3129
Published on মার্চ 18, 2021মো. শাহরিয়ার আলম, এমপিঃ
স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণে জাতিসংঘের সুপারিশ পেয়েছে বাংলাদেশ- ২৭ ফেব্রুয়ারি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা, আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এ বারতা সমগ্র দেশবাসীকে গর্বিত করেছে।
১৯৭১ সালে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ হিসেবে বাংলাদেশ যাত্রা করে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আর্থসামাজিক উন্নয়নের গল্প রচনা করতে থাকে। স্বাধীনতার পর বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বৈষম্যহীন, ক্ষুধা এবং দারিদ্র্যমুক্ত ‘সোনার বাংলা’ গড়ে তুলতে সক্রিয় ও দূরদর্শী নীতি গ্রহণ করেন। তাঁর আদর্শ অনুসরণ করে ১৯৯৬ সালে প্রথমবার ক্ষমতায় আসার পর থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়নে নিরলসভাবে কাজ করছেন।
১৯৭৫ সালে বাংলাদেশ জাতিসংঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিষদের (একোসোক) স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গতিশীল ও দূরদর্শী নেতৃত্বে স্বল্পোন্নত থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের জন্য বাংলাদেশ ২০১৮ সালে প্রথমবারের মতো জাতিসংঘের কমিটি ফর ডেভেলপমেন্ট পলিসি (সিডিপি)-এর তিন সূচক- মাথাপিছু আয়, মানবসম্পদ, জলবায়ু ও অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতার পূরণ করে। ফলে এ বছরের ২৬ ফেব্রুয়ারি সিডিপি বাংলাদেশকে ২০২৬ সালে স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে বের হয়ে যাওয়ার সুপারিশ করেছে।
সমগ্র জাতির জন্য এটা অত্যন্ত আনন্দের এবং গর্বের। এ উত্তরণ এমন এক সময়ে ঘটল যখন আমরা সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদ্যাপন করছি, যখন আমরা মহান স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদ্যাপনের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে।
এ অর্জন এক দিনে ঘটেনি। এর জন্য নিরবচ্ছিন্ন ও টেকসই আর্থসামাজিক অগ্রগতির প্রয়োজন ছিল। আমাদের জনগণকে দরিদ্রতা থেকে তুলে আনতে এবং দেশের উন্নয়ন-অগ্রযাত্রায় শামিল করতে আমরা প্রচুর বিনিয়োগ করেছি। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবে রূপ দিতে গণমুখী, অন্তর্ভুক্তিমূলক আধুনিক গণতন্ত্র গঠন করেছি। এ কারণে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের আনুষ্ঠানিক ঘোষণার সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এক যুগ আগের বাংলাদেশ আর আজকের বাংলাদেশ এক নয়। আজকের বাংলাদেশ এক বদলে যাওয়া বাংলাদেশ। আজকের যে অর্জন- স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ- তা আমাদের বিগত ১২ বছরের নিরলস পরিকল্পনা, পরিশ্রম ও প্রচেষ্টার ফসল। আমাদের সরকারের গৃহীত ভিশন-২০২১ ও ভিশন-২০৪১-এর মূল অনুষঙ্গ যা গত দশকের প্রশংসনীয় অগ্রগতিতে অবদান রেখেছিল।’ (২৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২১)
