দারিদ্র দূরীকরণঃ প্রেক্ষিত ২০২১-২০২২ অর্থ বছরের বাজেট

1996

Published on আগস্ট 12, 2021
  • Details Image

ডঃ কানিজ আকলিমা সুলতানাঃ

সরকার দারিদ্র দূরীকরণে লাগসই কৌশলসমূহ, যেমন- দারিদ্রের ঝুঁকিতে থাকা মানুষের জন্য সামাজিক নিরাপত্তা বলয় সম্প্রসারণ, আর্থিক প্রণোদনা, ক্ষুদ্র সঞ্চয়কে উৎসাহ প্রদান,, নারী ও যুব প্রশিক্ষণ, নারী-পুরুষের সমতা আনয়ন, আইসিটি ও ডিজিটাল পদ্ধতির ব্যবহার, কার্যকর দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাস কর্মসূচি ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলা করে ঘুরে দাঁড়ানোর সক্ষমতা তৈরিতে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। সরকারের পরিকল্পনা রয়েছে আগামী ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের মধ্যে দারিদ্রের হার ১২.৩ শতাংশ এবং অতি দারিদ্রের হার ৪.৫ শতাংশে নামিয়ে আনা।

চলমান করোনা মহামারী পরিস্থিতি বাংলাদেশসহ বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে সাময়িক হলেও যে স্থবিরতা সৃষ্টি করেছে, তা দারিদ্র দূরীকরণে সরকারের চলমান অগ্রগতিকে চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন করেছে। তবে রপ্তানিমুখী শিল্পকারখামার শ্রমিকদের বেতন প্রদান, এসএমই খাতসহ অন্যান্য ক্ষতিগ্রস্থ শিল্প ও সেবাখাতে সুদ ভর্তূকিসহ স্বল্পসুদে চলতি মূলধনের যোগান, অতি দরিদ্র মানুষের মধ্যে নগদ অর্থ বিতরণ, বিনামূল্যে ও স্বল্পমূল্যে খাদ্য সামগ্রী বিতরণ, সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচি ও গৃহহীন মানুষের জন্য গৃহনির্মাণ কার্যক্রমের পরিধি সম্প্রসারণ এবং বিশেষায়িত ব্যাংক ও পল্লী কর্ম সহায়ক ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে কর্মসৃজন কার্যক্রমসহ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যে দূরদর্শী ও সময়োচিত প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন, তা শ্রমজীবী মানুষের চাকুরি টিকিয়ে রাখতে ও অসহায় দরিদ্র মানুষকে ক্ষুধা হতে সুরক্ষা দিয়েছে। দেশের দারিদ্র পরিস্থিতির উপর কোভিড-১৯ মাহামারীর দ্বিতীয় ঢেউয়ের প্রভাব মোকাবেলার জন্যও সরকার কার্যকর ও সচেতন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।

যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশে শতকরা ৮৮ ভাগ মানুষ ছিল দরিদ্র। দেশ পরিচালনার দায়িত্ব নিয়েই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান অত্যন্ত বৈরী এক পরিবেশে বাংলাদেশের অর্থনীতিকে পুনর্বাসন ও পুনর্নির্মাণে হাত দিয়েছিলেন। অবকাঠামো ছিল খুবই নাজুক। বেশিরভাগ সড়ক, বন্দর, সেতু বিধ্বস্ত। শিল্প-কারখানাও প্রায় ধ্বংসপ্রাপ্ত। উপর্যুপরি বন্যায় কাঙ্ক্ষিত ফসল উৎপাদন করা যায়নি। বহিঃঅর্থনীতিও খুব প্রতিকূল ছিল। বাহাত্তরেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সোনা থেকে ডলারে পরিবর্তন করার প্রথা তুলে নেয়। ফলে ৩ ডলারের এক ব্যারেল তেলের দাম হয়ে যায় ১১ ডলার। ৮০ ডলার মূল্যের প্রতি টন গমের দাম হয়ে যায় ২৪০ ডলার। সারের দাম ছিল প্রতি টন ৮০ ডলার। তা বেড়ে গিয়ে দাঁড়ায় ২০০ ডলার। সারা বিশ্বেই মূল্যস্ফীতি হয়ে যায় আকাশচুম্বী। বিদেশি সহায়তা পেতেও সরকারকে বেগ পেতে হচ্ছিল। বঙ্গবন্ধুর শক্তিশালী নেতৃত্বে বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে পুরনো ঋণের দায়-দেনার সমঝোতা হলেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কূটনীতি বৈরীই থেকে যায়। তাই অনেক কষ্টে তাঁকে খাদ্য সংকট মোকাবেলা করতে হয়েছে। তবে বঙ্গবন্ধু ১৯৭৪ সালের মূল্যস্ফীতি ৬০ শতাংশকে ১৯৭৫ সালে ৩০-৩৫ শতাংশে নামিয়ে আনতে পেরেছিলেন। মাত্র তিন বছরেই তিনি বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় ৯৩ ডলার থেকে টেনে ২৭১ ডলারে উন্নীত করেছিলেন। ১৯৭৪ সালে জাতিসংঘে যে ভাষণটি দিয়েছিলেন তাতেই প্রতিফলিত হয়েছিল তার গণমুখী আধুনিক অর্থনৈতিক দর্শন। তিনি ছিলেন শোষিতের পক্ষে।ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্রমুক্ত এবং আত্মনির্ভরশীল অর্থনীতির বাংলাদেশ গড়ার পাশাপাশি তিনি একটি ন্যায্য আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থারও প্রবক্তা ছিলেন। তাই কায়েমি স্বার্থান্বেষী মহলের ষড়যন্ত্রে তাকে প্রাণ দিতে হয় ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট।

অনেক সংগ্রাম শেষে বাংলাদেশ ফিরে এসেছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পথে। বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছিল। হঠাৎ মহামারী এসে সেই গতি খানিকটা থমকে দিলেও অন্য অনেক দেশের চেয়ে ভালো করছে বাংলাদেশের অর্থনীতি। উল্লেখ্য, ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের অর্থনীতির আকার ছিল মাত্র আট বিলিয়ন ডলারের মতো। সেই অর্থনীতি ২০১৯ সালে ৩০২ বিলিয়নে উন্নীত হওয়া ছিল এক ঐতিহাসিক অর্জন।এই পাঁচ দশকে বাংলাদেশের অর্থনীতি বেড়েছে ৩৮ গুণের মতো। ২০০৯ সালেও আমাদের মোট জিডিপির আকার ছিল ১০২.৫ বিলিয়ন ডলার। মাত্র এক দশকেই তা বেড়েছে তিন গুণের মতো। অথচ এর আগের চল্লিশ বছরে প্রতি দশকে বাংলাদেশের জিডিপির আকার বেড়েছে মাত্র ১.৭৬ গুণ। পঁচাত্তর পরবর্তী দশকে প্রবৃদ্ধির গড় হার ছিল ৪ শতাংশ। তার পরের দশকে তা ছিল ৫.২ শতাংশ অথচ ২০০৯-১০ থেকে ২০১৮-১৯ সময়কালে গড়ে ৭ শতাংশের মতো প্রবৃদ্ধি অর্জন করা সম্ভব হয়েছে।

২০০৫-২০০৬ অর্থবছরে দারিদ্র হার ছিল ৪০ শতাংশ। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) ২০১০ সালের হিসাবে দেশে দারিদ্র্যের হার ছিল ৩১ দশমিক ৫ শতাংশ। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের দায়িত্বে আসার পরে জননেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দূরীকরণের দৃঢ় পদক্ষেপ নেন।সেই লক্ষ্যে ২০১২ সালের এপ্রিল মাসে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে ‘পারস্পেকটিভ প্ল্যান অব বাংলাদেশ (২০১০-২১): মেকিং ভিশন ২০২১ এ রিয়েলিটি’ শিরোনামের এ প্রেক্ষিত পরিকল্পনা জমা দেওয়া হয়। বাংলাদেশ প্রেক্ষিত পরিকল্পনা রূপরেখায় (২০১০-২০২১) ঘোষণা করা হয় সমন্বিত প্রচেষ্টায় ২০১৫ সালে দারিদ্যের হার নেমে আসবে ২২ দশমিক ৫ এবং ২০২১ সালে ১৩ দশমিক ৫ শতাংশে।

