরা পারি, এটা আমি অন্তত বলতে পারি। দুর্যোগ মোকাবেলারও ব্যবস্থা নিতে পারি, আবার সাথে সাথে মানুষের জীবন তো চলতে হবে।”

সিলেট, সুনামগঞ্জসহ কয়েকটি এলাকায় বন্যার কারণে সারাদেশে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা স্থগিত করার কথাও অনুষ্ঠানে বলেন সরকার প্রধান।

তিনি বলেন, ১০/১২ বছর পরপর একটি বড় বন্যা বাংলাদেশে দেখা দেয়। এ কারণে সবাইকে তিনি অনেক আগেই এবার সতর্ক করেছিলেন।

“আমাদের সরকারের যারা, তাদের সবাইকে আমি বলেছিলাম, এবারে বন্যাটা একটু বৃহৎ আকারে আসবে। সবাইকে আগে থেকেই আমাদের প্রস্তুতি নিতে হবে। কাজেই আমাদের প্রস্তুতি কিন্তু আছে।

“এই পানি যখন নামবে, কোনো না কোনো অঞ্চল প্লাবিত হবে, ঠিক শ্রাবণ মাস পর্যন্ত থাকবে, আবার শ্রাবণ থেকে ভাদ্র পর্যন্ত আবার দক্ষিণ অঞ্চল প্লাবিত হবে। বাংলাদেশের প্রাকৃতিক পরিবেশটা দীর্ঘদিন থেকে দেখি, এটাই হচ্ছে নিয়ম, এটা হবে। যখন এ রকম বন্যা আসে, পানি এভাবে প্লাবিত করে। মানুষের যাতে কষ্ট না হয়, তার জন্য যথাযথ ব্যবস্থা আমরা নিচ্ছি।”

আগামী ২৫ জুন পদ্মা সেতু উদ্বোধনের প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী স্মরণ করেন ১৯৯৮ সালের কথা। সে বছর দুই মাস ধরে বন্যা হয়েছিল বাংলাদেশে। একই বছর যমুনা নদীর ওপর বঙ্গবন্ধু সেতুর উদ্বোধন করা হয়েছিল।

“সেটা উদ্বোধন করেছিলাম বলেই তখন সুবিধাটা হয়েছিল, এই যে উত্তরবঙ্গ থেকে পণ্য পরিবহন থেকে শুরু করে সব কাজগুলো করা যাচ্ছে।“

শেখ হাসিনা বলেন, “বন্যায় বাংলাদেশের নদীগুলো ভয়ঙ্কর এবং খরস্রোতা রূপ নেয়। সেই সময় (৯৮ সালের বন্যা) আমাদের এই দক্ষিণ অঞ্চল প্লাবিত ছিল। উত্তরাঞ্চল থেকে আমরা সব সময় সহযোগিতা পেয়েছিলাম সেই বন্যা আমরা খুব সফলভাবে মোকাবেলা করেছিলাম।

‘ওই সময়ে বিশ্ব ব্যাংকসহ অনেক আন্তর্জাতিক সংস্থা বলেছিল, বন্যায় ২ কোটি মানুষ না খেয়ে মারা যাবে। আমি বলেছিলাম একটা মানুষকেও আমরা না খেয়ে মরতে দেব না। আমরা দিইনি। ওই সেতুটা আমরা তখন উদ্বোধন করেছিলাম, আমাদের বন্যা মোকাবিলায় অনেক সহযোগিতা করেছিল।“

এবারের বন্যার সময়ে পদ্মা সেতু খুলে দেওয়া হলে সেটি দুর্যোগ মোকাবিলায় নতুন সুযোগ নিয়ে আসবে বলে মনে করেন প্রধানমন্ত্রী। “আমি মনে করি, এটাও আল্লাহর আশীর্বাদ হবে, কারণ আমরা যেমন দক্ষিণ অঞ্চলের সাথে যোগাযোগটা অব্যাহত রাখতে পারব। পণ্য পরিবহন, বন্যা মোকাবেলা, বন্যার সময়ে মানুষের পাশে দাঁড়ানো, তাদেরকে সহযোগিতা করার একটা বিরাট সুযোগ আমাদের আসবে।“

