যুক্তরাষ্ট্রের মনোভাবে ‘ভূ-রাজনীতি’ ও ‘তৃতীয় শক্তির’ হাত দেখছে ১৪ দল

670

Published on ডিসেম্বর 14, 2021
  • Details Image

যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্র সম্মেলনে বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ না জানানো ও র‌্যাবের কর্মকর্তাদের উপর নিষেধাজ্ঞার পেছনে ‘ভূ-রাজনৈতিক হিসাব-নিকাশ’ ও ‘তৃতীয় পক্ষের ষড়যন্ত্র’ রয়েছে বলে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের আলোচনায় উঠে এসেছে।

এমন প্রেক্ষাপটে ঢাকা-ওয়াশিংটনের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক জোরদারে তৎপরতা বাড়ানোর পাশাপাশি ‘বন্ধু দেশগুলোর’ সামনে সঠিক তথ্য তুলে ধরারও পরামর্শ এসেছে।

সোমবার এক বিশেষ ওয়েবিনারে জোটের সমন্বয়ক আওয়ামী লীগ নেতা আমির হোসেন আমুসহ জোট নেতাদের বক্তব্যে উষ্মা ঝরেছে।

আমু বলেন, “সারা বিশ্ব যখন জঙ্গিবাদ আলোড়িত একটি বিষয়, সেই সময়ে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে জঙ্গিবাদ নির্মূল করা হয়েছে। জঙ্গি নির্মূলে যেই সংস্থার গুরুত্বপূর্ণ অবদান, সেই সংস্থাকে কেন আঘাত করা হচ্ছে, তা আমাদের বোধগম্য নয়!”

বাংলাদেশের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সর্বসাম্প্রতিক এই মনোভাব তার নিজের জন্য ‘অসম্মানজনক’ বা ‘পক্ষপাতদুষ্ট’ প্রমাণিত হবে বলে মনে করেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের এই সদস্য।

বিশ্বের অন্যতম পরাশক্তি দেশটির এমন অবস্থানের পেছনে সম্ভাব্য কারণ তুলে ধরে তিনি বলেন, “আজকে বঙ্গাপসাগর নিয়ে যে বলয় সৃষ্টি হয়েছে, সেই বলয়ে আমাদের দেশ অন্তর্ভুক্ত না হওয়ার কারণেই চাপপ্রয়োগ হচ্ছে বলে আমরা মনে করি। এই সিদ্ধান্ত অত্যন্ত ভুল সিদ্ধান্ত।”

চীনের প্রভাব মোকাবেলায় গত সেপ্টেম্বরে অস্ট্রেলিয়া, ভারত, জাপানকে নিয়ে চার জাতির কৌশলগত জোট ‘কোয়াড’ গঠন করে যুক্তরাষ্ট্র।

ওই জোটে যোগ দেওয়ার কোনো প্রস্তাবের কথা প্রকাশ্যে আসেনি। তবে ঢাকায় চীনের রাষ্ট্রদূত লি জিমিং ‘চীনবিরোধী’ ওই জোটে বাংলাদেশ অংশ নিলে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ‘ক্ষতি’ হবে বলে ‘আগ বাড়িয়ে’ সতর্ক করেন।  

এর মধ্যে সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসন যে গণতন্ত্র সম্মেলনের আয়োজন করে, তাতে বাংলাদেশের আমন্ত্রণ না পাওয়ার বিষয়টি দুই দেশের সম্পর্কের মধ্যে নতুন করে আলোচনায় আসে।

তা নিয়ে সরকারের তরফে খুব একটা উদ্বেগ দেখা না গেলেও মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে র‌্যাবের সাবেক প্রধান ও বর্তমানে পুলিশ প্রধান বেনজীর আহমেদসহ ৭ কর্মকর্তার উপর কদিন আগে যুক্তরাষ্ট্র যে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে, তা সরকারের মধ্যে অস্বস্তি তৈরি।