পরিকল্পনার সার সংক্ষেপে বলা হয়, “উল্লেখযোগ্য অনেক অগ্রগতি সত্ত্বেও বাংলাদেশ চার কোটি ৭০ লাখ দারিদ্র সীমার নিচের লোকসংখ্যাসহ এখনো দরিদ্র দেশ। দারিদ্র্যের হার ৩১ দশমিক ৫ শতাংশ। উচ্চতর প্রবৃদ্ধির মাধ্যমে উৎপাদন ও শিল্পখাতে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা হবে- দারিদ্র্য নিরসনে প্রধান কৌশল বলে পরিকল্পনায় উল্লেখ করা হয়েছে।এছাড়া অন্য কৌশলগুলো হলো- দরিদ্র্যদের উৎপাদন উপকরণে খাসজমি, সার, সেচ, বিদ্যুতে মালিকানা দেওয়া, সব ক্ষেত্রে উৎপাদনের হার বৃদ্ধি, পশ্চাদপদ অঞ্চলগুলোয় অবকাঠামো সৃষ্টি, সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ ও এর বলয় বৃদ্ধি, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষার ব্যাপক প্রসার এবং ক্ষুদ্র ঋণের বিস্তার।

২০২১ সালে স্বাধীনতার সূবর্ণ জয়ন্তীর আগে কাঙ্খিত অর্জনের মাধ্যমে এই পরিকল্পিত ও সমন্বিত উন্নয়ন অর্জনের তাগিদ থেকেই সরকার দীর্ঘমেয়াদি এই প্রেক্ষিত পরিকল্পনা প্রণয়ন করে।

হায়েস-২০১০ অনুযায়ী, দেশে ২০০৫ সালের ৪০ শতাংশ দারিদ্র্য হার হ্রাস পেয়ে ২০১০ সালে দাঁড়ায় ৩১ দশমিক ৫ শতাংশে। এতে প্রতিবছর দারিদ্র্য হার হ্রাস পায় ১ দশমিক ৭ শতাংশ হারে। হায়েস-২০১৬ মোতাবেক ২০১০ সাল-পরবর্তী বছরগুলোয় প্রতিবছর দারিদ্র্য হার হ্রাস পায় ১ দশমিক ২ শতাংশ হারে। দারিদ্র্য হার হ্রাসের শ্লথ গতি পরোক্ষভাবে দারিদ্র্য হার বৃদ্ধি ঘটায়।

সরকারি তথ্যে দেখা যায়, ২০০৯-১০ অর্থবছরে কৃষিখাতের ৬ দশমিক ৫৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হার পরবর্তী প্রায় এক দশকে গড়ে ৩ দশমিক ৮ শতাংশের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে (অর্থমন্ত্রীর বাজেট বক্তৃতা ২০১৮-১৯)। ২০১৯-২০ অর্থবছরে কৃষি খাতে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার হচ্ছে ৪ দশমিক ৬ শতাংশ। তার আগের দুই অর্থবছর ২০১৮-১৯ এবং ২০১৭-১৯ অর্থবছরে এই হার ছিল যথাক্রমে ৩ দশমিক ৯২ এবং ৪ দশমিক ২ শতাংশ। বাংলাদেশের অর্থনীতির মূল ভিত্তি এবং দারিদ্র্য হ্রাসে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনকারী কৃষি খাতে প্রবৃদ্ধির হার হ্রাস পাওয়া দারিদ্র্য বৃদ্ধিতে সহায়ক হয়েছে।

