1188
Published on জানুয়ারি 13, 2022সাদিকুর রহমান পরাগ:
কালের প্রবাহে হারিয়ে গেল আরও একটি বছর। সাফল্য-ব্যর্থতার মধ্য দিয়েই বছর পেরিয়ে যায়। তাই বছর শেষে প্রশ্ন জাগে কেমন গেল বছরটি। বাংলাদেশের জন্য ২০২১ সালটি কেমন ছিল সেটি নিয়েও কৌতূহল বিরাজ করাটাই স্বাভাবিক।
বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশও পার করেছে ভয়াবহ করোনা অতিমারির আরও একটি বছর। ২০২১ সালে বাংলাদেশে করোনা মহামারি প্রকট রূপ ধারণ করে। একদিকে বাড়তে থাকে আক্রান্তের সংখ্যা, অন্যদিকে বাড়তে থাকে মৃত্যুর হার। সাময়িক সময়ের জন্য অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডেও নেমে আসে স্থবিরতা। এ-রকম একটি প্রতিকূল পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শক্ত হাতে হাল ধরেছেন। তার সাহসী নেতৃত্ব ও ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় আমরা ঘুরে দাঁড়িয়েছি। অর্থনীতির চাকাকে সচল রাখতে আর্থিক প্রণোদনাসহ বিভিন্ন রকমের পদক্ষেপ, রেমিট্যান্সে প্রণোদনা, দরিদ্র ও নিম্ন আয়ের জনগোষ্ঠীর জন্য আর্থিক ও খাদ্য সহায়তা, চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করা, বিনামূল্যে টিকা প্রদানের ব্যবস্থা করাসহ বিভিন্ন রকমের জনকল্যাণমুখী উদ্যোগ তিনি গ্রহণ করেন। এই একটি বছরে আমরা হারিয়েছে অনেককে। আবার এই একটি বছরে আমাদের অনেক অর্জনও রয়েছে। এক নজরে দেখে নিই কেমন কাটল ২০২১ সাল-
প্রাণরক্ষা প্রধান বিবেচনা
২০২১ সাল নিয়ে কথা বলতে গেলে প্রথমেই আসে টিকা বা ভ্যাকসিনের কথা। চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম থাকায় টিকার অপ্রতুলতা দেখা দেয়। বিভিন্ন দেশে দেখা দেয় টিকার জন্য হাহাকার, শুরু হয় ভ্যাকসিন নিয়ে রাজনীতি। সেই তুলনায় বাংলাদেশ অনেকটা স্বস্তিদায়ক অবস্থায় ছিল। এর কারণ টাকার কথা চিন্তা না করে যে কোনো মূল্যে মানুষের প্রাণরক্ষা করা ছিল বঙ্গবন্ধুর কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রধান বিবেচ্য বিষয়। তার দূরদর্শী ও সময়োপযোগী সিদ্ধান্তের ফলে দ্রুত টিকা সংগ্রহ করা সম্ভব হয়। বছরের শুরুতে ২৭ জানুয়ারি ভ্যাকসিন প্রদান শুরু করা হয়। ২০২১ সালে টিকা আনা হয়েছে ১৯ কোটি ৯৪ লাখ ৬০ হাজার ডোজ। এর মধ্যে প্রথম ডোজ পেয়েছে ৪০.৮ শতাংশ মানুষ, অর্থাৎ ৭ কোটি ২৪ লাখ ৪৩ হাজার ৭৩৪ জন। আর দ্বিতীয় ডোজ পেয়েছে ২৮.২ শতাংশ মানুষ, অর্থাৎ ৫ কোটি ৩ লাখ ৭২ হাজার ৫২ জন। বছরের শেষে বুস্টার ডোজ টিকা দেওয়াও শুরু হয়েছে।
শক্ত ভিত্তির ওপর অর্থনীতি
করোনার ভয়াবহতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের অর্থনীতি ভয়াবহ সংকটের মুখোমুখি। অনেকে দেশের জিডিপি সংকুচিত হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধির চাকা সচল থেকেছে। বাংলাদেশের অর্থনীতির আকার দাঁড়ায় ৪০৯ বিলিয়ন ডলারে, যা আগের বছরের চেয়ে ১৫ দশমিক ৭ শতাংশ বেশি। আগস্ট মাসে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৪৮ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যায়। রপ্তানি আয় নতুন মাইলফলক স্পর্শ করে হয়েছে ৩৮.৭৬ বিলিয়ন ডলার। মাথাপিছু আয় দাঁড়ায় ২ হাজার ৫৪৪ ডলার। করোনা সংকটকালেও ২০২১-২২ সালের ঘোষিত বাজেটের আকার ৬ লাখ ৩ হাজার ৬৮১ কোটি ডলার। এই সমস্ত উপাত্ত বলে দেয় যে বাংলাদেশের অর্থনীতি কতটা শক্ত ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে আছে।
