3053
Published on নভেম্বর 11, 2020সাজ্জাদুল হাসানঃ
বিগত ১৬ অক্টোবর ২০২০ বিশ্ব খাদ্য দিবস উদযাপিত হলো। এবারের খাদ্য দিবসের প্রতিপাদ্য ছিল “Grow, nourish, sustain Together. Our actions are our future.” বাংলায় যার ভাবানুবাদ করা হয়েছে ‘সবাইকে নিয়ে একসঙ্গে বিকশিত হোন, শরীরের যত্ন নিন, সুস্থ থাকুন। আমাদের কর্মই আমাদের ভবিষ্যৎ’। দিবসটি উপলক্ষ্যে টকশো, ভার্চুয়াল আলোচনা, পত্রপত্রিকায় বিভিন্ন লেখা দেখে বিশ্ব খাদ্য পরিস্থিতি, খাদ্য নিরাপত্তা এবং বাংলাদেশের খাদ্য পরিস্থিতি ও নিরাপত্তা সম্পর্কে জানার সুযোগ হলো। যা থেকে বাংলাদেশের বর্তমান খাদ্য পরিস্থিতি বিশেষ করে পুষ্টি নিরাপত্তার ক্ষেত্রে অধিকতর গুরুত্বারোপ করা প্রয়োজন বলে অনুধাবন করা যায়। সংগত কারণেই আজকের লেখায় আমি বাংলাদেশের বর্তমান খাদ্য পরিস্থিতি এবং পুষ্টি নিরাপত্তার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকতে চাই।
খাদ্য মানুষের মৌলিক অধিকারসমূহের মধ্যে অন্যতম। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের ১৫ (ক) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রাষ্ট্রের মৌলিক দায়িত্ব হচ্ছে সব নাগরিকের অন্ন, বস্ত্র, আশ্রয়, শিক্ষা ও চিকিৎসাসহ জীবনধারণের মৌলিক উপকরণের ব্যবস্থা করা; আবার সংবিধানের ১৮ (১) অনুচ্ছেদে জনগণের ‘পুষ্টির স্তর উন্নয়ন ও জন স্বাস্থ্যের উন্নতি সাধনকে রাষ্ট্রের অন্যতম প্রাথমিক দায়িত্ব হিসেবে গণ্য করা হয়েছে’। তবে পুষ্টি নিরাপত্তা যেহেতু খাদ্যের সঙ্গে সম্পর্কিত সেহেতু বাংলাদেশে খাদ্যের বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে প্রথমেই সংক্ষেপে আলোকপাত করছি।
২০০৮ সালে বর্তমান সরকারের দায়িত্ব গ্রহণকালে চালের ঘাটতি ছিল ২৬ লাখ টন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সফল নেতৃত্বে আজকে বাংলাদেশে চাল উৎপাদন অনেক গুণ বেড়েছে। ২০১৯-২০২০ অর্থবছরের হিসাব অনুযায়ী বাংলাদেশে এখন মোট চাল উৎপাদনের পরিমাণ ৩৮ দশমিক ৬ মিলিয়ন টন। আমাদের Human Consumption হলো প্রায় ২৫ মিলিয়ন টন। Non-human Consumption হলো ১০ দশমিক ০৬ মিলিয়ন টন। তাই দেশের সাধারণ চাহিদা মিটিয়ে উদ্বৃত্ত খাদ্যের পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ৩ দশমিক ৬ মিলিয়ন টন। ভুট্টা উৎপাদনে বাৎসরিক চাহিদা প্রায় ৬৪ লাখ টন; উৎপাদন হয় ৫৪ লাখ টন। অন্যদিকে, গমের বাৎসরিক চাহিদা ৬৬ লাখ টন; উৎপাদনের পরিমাণ মাত্র ১২ লাখ টন। এক্ষেত্রে বলা প্রয়োজন গমের উৎপাদন বাড়ানোর সুযোগ খুব কম। প্রথমত, গম উৎপাদনের জন্য আমাদের দেশের আবহাওয়া ততটা অনুকূল নয়। দ্বিতীয়ত, গমের উপযোগী চাষের জমির পরিমাণ তুলনামূলক কম। তাই বিকল্প জমি বৃদ্ধির মাধ্যমে গমের উৎপাদন বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান খাদ্য উৎপাদন ও