নতুন বছরে ক্ষুদেদের হাতে হাতে নতুন বই তুলে দিলো সরকার

3406

Published on জানুয়ারি 1, 2021
  • Details Image
  • Details Image

করোনা পরিস্থিতির মধ্যেও যথাসময়ে প্রায় সাড়ে চার কোটি শিক্ষার্থীর হাতে বিনামূল্যে নতুন বই তুলে দিচ্ছে সরকার। তবে এবার সম্পূর্ণ ভিন্ন এক পরিস্থিতিতে নতুন পাঠ্যবই হাতে পেতে শুরু করেছে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। নেই কোন শোরগোল; নেই উৎসবের আমেজ। স্বাস্থ্যবিধি মেনে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের হাতে নতুন বই তুলে দিচ্ছে স্কুল কর্তৃপক্ষ।

করোনার সংক্রমণের কারণে গত বছরের ১৭ মার্চ থেকে বন্ধ থাকা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর ছুটি ১৬ জানুয়ারি পর্যন্ত বাড়ানো হলেও বই সংগ্রহের জন্য ফের শিক্ষার্থীদের পদচারণায় মুখর হয়েছে স্কুলগুলো।

সরকারের পূর্ব ঘোষিত সিদ্ধান্ত মেনে ১ জানুয়ারি সকাল থেকে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোতে বিনামূল্যে বই বিতরণ শুরু হয়েছে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে নতুন বই নিতে নিজ নিজ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গেছেন শিক্ষার্থী ও অভিভাবকেরা। সকাল থেকেই প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের পক্ষে অভিভাবকেরা এবং মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা নিজে গিয়ে বই বিতরণের কর্মসূচিতে অংশ নেয়।

করোনা মহামারির ভয়াবহতা মাথায় রেখে এবার গতানুগতিক সময়ের মতো একদিনেই সব শিক্ষার্থীদের হাতে বই বিতরণে সমস্যার কথা আগেই জানিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আনুষ্ঠানিকভাবে বই বিতরণ কর্মসূচির উদ্বোধন করলেও ১ জানুয়ারি থেকে ধাপে ধাপে শিক্ষার্থীদের হাতে পৌছাবে নতুন বই।

বৃহস্পতিবার বই বিতরণ কর্মসূচির উদ্বোধনী আয়োজনে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি এ বছরের বই বিতরণ প্রক্রিয়ার স্পষ্ট ধারণা দেন। সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এবার একেকটি শ্রেণির শিক্ষার্থীদের তিন দিন করে বই দেওয়া হবে। এভাবে মাধ্যমিকে বই বিতরণ চলবে ১২ দিন ধরে। যেসব প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী কম, সেখানে একদিনেই বই দেওয়া হবে। আর যেসব প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী তুলনামূলক বেশি, সেখানে তিন দিনে বই দেওয়া হবে।

রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা মো. মামুনুর রশীদ শুক্রবার সকালে বলেন, তার উপজেলার প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো চাহিদা অনুযায়ী সব বই হাতে পেয়েছে।

করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে শুক্রবার নতুন বই হাতে ধোলাইপাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির এক শিক্ষার্থী।“সকাল থেকে সব স্কুলে বই বিতরণ করা হচ্ছে। মুখে মাস্ক না থাকলে কাউকে যেন বই না দেওয়া হয় আমরা সেই নির্দেশনা দিয়েছি। পাশাপাশি স্কুলগুলোতে স্যানিটাইজারের ব্যবস্থা রাখতে বলা হয়েছে।”

কুমিল্লার দেবীদ্বার উপজেলার সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা মো. জামাল হোসেন জানান, তার উপজেলার সব প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শুক্রবার সকাল থেকে বই বিতরণ করা হচ্ছে।

“এখানে ক্লাস ভাগ করে বই দেওয়া হচ্ছে। তবে শুক্রবার যারা স্কুলে আসবেন তাদের সবাইকে বই দেওয়া হবে। ভিড় যেন না হয়ে সেই বিষয়টি মাথায় রেখে বই বিতরণ করা হচ্ছে, মাস্ক পড়ে সবাই বই নিচ্ছেন।”

এ উপজেলার বিদ্যালয়গুলোতে কয়েক দিন ধরে প্রাথমিকের বই বিতরণ করা হবে জানিয়ে শিক্ষা কর্মকর্তা জামাল বলেন, “আমরা চাইছি বই বিতরণ করতে গিয়ে কোনোভাবেই যেন ভিড় না হয়।”

পিরোজপুরের ইন্দুরকানী উপজেলার সহকারী উজপেলা শিক্ষা কর্মকর্তা সৈয়দ মো. আহসান আশা করছেন, তার উপজেলার প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে শুক্রবার ৯০ শতাংশ শিক্ষার্থীর হাতে বই তুলে দেওয়া শেষ হবে।

তিনি বলেন, “সকাল ৮টা থেকে বই বিতরণ শুরু হয়েছে। আজ যারা বই নিতে আসবে না, তাদের আগামীকাল বই দেওয়া হবে। কালও যারা বই নিতে আসবে না, তাদের বাড়ি বাড়ি বই পৌঁছে দেওয়া হবে।”