অন্যতম বৃহৎ অর্থনীতি
ব্রিটেনের অর্থনৈতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর ইকোনমিকস অ্যান্ড বিজনেস রিসার্চ পূর্বাভাস দিয়েছে, বাংলাদেশ এখন যে ধরনের অর্থনৈতিক বিকাশের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, তা অব্যাহত থাকলে ২০৩৫ সালে বাংলাদেশ হবে বিশ্বের ২৫তম বৃহৎ অর্থনীতি।
বছরের সেরা খুশির বার্তা
বছর শেষে এদেশের জন্য সবচেয়ে আনন্দের বার্তা নিয়ে আসে ২৪ নভেম্বর অনুষ্ঠিত জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের সভার সিদ্ধান্ত। কমিটি ফর ডেভেলপমেন্ট পলিসি (সিডিপি) স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের যে চূড়ান্ত সুপারিশ প্রদান করেছে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের সভায়, সেই সুপারিশ অনুমোদিত হয়েছে।
এসডিজি অগ্রগতি পুরস্কার
জাতিসংঘের সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট সলিউশন নেটওয়ার্ক (এসডিএসএন) ২১ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ‘এসডিজি অগ্রগতি পুরস্কার’ প্রদান করে সম্মানিত করেছে।
সবচেয়ে বড় উৎসব
মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা করেছেন যে দেশে একজনও গৃহহীন থাকবে না। প্রধানমন্ত্রীর এই ঐতিহাসিক ঘোষণার প্রেক্ষিতে আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় দু-ধরনের ক্যাটাগরিতে প্রায় ৯ লাখ মানুষকে বিনামূল্যে ঘর করে দেওয়ার উদ্যোগ নেয় সরকার। প্রধানমন্ত্রীর এই অঙ্গীকারের ধারাবাহিকতায় প্রাথমিকভাবে ২৩ জানুয়ারি ৪৯২টি উপজেলার ৬৬ হাজার ১৮৯টি পরিবারের হাতে বিনামূল্যে ঘরের চাবি তুলে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘… এটাই সবচেয়ে বড় উৎসব, এর চেয়ে বড় উৎসব বাংলাদেশের মানুষের আর হতে পারে না… একদিনে এত মানুষকে ঘর দিতে পারলাম, এটাই সবচেয়ে বড় পাওয়া। মুজিববর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী এই সময়ের মধ্যে একজন মানুষও গৃহহারা থাকবে না। যাদের গৃহ নেই তাদের ঘর করে দিতে পারা অসাধ্য সাধন করতে পারলাম, এর চেয়ে বড় পাওয়া আর হতে পারে না।’
ফাইভ-জি যুগে বাংলাদেশ
ফাইভ-জি যুগে প্রবেশ করেছে বাংলাদেশ। এর ফলে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের প্রস্তুতির পথে বাংলাদেশ এক ধাপ এগিয়ে গেছে। ১২ ডিসেম্বর ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ দিবস’-এ প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় এর উদ্বোধন করেন। টেলিটকের মাধ্যমে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া, বাংলাদেশ সচিবালয়, সাভারে অবস্থিত জাতীয় স্মৃতিসৌধ, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, ধানমন্ডি ৩২ এবং ঢাকার শেরেবাংলা নগরসহ দেশের ৬টি স্থানে এটি পরীক্ষামূলকভাবে চালু হয়েছে। ফাইভ-জি সেবার উদ্বোধন করে সজীব ওয়াজেদ জয় বলেন, ‘আওয়ামী লীগ যতদিন ক্ষমতায় থাকবে, ততদিন বাংলাদেশ সব খাতে এগিয়ে যাবে… আমরা বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগিয়ে যাব।’
