ডিজিটাল বাংলাদেশঃ কোভিড চ্যালেঞ্জকে সুযোগে পরিণত করেছে সরকার

1802

Published on ডিসেম্বর 14, 2020
  • Details Image

কথায় আছে, 'জাদুকরের কাজ অসম্ভবকে সম্ভব করে দেখানো'। বর্তমান সরকারের ডিজিটাল প্লাটফর্মের গল্পটাও অনেকটা সেরকম। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগের 'ডিজিটাল বাংলাদেশ' বিনির্মাণের ঘোষণা শুনে অনেকেই হেসেছিলো। বলেছিলো 'আকাশ-কুসুম কল্পনা' বা 'আষাঢ়ে গল্প'। কিন্তু তাদের সেই মন্তব্যগুলোকে ভুল প্রমাণ করে আজ বাংলাদেশ ডিজিটাল প্লাটফর্মের 'চ্যাম্পিয়ন'। কোভিড মোকাবেলায় হিমশিম খাওয়া বিভিন্ন দেশকে পাশ কাটিয়ে স্বাভাবিক গতিতে চলছে দেশের সরকারি দফতরের কাজ থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস। সরকারের তৈরি করা ডিজিটাল প্লাটফর্মের কল্যাণেই তা সম্ভব হয়েছে।

শনিবার বক্তব্য দেয়া কালে আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক প্রশ্ন করেন, '২০০৮ সালের মার্চে করোনা ভাইরাস এলে আমরা কি এভাবে কাজ করতে পারতাম?'

২০০৮ সালে দেশে মোট ইন্টারনেট গ্রাহক সংখ্যা ছিলো ৬০ লাখ যা বর্তমানে ১০ কোটির বেশি। এ ছাড়াও ২০০৮ সালের জুলাই মাসে ব্যান্ডউইথের মূল্য ছিলো ২৭ হাজার টাকা যা বর্তমানে ৩০০ টাকা! দেশের উপজেলা পর্যায়ে ব্রডব্যান্ড সেবা পৌঁছে দিতে আইসিটি মন্ত্রণালয়ের কার্যকর ভূমিকার পাশাপাশি মোবাইল ইন্টারনেটের খরচ হ্রাসের কারণে দেশের প্রান্তে প্রান্তে বেড়ে চলছে ইন্টারনেট গ্রাহকের সংখ্যা। ২০০৮ সালে যেখানে দেশে মোবাইল ব্যবহারকারী ছিলো ৪ কোটির কিছু বেশি, যা বর্তমানে ১১ কোটির বেশি। এ ছাড়াও ডিজিটাল বাংলাদেশ তৈরির লক্ষ্যে ২০১০ সালে বিচ্ছিন্নভাবে শুরু হওয়া সরকারি বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের ডিজিটাইজেশন ব্যবস্থা বর্তমানে 'ইন্টিগ্রেটেড' বা সমন্বিত সার্ভিসে পরিণত হয়েছে যার সর্বোচ্চ সুবিধা এই করোনাকালে অর্জন করেছে দেশের জনগণ ও সরকার।

এ বিষয়ে ঢাকার বিভাগীয় কমিশনার মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, শুরুতে পৃথক পৃথকভাবে বেশ কিছু কাজ করা হয়েছে। অনেক মন্ত্রণালয় বিভাগ বা প্রতিষ্ঠান নিজস্ব উদ্যোগে ডিজিটাইজেশনের কাজ করেছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে ভুলও হয়েছে। কিন্তু এখন আর ভুলের সুযোগ নেই। সবকাজই এখন হচ্ছে 'ইন্টিগ্রেটেড' বা সমন্বিতভাবে। 'মাইগভ' অ্যাপ ব্যবহার, পাসপোর্ট তৈরি থেকে শুরু করে সরকারের প্রত্যেকটি কাজ এখন 'ইন্টিগ্রেশনের' মাধ্যমে হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে কাজের গতি, গুণগতমান ও সেবা সব ক্ষেত্রেই উন্নতি হয়েছে।

করোনার কারণে যেখানে আমাদের জীবনযাত্রার মান থমকে যাওয়ার কথা তা হয়নি বলে জানান তিনি। মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, 'করোনা ছিলো একটি চ্যালেঞ্জ। এই সময়ে আমাদের কোন কিছু থেমে থাকেনি। কৃষি, কর্ম, শিক্ষা সব ক্ষেত্রেই কাজ হয়েছে এবং হচ্ছে। এর মূল কারণ বিগত বছরগুলোর প্রস্তুতি।

