1786
Published on জানুয়ারি 31, 2021সম্প্রদায়ের অন্যদের মতোই নিপুণ হাতে বাঁশের ডালা-কুলাসহ নানা গৃহস্থালী জিনিসপত্র তৈরি করেন ষাটোর্ধ্ব বিনোদ বিহারী দাস। কিন্তু নিজের একটা পাকা ঘরের ভিত গড়তে পারেননি। জীবনের শেষ প্রান্তে এসে তার সেই স্বপ্নও পূরণ হয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কারণে।
“প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নতুন ঘর দিয়ে যা উপকার করলেন তা ভোলার নয়। আমরা তার জন্য প্রার্থনা করি। দেশে তার সরকার থাকুক এইটা চাই,” বিনোদ বিহারীর মনের গভীর থেকে এভাবেই ঝরল কৃতজ্ঞতা।
মুজিববর্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহার হিসেবে বিনোদ বিহারীর মতো রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলার কুর্শা ইউনিয়নের ঘনিরামপুর বড়গোলা গ্রামে পাটনি সম্প্রদায়ের ২৫টি পরিবারকে নতুন ঘর করে দেওয়া হয়েছে। এছাড়া ওই পরিবারগুলোর স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিতে করে দেওয়া হয়েছে পাঁচটি পাকা শৌচাগারও।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সমতলের ৬১ জেলার ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মানুষদের জন্য মুজিববর্ষের উপহার হিসেবে ঘর করে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। তারই অংশ হিসেবে সাড়ে তিন হাজার নতুন ঘর নির্মাণ করা হচ্ছে। এরই মধ্যে অনেকেই নতুন ঘরে উঠেছেন। এ বছরই বাকিরা নতুন ঘরে উঠবেন বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নির্বাহী সেলের মহাপরিচালক আবু ছালেহ মোহাম্মদ ফেরদৌস খান।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের ‘সমতলে বসবাসরত ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীভুক্ত মানুষের জীবনমান উন্নয়নে গৃহীত কার্যক্রমের আওতায় নির্মিত গৃহ’ কর্মসূচির আওতায় এসব ঘর নির্মাণ করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।
রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলায় বসবাসকারী পাটনি সম্প্রদায় মূলত বাঁশের তৈরি ডালা, কুলাসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম তৈরি করে বিক্রি করে। প্রতিদিনের আয় দিয়ে জীবন চালানো মানুষগুলো একসময় থাকতেন জীর্ণ ঘরে।
তবে নতুন ঘর পাওয়ায় একটা চিন্তা দূর হলেও জীবিকার জন্য নিজেদের পেশার ওপর উন্নত প্রশিক্ষণ এবং পণ্য বিক্রির সুযোগ করে দিতে সরকারের সহায়তা চেয়েছেন তারা।
বিনোদ বিহারী দাস বলেন, “আমরা ঘর পেয়ে খুশি। তবে আমরা যেন আরও সুন্দরভাবে বাঁচতে পারি সেজন্য আমাদের যে কাজ করি তার উপর উন্নত প্রশিক্ষণ চাই। আর আমাদের বানানো পণ্যগুলো বিদেশে পাঠাতে সরকারের সহযোগিতাও চাই।”
গত বছর বিশ্বে কোভিড-১৯ মহামারী ছড়িয়ে পড়ার আগে নতুন ঘর পেয়েছেন এই গ্রামের আরেক বাসিন্দা সাবিত্রী রানী দাস।
প্রায় চার দশক আগে স্বামী বিনু রাম দাস মারা গেলে বাঁশের সরঞ্জাম বিক্রির আয় দিয়ে তিনি দুই ছেলেকে বড় করেছেন।
বিনোদ বিহারীর মতো তিনিও নিজেদের পেশা টিকিয়ে রাখতে সরকারের সহায়তা চেয়েছেন।
“আমরা ঘর পেয়ে যে কত খুশি তা মুখে বলে বোঝানো যাবে না। তবে আমাদের কাজগুলো অনেক কষ্টের। সব সময় হাতে কাজও থাকে না। তাই আমাদের পণ্যগুলো যেন সারা বছর কোথাও বিক্রি করা যায় সেজন্য সরকারের সহযোগিতা চাই।”
সাবিত্রী রানীর ঘর উঠান ফেলে কিছুদূর এগোলেই শিবু রাম দাস (৫০) এর ঘর। সেখানে মা রাধা রানী (৭০) ও স্ত্রী মমতা রানী দাসের সঙ্গে তাকে বাঁশের তৈরি বিয়ের চালনি তৈরি করতে দেখা যায়।
শিবু রাম দাস বলেন, “প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরম মমতায় আমাদের জন্য ঘর তৈরি করে দিয়েছেন বলে এই শীতেও বাড়িতে বসে কাজ করতে পারছি। আয়-রোজগার করে সন্তানদের নিয়ে জীবন কাটাতে পারছি।বৃদ্ধ বয়সে একটা মাথা গোঁজার ঠাঁই পেয়েছি। পেয়েছি সামাজিক সম্মানও। এর চেয়ে আর বেশি কোনো চাওয়া নেই।”
পাশে থাকা স্ত্রী মমতা রানীও মাথা নেড়ে তার কথায় সম্মতি দেন।
ছবি ও খবরঃ বিডিনিউজ২৪