বিবিএসের তথ্যানুযায়ী গত কয়েক বছরে মোট জিডিপিতে সেবা খাতের অবদান ছিল সবচেয়ে বেশি। তবে ২০২০ সালের মার্চ থেকে করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে এবং বিভিন্ন সময়ে করোনা প্রতিরোধে লকডাউনের মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে দেশে, বিশেষ করে অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে বেকারত্বের হার বেড়ে যায়। গত ১ মে যুগান্তরের এক রিপোর্টে বলা হয়, করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে শুধু পরিবহণ খাতের ৫০ লাখ শ্রমিক ক্ষতিগ্রস্ত হন।

হোটেল, রেস্তোরাঁ, টুরিজমসহ সেবা খাতের বহু কর্মী বেকার হয়ে পড়ে। দ্য ডেইলি স্টারের গত ২৪ জানুয়ারির এক রিপোর্ট অনুযায়ী, করোনা মহামারির কারণে ২০২০ সালে শুধু তৈরি পোশাক শিল্পে সাড়ে তিন লাখের বেশি কর্মসংস্থান হ্রাস পায়। তা ছাড়া বৈশ্বিক করোনার কারণে বহুসংখ্যক প্রবাসী বাংলাদেশি শ্রমিক চাকরি হারিয়ে দেশে ফিরে এসে বেকারত্ব সমস্যাকে আরও জটিল করে তোলে। বেকারত্বের উল্লম্ফনে দারিদ্র্যের হার বৃদ্ধি পায়। অর্থনীতির সংজ্ঞা মোতাবেক বেকারত্ব ও দারিদ্র্য একই মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ।

কোভিড-১৯ সংকটকালে মানুষের জীবন, জীবিকা ও দেশের উন্নয়নের গতিধারাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে ২০২১-২০২২ অর্থবছরের বাজেট প্রণয়ন করা হয়েছে। করোনা চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে অগ্রাধিকার দেওয়া খাতগুলোর মধ্যে আছে- স্বাস্থ্য, বিনিয়োগ, উৎপাদন, কর্মসংস্থান, মানবসম্পদ উন্নয়ন, দারিদ্র্য বিমোচন ও খাদ্যনিরাপত্তা জোরদার কর্মসূচি। এছাড়া করোনার কারণে বাজেট তৈরিতে নতুন মেরুকরণ করতে হয়েছে। জিডিপিকে তেমন গুরুত্ব না দিয়ে মানুষের কর্মসংস্থানকে গুরুত্ব দিয়ে তৈরি করা হয়েছে বাজেট।

পাশাপাশি কর্মহীন মানুষের জন্য তাৎক্ষণিক সহায়তাও বাজেটের একটি লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। যতদিন কর্মের ব্যবস্থা না হচ্ছে ততোদিন অন্তত তাদের খাওয়ার ব্যবস্থা করার প্রচেষ্টায় বরাদ্দ দেয়া হয়েছে বাজেটে। মহামারি কোভিড-১৯ মোকাবিলায় বিশেষ প্রয়োজন মিটাতে ১০ হাজার কোটি টাকার বিশেষ তহবিল বরাদ্দ করা হয়েছে।

সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি দারিদ্র্য হ্রাসে একটি স্বীকৃত পন্থা। এ কর্মসূচির আওতায় ক্রমান্বয়ে কর্মকাণ্ডের প্রসার ঘটছে এবং অর্থ বরাদ্দ বাড়ছে। ২০০৫-২০০৬ সালের বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা খাতে অর্থ বরাদ্দ ছিল ৩৩৬ কোটি টাকা, ২০০৮-২০০৯ অর্থবছরের বাজেটে ১৩,৮৪৫ কোটি টাকা যা ২০১৯-২০ সংশোধিত বাজেটে ছিল ৮১ হাজার ৮৬৫ কোটি টাকা। ২০২০-২১ অর্থবছরে সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বরাদ্দ ছিল ৯৫ হাজার ৫৭৪ কোটি টাকা, যা বাজেটের ১৬ দশমিক ৮৩ শতাংশ এবং জিডিপির ৩ দশমিক ০১ শতাংশ এবং২০২১-২০২২ অর্থবছরে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ১ লক্ষ ৭ হাজার ৬১৪ কোটি টাকা যা বাজেটের ১৭.৮৩ শতাংশ ও জিডিপির ৩.১১ শতাংশ।

