উন্নয়ন দর্শন: গ্রাম ও নগরের উন্নয়নে প্রয়োজন বিশদ ও স্বতন্ত্র গবেষণা

1943

Published on ডিসেম্বর 14, 2020
  • Details Image

সজল চৌধুরী:

কুয়াশাঘেরা সকালে উত্তাল পদ্মার বুকে আজ প্রতিষ্ঠা হল পদ্মাসেতুর মূল কাঠামোর শেষ স্প্যান! এ যেন এক আলোকবর্তিকা! এ যেন এক স্বপ্নের রোদ মাখা সকাল! পৃথিবীর বুকে এ যেন এক ইতিহাস! নির্বাক তাকিয়ে রয় চারিদিক। সাবাস বাংলাদেশ! একটি সফলতার গল্প, দেশের গল্প, সংগ্রামের গল্প। দুই দশক আগে 2001 সালের জুলাই মাসে বর্তমান মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা পদ্মা সেতুর যে ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলেন দুচোখে স্বপ্ন নিয়ে বাংলাদেশের উন্নয়নের লক্ষ্যে,  আজ রয়েছে শুধুই তার সফলতার গল্প। আমরা দেখেছি কি প্রবল প্রতিকূলতা, বাধা-বিপত্তি, প্রতিবন্ধকতা  তাকে পাড়ি দিতে হয়েছে এবং হচ্ছে চলার পথে কিন্তু তিনি প্রতিবারই প্রমাণ করেছেন কোন ধরনের বাধা বিপত্তি, প্রতিবন্ধকতা দেশের উন্নয়নে তার সংকল্পের কাছে, দৃঢ় মনোবলের কাছে পরাজিত। তিনি প্রমাণ করেছেন তার বিস্ময়কর দৃঢ়সংকল্প, দেশের জন্য ভালোবাসা এবং মনোভাব একটি দেশকে অবশ্যই সামনের দিকে এগিয়ে নিতে সক্ষম। তাই আজ ‘বাংলাদেশ’ মাথা উঁচু করে সবার সামনে বলতে পারে ‘আমাদের পক্ষে সম্ভব’ - যেমনটি সম্ভব করেছিলেন এই দেশটিকে লাল সবুজের দেশ হিসেবে স্বাধীন করে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।

বাঙালি জাতির ইতিহাসে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। গণতান্ত্রিক চিন্তা-চেতনা এবং অর্থনৈতিক মুক্তির সংগ্রামে এক জ্বলন্ত উদাহরণ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু। এ কারণেই বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পরম বন্ধু ইন্দিরা গান্ধী কিন্তু বলেছিলেন … শেখ মুজিব ছিলেন একজন মহান নেতা। তার সাহসিকতা এশিয়া এবং আফ্রিকার জনগণের জন্য ছিল প্রেরণাদায়ক…। কিংবা ফিদেল কাস্ত্রোর মতো বিশ্ব নেতা সগর্ভে বলেছিলেন … আমি হিমালয় দেখিনি কিন্তু শেখ মুজিবকে দেখেছি ব্যক্তিত্ব আর সাহসিকতায় তিনি ছিলেন হিমালয়…। বঙ্গবন্ধু আজীবন স্বপ্ন দেখেছেন ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক শান্তিময় মানবিক বাংলাদেশের। আর তার সেই স্বপ্ন পরম মমতায়, একাগ্রতায়, সাহসিকতার সাথে এগিয়ে নিয়ে চলছেন শত বাধা অতিক্রম করে তার সুযোগ্য কন্যা আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন জননেত্রী শেখ হাসিনা। যার স্বপ্নে-সংকল্পে রয়েছে ‘সবুজ একটি বাংলাদেশের গল্প’ যে দেশটি হয়তো একদিন সারা বিশ্বের বুকে নিজের পতাকাকে সবচেয়ে উঁচুতে রাখবে।