মুজিববর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর অনুষ্ঠান
মুজিববর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে ‘মুজিব চিরন্তন’ থিমের ওপর ভিত্তি করে ১৭ থেকে ২৬ মার্চ পর্যন্ত অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করা হয়।
স্বপ্নের মেট্রোরেল
যানজট নিরসন এবং যাত্রীসেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ঢাকা শহরে আধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থা প্রবর্তনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। সেই লক্ষ্যে উত্তরার দিয়াবাড়ি থেকে মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রোরেল নির্মাণ করা হচ্ছে। বছরের অন্যতম সফলতার সংবাদ হচ্ছেÑ ডিসেম্বর মাসে উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত পরীক্ষামূলকভাবে স্বপ্নের মেট্রোরেল চালু হয়েছে।
প্রাণের পদ্মাসেতু
বছরের শেষ চমকটি দিয়েছেন জাতির পিতার দুই কন্যা শেখ হাসিনা এবং শেখ রেহানা। বছরের শেষ দিনে তারা পদ্মাসেতু দেখতে যান। তারা হেঁটে পদ্মাসেতু পরিদর্শন করেন। গাড়িতে করে তারা মাওয়া প্রান্ত থেকে জাজিরা প্রান্ত পরিদর্শন করেন। এই পদ্মাসেতুর সঙ্গে পুরো জাতির আবেগ জড়িয়ে আছে। ২০২২ সালের জুনে এই সেতু চালু হবে। দেশ-বিদেশের বিভিন্ন ষড়যন্ত্র ও বাধা সত্ত্বেও সম্পূর্ণ নিজস্ব অর্থায়নে নির্মিত হয়েছে প্রাণের পদ্মাসেতু। এই সেতু নির্মাণের মাধ্যমে বাংলাদেশ তার সক্ষমতা তুলে ধরতে সমর্থ হয়েছে। দেশের দক্ষিণ এবং দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ১৯ জেলাকে সংযুক্ত করবে এই সেতু। আশা করা যাচ্ছে, এই সেতুর কারণে দেশের জিডিপি বাড়বে ১.২৩ শতাংশ।
নারীর দৃপ্ত পদচারণা
এদেশের মেয়েরা যে পিছিয়ে নেই বিভিন্ন ক্ষেত্রেই তার প্রমাণ তারা রেখেছে। তবে ২০২১ সালের অর্জন অন্যান্য অর্জনকেও ছাড়িয়ে গেছে। প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ ক্রিকেট খেলার যোগ্যতা অর্জন করেছে বাংলাদেশের নারী ক্রিকেট দল। এখানেই শেষ নয়। অনূর্ধ্ব-১৯ নারী ফুটবলে শক্তিশালী ভারতকে পরাজিত করে অপরাজিত সাফ চ্যাম্পিয়ন হয়েছে বাংলাদেশের নারী ফুটবল দল।
শিক্ষাজীবনের স্বাভাবিকতা
করোনার কারণে দীর্ঘদিন ধরে সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল। যদিও এ-সময়ে অনেক প্রতিষ্ঠান অনলাইনে ক্লাস এবং পরীক্ষা গ্রহণ করেছে। শিক্ষাজীবনের স্বাভাবিকতা ফিরিয়ে আনতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। শিক্ষার্থীদের জন্য ভ্যাকসিনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ৫৪৪ দিন বন্ধ থাকার পর ১২ সেপ্টেম্বর থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো খুলে দেওয়া হয়। ৩২ লাখ ১ হাজার ২৫৯ শিক্ষার্থী প্রথম ডোজ এবং ৩ লাখ ৩৩ হাজার ৬৯১ শিক্ষার্থীকে দ্বিতীয় ডোজ টিকা দেওয়া হয়েছে।
