763
Published on জানুয়ারি 17, 2022উপস্থিত সাংবাদিক ভাই ও বোনেরা, আজকের এই সংবাদ সম্মেলনে আপনাদের সকলকে স্বাগত জানাচ্ছি।
আপনারা নিশ্চয় অবগত আছেন, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের মহামান্য রাষ্ট্রপতির আমন্ত্রণে আজ বিকাল ৪টায় বঙ্গভবনে মহামান্য রাষ্ট্রপতির সঙ্গে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ-এর মাননীয় সভাপতি বঙ্গবন্ধুকন্যা দেশরত্ন জননেত্রী শেখ হাসিনা এমপি’র নেতৃত্বে ১০ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল এই বৈঠকে অংশগ্রহণ করেন। প্রতিনিধি দলে সদস্য হিসেবে বৈঠকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ-এর উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য আমির হোসেন আমু এমপি, তোফায়েল আহমেদ এমপি, সভাপতিমন্ডলীর সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী এমপি, শেখ ফজলুল করিম সেলিম এমপি, ড. মোঃ আব্দুর রাজ্জাক এমপি, লে. কর্নেল (অব.) মুহাম্মদ ফারুক খান এমপি, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আব্দুর রহমান এবং আমি নিজে উপস্থিত ছিলাম।
বৈঠকে মহামান্য রাষ্ট্রপতির নিকট বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মাননীয় সভাপতি বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনে ‘‘গণতন্ত্র ও নির্বাচন : বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ” শিরোনামে দলের পক্ষ থেকে একটি প্রস্তাবনা উপস্থাপন করেন। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ-এর প্রস্তাবনায় নির্বাচন কমিশনকে শক্তিশালীকরণ, নির্বাচন কমিশনের আর্থিক ও প্রযুক্তিগত সক্ষমতা বৃদ্ধিসহ একটি স্বাধীন, নিরপেক্ষ ও শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন গঠন ও সংস্কার নিয়ে বিভিন্ন প্রস্তাব ও সুপারিশ উপস্থাপন করা হয় এবং এই ধরনের অর্থবহ সংলাপ আহবান মধ্য দিয়ে সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য একটি নির্বাচন কমিশন গঠনের উদ্যোগ গ্রহণ করায় মহামান্য রাষ্ট্রপতিকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করা হয়।
প্রিয় সাংবাদিক বন্ধুগণ,
বাংলাদেশের প্রাচীনতম রাজনৈতিক সংগঠন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ; ঐতিহ্যগতভাবেই অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন ব্যবস্থা ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের প্রতি প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর রাজনৈতিক জীবনের দীর্ঘ সময় সুষ্ঠু নির্বাচন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আন্দোলন-সংগ্রাম করেছেন। গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার প্রতি অগাধ বিশ্বাস ও নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের দ্বারা রাষ্ট্র পরিচালনা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে স্বাধীনতার মাত্র ৯ মাসের মাথায় বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে ‘গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান’ প্রণীত হয়। ১৯৭২ সালের সংবিধানে স্বাধীন নির্বাচন কমিশন প্রতিষ্ঠাসহ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থার জন্য প্রয়োজনীয় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান সৃষ্টি করার বিধান সংযোজিত হয়। সে সময় বিশ্বের অনেক দেশেই নির্বাচন পরিচালনার বিষয়টি নির্বাহী বিভাগের হাতে রাখা হতো। