বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকতে বঙ্গবন্ধুর বালুর ভাস্কর্য

2179

Published on ডিসেম্বর 21, 2020
  • Details Image

বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজারে উন্মোচন করা হয়েছে বঙ্গবন্ধুর বালু ভাস্কর্য। বলা হচ্ছে, এটি বিশ্বে বঙ্গবন্ধুর প্রথম এবং বড় বালুর ভাস্কর্য। বিজয়ের এই দিনে বঙ্গবন্ধুর এই ভাস্কর্য উপভোগ করছেন ভ্রমণে আসা পর্যটকসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ।

সবার জন্য এ বালু ভাস্কর্য উন্মুক্ত থাকবে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত।

বুধবার ( ১৬ ডিসেম্বর) বেলা সাড়ে ১২টায় কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের লাবণী পয়েন্টে স্থাপিত এ বালু ভাস্কর্যটি উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামাল হোসেন।

জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনের পর জাতির জনকের জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে ১০০টি কবুতর উড়িয়ে ‘বঙ্গবন্ধুর বালু ভাস্কর্যের’ আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের পর দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত করা হয়।

আয়োজকরা জানিয়েছেন, জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে এবং স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ব্র্যান্ডিং কক্সবাজারের সার্বিক সহায়তায় ভাস্কর্যটি নির্মিত হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের ভাস্কর্য বিভাগের ১০ জন ভার্স্কর শিক্ষার্থী এটি নির্মাণে অংশগ্রহণ করেন। গত ৮ ডিসেম্বর থেকে বুধবার সকাল ৯টা পর্যন্ত দিনে-রাতে পরিশ্রম করে ভাস্কর্যটির নির্মাণকাজ শেষ করেছেন।

নির্মাণ শিল্পীরা জানিয়েছেন, ‘বঙ্গবন্ধুর বালু ভাস্কর্যটি’ জাতির জনকের সর্বপ্রথম ও সর্ববৃহৎ কোনো ভাস্কর্য। কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের লাবণী পয়েন্টে নির্মিত হয়েছে ১০ ফুট উচ্চতার একটি ফ্রি-স্ট্যান্ডিং আবক্ষ ভাস্কর্য এবং আরেকটি শোয়ানো অবস্থায় রিলিপ ভাস্কর্য। ভাস্কর্যগুলো নির্মাণে শিল্পীরা শুধুমাত্র সৈকতের বালি ও পানি ব্যবহার করেছেন।
ভাস্কর্যটি আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের উন্মুক্ত করা হলে সেখানে দর্শনার্থীদের ভিড় ছিল লক্ষ্যনীয়। স্থানীয়দের পাশাপাশি কক্সবাজার সৈকতে ঘুরতে আসা পর্যটকরাও দেখতে ভিড় জমান এ ভাস্কর্য দেখার জন্য।

উদ্বোধনী বক্তব্যে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামাল হোসেন বলেন, কুষ্টিয়াসহ দেশের কয়েকটি স্থানে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙার ঘটনায় ভাস্কর্য নির্মাণের মাধ্যমে প্রতিবাদের ভাষা হিসেবে শিল্পকর্মটি উপস্থাপন করা হচ্ছে। প্রতিবাদের ঢেউ সাগর তীর থেকে সারা দেশে ছড়িয়ে দিতে এই উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

বাংলাদেশ ও বঙ্গবন্ধু এক অবিচ্ছেদ্য অংশ উল্লেখ করে জেলা প্রশাসক বলেন, কক্সবাজার শহরের কলাতলী এলাকার বঙ্গবন্ধু চত্বরে একটি স্থায়ী ভাস্কর্য নির্মাণের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন। ইতিমধ্যে প্রস্তাবাধীন ‘বঙ্গবন্ধু ভাস্কর্যটির’ নকশা প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে জমা দেয়া হয়েছে। অনুমোদন পাওয়ার পর এটি নির্মাণের ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

প্রস্তাবিত এই ভাস্কর্যটি নির্মাণের মাধ্যমে পরবর্তী প্রজন্মের কাছে বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও আদর্শ পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হবে বলে মন্তব্য করেন কামাল হোসেন।