‘দিনবদলের সনদ’ স্লোগান দিয়ে আমরা ২০০৮ সালে দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় এসেছিলাম। ভিশন-২০২১-এর মাধ্যমে আমরা এমন একটি বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলাম যা ২০২১ সালের মধ্যে একটি মধ্যম আয়ের দেশ হয়ে উঠবে। এ বাংলাদেশে দারিদ্র্য থাকবে না, প্রত্যেক নাগরিক প্রতিটি মৌলিক চাহিদা মেটাতে সক্ষম হবে আর দ্রুতগতিতে চলবে উন্নয়নের সব কার্যক্রম।
আমাদের উন্নতি হয়েছে, আরও হবে। নিঃসন্দেহে বাংলাদেশ এখন পুরো বিশ্বের জন্য একটি রোল মডেল। এটি মোটেও বাড়িয়ে বলা নয়। প্রথম দেশ হিসেবে বাংলাদেশ এলডিসি থেকে উত্তরণ মানদ-ের তিনটি সূচক একবারেই অর্জন করেছে। এ আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আমাদের জন্য নতুন সুযোগ নিয়ে আসবে। তবে চ্যালেঞ্জ থাকবেই।
আমার বিশ্লেষণে সামনের বছরগুলোয় যা যা ঘটবে বলে মনে হয় এবার তা একটু বলার চেষ্টা করছি। প্রথমত, এ উত্তরণ বাংলাদেশের নতুন ভাবমূর্তি ও ব্র্যান্ডিং গড়ে তুলবে। ফলে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশে ব্যবসার উন্নত পরিবেশ সম্পর্কে ইতিবাচক সংকেত পাবে, আস্থা অর্জন করবে। সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিএ) বাড়বে, সৃষ্টি হবে প্রচুর কর্মসংস্থান।
দ্বিতীয়ত, এ উত্তরণ ও শক্তিশালী আর্থিক সূচকের কারণে আন্তর্জাতিক বাজার থেকে প্রতিযোগিতামূলক (আগের চেয়ে কম) সুদের হারে বাংলাদেশের বাণিজ্যিক ঋণ পাওয়ার সুযোগ আরও বেড়ে যাবে। বাংলাদেশের ক্রেডিট রেটিং বাড়বে। বিনিয়োগের পরিমাণ বড় হলে এ দেশে বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগের খরচ অনেক কমে যাবে। ফলে আকৃষ্ট হবে বড় বড় অঙ্কের নতুন নতুন বিনিয়োগ।
তৃতীয়ত, বিশ্বব্যাংক ও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) এলডিসির তালিকাকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দেয় না। তাই বাংলাদেশের এ উত্তরণ ওইসব প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ বা অনুদান পেতে কোনো ধরনের প্রভাব ফেলবে না। ২০১৫ সালে বিশ্বব্যাংক নির্ধারিত মাথাপিছু মোট জাতীয় আয়ের (জিএনআই) শর্ত পূরণ করে বাংলাদেশ নিম্নমধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হয়েছে। এ কারণে বাংলাদেশের চাহিদা, প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা এবং রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফের ঋণ বা অনুদান প্রাপ্তিতে আগের থেকে অনেক বেশি সুবিধা তৈরি করবে।
চতুর্থত, বাংলাদেশের এ উত্তরণের ফলে যে আস্থার সৃষ্টি হলো তা সার্বভৌম বন্ডের মাধ্যমে বৈশ্বিক বাজার থেকে সম্পদ স্থানান্তর করে দেশে নিয়ে আসার সুযোগ তৈরি করবে। শুধু তাই নয়, এটি বেসরকারি খাতে ঋণ গ্রহণের সক্ষমতাও বাড়িয়ে তুলবে। এর ফলে বেসরকারি খাত বিশ্ব আর্থিক বাজার থেকে মূলধন সংগ্রহে সময়ে সময়ে যেসব সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছে ভবিষ্যতে তা অনেকাংশে কমে যাবে বলে আশা করা যায়।
পঞ্চমত, উত্তরণের পর উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে বাংলাদেশের নতুন পরিচয় বিভিন্ন আঞ্চলিক এবং উপ-আঞ্চলিক ব্লকে যোগদানের সুযোগ তৈরি করবে। অন্য অনেক দেশের সঙ্গে মুক্তবাণিজ্য চুক্তিসহ (এফটিএ) বিভিন্ন ধরনের বাণিজ্যিক অংশীদারি গ্রহণে সক্ষমতা বাড়বে।
