2083
Published on জানুয়ারি 4, 2022প্রাণঘাতি করোনা মহামারির শুরুতে যখন সবাই কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে গিয়েছিল, ঠিক তখনই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে মাঠে নামে ছাত্রলীগ। বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়ুয়া ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা প্রাণ বাজি রেখে পাশে দাঁড়ায় গণমানুষের। গুজব প্রতিরোধে অনলাইনে সচেতনতামূলক প্রচারণা; হাটে-বাজারে-সড়কে স্বাস্থ্যবিধি সংক্রান্ত লিফলেট, মাস্ক, সাবান ও স্যানিটাইজার বিতরণ; শহরের কর্মহীন ছিন্নমূলদের জন্য নিয়মিত খাদ্যদ্রব্যের ব্যবস্থা, গ্রামাঞ্চলের কৃষকদের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ধান কাটা, মুমূর্ষু রোগীদের জন্য অ্যাম্বুলেন্স ও অক্সিজেন সিলিন্ডার সরবরাহ; সারাদেশে বিনামূল্যে টেলিমেডিসিন সেবা, এমনকি করোনায় মৃতদের দাফন-কাফনের ব্যবস্থাও করেছে ছাত্রলীগের অদম্য তরুণ-তরুণীরা।
ছাত্রলীগ সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় জানান, ‘রমজান মাসজুড়ে গরিব-দুস্থদের জন্য ইফতার ও সেহেরির ব্যবস্থা করা, ঈদের সময় নিম্ন-আয়ের মানুষদের মধ্যে সেমাই-মিষ্টি বিতরণ, কোরবানির মাংস বিতরণ, সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের জন্য দুধের প্যাকেট সরবরাহ, পথ-শিশুদের খাদ্য ও পোশাক, টিউশনি হারানো শিক্ষার্থীদের জন্য নগদ অর্থ ও মেস ভাড়ায় সহায়তা, প্লাজমা সেল ও রক্তদান কর্মসূচি উল্লেখযোগ্য। এমনকি করোনার টিকা নেওয়ার উৎসাহ দিতে ব্যাপারে নিরক্ষর মানুষদের কাছে গিয়ে নিয়মিত কাউন্সেলিংও করেছে ছাত্রলীগ।‘
ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য জানান, ‘কেউ করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হলে, তাদের স্বজনরা পর্যন্ত যখন রোগীকে ফেলে রেখে চলে যাচ্ছিলো, তখন সেসব রোগীকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে পৌঁছে দিয়েছে ছাত্রলীগ। আতঙ্কের কারণে করোনায় মৃতদের সৎকারের লোক পাওয়া যাচ্ছিলো না, সেইসব অসহায় পরিবারের খোঁজ পাওয়ার পর ছুটে গেছে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা, নিজেদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মৃতদের দাহ ও দাফনের ব্যবস্থা করেছে তারা।‘
শ্রমিক সংকট নিরসনে ধানকাটা কর্মসূচি : করোনার প্রথম ধাক্কায় অজানা আতঙ্কে আতঙ্কিত হয়ে পড়ে সাধারণ জনগণ। লকডাউনের কারণে শ্রমিকদের স্থানান্তরও বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু এরমধ্যেই চলে আসে বোরো ধান কাটার সময়। তাই প্রধানমন্ত্রী ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের নিজ নিজ এলাকার কৃষক-শ্রমিকদের সঙ্গে কাজ করার নির্দেশ দেন। এরপর হাওরাঞ্চলসহ সারাদেশে শ্রমিকদের কাঁধি কাঁধ মিলিয়ে স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে ধানকাটা কর্মসূচি শুরু করে ছাত্রলীগ। এসময় কৃষকের প্রায় ৯৬ হাজার শতাংশ জমির ফসল কেটে গোলায় তুলে দেয় নেতাকর্মীরা। যার ফলে আম্পানের মতো ভয়াবহ সুপার-সাইক্লোনের হাত থেকেও কৃষকের লাখ লাখ হেক্টর পাকা ধান রক্ষা পায়। এজন্যই মহামারির মধ্যেও দেশে কোনো খাদ্য সংকট দেখা দেয়নি।
করোনায় মৃতদের লাশ দাফন: যখন করোনায় আক্রান্ত মৃতদের দেহ দাফন করার জন্য কেউ এগিয়ে আসছিল না ভয়ে, আপনজনের লাশ নিতেও অস্বীকৃতি জানাচ্ছিলো স্বজনরা; তখন ধর্মীয় অনুশাসন মেনে মৃতদের দাফনের কাজ করেছে ছাত্রলীগ। জীবনের মায়া ত্যাগ করে দেশের বিভিন্ন স্থানে করোনায় আক্রান্ত প্রায় শতাধিক মৃত ব্যক্তির লাশ দাফন করেছে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা। করোনা মহামারিতে ‘দাফন টিম’ গঠন করা ছাত্রলীগের অন্যতম সাহসী উদ্যোগ।
ছাত্রলীগের মানবিক ও সাহসী ভূমিকার জন্য এসময় (৩১ আগস্ট, ২০২০) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ''করোনাকালে প্রশংসনীয় ভূমিকা পালন করছে ছাত্রলীগ। এই দুর্যোগে ছাত্রলীগ যেভাবে অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে, তা অত্যন্ত প্রশংসনীয়। আগামী প্রজন্মের জন্য এটা দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।'
হ্যালো ছাত্রলীগ সেবা: দেশের বিভিন্ন স্থানে এই সেবার মাধ্যমে ২ লাখ ৯২ হাজার মানুষ সহায়তা পেয়েছে।