তারও আগে ১৯৮৮ সালের বন্যার সময় টুঙ্গিপাড়ায় আটকা পড়ে ঢাকার আসতে না পারার অভিজ্ঞতার কথাও অনুষ্ঠানে বলেন শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, “তখন যদি এই রকম পদ্মা সেতু থাকত, তাহলে চলে আসতে পারতাম।… পদ্মা সেতু উদ্বোধন করা হলে বন্যা কবলিত এলাকায় দুর্গতদের পাশে দাঁড়ান সহজ হবে। বন্যা কবলিত এলাকাগুলোতে অন্তত আমাদের রিলিফ দেওয়া, মানুষকে সাহায্য করা, ওষুধ দেওয়া এবং সব ধরনের কাজ আমরা করতে পারব।“

পদ্মায় সেতু নির্মাণ করতে গিয়ে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আসা নানা বাঁধা ও সেগুলো সফলভাবে মোকাবিলার প্রসঙ্গেও কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, “অনেকটা নিজে সিদ্ধান্ত নিয়েই বলেছি, আমরা নিজেদের টাকায় এই সেতু করব। অর্থাৎ বাংলাদেশ পারে। কারো কাছে হাত পেতে না… মাথা উঁচু করে চলব।”

খোলেয়াড়দের মাঠে থাকার সময় মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশের বিজয় অর্জনের ইতিহাস মাথায় রাখার পরামর্শ দেন সরকারপ্রধান। “খেলার মাঠে সব সময় চিন্তায় রাখতে হবে আমরা যুদ্ধে বিজয় অর্জন করেছি আমরা বিজয়ী জাতি। হারজিত খেলায় আছে… জিততেই হবে।”

বিভিন্ন ব্যবসায়ী ও শিল্প প্রতিষ্ঠানকে খেলাধুলার সঙ্গে জড়িতদের প্রতি নজর দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “তাদেরকে (খেলোয়াড়) যদি তারা (ব্যবসায়ী) একটা অ্যাপয়েনমেন্ট দিয়ে রেখে দেয়, তাহলে খেলাধুলার দিকে সম্পূর্ণভাবে মনোযোগ দিতে পারে। জীবন জীবিকার কথা চিন্তা করার প্রয়োজন হয় না।“

খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক চর্চায় জড়িতদের সরকারি ও বেসরকারিভাবে সহযোগিতা করার ওপর গুরুত্ব আরেপ করেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, “যত আমরা সহযোগিতা করব, তত উৎকর্ষ বাড়বে। কারষ ঘর সংসারের কথা চিন্তা করব? না আমি খেলায় মন দেব? বা আমি সংস্কৃতিতে মন দেব? এই দোটানায় যেন না পড়ে। যারা খেলবে, দেশের জন্য সম্মান বয়ে… বিশ্বাস করি।”

প্রধানমন্ত্রী ব্যাবসীয় শিল্পপতিদের উদ্দেশে বলেন, “খালি ব্যবসা করবেন আর ইন্ডাস্ট্রি করবেন, আর পয়সা বানাবেন, সেটা তো হয় না। দেশের জন্য তো করতে হবে। এটাই আমি চাই। আমার মনে হয়, এই মেসেজটা আমাদের সব ব্যবসায়ীদের দিয়ে দেওয়া উচিত।

দেশের ক্রীড়াঙ্গনের উন্নয়ন ও বিকাশে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং আওয়ামী লীগ সরকারের নেওয়া নানা পদক্ষেপের কথা অনুষ্ঠানে তুলে ধরেন। অন্যদের মধ্যে যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী মো. জাহিদ আহসান রাসেল এবং বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন বক্তব্য দেন অনুষ্ঠানে।


- বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম

 

Live TV

আপনার জন্য প্রস্তাবিত