একই সঙ্গে এ উত্তরণের সময়টাতে আমাদের নতুন নতুন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হবে। উন্নয়নশীল দেশে উত্তীর্ণ সব দেশকে এ চ্যালেঞ্জিং ট্রানজিশন পথের মধ্য দিয়ে চলতে হয়েছে। এটাই বাস্তবতা, আমরাও এর ব্যতিক্রম নই।
উত্তরণের সঙ্গে সঙ্গে ‘এলডিসি-নির্দিষ্ট আন্তর্জাতিক সহায়তা ব্যবস্থা’ (International Support Measures) বাংলাদেশের জন্য আর থাকছে না। এটা সত্য, বিভিন্ন আইএসএমের মধ্যে বাণিজ্য সম্পর্কিত আইএসএমগুলো বাংলাদেশের পক্ষে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশ এ আইএসএমগুলোর সর্বোত্তম ব্যবহার করতে সক্ষম হয়েছে। উপরন্তু, আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সংস্থার (WTO) ট্রিপস (TRIPS) চুক্তির আওতায় বাংলাদেশ বাণিজ্যবিষয়ক বিভিন্ন কর মওকুফের সুযোগ নিতে পারবে না। এতে আমাদের ওষুধশিল্পে কিছুটা প্রভাব পড়তে পারে। কৃষি ও নতুন শিল্পে (infant industry) ভর্ভুকির বিধানও বন্ধ করতে হতে পারে।
আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, গ্রিনহাউস গ্যাসের কম নিঃসরণকারী দেশ হওয়া সত্ত্বেও জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বিশ্বের সবচেয়ে অরক্ষিত দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। উন্নয়নশীল দেশে এ উত্তরণে বাংলাদেশ গ্রিন ক্লাইমেট ফান্ড (জিসিএফ) হারাতে পারে। জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় আমাদের গৃহীত কার্যক্রমে এটি বাধা হয়ে উঠতে পারে। তবে আমরা কারও জন্য বসে নেই। ইতিমধ্যে নিজস্ব ফান্ড থেকে এ কার্যক্রম শুরু করেছি।
তবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দূরদর্শিতা, বিচক্ষণতা ও নেতৃত্বে আমরা অবিচলিত, আস্থাশীল। তাঁর বিচক্ষণ নেতৃত্বে বাংলাদেশ ২০০৮-০৯ অর্থবছর থেকে (কভিড-১৯ মহামারীকাল ছাড়া) এক দশকের জন্য জনসাধারণের জিডিপির তুলনায় ঋণের অনুপাত প্রায় ৩৫ শতাংশ বজায় রেখেছে। ফলে বাংলাদেশের ঝুঁকিসীমা ৪০ শতাংশের নিচে এবং এখনো ৪৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ রয়েছে। এ সূচকগুলো বাংলাদেশের অর্থনীতির শক্তি প্রকাশ করে। তাই এলডিসি উত্তরণে উদ্ভূত যে কোনো স্বল্পমেয়াদি চাপ মোকাবিলায় আমাদের অর্থনীতি যথেষ্ট প্রস্তুত।
আমাদের প্রাণোচ্ছলতা ও শক্তি আমরা বারবার প্রমাণ করেছি। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, গার্মেন্ট পণ্যের জন্য বাংলাদেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে কোনো শুল্ক সুবিধা পাচ্ছে না। তবু যুক্তরাষ্ট্রে সর্বোচ্চ পোশাক রপ্তানিকারক দেশের অবস্থানে থেকে বাংলাদেশের গার্মেন্ট শিল্প ইতিমধ্যে তার সক্ষমতা প্রমাণ করেছে।
