6551
Published on জানুয়ারি 26, 2022রাজনীতির মূলমন্ত্র দেশপ্রেম। যে রাজনীতিতে দেশপ্রেম নেই, সেই রাজনীতি অন্তঃসার শূন্য। শুধুমাত্র ক্ষমতা প্রাপ্তির আকাঙ্খা থাকলে জনতার ভালোবাসা পাওয়া যায় না। জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নিত্যনতুন উপায়ে দেশের অভ্যন্তরে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অপচেষ্টা চালাচ্ছে দেশ বিরোধী অপশক্তি বিএনপি-জামায়াত গোষ্ঠী।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে কথা বলার জন্য বিএনপি-জামায়াত ৮টি লবিং ফার্মকে নিয়োগ দিয়েছে। বিএনপির লবিস্টরা দেশ বিরোধী এমন তথ্য দিয়েছেন, যা জানলে দেশবাসী তাদের ধিক্কার জানাবে। র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা, শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশিদের না নেয়ার আবেদনসহ বিভিন্ন অপচেষ্টায় বিএনপি'র সম্পৃক্ত থাকার প্রমাণ আছে বাংলাদেশ সরকারের কাছে।
যুক্তরাষ্ট্রকে বাংলাদেশের জিএসপি সুবিধা বাতিল করতে বলেছিল খালেদা জিয়া:
২০১৩ সালের ৩০ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন টাইমস পত্রিকায় খালেদা জিয়া ‘দ্য থ্যাঙ্কসলেস রোল ইন সেভিং ডেমোক্রেসি ইন বাংলাদেশ’ শিরোনামে এক প্রবন্ধে বাংলাদেশের জিএসপি সুবিধা বাতিলসহ বাংলাদেশের ওপর পশ্চিমাদের স্যাংশন আরোপের জন্য যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের অনুরোধ করেছিলেন।
খালেদা জিয়া প্রবন্ধে লিখেছেন, যুক্তরাষ্ট্র ও এর মিত্রদের অবশ্যই শেখ হাসিনাকে বুঝাতে হবে যে, বাংলাদেশের জিএসপি সুবিধা বাতিল করা হবে যদি তাঁর রাজনৈতিক মতাদর্শের বিরোধী ও শ্রমিক অধিকার নিয়ে সচেষ্ট ব্যক্তিদের মতামত প্রকাশের সুযোগ দেয়া না হয়। এমনকি ঐ প্রবন্ধে খালেদা জিয়ার মন্তব্যে বোঝা যায়, বাংলাদেশের পদ্মা সেতুতে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ন বাতিল হওয়ার বিষয়টি তার কাছে অত্যন্ত স্বস্তিদায়ক ছিল।
খালেদা জিয়া লেখেন, তাদের (যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমাদের) এসব পদক্ষপকে হতে হবে অবশ্যই শক্তিশালী ও দৃশ্যমান, যেন আমাদের জনগণ তা দেখতে এবং শুনতে পারে। এর মাধ্যমেই সারাবিশ্বকে গণতন্ত্রায়ণে যুক্তরাষ্ট্রের নিজের মিশন অব্যাহত রাখার ব্যাপারে নিশ্চিত হতে পারবে। বাংলাদেশের গণতন্ত্র রক্ষায় যুক্তরাষ্ট্র ও সারা বিশ্বের কোনো কিছু করার এখনই উপযুক্ত সময়।
যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের জিএসপি সুবিধা বাতিলের পেছনে যে লবিস্টের মাধ্যমে বিএনপি এবং তাদের নেত্রী খালেদা জিয়ার প্রত্যক্ষ ষড়যন্ত্র ছিল, এটি খালেদা জিয়ার লেখাতেই পরিষ্কারভাবে উঠে এসেছে।
লবিং ফার্মগুলোর সাথে বিএনপি-জামায়াত গোষ্ঠীর আসলে কি ঘটেছিল?
বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের অনুদান বন্ধ করতে দুই বছর আগে চিঠি দিয়েছিল বিএনপি। এমনকি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ওয়াশিংটন সফরে তাকে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে চাপে ফেলতে লবিস্ট ফার্ম দিয়ে তদবিরও করায় দলটি। ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে ও পরে দেওয়া বিএনপি ও লবিস্ট ফার্ম ব্লু-স্টার স্ট্র্যাটেজিসের চিঠি বিশ্লেষণ করে এসব তথ্য মিলেছে।
● ২০১৫ সালে বিএনপি লবিস্ট ফার্ম Akin Gump-এর মাধ্যমে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালায়। প্রতিষ্ঠানটির রেজিস্ট্রেশন নং- ৩৪৯২। এ কাজে একিন গাম্প-এর সাথে কাজ করার জন্য বিএনপি ব্রিটিশ আইনজীবী টবি ক্যাডম্যানকে নিয়োগ দেয়। উদ্দ্যেশ্য বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচনে হস্তক্ষেপ এবং যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া বন্ধ করা।
ঐ চিঠিতে উল্লেখ রয়েছে, একিন গাম্পকে মাসিক ৪০,০০০ থেকে ১,০০,০০০ মার্কিন ডলার (কাজের পরিধি অনুসারে) প্রদান করার চুক্তি হয়। কাজ শুরুর আগেই বিএনপি তাদের কাছে ১,২০,০০০ মার্কিন ডলার জমা দিয়ে রাখে। ২০১৭ সাল পর্যন্ত উক্ত কাজের মেয়াদ ছিল। যদিও সেই মেয়াদে বাংলাদেশ সরকারের কঠোর অবস্থানের কারণে কোনো কিছুতেই সফল হতে পারেনি বিএনপি-জামায়াতের ভাড়ায় চালিত ফার্মগুলো।
● ২০১৮ সালে বিএনপি একসাথে দুটি লবিস্ট ফার্ম নিয়োগ করে। সেসময় FARA-তে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে পরপর দুবার ভুয়া তথ্য দাখিল করে বিএনপি। লবিস্ট ফার্ম দুটির একটি বোস্টনের Rasky Partners (রেজিস্ট্রেশন নং- ৬৫৮৬) এবং অন্যটি ওয়াশিংটনের Blue Star Strategies (রেজিস্ট্রেশন নং- ৬৫৮৭)।
তবে এবার বিএনপি আর দল হিসেবে নয়, আব্দুস সাত্তার নামে এক ব্যক্তির মাধ্যমে চুক্তি করে। চুক্তিতে উল্লেখ করা হয়- ব্লু স্টার স্ট্র্যাটেজিস এবং রাস্কি পার্টনার্সকে যাবতীয় নথিপত্র প্রদান করেছে- বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট পার্টি (বিএনপি)। সেই চুক্তিতে মাসিক মোট ৫০,০০০ মার্কিন ডলার দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।
এদের দায়িত্ব ছিল– তারা ক্লায়েন্টের (বিএনপি) পাঠানো বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে কাজ করবে, যেভাবে বলা হবে, মার্কিন বড় গণমাধ্যমগুলোতে ঠিক সেভাবে তা প্রকাশের ব্যবস্থা করা হবে, সেসব গণমাধ্যমের সাথে বিএনপির সুসম্পর্গ গড়ে দেয়া, পরবর্তী কর্মপন্থা নিয়ে বৈঠক এবং এজেন্ডা অনুসারে মতামত প্রকাশ করা।