পুষ্টিকে সর্বদাই গুরুত্ব দিয়েছেন। পুষ্টিকর খাবার গ্রহণের বিষয়টিকে মৌলিক মানবাধিকার হিসেবে সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করার পাশাপাশি তিনি ১৯৭৫ সালের ২৩ এপ্রিল বাংলাদেশ পুষ্টি পরিষদ গঠনের আদেশে স্বাক্ষর করেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৩ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে যে ঐতিহাসিক ভাষণ দিয়েছিলেন সেখান থেকে কয়েকটি লাইন আমি উদ্ধৃত করছি ‘... খাদ্য বলতে শুধু ধান, চাল, আটা, ময়দা আর ভুট্টাকে বোঝায় না বরং মাছ, মাংস, ডিম, দুধ, শাকসবজি এসবকেও বোঝায়। সুতরাং কৃষির উন্নতি করতে হলে এসব খাদ্যশস্য উৎপাদন বৃদ্ধি করতে হবে।’
বঙ্গবন্ধুর এ উক্তির প্রাসঙ্গিকতা বিবেচনায় এবার প্রথমে আসি মাংস, ডিম, দুধের ক্ষেত্রে। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার সুপারিশ অনুযায়ী এক জন সুস্থ স্বাভাবিক মানুষের প্রতিদিন ন্যূনতম ২৫০ মিলিলিটার দুধ, ১২০ গ্রাম মাংস এবং বছরে ১০৪টি করে ডিম খাওয়া প্রয়োজন। বর্তমানে দুধ, মাংস ও ডিমের জনপ্রতি প্রাপ্যতা বেড়ে যথাক্রমে ১৬৫ দশমিক ০৭ মিলি লিটার/ দিন, ১২৪ দশমিক ৯৯ গ্রাম/ দিন ও ১০৩ দশমিক ৮৯টি/ বছরে উন্নীত হয়েছে। দেশে উৎপাদিত দুধ, মাংস ও ডিম জাতীয় চাহিদার ৬৬ দশমিক ০৩ শতাংশ, ১০৪ দশমিক ১৫ শতাংশ এবং ৯৯ দশমিক ৮৯ শতাংশ জোগান দিয়ে থাকে। এছাড়া, বিশ্বে বাংলাদেশ এখন ধান উৎপাদনে তৃতীয়, শাকসবজি উৎপাদনে তৃতীয়, আলু এবং আম উৎপাদনে সপ্তম এবং পেয়ারা উৎপাদনে অষ্টম। অভ্যন্তরীণ মুক্ত জলাশয়ে মাছ উৎপাদনে তৃতীয় এবং ইলিশ মাছ উৎপাদনে প্রথম স্থান অর্জন করেছে। বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এ অভাবনীয় সাফল্য এসেছে যা বিশ্ববাসীর কাছেও স্বীকৃত।
এবার খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা নিয়ে কিছুটা আলোকপাত করা যাক। দানা জাতীয় খাদ্যশস্য এখনো মোট খাদ্যশক্তি গ্রহণের শতকরা ৬০ শতাংশের বেশি দখল করে আছে, জনসংখ্যার ৫০ শতাংশের বেশি ক্ষেত্রে সুষম খাবারের ঘাটতি রয়েছে। ফলে বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক পুষ্টিহীনতায় ভুগছে। তীব্র পুষ্টিহীনতায় ৪ লাখ ৫০ হাজার শিশু আক্রান্ত হচ্ছে। মডারেট পুষ্টিহীনতায় আক্রান্ত হচ্ছে প্রায় ১০ লাখ শিশু। পাঁচ বছরের নিচের শতকরা ৫২ শতাংশ শিশু এনিমিয়ায় ভুগছে, শতকরা ৪১ শতাংশ শিশু খর্বাকৃতি (stunting) অর্থাৎ বয়সের তুলনায় উচ্চতা অনেক কম ও ১৬ শতাংশ শিশু উচ্চতার তুলনায় ওজন অনেক কম অর্থাৎ ক্ষীণকায় (Wasting) ভুগছে এবং শতকরা ৩৬ শতাংশ শিশু অস্বাভাবিক কম ওজনের হয়ে থাকে। অন্যদিকে, প্রায় অর্ধেক নারী এনিমিয়ায় ভুগে থাকেন।(source: http://www.int/ maternal^child^ adolescent /epidemiology/ profiles /neonatal child/ bgd. pdficddr, b-malnutrition).