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের সংবিধানে নির্বাচন পরিচালনার সর্বময় ক্ষমতা একটি স্বাধীন ও নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের উপর ন্যস্ত করেন এবং কোনরূপ আইনি অস্পষ্টতা ও দুর্বোধ্যতা ব্যতিরেকে একটি স্বাধীন ও নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন প্রতিষ্ঠার বিধান প্রণয়ন করেন। গণতান্ত্রিক বিশ্বে যা এখনো একটি অনন্য নজির হিসেবে প্রতিষ্ঠিত আছে। এরই ধারাবাহিকতায় বঙ্গবন্ধুর সরকার ১৯৭২ সালে The Representation of the People Order (RPO) প্রণয়ন করেন। বঙ্গবন্ধুর সময়ই বাংলাদেশের প্রথম নির্বাচন কমিশন গঠিত হয়। আর এই নির্বাচন কমিশনকে শক্তিশালী করার লক্ষ্যে বিভিন্ন পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। কিন্তু ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট মহান মুক্তিযুদ্ধের পরাজিত অপশক্তি বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার মধ্য দিয়ে দেশের অগ্রযাত্রাকে যেমন থামিয়ে দেয়, একইভাবে বাংলাদেশের স্বাধীন নির্বাচন ব্যবস্থা ও কাঠামো মুখ থুবড়ে পড়ে।
এরপর বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ড ও ষড়যন্ত্রের মূল হোতা জিয়াউর রহমান গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান ও সেনা আইন লংঘনের মধ্য দিয়ে ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে অবৈধভাবে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখল করে নিজেকে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা করে এবং বাংলাদেশের সংবিধান অবৈধভাবে ক্ষত-বিক্ষত করাসহ সকল প্রতিষ্ঠানের প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা ধ্বংস করে দেয়। শুরু হয় ধারাবাহিক অসাংবিধানিক স্বৈরশাসনের যুগ। স্বৈরশাসক জিয়া তার অবৈধ ক্ষমতা দখলকে বৈধতা দেয়ার অভিপ্রায়ে ১৯৭৭ সালের ৩০ মে হ্যাঁ/না ভোটের আয়োজন করে এবং তার পক্ষে হ্যাঁ ভোট প্রদানের সকল আয়োজন সম্পন্ন করে স্বাধীন বাংলাদেশের ইতিহাসে নির্বাচনী ব্যবস্থাকে এক নিকৃষ্টতম প্রহসনে রূপদান করে। জিয়াউর রহমানের পদাঙ্ক অনুসরণ করে অপর স্বৈরশাসক হুসেইন মোহাম্মদ এরশাদ ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত রাষ্ট্র ক্ষমতায় থাকে। ১৯৯১ সালে গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থার পুনঃপ্রবর্তনের পর বেগম খালেদা জিয়া তার স্বামী স্বৈরশাসক জিয়াউর রহমান এবং এরশাদের পদাঙ্ক অনুসরণ করে নির্বাচন প্রক্রিয়াকে পুনরায় কলুষিত করে তোলেন।
প্রিয় সাংবাদিক বন্ধুগণ,
আপনারা জানেন, বিএনপি সরকার ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য ঢাকা (মিরপুর ও তেজগাঁও) ও মাগুরার উপ-নির্বাচনে এবং ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত সকল রাজনৈতিক দল কর্তৃক বর্জিত ও ভোটারবিহীন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যে নজিরবিহীন কারচুপি ও অন্যায় সংঘটিত হয় তা বাংলাদেশের নির্বাচনের ইতিহাসে আবারো এক কলঙ্কিত অধ্যায়ের সূচনা করে। ওই নির্বাচনে বিএনপি মনোনীত ৪৯জন প্রার্থীকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত ঘোষণা করা হয়। বাংলাদেশের জনগণ সে নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করে।
