সম্ভাবনার দুয়ার খুলবে তারুণ্যের শক্তি

1459

Published on জানুয়ারি 1, 2022
  • Details Image

মাশরাফি বিন মর্তুজাঃ

এই মুহূর্তে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় শক্তি আমাদের তরুণরা। এই তরুণরা আমাদের আগামীর সম্পদ। শিক্ষিত দেশপ্রেমিক সচেতন সাহসী আত্মবিশ্বাসী এই তরুণ প্রজন্ম আমাদের সবচেয়ে বড় শক্তি। তারা প্রযুক্তি জ্ঞানে সমৃদ্ধ, খেলাধুলা-সংস্কৃতিতে এগিয়ে, দেশের প্রশ্নে আপসহীন। এই প্রজন্ম জাতির পিতার সুমহান আত্মত্যাগ ও দীর্ঘ লড়াই-সংগ্রামের ইতিহাস জানে, বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ত্যাগের কথা জানে, শহীদদের অবদানকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে। আত্মসচেতন এই তারুণ্যের শক্তি নতুন বছরে হাজারো সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দেবে, এটাই আমার বিশ্বাস।

নতুন বছর সবার জীবনে নতুন আশা, নতুন উদ্দীপনা নিয়ে শুরু হবে। প্রতিটি পরিবার প্রিয়জনকে নিয়ে নিরাপদে-সুখে দিন কাটাবে, সামাজিক ব্যাধিগুলো দূর হবে, আমাদের দেশ এগিয়ে যাবে তার কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যের দিকে।

বাংলাদেশ আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি। দীর্ঘ নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ, লাখো শহীদের রক্ত আর আমাদের মা-বোনের সম্ভ্রমহানি- সবমিলিয়ে আমাদের মহান স্বাধীনতা। এ দেশ কারও দানে নয়, দাম দিয়ে কেনা। হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আহ্বানে সাড়া দিয়ে হাজারো স্বপ্ন আর আশা নিয়ে এই দেশ স্বাধীন করতে লড়েছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধারা। সেই স্বপ্ন পূরণের পথ এখনো পাড়ি দিতে হচ্ছে বাংলাদেশকে। জাতির পিতার সুযোগ্য উত্তরাধিকার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুদক্ষ নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ এগিয়ে যাচ্ছে সেই লালিত স্বপ্ন পূরণের অভিযাত্রায়। সময়ের পরিক্রমায় সদ্য বিদায়ী ২০২১ সালে মহামারি করোনার ধাক্কা মোকাবিলা করে জাতি উদযাপন করেছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ও মহান স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী। করোনার ধাক্কা কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর বছর ২০২২ সাল আসার আগেই নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রনের আঘাত আসছে দেশে দেশে। যার জন্য নতুন বছর আশা-আকাক্সক্ষা আর ঘুরে দাঁড়ানোর সময় হলেও কিছুটা অনিশ্চয়তা তৈরি করছে মানব মনে। তবে আমাদের মাতৃভূমি বাংলাদেশ তার এই ৫০ বছরের দীর্ঘ পথচলায় অনেক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে আজকের এই অবস্থানে পৌঁছেছে। যতই বাধা আসুক বা অনিশ্চয়তার আঁধার ঘিরে ধরুক, বাংলাদেশ ভীত হয় না কখনো। এটি বাংলাদেশের চিরায়ত বৈশিষ্ট্য। মহান মুক্তিযুদ্ধে যে আত্মত্যাগ বাংলার মানুষ করেছেন, তা অনাগত আগামীর হাজার হাজার বছর এ দেশকে এগিয়ে যেতে অনুপ্রেরণা দেবে।

মহান মুক্তিযুদ্ধ আমাদের সবচেয়ে বড় অর্জন, আমাদের শক্তি, আমাদের অনুপ্রেরণার উৎস। আজ থেকে ৫০ বছর আগে যদি এই বিজয় না আসত, তাহলে এত ভালোবাসা, এত ঘৃণা, এত চাওয়া-পাওয়া, এত আবেগ, এত এত কথা... সবই না বলা কথা হয়ে থাকত! আমাদের অনেক পাওয়া ও না পাওয়ার মধ্যেও একটা বড় প্রাপ্তি, আমাদের দেশটা স্বাধীন। সেই স্বাধীনতা অর্জনের গল্পটি আরও গৌরবের। ‘মোরা একটি ফুলকে বাঁচাব বলে যুদ্ধ করি’- কী প্রচণ্ড আবেগ, কী বিশুদ্ধ অনুভূতি, কতটা তীব্র ভালোবাসা ছিল। না হলে কী আর সব ছেড়ে জীবন বাজি রেখে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়া আর দেশকে স্বাধীন না করে বাড়ি না ফেরার শপথ নেওয়া! ফেরার পর সব হারানোর কষ্টের মাঝেও নতুন স্বপ্ন, নতুন পথচলা। এই ইতিহাস তো গর্বের, আনন্দের, নতুন উদ্যমের।