এবার একটু ইতিহাসের দিকে তাকাই। একাত্তর-স্বাধীন বাংলাদেশ। অনেক ত্যাগের-রক্তের বিনিময়ে অর্জিত লাল সবুজের পতাকার একটি হাজার স্বপ্নে ঘেরা দেশ - বাংলাদেশ। নতুন স্বপ্নে, নতুন বিনির্মাণে, নতুন সংকল্পে। আর এই যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশকে সোনার বাংলা হিসেবে গড়তে, নতুন স্বপ্ন দেখাতে, নতুনভাবে পুনর্গঠনে- বিনির্মাণে উদ্যোগ নিলেন জাতির সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বাংলাদেশ নামের স্বাধীন রাষ্ট্রের জন্মের সূচনা লগ্ন থেকেই তিনি উপলব্ধি করেছিলেন সামগ্রিক টেকসই উন্নয়নের স্বপ্ন এবং তার বাস্তবায়ন এর বিভিন্ন দিক সম্পর্কে। অতীতের বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত থেকে দেখা যায় বাংলাদেশের বিভিন্ন সামগ্রিক আর্থসামাজিক উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করতে বিভিন্ন সম্ভাবনা কিভাবে খুজে বের করা যায় এবং সাধারন মানুষের সামগ্রিক টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যে কিভাবে গতিশীল টেকসই বাস্তবায়ন করা সম্ভব তার প্রত্যেকটি বিষয়ে তিনি শুধুমাত্র দেশের  ভেতরে নয়, দেশের বাইরেও বিশেষজ্ঞদের কাছ থেকে কর্মপরিকল্পনা এবং মতামত গ্রহণ করেছিলেন। তিনি উপলব্ধি করেছিলেন সামগ্রিক উন্নয়নের জন্য অবশ্যই বহু মতাদর্শের প্রয়োজন রয়েছে এবং বিভিন্ন কর্মপরিকল্পনার মাধ্যমেই সঠিক পথটি খুঁজে বের করা সম্ভব। একাধারে তিনি ছিলেন রাষ্ট্রের অভিভাবক সেইসাথে প্রকৃতিপ্রেমিক। তিনি ভালোবেসেছিলেন বাংলার মাটি, মানুষ, পরিবেশ, প্রকৃতিকে নিবিড়ভাবে। নিজস্ব উপলব্ধি থেকেই বুঝতে পেরেছিলেন এগুলোর সমন্বয়ের মাধ্যমে দেশের সার্বিক উন্নয়ন সম্ভব। দেশের সম্পদ কে যথাযথভাবে কাজে লাগাতে পারলেই জাতির সামগ্রিক উন্নয়ন সম্ভব। প্রাকৃতিক সম্পদকে কাজে লাগাতে হবে, আর তাইতো সঠিকভাবে কাজে লাগানোর জন্য, দেশের উন্নয়নের জন্য তিনি গ্রহণ করেছিলেন সমবায় ভিত্তিক কর্মযজ্ঞ মানব কল্যাণ ও আর্থসামাজিক উন্নয়নের লক্ষ্যে।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু যখন রাষ্ট্রপরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলেন যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশের সর্বত্রই তখন ছিল ধ্বংসলীলা। বাঙ্গালীদের খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা, কৃষির উৎপাদন এমনকি পূনর্বাসনের মতো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোকে তিনি সাফল্যের সাথে মোকাবেলা করেছিলেন এবং দেশের সার্বিক অবস্থার কথা বিবেচনা করে দুর্ভিক্ষকে প্রতিহত করেছিলেন। প্রাথমিক সংকট গুলোকে কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হন। কলকারখানার উৎপাদন কিভাবে বাড়ানো সম্ভব, পূনর্বাসনের ব্যবস্থাপনা এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কেমন রূপ ধারণ করবে এসব বিষয়ে পুঙ্খানুপুঙ্খ চিন্তা এবং বিশ্লেষণ তার কর্মধারার মধ্যে বিশদভাবে ছিল। তিনি প্রথম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিলেন। যার লক্ষ গুলো ছিল মূলত দারিদ্র্য দূরীকরণ, কর্মসংস্থান, আর্থিক উন্নয়ন, পণ্যের চাহিদা, কৃষির প্রাতিষ্ঠানিক এবং প্রযুক্তিগত কাঠামোতে সমসাময়িক রূপান্তর ইত্যাদি। এমনকি তার ভাবনার মধ্যে ছিল দেশের খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা এবং কৃষিতে কর্মসংস্থান বৃদ্ধি। সেই সাথে আরেকটি বিষয় ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ যা হলো শ্রমশক্তির শহরমুখী অভিবাসন বন্ধ করা, যা বর্তমানে আমরা আমাদের ভবিষ্যৎ টেকসই উন্নয়নের জন্য দেশের শহর গুলোকে নিয়ে ভাবছি।