চলতি বছরের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত সরকারি ই-নথি ব্যবহারের জন্য আবেদন করা গ্রাহকের সংখ্যা বেড়েছে প্রায় ৯৬.৮ লাখ। 'মাই গভ' অ্যাপস ব্যবহারকারী মাসে ৪ হাজার থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫০ হাজার ৭১৩ জন। সরকার প্রদত্ত '৩৩৩ তথ্য ও সেবা' সার্ভিসের ব্যবহার ১ লাখ ৭০ হাজার থেকে বেড়ে দাঁড়ায় ৩৬ লাখ ৯২ হাজারে। এই সার্ভিস ব্যবহার করে করোনা বিষয়ক তথ্য জেনেছেন ৪ লাখ ৯ হাজার ৫০৫ জন। এর মধ্যে ই-প্রেসক্রিপশন দেয়া হয়েছে ৩১ হাজার ৫৩১ জনকে। এই সার্ভিস ব্যবহার করে জরুরি ওষুধ বা নিত্য পণ্যের জন্য আবেদন করেছেন ১ লাখের বেশি মানুষ।

শিক্ষাক্ষেত্রে 'মুক্তপাঠ' এর গ্রাহক সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৬ লাখ ৮৭ হাজার, যা পূর্বে ছিলো ২ লাখ ৩২ হাজার।

করোনায় ১১ হাজার ৪০০ শিক্ষক ৩ কোটি ৫০ লাখ অনলাইন ক্লাস নিয়েছে যার সুবিধা গ্রহণ করেছে ১ কোটি ৬০ লাখ শিক্ষার্থী। এ ছাড়াও অনলাইনে ১৮৭ কোর্সের মাধ্যমে ১০ লাখ ৬৫ হাজার মানুষকে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে।

ডিজিটাল বাংলাদেশের ছোঁয়া ছিলো বিচারবিভাগে। দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মত অনলাইন বিচার ব্যবস্থা শুরু হয় যেখানে মে মাসে আবেদন করেন ১৫ হাজার ৫৫৩ জন। এই আবেদনের প্রেক্ষিতে অনলাইনে শুনানির দিন ধার্য হয় ১১ হাজার ৪১৬ মামলার, যার মধ্যে ৯ হাজার ৪৭৪ মামলার শুনানি হয় এবং জামিন পান ৬ হাজার ৪৮৬ জন।

করোনাকালে জনগণকে তথ্য জানাতে চালু করা 'www.corona.gov.bd' পোর্টাল থেকে নিয়মিত তথ্য গ্রহণ করেছে ২ কোটি ৫০ লাখ মানুষ।

এই 'নিউ নরমাল' জীবনে আরেকটি বড় পরিবর্তন এসেছে ব্যাংকিং ক্ষেত্রে। মানুষ ব্যাংক বা এটিএম সার্ভিসে যাওয়ার পরিবর্তে বাড়িয়েছে মোবাইল ব্যাংকিং। মার্চ মাসে থাকা ২২৪ পয়েন্ট থেকে বেড়ে তা নভেম্বরে দাঁড়িয়েছে ৪৯১ পয়েন্টে। একইভাবে প্রায় ২০০ পয়েন্ট বেড়েছে ইন্টারনেট ব্যাংকিং।

এ ছাড়াও 'প্রবাসবন্ধু কল সেন্টার', 'কৃষকের পণ্য' এমন বেশ কিছু সেবামূলক সার্ভিস ব্যবহার সুযোগ পেয়েছেন দেশে ও দেশের বাহিরে থাকা প্রবাসী নাগরিকেরা।

একযুগ আগেও যা ছিলো জাদুকরের গল্প, তা আজ বাস্তবে পরিণত করেছে বাংলাদেশ। ডিজিটাল বাংলাদেশের সর্বোচ্চ ব্যবহারের মাধ্যমে এগিয়ে যাচ্ছে দেশের তরুণ প্রজন্ম। সরকারি বিভিন্ন উদ্যোগের পাশাপাশি ডিজিটাল প্রশিক্ষণ ও কার্যক্রমে এগিয়ে এসেছে বেসরকারি ও বিদেশি সংস্থাগুলো। করোনাকালে দেশের ই-কমার্স খাতে নতুন করে চাকরি ও কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে ৫০ হাজারের বেশি। ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রকল্পের সুবিধাগুলো তৈরি না হলে করোনা মোকাবেলা আরো অনেক কঠিন হয়ে উঠত বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।

Live TV

আপনার জন্য প্রস্তাবিত