ক্রিকেটের মাঠে যখন দেশের প্রতিনিধিত্ব করতে আমরা খেলতে নামি, তখন আমাদের অনুপ্রেরণা হয় এই গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস, সাহস ও শক্তি হয় বীর মুক্তিযোদ্ধারা। দেশকে ভালোবেসে খেলার মাধ্যমে বিশ্বমাঝে আমাদের লাল-সবুজের পতাকার সুনাম ছড়িয়ে দিতে আমরাও আমাদের অতিক্ষুদ্র অবস্থান থেকে এ দেশের বীর সন্তানদের পরবর্তী প্রজন্মের প্রতিনিধি হিসেবে দেশের জন্য কিছু একটা করার চেষ্টা করি সবসময়। তাই এখানে সবসময় আমাদের আবেগ আর ভালোবাসা জড়িয়ে থাকে। খেলার সঙ্গে কোনো কিছু মেলানো যায় না এটা ঠিক, কিন্তু খেলাটা যখন আমাদের দেশে আর খেলছে আমাদের দেশ, সেখানে অন্য যে দেশই খেলুক না কেন, তাদের পতাকা তাদের দেশের মানুষ ছাড়া আমাদের দেশের মানুষ উড়াবে, এটা দেখে সত্যি ভীষণ কষ্ট লেগেছে। যে যাই বলুক, দেশটা কিন্তু আমাদের। আজ জিততে পারিনি তো কাল জিতব, না হলে পরশু। হারি বা জিতি স্টেডিয়ামে আমাদের দেশের পতাকা উড়ুক, চিৎকার হোক ‘বাংলাদেশ...’।

নতুন বছরে এটাই আমাদের প্রত্যাশা। কারণ, বিগত বছরগুলোর কিছু ঘটনা খুবই কষ্টদায়ক ছিল। নতুন দিনে আর এমন কষ্ট পেতে চাই না। কিশোর-কিশোরী, শিশু, বৃদ্ধ সবার হাতে লাল-সবুজের পতাকা উড়ছে আর ‘বাংলাদেশ বাংলাদেশ’ ধ্বনিতে প্রকম্পিত হচ্ছে গোটা স্টেডিয়াম- এমন দৃশ্য, এমন সৌন্দর্য আমি পৃথিবীর আর কোথাও খুঁজে পাই না। এ যে আমার কাছে কি অনুভূতি, তা আমি ভাষায় প্রকাশ করতে পারি না কখনো। বাংলাদেশ সমস্যাকে সমস্যা হিসেবে না দেখে সবসময় তাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়ে মোকাবিলার চেষ্টা করে প্রাণপণ। তরুণ এই রাজনীতিবিদ বলেন, আমি কোনো বিশ্লেষক বা পণ্ডিত নই। তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ করার ক্ষমতা আমার নেই। তবে এ দেশের একজন সাধারণ মানুষ হিসেবে আমি যতটুকু দেখি, যতটুকু বুঝি তাতে আমাদের সমস্যার থেকে সম্ভাবনা অনেক বেশি। আমাদের অর্থনৈতিক উন্নয়ন হচ্ছে, দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন হচ্ছে, নারী-পুরুষ সবাই এগিয়ে যাচ্ছে, আর এসব অর্থনৈতিক-সামাজিক ক্ষেত্রে আমাদের সাম্প্রতিক অর্জন নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়।

নতুন বছরে পদ্মা সেতু, কর্ণফুলী টানেলসহ অনেক বড় প্রকল্প চালু হতে যাচ্ছে। উন্নত দেশের মতো বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা আমাদের দেশে চালু হচ্ছে। ইন্টারনেট, তথ্য-প্রযুক্তিতে অভাবনীয় অগ্রগতি আমাদের। এতসব অর্জনের পেছনে যার দূরদর্শী, সাহসী ও সুদক্ষ নেতৃত্ব তিনি আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নতুন বছরে প্রধানমন্ত্রীকে জানাই আমার সশ্রদ্ধ অভিবাদন ও শুভেচ্ছা।

আমার কাছে যে বিষয়গুলো সমস্যা হিসেবে মনে হয়, তা অনেকের বিবেচনায় বড় কিছু নাও হতে পারে। আধুনিক বিশ্বের একজন নাগরিক হয়ে উঠতে গিয়ে আমরা মানুষ হওয়ার চেষ্টা করছি খুব কম। যদিও মানুষ হওয়ার গুরুত্ব সব কালে সব যুগে সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ। নতুন বছরে আমাদের প্রত্যাশা হোক- আমি-আমরা সবাই মানুষের মতো মানুষ হওয়ার প্রচেষ্টাকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিব। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সোনার বাংলা গড়তে হলে আগে সোনার মানুষ গড়ার কথা বলেছিলেন। আমরা সোনার বাংলার সোনার মানুষ হব। এটাই হোক আমাদের প্রত্যাশা। প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশের প্রতিজন সোনার মানুষকে ইংরেজি নববর্ষ ২০২২-এর শুভেচ্ছা। জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু।

লেখকঃ সাংসদ এবং বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক

বাংলাদেশ প্রতিদিন-এ প্রকাশিত সাক্ষাৎকার, সংশোধিত ও পরিমার্জিত 

Live TV

আপনার জন্য প্রস্তাবিত