সীমান্ত জনপদের অক্সিজেন ‘হিরো’

2509

Published on আগস্ট 1, 2021
  • Details Image

ফেনীর সীমান্তবর্তী উপজেলা পরশুরাম ও ফুলগাজী। জেলা সদর ও অন্যান্য উপজেলাগুলোর চাইতে একটু অনগ্রসর এ দুটি উপজেলা। করোনার মহামারিতে পিছিয়েপড়া এ জনপদের মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন ইয়াসিন শরীফ মজুমদার নামে এক যুবক।

পরশুরাম উপজেলা যুবলীগের সভাপতি হলেও করোনাকালীন সময়ে মরদেহ দাফন, সৎকার ও রোগীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে অক্সিজেন সেবা পৌঁছে দেওয়ায় দলীয় পরিচয় ছাপিয়ে পরিচিতি লাভ করেন স্বেচ্ছাসেবকের। ইতোমধ্যেই তার কর্মকাণ্ডের কথা ছড়িয়ে পড়ে পুরো জেলায়, তার দেখা-দেখি অনেকেই এগিয়ে এসেছেন মানবিক এসব কাজে। পরশুরাম-ফুলগাজী শ্বাসকষ্টের রোগীর স্বজনরা তাকে সীমান্তের অক্সিজেন ‘হিরো’ বলে চিনতে শুরু করেছেন। দিন কি রাত ২৪ ঘণ্টাই অক্সিজেন নিয়ে ছুটছেন তিনি।  

ইয়াছিন শরীফ মজুমদারে ‘হ্যালো অক্সিজেন সেবা’ কার্যক্রমে ১ বছরে সেবা পেয়েছে ১ হাজারের অধিক রোগী। ইতোমধ্যেই তার এ উদ্যোগটি সীমান্তবর্তী ফুলগাজী ও পরশুরাম এলাকায় ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। করোনা আক্রান্ত কিংবা যেকোনো ধরনের শ্বাসকষ্ট রোগীর অক্সিজেন দরকার হলেই ডাক পড়ছে হ্যালো অক্সিজেনের।

ইয়াছিন শরীফ মজুমদার বলেন, ২০২০ সালের ২০ জুলাই ৫টি অক্সিজেন সিলিন্ডার নিয়ে যাত্রা শুরু করে এখন ৩০টি অক্সিজেন সিলিন্ডার দিয়ে সেবা কার্যক্রম চলছে প্রতিনিয়তই।  

এক বছরে রয়েছে নানা ধরনের অভিজ্ঞতা। কিছু ভালো না আর কিছু দুঃখের অভিজ্ঞতায় কেটেছে গত বছর। অক্সিজেন নিয়ে কাজ করতে গিয়ে দেখেছি, শ্বাস-প্রশ্বাসের জন্য মানুষ কেমন কষ্ট করে। আমাদের অক্সিজেন সেবা নিয়ে অনেকেই সুস্থ হয়ে উঠেছেন। আবার এমনও স্মৃতি আছে অক্সিজেন নিয়ে যেতে যেতেই রোগী মারা গেছেন।

তেমনই একটি ঘটনার উল্লেখ করেন তিনি, পরশুরাম পৌর এলাকায় কোলাপাড়া গ্রামের কোভিড আক্রান্ত রোগী গিয়াস উদ্দিনের জন্য তার স্বজন অক্সিজেন সিলিন্ডারের জন্য কল দেন, বৃষ্টির মধ্যে আমরা অক্সিজেন সিলিন্ডার নিয়ে বাড়ি পৌঁছে দেখি রোগীর স্বজনদের কান্নার আহাজারি। তারা বলছেন কার জন্য অক্সিজেন নিয়ে আসছেন..., সত্যিই এ রকম হৃদয় বিদারক দৃশ্যের মুখোমুখি আর কখনো হতে হয়নি।