আমরা যে গ্রামোন্নয়নের কথা বলছি যা তিনি স্বপ্ন দেখেছিলেন আজ থেকে অনেক বছর আগে। এমনকি জাপান সফর কালে জাপানের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী তানাকার সাথে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের মাধ্যমে যমুনা বহুমুখী সেতু (বঙ্গবন্ধু সেতু) নির্মাণের স্বপ্নের কথা প্রথম সূচনা করেন, যা শুধুমাত্র যাতায়াতের জন্য নয়, অর্থনৈতিক ক্ষেত্রেও বাংলাদেশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। গ্রাম উন্নয়নের জন্য, স্বাস্থ্যসেবা উন্নয়নের জন্য তিনি প্রাথমিকভাবে 500 ডাক্তারকে গ্রামে নিয়োগ করেছিলেন যেন শহর আর গ্রামের স্বাস্থ্যসেবায় বৈষম্য নিরসন হয়। এমনকি দেশের পরতে পরতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কৃষ্টি, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যকে রক্ষা এবং ধারণ করার জন্য, সমৃদ্ধির জন্য তিনি গঠন করেছিলেন বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি। আমরা সত্যি আশান্বিত হই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাদের দেশের গ্রামগুলোর উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করছেন। গ্রাম উন্নয়ন কে সর্বোচ্চ পর্যায়ে বিবেচনা করছেন। বঙ্গবন্ধুর 1972 সালের জুন মাসের এক ভাষণে বলেছিলেন দেশের প্রত্যেকটি মানুষ যেন খেতে পারে, আশ্রয় পাবে…। বলেছিলেন প্রতিটি মানুষ উন্নত জীবনের অধিকারী হবে। আর এটি ছিল তার স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার প্রধান লক্ষ্য। তার বিভিন্ন বক্তৃতায় উঠে আসে গ্রামের পরিবেশ, কৃষি, প্রকৃতি, আর সেইসাথে কৃষকের কথা। নিজস্ব সংস্কৃতি, স্থাপত্য এবং পরিকল্পনাকে বুঝতে হলে প্রয়োজন এই সবকিছুর সমন্বয়। বিভিন্ন ভাষণ এর মাধ্যমে এভাবেই মনোভাব ব্যক্ত করেছিলেন। তিনি সর্বস্তরের বৃক্ষরোপনের ডাক দিয়েছিলেন, উপকূলীয় বনায়ন করেছিলেন, বন্যপ্রাণী রক্ষা আইন প্রণয়ন করেছিলেন, জলাভূমি রক্ষার রূপরেখা প্রণয়ন করে বহুমুখী কর্মকাণ্ড করেছিলেন - যা ছিল সুস্থ সমাজ ব্যবস্থা এবং পরিবেশবান্ধব সমাজব্যবস্থার বহিঃপ্রকাশ।