১৯৯৬ সালের ১২ জুন অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়ী হয়ে দীর্ঘ ২১ বছর পর বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বভার গ্রহণ করে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পর এই প্রথম দেশ পরিচালনায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং মহান মুক্তিযুদ্ধের আদর্শকে প্রাধান্য দিয়ে রাষ্ট্রযন্ত্রের সকল স্তরে কার্যকর পুনর্গঠন প্রক্রিয়া শুরু হয়। এই সময় একটি স্থায়ী ও স্বাধীন নির্বাচন কমিশন গঠনের মাধ্যমে নির্বাচন ব্যবস্থাপনার গুণগত পরিবর্তন আনয়নের লক্ষ্যে বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। কিন্তু স্বাধীনতাবিরোধী পরাজিত অপশক্তির ষড়যন্ত্রের ফলে ২০০১-এর কারসাজিপূর্ণ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে বিএনপি পুনরায় ক্ষমতায় এসে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ কর্তৃক গৃহীত সকল উদ্যোগ বন্ধ করে দিয়ে দেশকে পুনরায় পিছনের দিকে ঠেলে দেয়। পরবর্তী নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে ক্ষমতায় আসার জন্য প্রায় ১ কোটি ২৩ লক্ষ ভুয়া ভোটার দিয়ে বিএনপি-জামাত জোট যে ভোটার তালিকা তৈরি করে তা ছিল বাংলাদেশের ইতিহাসের একটি নিকৃষ্টতম জালিয়াতি। ব্যাপক গণ-আন্দোলনের মুখে ২০০৬ সালে বিএনপি-জামাত জোটের পতন ঘটে এবং সেনা সমর্থিত তত্ত¡ তত্ত্বাবধায়ক সরকার রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসীন হয়। স্বাধীন বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশন গঠন প্রক্রিয়া ও নির্বাচন ব্যবস্থা পর্যালোচনা করলে স্পষ্টভাবে এটা প্রতীয়মান হয় যে, বিএনপি’ই অতীত স্বৈরশাসকদের পদাঙ্ক অনুসরন করে বাংলাদেশের নির্বাচন ব্যবস্থাকে বার বার কলুষিত করেছে। ১৯৭৭ সালে নুরুল ইসলাম কমিশনের অধীনে জিয়াউর রহমানের হ্যাঁ/না ভোটের মাধ্যমে দেশে প্রহসনমূলক নির্বাচনের শুরু। বিএনপি রাষ্ট্রক্ষমতায় থাকাকালীন গঠিত অন্তত দু’টি নির্বাচন কমিশনকে (কে.এম. সাদেক ও এম.এ আজিজ) বিদায় নিতে হয়েছে সম্মিলিত জনরোষের মুখে।
বিএনপি সব সময়ই এদেশের নির্বাচনী ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে প্রহসনমূলক নির্বাচন দিয়ে ক্ষমতায় টিকে থাকতে চেয়েছে। বিএনপি-জামাত দেশের সংবিধান, বিধি-বিধান এবং সকল গণতান্ত্রিক নীতি ও মূল্যবোধকে লুণ্ঠিত করে ২০০৭ সালের ২২ জানুয়ারি আরেকটি প্রহসনমূলক নির্বাচন করতে চেয়েছিল। ২০০৬ সালের শেষ দিকে নির্বাচন কমিশন ওই নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে। বিএনপি-জামাত মনোনীত উল্লেখযোগ্য সংখ্যক প্রার্থীকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত ঘোষণাও করা হয়েছিল। এ বিষয়ে কমিশন থেকে গেজেট প্রকাশিত হয়েছিল। কিন্তু গণ-আন্দোলনের মুখে খালেদা জিয়ার সেই প্রহসনমূলক নির্বাচনের আয়োজন ভেস্তে যায়।
প্রিয় সাংবাদিক বন্ধুগণ,
বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের আলোকে গণতন্ত্র ও জনমানুষের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে অঙ্গীকারবদ্ধ। বাংলাদেশে শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন গঠন এবং নির্বাচন কমিশনকে শক্তিশালীকরণে যা কিছু হয়েছে তা আওয়ামী লীগের নেতৃত্বেই অর্জিত হয়েছে।