গত বছরে অনেক দুঃখ কষ্ট এবং স্বজন হারাদের কান্নার দৃশ্য দেখেছি, সত্যিই অনেক অনেক মর্মান্তিক ও হৃদয় বিদারক ক’দিন তার বাবা মারা গেছেন আজকে ৫ দিনের মাথার ছেলের মৃত্যু, মা-বোনের কান্নার দৃশ্য প্রতি মুহূর্তে চোখে ভেসে উঠছে, কিছুতেই এ দৃশ্য চোখের সামনে থেকে যাচ্ছে না।

ইয়াছিন শরীফ জানান, তার অক্সিজেন টিমে কাজ করছেন আবদুর রহিম হৃদয়, নুরুল ইসলাম সিজান, আমিনুল ইসলাম রানা, সাইফুল ইসলাম, জোটন চন্দ্র দাস, আজিজুল হাকিম আরাফাতসহ বেশ কয়েকজন যুবক।

ফোন করলেই বাসায় গিয়ে অক্সিজেন সিলিন্ডারের সংযোগ দিয়ে আসছেন স্বেচ্ছাসেবকরা। শুধু করোনা ভাইরাস আক্রান্ত রোগীই নন, অন্যান্য রোগীর জন্যও অক্সিজেনের প্রয়োজন হলে তারাও বিনামূল্যে এ সেবা পাচ্ছেন। করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের অনেক ক্ষেত্রে শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়। এতে বেড়ে গেছে অক্সিজেন সিলিন্ডারের চাহিদা। এর চাহিদা বাড়ার সঙ্গে দেখা দিয়েছে সঙ্কটও। উচ্চমূল্যেও অক্সিজেন সিলিন্ডার পাচ্ছেন না অনেক রোগী। আমাদের মফস্বলেও এ সমস্যা ব্যাপক।

অনেকে তাৎক্ষণিকভাবে অক্সিজেনের ব্যবস্থা করতে পারছেন না। তাই প্রাথমিকভাবে সহযোগিতার জন্য এ উদ্যোগ নিয়েছি। প্রাথমিকভাবে ৫টি সিলিন্ডার নিয়ে এ কার্যক্রম শুরু করা হলেও এখন অক্সিজেন সিলিন্ডার রয়েছে ৩০। ভবিষ্যতে চাহিদা অনুযায়ী এর পরিধি আরও বাড়ানো হবে। বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ অক্সিজেন সিলিন্ডার দিয়ে কার্যক্রমে সহায়তা করে আসছেন। সবার সহযোগিতায় এ কার্যক্রমে প্রসারতা আরও বাড়ানো হবে।

ইয়াসিন শরীফ জানান, সিলিন্ডার বিভিন্ন মানুষ দিলেও রি-ফিল তিনি নিজেই করিয়ে থাকেন। প্রতি রি-ফিল আগে ১৫০ টাকা খরচ হলেও এখন খরচ হচ্ছে ২০০ টাকা। চাহিদা দেখে একটি মহল অক্সিজেনের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে।

পরশুরাম ও ফুলগাজী উপজেলার যেকোনো এলাকা থেকে ০১৮১৮৩৯৭৪৯৬, ০১৬৩২৪২২১৭৩, ০১৮৫০৫৯২৮৯১ নম্বরে ফোন করলে তাৎক্ষণিকভাবে রোগীর বাসায় অক্সিজেন সিলিন্ডার পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। কোনো ফি কিংবা জামানত নেওয়া হচ্ছে না। তবে, এই সেবা পেতে হলে চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র ও জাতীয় পরিচয়পত্র দেখাতে হয় রোগীদের।

ইয়াছিন শরীফ মজুমদার উপজেলায় করোনা আক্রান্ত বা উপসর্গ নিয়ে মৃত ব্যক্তির দাফনের জন্য গঠনকৃত ‘করোনা দাফন’ টিমের' প্রধান হিসেবেও উপজেলায় কাজ করছেন। ২০ জুলাই পর্যন্ত ৩১ জনের মরদেহ দাফন করেছে তার দাফন টিম।

Live TV

আপনার জন্য প্রস্তাবিত