তবে করোনাকালে আয় হ্রাসের কারণে দারিদ্র্যসীমার সামান্য উপরে অবস্থানকারী অনেকে দারিদ্র্যের কাতারে এসে দাঁড়িয়েছে, যারা এ কর্মসূচির আওতায় আসেনি।সরাসরি নগদ ও অন্যান্য নানা খাতে ভর্তুকি দিয়ে সক্ষমতা বাড়ানোর সহায়তা দেয়ার পরেও তাই বেড়ে যাচ্ছে দারিদ্র্যের হার। ফলে দারিদ্র্য নিরসনে বাজেট বরাদ্দ উল্লেখযোগ্য থাকার পরেও ‘দারিদ্র্য চক্র’ থেকে বের হয়ে আসতে পারছে না দেশ।নিম্নআয়ের মানুষ জীবন-জীবিকা নিয়ে চরম ভোগান্তি মোকাবিলা করছে। বিষয়গুলো বিবেচনায় রেখে এসএমই খাতে আরও অর্থায়ন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।

২০২১-২২ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটের মূল লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৯টি। এগুলো হচ্ছে-

১।বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব মোকাবিলায় সরকারের অগ্রাধিকার খাতগুলোতে প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ নিশ্চিত করা;
২।কোভিড-১৯ মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজগুলোর সফল বাস্তবায়ন;
৩।কোভিড-১৯ নিয়ন্ত্রণে স্বাস্থ্যখাতে অতিরিক্ত বরাদ্দ, প্রণোদনা ও ক্ষতিপূরণ দেওয়া;
৪।অধিক খাদ্য উৎপাদনের লক্ষ্যে কৃষি যান্ত্রিকীকরণ সেচ ও বীজ প্রণোদনা, কৃষি পুনর্বাসন, সারে ভর্তুকি প্রদান অব্যাহত রাখা;
৫।ব্যাপক কর্মসৃজন ও পল্লী উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ;
৬।সামাজিক নিরাপত্তা কার্যক্রমের আওতা সম্প্রসারণ;
৭।গৃহহীন দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য গৃহনির্মাণ (মুজিববর্ষের প্রধান কার্যক্রম) কার্যক্রম বাস্তবায়ন;
৮।নিম্নআয়ের মানুষের মাঝে বিনামূল্যে বা স্বল্পমূল্যে খাদ্য বিতরণ ব্যবস্থা চালু রাখা এবং
৯।শিক্ষা ও দক্ষতা উন্নয়নসহ সার্বিক মানবসম্পদ উন্নয়ন।

উল্লিখিত এই নয়টি লক্ষ্যই প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষে দরিদ্র জনগোষ্ঠী, করোনা মহামারীতে ক্ষতিগ্রস্ত জনগোষ্ঠীসহ হাওড় অঞ্চল, নদীভাঙন এলাকা, দক্ষিণাঞ্চলের লবণাক্ত এলাকা, চরাঞ্চল ও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর পিছিয়ে পড়া মানুষের ভাগ্য উন্নয়নে অবদান রাখবে।বঙ্গবন্ধুর দেখানো পথেই বঙ্গবন্ধু কন্যার হাত ধরে এগিয়ে চলছে বাংলাদেশ।যতটা জাঁকজমকপূর্ণভাবে এ বছর মুজিববর্ষ পালন করার কথা ছিল মহামারীর কারণে তা সম্ভব হয়নি। তবে অর্থনীতি পুনরুদ্ধার ও দারিদ্র বিমোচনের লড়াইয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শই প্রতিফলিত হচ্ছে। সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনায় চলতি অর্থ বছরের বাজেট বাস্তবায়ন করা হলে উন্নয়ন সামগ্রিক ও অন্তর্ভুক্তিমূলক হবে এবং দারিদ্র বিমোচনে অর্থবহ সাফল্য অর্জন হবে বলে আশা করা যায়।

লেখকঃ সদস্য, কেন্দ্রীয় অর্থ ও পরিকল্পনা বিষয়ক উপ-কমিটি, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ

Live TV

আপনার জন্য প্রস্তাবিত