বিএনপি-জামায়াত জোটের শাসনকালে (২০০১-২০০৬) নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কারের আন্দোলন যখন তুঙ্গে তখন আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে ১৪ দল এবং মহাজোটের অন্যান্য শরিকদল নির্বাচন কমিশন ও নির্বাচনী ব্যবস্থা সংস্কারের লক্ষ্যে একটি অভিন্ন রূপরেখা ঘোষণা করে। এই রূপরেখায় নির্বাচন কমিশনকে স্বাধীন ও কার্যকর প্রতিষ্ঠানে পরিণত করা এবং নির্বাচনী আইন ও বিধানের প্রয়োজনীয় সংস্কারের লক্ষ্যে মোট ২৩-দফা সুপারিশ করা হয়। প্রস্তাবসমূহের প্রতি দেশপ্রেমিক সকল নাগরিক ও সুশীল সমাজ অকুন্ঠ সমর্থন জ্ঞাপন করেন। কিন্তু বিএনপি-জামাত জোট সরকার আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে ১৪ দল কর্তৃক উপস্থাপিত দাবীসমূহের প্রতি কোনোরূপ ভ্রুক্ষেপই করেননি। কারণ তারা জানতেন, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে তাদের পরাজয় অবশ্যম্ভাবী। জনরোষের মুখে ২০০৬ সালে ক্ষমতা থেকে বিদায় নেয়ার পূর্ব পর্যন্ত নির্বাচন ব্যবস্থার সংস্কারে বিএনপি-জামাত জোটের এই অনীহা অব্যাহত থাকে।
অবশেষে, ২০০৭ সালের ১/১১-তে গঠিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে প্রবল জনমতের চাপে একটি সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের স্বার্থে ১৪ দল উপস্থাপিত দাবীসমূহকে সক্রিয় বিবেচনায় নেয়া হয়। এই দাবী অনুসারে ছবিযুক্ত ভোটার তালিকা, স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স, নির্বাচনে পেশীশক্তি ও অর্থের ব্যবহার বন্ধ, নির্বাচনে অংশগ্রহণ ইচ্ছুক প্রার্থীর সম্পদের বিবরণী প্রকাশ, চাকুরী থেকে অবসর গ্রহণের পরপরই প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের নির্বাচনে অংশগ্রহণের পথ বন্ধ করা, তৃণমূলের নেতাকর্মীদের মাধ্যমে সম্ভাব্য জনপ্রতিনিধির তালিকা প্রণয়ন এবং সেখান থেকে মনোনয়ন প্রদান, প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের মধ্য থেকে নির্বাচন পরিচালনার জন্য প্রিজাইডিং ও পোলিং অফিসার নিয়োগসহ যে যে প্রক্রিয়ায় একটি নির্বাচন কলুষিত হতে পারে তা বন্ধে সে বিষয়ে পদ্ধতিগত সংস্কারের রূপরেখা প্রদান করা হয়।
প্রিয় সাংবাদিক বন্ধুগণ,
২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি অবাধ, নিরপেক্ষ ও সকলের নিকট গ্রহণযোগ্য একটি নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে নির্বাচন কমিশন সংবিধান ও আইন অনুযায়ী যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ পৃথিবীর অন্যান্য গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের ন্যায় নির্বাচন কমিশনকে সার্বিক সহায়তা প্রদান করে। একই সাথে সাংবিধানিক ও গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত রাখতে জাতীয় সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী সকল দলের অংশগ্রহণে একটি অন্তর্বতীকালীন সরকার গঠন করে। কিন্তু জননেত্রী শেখ হাসিনা কর্তৃক বারবার আহŸান জানানো সত্তে¡ও বিএনপি সেই নির্বাচনে অংশগ্রহণে বিরত থেকে নির্বাচন প্রতিহত করার নামে দেশব্যাপী এক ভয়াবহ সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে মেতে ওঠে। গণপরিবহনে অগ্নিসন্ত্রাসের পাশাপাশি সাধারণ মানুষের বাড়ি-ঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগের মাধ্যমে নজিরবিহীন ত্রাসের সৃষ্টি করে। বিএনপি-জামাত জোট সন্ত্রাসীদের নির্বিচার আক্রমণে ২৩ জন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যসহ আওয়ামী লীগের শতাধিক নেতা-কর্মী এবং অনেক সাধারণ মানুষ প্রাণ হারায়। তবে দেশের গণতন্ত্রকামী জনগণ বিএনপি-জামাত জোটের নৃশংসতম এই তান্ডবের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায়। অনুরূপভাবে ২০১৮ সালেও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা সকল প্রতিবন্ধকতা দূর করে গ্রহণযোগ্য একটি নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ সুনিশ্চিত করতে সকল রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপের উদ্যোগ গ্রহণ করেন। কিন্তু বিএনপি ও তাদের জোটভুক্ত রাজনৈতিক দলগুলো দূরভিসন্ধি নিয়ে সংলাপে অংশগ্রহন করে নির্বাচনের পূর্বেই নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ বিনষ্টের অপতৎপরতায় লিপ্ত হয়। নির্বাচনের পূর্বে ও পরে বিএনপি নেতৃবৃন্দের বক্তব্য ও কর্মকান্ডই প্রমাণ করে নির্বাচনী ব্যবস্থাকে প্রশ্নবিদ্ধ করাই ছিল তাদের মূল লক্ষ্য। জনগণ তাদের ঘৃণ্য অপচেষ্টা বুঝতে পেরে নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে বিপুল ভোটে জয়যুক্ত করে।
প্রিয় সাংবাদিক বন্ধুগণ,
১৯৭২ সালে RPO প্রণীত হওয়ার পর দীর্ঘ সময়ে নির্বাচন সংক্রান্ত ২-৩টি অধ্যাদেশ ও আইন প্রণয়ন করা হলেও প্রয়োজনীয় সকল আইন বা অধ্যাদেশ আওয়ামী লীগ সরকারের আমলেই সম্পাদিত হয়েছে। ২০০৯-২০২১ সময়কালে জাতীয় ও স্থানীয় সরকার নির্বাচন সংক্রান্ত ৩২টিরও বেশি অধ্যাদেশ ও আইন প্রণয়ন করা হয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলেই ২০০৯ সালে ‘নির্বাচন কমিশন সচিবালয় আইন’ প্রণয়ণের মাধ্যমে এই কমিশনকে তার প্রয়োজনীয় সকল প্রশাসনিক, আর্থিক, লেজিসলেটিভ এবং রেগুলেটরি ক্ষমতা প্রদান করা হয়েছে। ২০০৯ সালের পূর্বে নির্বাচন কমিশন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অধিনে একটি সংস্থা ছিল। আওয়ামী লীগ সরকারের সময় আমাদের সময়ে নির্বাচন কমিশনের সকল আইনি এবং রেগুলেটরি ক্ষমতা প্রয়োগের লক্ষ্যে নানামুখী সম্পূরক বিধি-বিধান, নীতিমালা ও গাইডলাইনস প্রণীত হয়। নির্বাচন কমিশনের আইন ও রেগুলেটরি ব্যবস্থাকে পরিপূর্ণভাবে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সকল ধরনের প্রাতিষ্ঠানিক সহায়তা প্রদান করা হয়েছে। ২০১৯ সালে Representation of the People (Amendment) Act ২০১৯’ প্রণয়ন করা হয়। EVM- এর মাধ্যমে ভোটগ্রহণের জন্য জাতীয় সংসদ নির্বাচন (ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন) বিধিমালা, ২০১৮ প্রণয়ন করা হয়েছে। Delimitation of Constituencies Ordinance, 1976 (Ordinance No. XV, 1976 রহিত করে ২০২১ সালে বাংলায় নতুন একটি আইন প্রণয়ন করা হয়, যার শিরোনাম ‘জাতীয় সংসদের নির্বাচনী এলাকার সীমানা নির্ধারণ আইন, ২০২১’। এছাড়া ২০২১ সালের ১ জুলাই RPO'র নির্ভরযোগ্য বাংলা পাঠ (অনুবাদ) প্রণয়ন করা হয়েছে। ২০১৯ সালে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন ‘ভোটার তালিকা বিধিমালা, ২০১২’ সংশোধন করে তৃতীয় লিঙ্গের (হিজড়া) জনগোষ্ঠীকে ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে যুগান্তকারী এক পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়।
আপনারা জানেন, বর্তমানে মধ্যপ্রাচ্য, ইউরোপ এবং আমেরিকাসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রায় ১ কোটিরও অধিক বাংলাদেশী বসবাস করেন। বিদেশে অবস্থানরত বিপুলসংখ্যক এই প্রবাসী বাংলাদেশীদের ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার জন্য 'ভোটার তালিকা বিধিমালা, ২০১২’-তে প্রয়োজনীয় সংশোধনী আনা হয়েছে। প্রবাসীদের ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্তির জন্য একটি নীতিমালাও প্রণয়ন করা হয়েছে।
প্রিয় সাংবাদিক বন্ধুগণ,