বছরের প্রথম দিন নতুন পাঠ্যবই হাতে পেয়ে উল্লসিত রাজধানীর ধোলাইপাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।বই বিতরণ উপলক্ষে ইন্দুরকানী উপজেলার বিদ্যালয়গুলোতে মাস্ক, স্যানিটাইজার ও সাবান রাখা হয়েছে জানিয়ে আহসান বলেন, যারা মাস্ক পড়ে আসেনি, বিদ্যালয়গুলোর পক্ষ থেকে তাদের মাস্ক দেওয়া হচ্ছে।

প্রাথমিকের বই বিতরণ ১ ও ২ জানুয়ারির মধ্যে শেষ করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে এবার। আর মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিপ্তর ১-৩ জানুয়ারি নবম শ্রেণির, ৪-৬ জানুয়ারি অষ্টম শ্রেণি, ৭-৯ জানুয়ারি সপ্তম শ্রেণি এবং ১০-১২ জানুয়ারি ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের বই দেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছে।

কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা পাইলট মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মতিউর রহমান বলেন, “আমরা ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির বই পেয়েছি, শুক্রবার সপ্তম শ্রেণির বই বিতরণ করা হচ্ছে।

“শিক্ষা কর্মকর্তা জানিয়েছেন ২/১ দিনের মধ্যে অন্য বইগুলো পাওয়া যাবে। বই পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সেগুলো সরকারি নিয়ম মেনে গ্রুপ করে বিতরণ করা হবে।”

শেরপুরের নকলা পাইলট মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আব্দুর রউফ জানান, শুধু ষষ্ঠ শ্রেণির বই তারা হাতে পেয়েছেন বলে শুক্রবার শুধু সেসব বই বিতরণ করা হচ্ছে।

“শিক্ষা অফিস থেকে আমাদের জানানো হয়েছে, অন্য শ্রেণির বইগুলো এক সপ্তাহের মধ্যে পাওয়া যাবে। সেসব বই পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বিতরণ করা হবে।”

টাঙ্গাইলের ধনবাড়ী কলেজিয়েট মডেল স্কুলের প্রধান শিক্ষক এস এম মাসুদ কবির বলেন, শুধু ষষ্ঠ শ্রেণির সব বই আর সপ্তম শ্রেণির চারটি বই পেয়েছেন তারা। অন্য বইগুলো উপজেলা শিক্ষা অফিসে আছে, বই হাতে পেলে বিতরণ করা হবে।

কুড়িগ্রামের রাজারহাট পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আশরাফুল ইসলাম জানান, আইসিটি বিষয়ের বাদে নবম শ্রেণির সব বই তারা হাতে পেয়েছেন।

“আমরা শুধু নবম শ্রেণির বই আজ দিচ্ছি, কারণ অন্য শ্রেণির বইগুলো এখনও হাতে পাইনি। সেগুলো পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দিয়ে দেব।”

স্বাস্থ্যবিধি মেনে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা নতুন বই সংগ্রহ করছেন বলে জানান প্রধান শিক্ষক আশরাফুল।

বছরের প্রথম দিন শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন পাঠ্যবই তুলে দিচ্ছেন ধোলাইপাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা।প্রাথমিকের সব বই বিতরণের জন্য সময়মত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঠনো হলেও মহামারীর মধ্যে বই ছাপনোর কাজে বিঘ্ন ঘটায় মাধ্যমিকের সব বই এখনও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঠানো সম্ভব হয়নি বলে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) চেয়ারম্যান নারায়ন চন্দ্র সাহা জানিয়েছেন।

মাধ্যমিকের যেসব বই এখনও বিদ্যালয়ে পাঠানো সম্ভব হয়নি, সেসব বই আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে পাঠানো হবে বলে জানান তিনি।

আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার ২০১০ সাল থেকে বছরের প্রথম দিন উৎসব করে শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন বই তুলে দিচ্ছে। গত ১১ বছরে ৩৬৬ কোটি ৮৭ লাখ ৭৭ হাজার ৫৬৬টি বই বিনামূল্যে বিতরণ করা হয়েছে।

এবারের বই বিতরণ শেষ হলে সর্বমোট ৪০১ কোটি ২৪ লাখ ৩৯ হাজার ৯৭৮টি বই বিতরণ করা হবে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বৃহস্পতিবার গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বই বিতরণ কর্মসূচির উদ্বোধন করেন।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে নিম্ন মাধ্যমিক, মাধ্যমিক এবং ইবতেদায়ীর এক কোটি ৮৫ লাখ ৭৫ হাজার ৪৫৩ শিক্ষার্থীকে ২৪ কোটি ১০ লাখ ৭৯ হাজার ৮৫৭টি বই এবং প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর দুই কোটি ৩০ লাখ ৭৯ হাজার ৭৭৩ জন শিক্ষার্থীর হাতে ১০ কোটি ২৫ লাখ ৮২ হাজার ৫৫৫টি বই বিতরণ করা হচ্ছে এবার।

 

Live TV

আপনার জন্য প্রস্তাবিত