এমনকি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনাও তার বিভিন্ন লেখনীতে টেকসই নগর এবং গ্রাম উন্নয়নের ভাবনা, পরিবেশ প্রকৃতিগত ভাবনার বিভিন্ন রুপরেখা ব্যক্ত করেছেন। গ্রাম উন্নয়নের ক্ষেত্রে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী অনেক আগেই তার ‘স্মৃতির দখিন দুয়ার’গ্রন্থে লিখেছেন সুষ্ঠ বিদ্যুতায়ন ব্যাবস্থা, হাসপাতাল, স্কুল - কলেজ, মাতৃসদন, কৃষি ও কারিগরি প্রশিক্ষণ-কেন্দ্র, সাংস্কৃতিক কেন্দ্র, খেলার মাঠ, প্রশস্ত রাস্তা ঘাট, মজবুত ঘরবাড়ি প্রভৃতির কথা। সেই সাথে বলেছেন নদ-নদী, খাল-বিলে মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি, গবাদিপশু ও হাস-মুরগির ব্যাপক উৎপাদন বৃদ্ধিকল্পে খামার তৈরী, সর্বপরি খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি, কুটির শিল্পের মানোন্নয়ন এবং শিল্পের বিকাশ। শৈশবের তার সমস্ত স্মৃতি জুড়েই রয়েছে ধুলোমাখা মেঠো পথ, গ্রামের সহজ-সরল প্রকৃতি আর পরিবেশ। পাখিদের সাথে মিলেমিশে কাটানো শৈশব, তাদের প্রতি অকৃত্রিম ভালোবাসা যেন বারে বারে উঠে আসে তার কথায়, তার লেখায়। গ্রামের সহজ সরল মানুষদের জীবন তাকে ভাবতে শিখাতো। গ্রামের বড় বড় সবুজ মাঠে ঘুরে বেড়ানো আর বন্ধুদের সাথে নিয়ে খেলায় মত্ত হওয়া এ যেন জীবনের সাথে একই সুত্রে গাঁথা ছিল।  এমনকি ফড়িং এর পেছন পেছন দৌড়ানো আর ঝরে পড়া পাতা গুলোকে কুড়িয়ে কোথাও-কোন বারান্দায় গুছিয়ে রাখার স্মৃতিগুলো ছিল বড়ই আদরের। শীতের সকালে শিউলি ফুল, নদীতে মাছ ধরা, ঝড়ো বাতাসে গাছ থেকে আম পড়া, গ্রামের কোন স্মৃতি তার কাছে তুচ্ছ নয়। এ যেন পরম মমতায় ধরে রাখা ভালোবাসা! আর এভাবেই গ্রামের সাথে নিজেকে মিলিয়ে সবুজ বাংলার গ্রামের ছবি এঁকেছেন তিনি। আর তার সেই স্মৃতিগুলোর সাথে পথ চলতে চলতে আমরা দেখা পাই সবুজ শ্যামলে ভরপুর বাংলার অপরুপ গ্রামের চিরায়িত প্রতিচ্ছবি। তাইতো তিনি বলেছেন “…গ্রামের ছায়ায় ঘেরা, মায়ায় ভরা প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও শান্ত নিরিবিলি পরিবেশ এবং সরল সাধারন জীবনের মাধুর্যের মধ্য দিয়ে আমি বড় হয়ে উঠি…” - আর দিন শেষে আমরা পাই একজন ‘দেশনেত্রী’-একজন মমতাময়ী। বর্তমানেও তিনি তার বিভিন্ন বক্তব্যে চিন্তায় শহরের টেকসই উন্নয়ন নিয়ে বিভিন্ন পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন। এমনটি ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্ন এবং বাস্তবায়নের লক্ষে বিভিন্ন সময় তাদের বিভিন্ন বক্তব্যে ভবিষ্যতের কর্মপরিকল্পনার অনেক বেশি সম্ভাবনা লুকিয়ে থাকে।