দেশে চলমান মেগা প্রকল্প- পদ্মা সেতু, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, কর্ণফুলী টানেল, পায়রা বন্দর, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগরী, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের টার্মিনাল-৩, মেট্রোরেল শিগগিরই সম্পন্ন হবে। এসব মেগা প্রকল্প বাংলাদেশের ব্যবসায়িক প্রতিযোগিতার সক্ষমতা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধিসহ এলডিসি উত্তরণের কারণে সাময়িকভাবে সৃষ্ট যে কোনো সম্ভাব্য চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সহায়তা করবে।
এ মুহূর্তে আমাদের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো আর্থসামাজিক উন্নয়নের এ অগ্রগতি অব্যাহত রাখা। উত্তরণকাল হিসেবে আমরা পাঁচ বছর পেয়েছি। দক্ষতার সঙ্গে এ সময় ব্যবহার করতে হবে। উপরন্তু উত্তরণের এ প্রক্রিয়ায় আমাদের এখন অবশ্যই চলমান কভিড-১৯ মহামারী-উদ্ভূত চ্যালেঞ্জগুলোও বিবেচনা করতে হবে।
কভিড-১৯ মহামারীর চ্যালেঞ্জগুলো কাটিয়ে উঠতে আমাদের সরকার তাৎক্ষণিক, মধ্যমেয়াদি এবং একই সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদি ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। ‘সরবরাহ-ভিত্তিক অর্থনীতি বজায় রাখা ও সামগ্রিক চাহিদা পুনরুদ্ধার করা, কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং গ্রামীণ অর্থনীতিকে পুনরুজ্জীবিত করা এবং সামাজিক সুরক্ষা বৃদ্ধি করা’- আমরা এ তিনটি বিস্তৃত ক্ষেত্রে ১৪.৬০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার সমপরিমাণের প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছি। এটি আমাদের জিডিপির ৪.৪৪ শতাংশ।
স্বল্পোন্নত থেকে উন্নয়নশীল দেশে মসৃণ উত্তরণের জন্য আমাদের সরকারও জাতীয় ও বৈশ্বিক নীতি গ্রহণ করেছে। দেশীয় নীতিমালার কয়েকটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হলো- শিল্প ও রপ্তানির বৈচিত্র্য ও প্রসার, বাণিজ্য অংশীদারদের সঙ্গে এফটিএ অন্বেষণ, বেসরকারি শিল্পে বিনিয়োগের জন্য উন্নত পরিবেশ এবং বড় শিল্পে আরও এফডিআই অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিতকরণ ও সুরক্ষা জাল বিস্তৃত করা, মানবসম্পদ উন্নয়নে বিনিয়োগ বাড়িয়ে উৎপাদন বৃদ্ধি করা, জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিয়ে এর প্রভাব কমিয়ে আনা এবং বিচক্ষণ ঋণ ব্যবস্থাপনা।
বৈশ্বিক ক্ষেত্রে আমাদের মূল উদ্যোগগুলো হলো- উত্তরণের পরও একটা উপযুক্ত সময় পর্যন্ত শুল্কমুক্ত ও কোটামুক্ত বাজার প্রবেশ অব্যাহত রাখার চেষ্টা করা, ট্রিপস এবং এলডিসি উত্তরণকৃত দেশগুলোর প্রযুক্তি ব্যাংকে প্রবেশ শিথিল করা, সহজ এবং সাশ্রয়ী মূল্যে জ্ঞানপণ্য (knowledge product) পাওয়ার সুযোগ তৈরি করা, উৎপাদন সক্ষমতা বাড়াতে উত্তরণের আগে ও পরে অবকাঠামোগত উন্নয়নের প্রাপ্ত সুবিধাসমূহ বৃদ্ধি করা, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় প্রদত্ত প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে বিশ্ব সম্প্রদায়ের ওপর চাপ অব্যাহত রাখা। জলবায়ু পরিবর্তনে অভিযোজনের ক্ষেত্রে আমরা চ্যাম্পিয়ন। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রসঙ্গ এলেই বলা যায়, আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আন্তর্জাতিক অঙ্গনের ‘গ্লোবাল ভয়েস’। তিনি প্যারিস চুক্তি বাস্তবায়নের জন্য বৈশ্বিক ঐকমত্য গঠনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছেন।