যুক্তরাষ্ট্রের এমন সিদ্ধান্তে বিস্মিত ক্ষমতাসীন দলের নেতা আমু বলেন, পুলিশ ও র‌্যাব সদস্যরা শুধু দেশের জঙ্গিবাদ নির্মূল নয়, বিদেশেও শান্তিরক্ষায় সফলভাবে কাজ করছে, প্রশংসিত হয়েছে।

দুদেশের মধ্যের সম্পর্কে ‘ফাটল ধরানো’ বা দেশে ‘জঙ্গিবাদ সৃষ্টিতে’ তৃতীয় কোনো শক্তির ষড়যন্ত্র থাকতে পারে বলে সতর্ক করে তিনি বলেন, “যে বাহিনী নারী পাচার রোধ, মাদক চোরচালান রোধসহ জঙ্গিবাদ নির্মূলে বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করেছে তার বিষয়ে এমন সিদ্ধান্ত কেন? এই বিষয়ে তলিয়ে দেখা উচিত, তাদের সিদ্ধান্ত বদলানো উচিত।”

গণতন্ত্র সম্মেলনে দাওয়াত না দেওয়াকে যুক্তরাষ্ট্রের ‘ভূ-রাজনীতির কৌশল’ হিসেবে বর্ণনা করে ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেন, “আমাদের অভ্যন্তরীণ মানবাধিকার নিয়ে এতো কথা হচ্ছে।যুক্তরাষ্ট্র মানবাধিকার কি? সেখানে বর্ণ-লিঙ্গ বৈষম্যও প্রকট।

“সেখানকার জনগণ লড়াই করছে। তাই যুক্তরাষ্ট্র যখন মানিধকারের কথা বলে বিশ্ব তখন তা বিশ্বাস করে না।”

জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের সভাপতি হাসানুল হক ইনু বলেন, “যুক্তরাষ্ট্র গণতন্ত্রের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত নয়। তাই যুক্তরাষ্ট্রের কোনো আলোচনায় দাওয়ায়াত পেলাম কি পেলাম না সেই মাপকাঠিতে বাংলাদেশের রাজনৈতিক অবস্থান বিচার করা উচিত নয়।”

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, “বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে যে শক্তি মানতে পারেনি, সেই শক্তি এই বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তীর লগ্নে আমাদের আঘাত করার চেষ্টা করছে। আজকে বাংলাদেশে যে বাহিনীটি দেশের আইনশৃঙ্খলা ও জঙ্গিবাদী নির্মুলে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে, তাদের আঘাত করা হয়েছে। এর মাধ্যমে জঙ্গিবাদ উসকে দেওয়া হয়েছে।”

র‌্যাব কর্মকর্তাদের উপর নিষেধাজ্ঞায় শুধু যুক্তরাষ্ট্রের দূতকে তলব করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দায় সেরেছে বলে মনে করেন জোট শরিক তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী।

তিনি বলেন, “যদি মনে করেন এই বিএনপি-জামাতের এতে কোনো হাত নেই ভুল করবেন। তারা কিন্তু এসব মিথ্যায় তথ্য বলে যাচ্ছে। শুধু বক্তব্য দিয়ে নয়, লবিস্ট নিয়োগ করেছে তারা। সুতরাং পরাশক্তির বন্ধু দেশগুলোকে সঠিক তথ্য দিতে হবে। কূটনৈতিক তৎপরতা আরও বাড়াতে হবে।”

ভার্চুয়ালি এই সভায় সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া, গণআজাদী লীগের সভাপতি এসকে শিকদার, জাপার (মঞ্জু) প্রেসিডিয়াম সদস্য এজাজ আহমেদ মুক্তা, বাসদ নেতা রেজাউর রশিদ খান, কমিউনিস্ট কেন্দ্রের ওয়াজেদ ইসলাম খান ও গণতন্ত্রী পার্টির সাধারণ সম্পাদক শাহাদাত হোসেন বক্তব্য দেন।

Live TV

আপনার জন্য প্রস্তাবিত