4008
Published on ডিসেম্বর 26, 2020মুক্তিযোদ্ধাদের জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান হিসেবে বিবেচনা করা হয়। স্বাধীন একটি দেশের জন্য জীবন বাজি রাখা রক্তক্ষয়ী মহান এক যুদ্ধে তাদের মধ্যে অনেকেই পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন। আর্থ-সামাজিক বিবেচনায় অনেকের জীবনই মর্যাদাপূর্ণ নয়। অনেক মুক্তিযোদ্ধা এখনও মানবেতর জীবনযাপন করছেন। অনেকেরই পরিবার পরিজন নিয়ে মাথা গোঁজাবার মতো সম্মানজনক ঠাঁইটুকুও নেই। এরই পরিপ্রেক্ষিতে এবং স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ উপহার হিসেবে মুক্তিযোদ্ধাদের আবাসন সংকট নিরসনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
উপজেলা পর্যায়ে ১৪ হাজার বাড়ি নির্মাণ করে দেওয়া হবে মুক্তিযোদ্ধাদের। আগামী ২০২৩ সালের মধ্যে এসব বাড়ি হস্তান্তর করার কথা রয়েছে। এ উদ্দেশ্যে দুই হাজার ৮১৪ কোটি টাকা ব্যয়ের এই বড় প্রকল্প নিচ্ছে সরকার। 'অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য আবাসন প্রকল্প' নামে এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের পাঠানো উন্নয়ন প্রকল্প (ডিপিপি) মূল্যায়নের কাজ শেষ করেছে পরিকল্পনা কমিশন। জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে প্রকল্পটি অনুমোদনের অপেক্ষমাণ তালিকায় রয়েছে। একনেক চেয়ারপারসন হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই বৈঠকে সভাপতিত্ব করে থাকেন।
সরকারি নির্মাণে এই বাড়ি পাবেন দেশের প্রতিটি উপজেলায় অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধা, বীরাঙ্গনা, শহীদ এবং প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী বা সন্তানেরা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এই উপহার তাদের আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়নে অবদান রাখবে বলে প্রকল্পের পটভূমিতে উল্লেখ করা হয়েছে। 'বীর নিবাস' নামের প্রতিটি বাড়ি হবে একতলা বিশিষ্ট। ৯০০ বর্গফুট আয়তনের এই বীর নিবাসে তিন বেড রুম থাকবে। প্রতিটি বীর নিবাসের নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে ১৯ লাখ ৫৫ হাজার টাকা।
সূত্র জানিয়েছে, মুক্তিযোদ্ধা এবং সংশ্নিষ্টদের নিজস্ব জমিতেই বীর নিবাস নির্মাণ করা হবে। তবে যাদের এরকম নিজস্ব জমি নেই, তাদের মধ্যে সরকারি খাসজমি বরাদ্দ দেওয়া হবে। কোনো উপজেলায় সংশ্নিষ্টদের নিজস্ব জমি না থাকলে এবং খাসজমিও অপ্রতুল হলে জমি অধিগ্রহণ করা হতে পারে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে এ বিষয়ে সব দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। জানতে চাইলে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক সমকালকে বলেন, এই প্রকল্পটি আরও আগেই নেওয়ার কথা ছিল। করোনার কারণে পিছিয়ে গেল। তবে দ্রুতই কাজ শুরু করতে চান তারা। তিনি বলেন, আগেই অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের ফ্ল্যাট নির্মাণ করে দিয়েছে সরকার। অনেকে নিজস্ব ভিটামাটি ছেড়ে যেতে চান না। এ কারণে নিজস্ব বসতভিটায় বাড়ি করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য সচিব মামুন আল-রশীদ বলেন, মুক্তিযুদ্ধের অনুভূতির সঙ্গে প্রকল্পটির সম্পর্ক। এ কারণে তারা চান যত দ্রুত প্রকল্পটি একনেকে অনুমোদন করে নির্মাণকাজ শুরু করা যায়। দেশে গেজেটভুক্ত মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা দুই লাখ ১১ হাজার। এর বাইরেও শহীদ পরিবার আছে। পর্যায়ক্রমে সকল অস্বচ্ছল মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের জন্য বীর নিবাস নির্মাণ করা হবে।