বঙ্গমাতা অক্সিজেন সেবা: অভিজ্ঞ চিকিৎসকদের পরামর্শ অনুযায়ী প্রায় ২ হাজার মানুষকে দেওয়া হয়েছে ফ্রি অক্সিজেন সেবা।
ডিসইনফেকসন চেম্বার ও বুথ স্থাপন: দেশের বিভিন্ন স্থানে মোট ৫৬টি ডিসইনফেকসন চেম্বার ও ১২০টি বুথ স্থাপন করা হয়েছে।
টেলি মেডিসিন, প্লাজমা সেল ও রক্তদান: প্রায় ২২ হাজার মানুষকে টেলি মেডিসিন সেবা ও ৭৭ জনকে প্লাজমা দান করেছে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এছাড়াও দেশব্যাপী নিয়মিত রক্তদান কর্মসূচি চালিয়ে গেছে সংগঠনটি।
তৃতীয় লিঙ্গের মানুষকে সহযোগিতা: করোনাকালে ১৮ হাজার ৫৫০ জন তৃতীয় লিঙ্গের মানুষের মধ্যে মাস্ক, সাবান, স্যানিটাইজার বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়াও তাদের হাতে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র।
ঘূর্ণিঝড় আম্ফানে ক্ষতিগ্রস্তদের সাহায্য: করোনার মধ্যে সৃষ্ট প্রাকৃতিক দুর্যোগ ঘূর্ণিঝড় আম্ফানে ক্ষতিগ্রস্ত ২৫ জেলায় স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে জনসেবামূলক কাজ করেছে নেতাকর্মীরা। ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তাঘাট, ব্রিজ, বাঁধ মেরামতসহ প্রায় চার লাখ লোককে পাশে থেকে সহযোগিতা করেছে ছাত্রলীগ।
শিক্ষার্থীদের মেসভাড়ায় সহায়তা: করোনাকালে টিউশনি চলে যাওয়া এবং বিভিন্ন মেসে থাকা ২২২৭ জন শিক্ষার্থীকে সহায়তা প্রদান করা হয়েছে।
মাস্ক-স্যানিটাইজার বিতরণ: ছাত্রলীগের উদ্যোগে জীবানুনাশক হ্যান্ড স্যানিটাইজার তৈরি করে তা ঢাকাসহ বিভিন্ন শহরের সাধারণ মানুষদের মধ্যে বিনামূল্যে বিতরণ করা হয়। করোনা সংক্রমণের প্রথম ঢেউয়ে তথা ২০০২ সালের মার্চ মাস থেকে জুলাই পর্যন্ত মোট ৪ লাখ ৬৮ হাজার হ্যান্ড স্যানিটাইজার বিতরণ করে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। পাশাপাশি সারাদেশে বিনামূল্যে প্রায় ৬ লাখ ৫০ হাজার মাস্ক বিতরণ করা হয়। পরবর্তীতেও এই ধারা অব্যাহত থাকে।সেই সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও শহরের গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় হাত ধোয়ার জন্য বেসিনের স্থাপন নিশ্চিত করে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ।
নগদ টাকা ও খাদ্যসামগ্রী বিতরণ: সাধারণ শিক্ষার্থী এবং অসহায় জনগোষ্ঠীর মধ্যে ৪৩ দিন নগদ টাকা ও খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করেছে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। ঈদুল আজহার আগে ঘোষিত কঠোর লকডাউনের কারণে যাতে দরিদ্র শিক্ষার্থীরা ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সেজন্য এই কর্মসূচি হাতে নিয়েছিল ছাত্র সংগঠনটি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দুটি প্রক্রিয়ায় তারা দীর্ঘ মেয়াদি এই কার্যক্রমটি পরিচালনা করেছে। খাদ্য সহায়তার জন্য দেশের যেকোনো প্রান্ত থেকে আবেদনের জন্য তারা একটি গুগল ফর্ম তৈরি করে। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে জেলা ছাত্রলীগের মাধ্যমে প্রত্যেকটি জেলায় এবং ঢাকা শহরের কার্যক্রম মধুর ক্যান্টিন থেকে পরিচালিত হয়েছে। আবার অনেক শিক্ষার্থীর বাসায়ও খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করে ছাত্রলীগ। ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে ৪৩ দিনে এরকম উপকার ভোগীর সংখ্যা ৪৪৬৭ জন।
মূলত, ২০২০ সালের ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয়। এরপর সংক্রমণ রোধে ১৬ মার্চ থেকে দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও ২৬ মার্চ থেকে অফিস-কারখানা সব বন্ধ ঘোষণা করে সরকার। গণমানুষের প্রাণ বাঁচানোর জন্য, কঠোর লকডাউন বাস্তবায়ন করতে প্রতিটি এলাকায় মোতায়েন করা হয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ফলে হঠাৎ করে বিপাকে পড়ে স্বল্প আয়ের মানুষরা।
এসময় বঙ্গবন্ধুকন্যা ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশব্যাপী স্বেচ্ছাশ্রম ও স্বেচ্ছাসেবা দিয়ে মানুষের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের। এরপরেই অনলাইন ও অফলাইনে সারাদেশের নেতাকর্মীদের জনসেবায় আত্মনিয়োগের জন্য নিয়মিত উৎসাহ দিতে থাকেন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতানেত্রীরা। এমনকি তারা নিজেরাও সশরীরে কাজে নেমে পড়েন। ফলে অল্প সময়ের মধ্যেই সংগঠিত হয়ে নিজ নিজ স্থান থেকে জনমানুষের জন্য কাজ শুরু করেন সর্বস্তরের ছাত্রলীগ কর্মীরা।