বর্তমানে আমরা আমাদের শহর ও গ্রামের টেকসই উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করছি। বিভিন্ন সভা-সেমিনার করছি। লেখালেখি করছি। নতুন পরিকল্পনা করছি। নতুনভাবে নগর এবং শহরের প্রস্তাবনা করছি। সেতু, ভবন, কারখানা এককথায় নগরায়ন শিল্পায়ন এবং উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করছি। চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের কথা ভাবছি। কিন্তু যে বিষয়টিকে এখানে গুরুত্বারোপ করছি সেটি হলো আমাদের এই টেকসই উন্নয়নের ধরন কেমন হবে কিংবা গ্রাম-নগরায়ন-শিল্পায়ন কেমন হবে সেসব বিষয় গুলো যদি বঙ্গবন্ধু এবং প্রধানমন্ত্রীর দর্শন থেকে আরও নিবিড় ভাবে নেয়া যেত গবেষণার মাধ্যমে তাহলে হয়তো টেকসই উন্নয়নের আরো একটি ধাপ স্বপ্নের বাংলাদেশ বিনির্মাণে আমরা এগিয়ে নিতে পারতাম। তাদের ভাবনা এবং চিন্তার জায়গাগুলোকে আরো স্পষ্টভাবে স্থাপত্য, প্রকৌশল আর নগরায়নের দিক থেকে বিশদভাবে গবেষণার মাধ্যমে নতুন কোনো পরিকল্পনা করা সম্ভব হলে হয়তো দেশের চতুর্থ শিল্প বিপ্লব এর জন্য বিরাট একটি প্রাপ্তি হত। কি তাদের নগরায়ন – গ্রামোন্নয়নের অথবা শিল্পায়নের ভাবনা? এ সম্পর্কে আরও বিশদ পরিকল্পিত গবেষণার প্রয়োজন অবশ্যই। এ জন্য প্রয়োজন একটি স্বতন্ত্র জাতীয় ‘বঙ্গবন্ধু গ্রাম ও নগর উন্নয়ন গবেষণা কেন্দ্র’ কিংবা প্রতিষ্ঠান যেখানে শুধুমাত্র বাস্তবায়িত হবে ‘বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের বাংলাদেশ’। যেখানে প্রধানমন্ত্রীর চিন্তাগুলোর গবেষণাভিত্তিক বহিঃপ্রকাশ হবে। বাংলাদেশের জন্য বিভিন্ন কর্মধারার পরিকল্পনা হবে স্বল্প এবং দীর্ঘ মেয়াদী। যে প্রতিষ্ঠানটি নতুন নতুন প্রায়োগিক পরিকল্পনার মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় এবং অন্যান্য প্রতিষ্ঠানকে সমন্বিত করবে। যেখানে কাজ করবেন বিভিন্ন ক্ষেত্র থেকে আসা বাংলাদেশের গবেষকরা শুধুমাত্র বাংলাদেশকে নিয়ে, বাংলাদেশের সামগ্রিক টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যে। সমন্বিত গবেষণা হবে বাংলাদেশের ইতিহাস, সমাজব্যবস্থা, স্বাস্থ্য, প্রকৃতি, সংস্কৃতি-মানুষ নিয়ে। সম্পৃক্ততা হবে নগরায়ন এবং শিল্পায়নের। কারণ তাদের চিন্তা-ধারায় গ্রাম-শহরের ভাবনা-পরিকল্পনা, চিত্রিত হবে নতুন এক বাংলাদেশের অবকাঠামোগত উন্নয়নের রুপরেখা এই গবেষণা প্রতিষ্ঠানটির মাধ্যমে। তাছাড়া বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রয়োজন ডকুমেন্টেশন যা ভবিষ্যৎ গবেষণায় ব্যবহৃত হবে, যার সুফল এই প্রতিষ্ঠানটি দিতে সক্ষম।

কারণ আমরা সব সময়ই তাদের রাজনৈতিক দর্শন নিয়ে আলোকপাত করি । কিন্তু এর সাথে যদি তার নগরায়ন, শিল্পায়ন, গ্রামোন্নয়ন, স্থাপত্য, পরিবেশ ভাবনা নিয়ে তাদের চিন্তার বহিঃপ্রকাশ কে আরো নিবিড় ভাবে বিচার বিশ্লেষণের মাধ্যমে একটি পূর্ণাঙ্গ রূপ দেয়া সম্ভব হয়, যা এখন পর্যন্ত ঠিক সেভাবে প্রাধান্য পায়নি আমাদের গবেষণাগুলোতে। আর এভাবেই যদি আমরা গবেষণার মাধ্যমে সমন্বিত গ্রাম এবং শহরের বৈশিষ্ট্যগুলোকে ধারণ করতে পারি এবং সেভাবে পরিকল্পনার মাধ্যমে দেশকে আরো টেকসই উন্নয়নের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারি তাহলে সেটি আমাদের ভবিষ্যতের জন্য আরও বেশি ফলপ্রসূ হবে। আশা করছি এই বিষয়টিকে গুরুত্ব আরোপ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গৃহীত হবে ভবিষ্যত বাংলাদেশের সামগ্রিক উন্নয়নের জন্য অচিরেই।

লেখকঃ শিক্ষক ও স্থাপত্য-পরিবেশ বিষয়ক গবেষক, বর্তমানে অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি গবেষণারত

Live TV

আপনার জন্য প্রস্তাবিত