টেকসই উত্তরণ ত্বরান্বিত করার লক্ষ্যে অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় (8FYP) বাংলাদেশ যেসব কৌশল অন্তর্ভুক্ত করেছে তা হলো- অর্থনীতির বিকাশ ত্বরান্বিত করা, মানসম্পন্ন চাকরি সৃষ্টি, দ্রুত দারিদ্র্য হ্রাস, সামাজিক সুরক্ষার সঙ্গে অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন প্রক্রিয়া, জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কিত উন্নয়ন কৌশল, এসডিজির লক্ষ্য অর্জন এবং এলডিসি উত্তরণের প্রভাবগুলো মোকাবিলা। এ পরিকল্পনার অন্যতম মূল বিষয়বস্তু এলডিসি উত্তরণের সময় সাময়িকভাবে সৃষ্ট প্রভাবসমূহ প্রশমিত করা। এ পরিকল্পনার মূল কাজ হচ্ছে এমনভাবে ভিশন-২০৪১ বাস্তবায়ন করা যাতে বাংলাদেশ উচ্চমধ্যম আয়ের দেশের মর্যাদা লাভ, এসডিজির বড় লক্ষ্যগুলো অর্জন এবং ২০৩০-৩১ অর্থবছরের মধ্যে চরম দারিদ্র্য দূর করতে পারে।
উৎপাদন ও প্রতিযোগিতা বৃদ্ধিতে মনোনিবেশ করার সময় আমাদের সরকার বাজার বৈচিত্র্যকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়েছে। একই সঙ্গে প্রযুক্তিগত অগ্রগতি, দক্ষতা উন্নয়ন ও অবকাঠামোগত উন্নতি আমাদের মূল অগ্রাধিকার খাত হয়ে দাঁড়িয়েছে। অভ্যন্তরীণ সংস্থান জোগাড় এবং ঋণ পাওয়ার জন্য নতুন উৎস অনুসন্ধান করতে আমাদের সমান গুরুত্ব রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ বলতে পারি, সম্প্রতি আমরা নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকে (এনডিবি) যোগদানের সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
আমাদের সরকার উন্নয়ন অংশীদারদের সঙ্গে অব্যাহতভাবে যোগাযোগ রাখছে। মানবাধিকার ও শ্রম অধিকার, জিএসপি/জিএসপি প্লাসের অধীনে পছন্দসই বাজারে সুযোগ পেতে আমরা নিবিড়ভাবে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে কাজ করছি। গুরুত্বপূর্ণ দেশগুলোর সঙ্গে মুক্তবাণিজ্য চুক্তিসহ অন্যান্য চুক্তি স্বাক্ষরের জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি চলছে। আমরা বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল ও আইটি পার্ক স্থাপন করেছি। সরাসরি বিদেশি ও অভ্যন্তরীণ বিনিয়োগ আকৃষ্টে ইপিজেডগুলো প্রসারিত করেছি।
বৈশ্বিক বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশেকে এখন উদীয়মান অর্থনীতির অন্যতম দেশ হিসেবে বিবেচনা করেন। আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর আত্মবিশ্বাস- ‘উন্নয়নের এ প্রগতি অব্যাহত থাকলে শিগগিরই বাংলাদেশ একটি উন্নত, সমৃদ্ধ এবং মর্যাদাপূর্ণ দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবে।’
এ বিশ্বাস এখন আমাদের সবার। এ বিশ্বাস ১৬ কোটি মানুষের প্রাণের স্পন্দন। সবাই মিলে হাতে হাত রেখে কাজ করা, কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে এগিয়ে যাওয়ার এখনই সময়। আগামী পাঁচ বছর তাই সত্যিই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
লেখক : পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী
সৌজন্যেঃ বাংলাদেশ প্রতিদিন