● ২০১৯ সালে বাংলাদেশ নিয়ে বিভিন্ন ধরণের গুজব ও অপপ্রচার সম্বলিত বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের স্বাক্ষর করা গাদাগাদা চিঠি পাওয়া যায়। মির্জা ফখরুল মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর থেকে শুরু করে ফরেন অ্যাফেয়ার্সের হাউজ কমিটি, সিনেটের সাবকমিটি, ফরেন অপারেশনস, সিনেট কমিটি, হাউজ কমিটি, ফরেন রিলেশন বিষয়ক সিনেট কমিটি, পূবাঞ্চলীয় সিনেট সাবকমিটি, দক্ষিণ এশিয়া-মধ্য এশিয়া এবং সন্ত্রাসবাদবিরোধী কমিটি, এশিয়া বিষযক সাবকমিটিসহ বিভিন্ন দপ্তরে দফায় দফায় চিঠি লিখেছেন। সব চিঠি বিএনপির দলীয় প্যাডে লেখা হয়েছে। ঠিকানা দেওয়া হয়েছে দলটির নয়াপল্টন অফিসের।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সাড়ে ৩ মাস পর ২০১৯ সালের ১৭ এপ্রিল মার্কিন সিনেট কমিটি, সাব কমিটি ও হাউস কমিটির চেয়ারম্যান ও সদস্য মিলিয়ে ৫ জনকে চিঠি লেখেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এ কমিটির কাজ বাংলাদেশকে দেওয়া মার্কিন সহায়তা ও অনুদান মূল্যায়ন করা।
জামায়াতে ইসলামীর লবিস্ট নিয়োগ:
লবিস্ট ফার্মগুলোকে জামায়াতের অর্থায়ন বিষয়ে মোট ৪টি নথি পাওয়া যায়। ২০১৪ সালের রেজিস্ট্রেশন নং-৬২১৮ ও ৬২১৯, ২০১৫ সালের রেজিস্ট্রেশন নং-৬২৭২, ২০১৬ সালের রেজিস্ট্রেশন নং-৬৩৩৬ এবং ২০১৮ সালের রেজিস্ট্রেশন নং-৬৫১৭।
বিএনপির লবিং নেটওয়ার্ক:
যুক্তরাষ্টের লবিস্ট ফার্ম আকিন কোম্পানি অ্যাসোসিয়েটস, ব্লুস্টার স্ট্র্যাটেজিস এবং রাস্কি পার্টনারস এর সাথে কাজ করে বিএনপি।
যুক্তরাষ্ট্রের সরকারবিরোধী প্রচারের জন্য লবিস্ট ফার্মকে ৩৭ লাখ ৫০ হাজার ডলার দিয়েছে বিএনপি।
১২ টির বেশি লবিষ্ট ফার্মের সঙ্গে লেনদেন হয় বিএনপির পুরানা পল্টনের অফিসের ঠিকানায়।
এখন পর্ষন্ত আটটি চুক্তি বাংলাদেশ সরকারের হাতে, তিনটি বিএনপি'র বাকিগুলো জামায়াতের।
লবিংয়ের রাজনীতিতে বিএনপি'র এজেন্ডা:
যুদ্ধাপরাধীর বিচার প্রক্রিয়া বন্ধ করা।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ দাতা রাষ্ট্রগুলোর চাপ তৈরি।
উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে আন্তর্জাতিক সহায়তা বন্ধ করা।
বেগম খালেদা জিয়ার কারাবাস ঠেকানো।
বাংলাদেশে অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি করা
অর্থনীতি ও বাণিজ্য বিষয়ক নিষেধাজ্ঞা আরোপ।
বাংলাদেশের নির্বাচনে বিদেশি হস্তক্ষেপের মাধ্যমে পুতুল সরকার বসানো।
দেশের খনিজ সম্পদ বিদেশি প্রভুদের হাতে তুলে দেওয়ার বিনিময়ে ক্ষমতায় বসিয়ে দেওয়া, ইত্যাদি।
লবিস্ট নিয়োগ: সুর পাল্টালেন মির্জা ফখরুল:
২৫ জানুয়ারি ২০২২, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ব্রিফিং শেষে উঠে যাওয়ার সময় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে জানান, দেশ ও গণতন্ত্র রক্ষায় বিএনপি'র লবিস্ট নিয়োগের কথা। বলেন, বিএনপি লবিস্ট নিয়োগ করেছে দেশকে রক্ষা করার জন্য এবং গণতন্ত্রকে রক্ষা করার জন্য। এর ৫ মিনিট পর লবিস্ট নিয়োগ নিয়ে তার দেওয়া বক্তব্যের ব্যাখ্যা দিতে আবারও গণমাধ্যমের সামনে হাজির মির্জা ফখরুল। সরে আসেন আগের বক্তব্য থেকেও।