অভিনব প্রতিবাদ হিসেবে ‘বঙ্গবন্ধুর বালু ভাস্কর্য’ নির্মাণের উদ্যোক্তা স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ব্র্যান্ডিং কক্সবাজারের সমন্বয়ক ইশতিয়াক আহমেদ জয় বলেন, কুষ্টিয়ায় যখন প্রথমবারের মতো বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙার অপচেষ্টা চালানো হয় তখনই মাথায় আসে সমুদ্র সৈকতে বালু ভাস্কর্য স্থাপনের মধ্য দিয়ে নতুন আঙ্গিকে প্রতিবাদ জানানোর। এটির অংশ হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের ভাস্কর্য বিভাগের শিক্ষার্থী শিল্পীদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। পরবর্তীতে বিষয়টি নিয়ে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়।

মূলত উগ্র-মৌলবাদীদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের ভাষা হিসেবে বালু ভাস্কর্যের মত শিল্পকর্ম উপস্থাপনের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

সাম্প্রতিক সময়ে বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধের ভাস্কর্যগুলো নিয়ে উগ্র-মৌলবাদীদের আস্ফালনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ হিসেবে বালু ভাস্কর্য নির্মাণে অংশ নিতে পেরে নিজেকে গর্বিত মনে করছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাস্কর্য শিক্ষার্থী কামরুল হাসান শিপন।

শিপন বলেন, বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধের ভাস্কর্য ভাঙার ব্যতিক্রমী প্রতিবাদ হিসেবে বালু ভাস্কর্য নির্মাণে অংশগ্রহণ করেছেন। প্রতিবাদটি সর্বস্তরে ছড়িয়ে দিতে বঙ্গবন্ধুর সর্বপ্রথম ও সর্ববৃহৎ বালু ভাস্কর্য নির্মাণ করা হয়েছে। এই চিন্তা থেকে ১০ ফুট উচ্চতার একটি ফ্রি-স্ট্যান্ডিং আবক্ষ ভাস্কর্য এবং ৬ ফুট প্রস্থের ও ১০ ফুট দৈর্ঘ্যরে একটি রিলিপ ভাস্কর্য নির্মাণ করা। বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত বালুর কাঠামো দিয়ে এ ধরণের ভাস্কর্য নির্মিত হয়নি। যারা ভাস্কর্য শিল্প সম্পর্কে জানেন এটি কত কঠিন কাজ।

ভাস্কর্যটি নির্মাণে দুঃসাহসের অনুভূতি কাজ করেছে মন্তব্য করে এ ভাস্কর্য শিল্পী বলেন, একজন শিল্পীর কাছে যে কোন শিল্পকর্ম হচ্ছে তার সন্তান সমতুল্য। তাছাড়া এটি ছিল বঙ্গবন্ধুকে ঘিরেই নতুন মাধ্যমে নতুন উচ্চতার শিল্পকর্ম। যাঁর অবিস্মরণীয় নেতৃত্বেই বাঙালি জাতি আজ স্বাধীনতার সুফল ভোগ করছে। তাই শিল্পকর্মটি নির্মাণে শিল্পীদের অন্যরকম অনুভূতিও কাজ করেছে।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে কক্সবাজার সদর আসনের সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমল, জেলা পুলিশ সুপার মো. হাসানুজ্জামান, জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অ্যাডভোকেট ফরিদুল ইসলাম, কক্সবাজার পৌর মেয়র মুজিবুর রহমান, মুক্তিযোদ্ধা কামাল হোসেন চৌধুরী, কক্সবাজার পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নজিবুল ইসলাম ও স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ব্র্যান্ডিং কক্সবাজারের সমন্বয়ক ইশতিয়াক আহমেদ জয় প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

বঙ্গবন্ধুর নিজ হাতে সৃজিত ঝাউবাগান সংলগ্ন সৈকতের বালিয়াড়িতে নির্মিত ‘বঙ্গবন্ধুর বালু ভাস্কর্য’ দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত থাকবে আগামী ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত। এছাড়া নির্মিত ভাস্কর্যস্থলে স্থাপিত মঞ্চে প্রতিদিনই আয়োজন রয়েছে নানা অনুষ্ঠানমালার।

 

Live TV

আপনার জন্য প্রস্তাবিত