অর্ধেক বাস ভাড়া
করোনার কারণে বিশ্ব অর্থনীতিতে সংকট সৃষ্টি হয়েছে। বিভিন্ন ক্ষেত্রে উৎপাদন কমেছে। সরবরাহের অপ্রতুলতার কারণে দাম বেড়েছে উৎপাদন উপকরণের। বর্ধিত মূল্যের সঙ্গে সমন্বয় করতে গিয়ে সরকারকে জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধি করতে হয়েছে। এতে পরিবহন ভাড়া বৃদ্ধি পায়। কিন্তু শিক্ষার্থীরা অর্ধেক বাস ভাড়ার দাবিতে আন্দোলন করে। শিক্ষার্থীদের দাবির ন্যায্যতা বিবেচনা করে প্রধানমন্ত্রী শিক্ষার্থীদের জন্য বাস ভাড়া অর্ধেক করার নির্দেশ প্রদান করেন। এটিই হচ্ছে জনগণের সরকারের বৈশিষ্ট্য।
এক দেশ এক রেট
অশুভ প্রতিযোগিতা বন্ধ করতে এবং সাশ্রয়ী মূল্যে গ্রাহকদের উন্নত ইন্টারনেট সেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ‘এক দেশ এক রেট’ ট্যারিফ চালু করা হয়েছে। সারাদেশেই এক দামে ব্যান্ডউইথ বিক্রি হবে।
সেরাদের কাতারে বাংলাদেশ
বিশ্বের ১০০টি সেরা কারখানার মধ্যে ৩৯টি বাংলাদেশের। মার্কিন গ্রিন বিল্ডিং কাউন্সিল-র তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশের ১৪৪টি কারখানা লিডারশিপ ইন এনার্জি অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট ডিজাইন সনদ পেয়েছে, যা বিশ্বে সর্বোচ্চ। এর মধ্যে ৪১টি প্লাটিনাম, ৮৯টি গোল্ড, ১২টি সিলভার এবং ৩টি সাধারণ সনদ পেয়েছে।
ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন
বিএনপি অংশগ্রহণ না করলেও ২০২১ সালে ৫টি ধাপে ৩ হাজার ৭২৫টি ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এর মধ্যে প্রথম ধাপে ৩২৩টি, দ্বিতীয় ধাপে ৮৪৮টি, তৃতীয় ধাপে ১,০০৭টি, চতুর্থ ধাপে ৮৪০টি এবং পঞ্চম ধাপে ৭০৭টি ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে।
গুজব ও অপপ্রচারের রাজনীতি
অন্যান্য বছরের মতো ২০২১ সালেও বিএনপি-জামাত জোটের গুজব ও অপপ্রচারের রাজনীতি অব্যাহত ছিল। জাতিসংঘ যখন উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের জন্য বাংলাদেশের জন্য চূড়ান্ত সুপারিশ করেছে, যখন উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে সারাবিশ্বে বাংলাদেশ প্রশংসিত হচ্ছে, তখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে ব্যবহার করে বিএনপি-জামাত জোট পরিকল্পিতভাবে অপপ্রচার চালিয়ে আসছে। এমনকি অর্থ দিয়ে আল-জাজিরার মতো বিদেশি প্রচার মাধ্যমকেও বাংলাদেশ-বিরোধী মিথ্যা প্রচারণার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। বিদেশি শক্তির চাপ প্রয়োগের মাধ্যমে বাংলাদেশের উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রাকে ব্যাহত করতে প্রচুর অর্থ দিয়ে লবিস্ট নিয়োগ করেছে।
মৃত্যু নিয়ে গুজব
সাজাপ্রাপ্ত হওয়া সত্ত্বেও প্রধানমন্ত্রীর উদারতার ফলে খালেদা জিয়া কারাগারের বাইরে রয়েছেন এবং চিকিৎসাসেবা গ্রহণ করছেন। কিন্তু বিএনপি-জামাতের রাজনীতি এতটাই সংকীর্ণ যে তারা খালেদা জিয়ার চিকিৎসা নিয়েও নাটক করতে দ্বিধা করেনি। এমনকি বছরের শেষে এসে খালেদা জিয়ার মৃত্যুর মিথ্যা গুজব ছড়িয়ে দেশে অশান্তি সৃষ্টির পাঁয়তারা করেছিল। খালেদা জিয়ার মৃত্যু হলে যে কোনো মূল্যে তা থেকে রাজনৈতিক ফায়দা তুলে নিতে তারা বদ্ধপরিকর। ২০২১ সালের শেষে বিএনপির রাজনীতির এ রূপটিও জনগণের কাছে পরিষ্কার হয়ে গেছে।