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ দেশের সংবিধান ও আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের মহামান্য রাষ্ট্রপতির দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনের সুগভীর জ্ঞান, প্রজ্ঞা ও সুবিবেচনার প্রতি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের পরিপূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস রয়েছে এবং মহামান্য রাষ্ট্রপতি কর্তৃক গৃহীত যে কোন ন্যায়সঙ্গত উদ্যোগের প্রতি আমাদের পরিপূর্ণ আস্থা রয়েছে। নির্বাচন কমিশন একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান। নির্বাচন কমিশন সংক্রান্ত মূল বিধানাবলী দেশের সর্বোচ্চ আইন সংবিধানেই (অনুচ্ছেদ ১১৮-১২৬) উল্লেখ রয়েছে।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনারগণের নিয়োগের বিষয়ে আজকের বৈঠকে আমরা কয়েকটি প্রস্তাব উত্থাপন করেছি :
(ক) সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১১৮-এর বিধান অনুযায়ী মহামান্য রাষ্ট্রপতি প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনারদের নিয়োগদান করবেন।
(খ) প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের ক্ষেত্রে মহামান্য রাষ্ট্রপতি যেরূপ উপযুক্ত বিবেচনা করবেন, সেই প্রক্রিয়ায় তিনি প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনারদের নিয়োগ দান করবেন।
(গ) প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের লক্ষ্যে সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১১৮-এর বিধান সাপেক্ষে একটি উপযুক্ত আইন প্রণয়ন করা যেতে পারে। বর্তমানে এই ধরনের কোন আইন না থাকায় সংবিধানের ১১৮ অনুচ্ছেদের বিধান অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি কর্তৃক প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনারগণের নিয়োগের ক্ষেত্রে সংবিধান ব্যতিরেকে অন্য কোন আইন প্রতিপালনের বাধ্যবাধকতা নেই। তবে সাংবিধানিক চেতনা সমুন্নত রাখতে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনারগণের যোগ্যতা-অযোগ্যতা এবং তাদের নিয়োগ প্রক্রিয়া নির্ধারণের লক্ষ্যেই মূলত এই আইনের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। নির্বাচন কমিশন গঠন বিষয়ে যে কোনো আইন হবে সাংবিধানিক বিধান মতে একটি বিশেষ ধরনের আইন। এই বিশেষ ধরনের আইন প্রণয়নের জন্য আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে কোনো সুনির্দিষ্ট উদাহরণ ছিল না। নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে একটি রাজনৈতিক মতৈক্য প্রতিষ্ঠা করতে একমাত্র বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ একটি সাংবিধানিক রীতি ও রাজনৈতিক অনুশীলন (Constitutional Convention) প্রতিষ্ঠা করেছে। এই সাংবিধানিক রীতিটি হলো ‘সার্চ কমিটি’/ ‘অনুসন্ধান কমিটি’ গঠনের মাধ্যমে সকলের মতামত ও অংশগ্রহণের ভিত্তিতে নির্বাচন কমিশন গঠন। এই ব্যবস্থাটি এখন পর্যন্ত দুই বার (২০১২ এবং ২০১৭) অনুশীলন করা হয়েছে এবং সে অনুযায়ী নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়েছে। দুই বারই দেশের সকল রাজনৈতিক দল ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিগণ এই অনুশীলনে অংশগ্রহণ করেছে। এমতাবস্থায়, এই রীতিটির আলোকে এবং এই প্রক্রিয়ালব্ধ অভিজ্ঞতা থেকে সংবিধানের ১১৮ অনুচ্ছেদের আলোকে একটি আইন প্রণয়ন করা যেতে পারে।
(ঘ) সুষ্ঠু, অবাধ, নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ নির্বাচনের স্বার্থে সকল নির্বাচনে অধিকতর তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিত করা প্রয়োজন।
আপনাদের সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু
বাংলাদেশ চিরজীবী হোক।
তারিখ : ১৭ জানুয়ারি ২০২২
প্রেস বিজ্ঞপ্তি