সাম্প্রদায়িক অপশক্তির অপতৎপরতা
করোনা সংকটকালেও সাম্প্রদায়িক অপশক্তি দেশের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা লাগিয়ে দেশের স্থিতিশীলতা বিনষ্ট করতে সক্রিয় ছিল। বছরের শুরুতে মার্চ মাসে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরকে ঘিরে হেফাজতে ইসলাম জল ঘোলা করার চেষ্টা করে। বায়তুল মোকাররম এবং হাটহাজারিতে হেফাজতিরা সহিংসতা ও তা-ব চালায়। এ ঘটনার জেরে ২৬ থেকে ২৮ মার্চ ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের মাধ্যমে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি সাধন করে। সরকার দৃঢ়তার সঙ্গে এই অপশক্তিকে মোকাবিলা করে। ১৩ অক্টোবর কুমিল্লার নানুয়ার দীঘির পাড়ের অস্থায়ী পূজাম-পে পরিকল্পিতভাবে কোরআন শরিফ রেখে কোরআন অবমাননার ধুয়া তুলে মুসল্লিদের বিভ্রান্ত করে সারাদেশে দাঙ্গা লাগানোর অপচেষ্টা চালানো হয়। পিছন থেকে কলকাঠি নাড়ানো বিএনপি-জামাত জোটের অপচেষ্টা ব্যর্থ হয়।
জিরো টলারেন্স নীতি
দলীয় শৃঙ্খলা বজায় রাখতে জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণ করা হচ্ছে। দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ ও অসদাচরণের জন্য মন্ত্রী থেকে জনপ্রতিনিধি কাউকে ছাড় দেওয়া হচ্ছে না। এ অভিযোগে তথ্য প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসানকে মন্ত্রিসভা থেকে বাদ দেওয়া হয়। দল থেকে বহিষ্কার করা হয় গাজীপুরের মেয়র ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম, রাজশাহীর কাটাখালি পৌরসভার মেয়র আব্বাস আলী, জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ পৌরসভার মেয়র শাহনেওয়াজকে।
দিশা না হারানো এক বাংলাদেশের ছবি
স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে এসে কোন জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি। সে-বিষয়টি বরং পাকিস্তানের সঙ্গে তুলনা করেই বুঝে নেওয়া যাক। ১৯৭০ সালে পাকিস্তান বাংলাদেশের তুলনায় ৭০ শতাংশের অধিক সম্পদশালী ছিল। আর ২০২১ সালে এসে বাংলাদেশ পাকিস্তানের তুলনায় ৪৫ শতাংশের অধিক সম্পদশালী। ১৯৭০ সালে পাকিস্তানের মোট অর্থনৈতিক সম্পদের পরিমাণ ছিল ১১ বিলিয়ন ডলার আর বাংলাদেশের ৯ বিলিয়ন ডলার। ২০২১ সালে এসে পাকিস্তানের ২৬৪ বিলিয়ন ডলার আর বাংলাদেশের ৩২৪ বিলিয়ন ডলার। এ চিত্রটি বলে দেয় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ তার লক্ষ্য পূরণে এগিয়ে চলেছে দুর্বার গতিতে। মুজিববর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে জাতির পিতার কন্যা প্রমাণ করেছেন, আমরা-ই পারি, আমরা-ই পারব। তাই ২০২১ সালে করোনা মহামারির কঠিন সংকটকালেও আমরা দেখতে পাই- দিশা না হারানো এক বাংলাদেশের ছবি।
লেখক : সম্পাদকমন্ডলীর সদস্য, উত্তরণ
সৌজন্যেঃ উত্তরণ