খাদ্য নিরাপত্তায় Affordability, Availability এবং Quality and safety এই তিনটি ক্যাটাগরিতে গ্লোবাল র্যাংকিং এর overall score এ ৫৩ দশমিক ২ পেয়ে ১১৩টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ ৮৩তম অবস্থানে রয়েছে। পৃথকভাবে যদি স্কোর দেখি তাহলে দেখতে পাই Affordability তে ৬০ দশমিক ৪, Availability তে ৫৪ দশমিক ৮ এবং কোয়ালিটি এবং সেফটিতে ৩০ দশমিক ৬। আমাদের সবচেয়ে উদ্বেগের কারণ কোয়ালিটি এবং সেফটিতে বাংলাদেশের অবস্থান ১১৩টি দেশের মধ্যে ১০৭তম। গ্লোবাল ফুড সিকিউরিটি ইনডেক্সের পরিসংখ্যান আরো বলছে, বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষের খাদ্য তালিকায় মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট অর্থাৎ ভিটামিন এ, আয়রন এবং জিংকের অভাবের কারণে পুষ্টির নিরাপত্তা বিঘিœত হচ্ছে। তাছাড়া অধিকাংশ গ্রামের সাধারণ মানুষের খাদ্য তালিকায় প্রোটিনের অভাব পরিলক্ষিত হয়। (Source- https://foodscurityindex.eiu.com)
আবার গ্লোবাল হাঙ্গার ইনডেক্স (GHI) চারটি কম্পোনেন্টের ওপর ভিত্তি করে ক্ষুধার অবস্থা নির্ণয় করে থাকে সেগুলো হচ্ছে, ১। Undernourishment (অপর্যাপ্ত ক্যালোরি গ্রহণ), ২। চাইল্ড ওয়েস্টিং (অর্থাৎ ৫ বছরের শিশুদের বয়সের তুলনায় কম ওজন), অর্থাৎ একিউট আন্ডার নিউট্রেশন ৩। চাইল্ড স্টানটিং (অর্থাৎ পাঁচ বছরের শিশুদের বয়সের তুলনায় উচ্চতা কম) অর্থাৎ ক্রনিক আন্ডার নিউট্রিশন ৪। চাইল্ড মর্টালিটি (৫ বছরের নিচের শিশুদের মৃত্যুর হার)
গ্লোবাল হাঙ্গার ইনডেক্স (GHI) এ ৪টি পর্যায়ের মধ্যে ০-৯ দশমিক ৯ হলো low hunger, ১০ দশমিক ০-১৯ দশমিক ৯ হলো moderate hunger, ২০ দশমিক ০-৩৪ দশমিক ৯ হলো serious hunger এবং ৩৫ দশমিক ০-৪৯ দশমিক ৯ হলো extremely alarming। ২০২০ সালে বাংলাদেশ ২০ দশমিক ৪ পয়েন্ট পেয়ে সিরিয়াস হাঙ্গারের নিম্নপর্যায়ে রয়েছে যা ক্রমেই মডারেটের দিকে যাচ্ছে। উল্লেখ্য, ২০১২ সালে পয়েন্ট ছিল ২৭ দশমিক ৮ অর্থাৎ ক্রমেই ভালোর দিকে যাচ্ছে। অন্যদিকে ভারত এবং পাকিস্তান আমাদের থেকে পিছিয়ে রয়েছে তাদের অবস্থান হচ্ছে ২৭ দশমিক ২ ও ২৪ দশমিক ৬। (Source- www.globalhungerindex.org)
তাই সার্বিকভাবে দেখা যায়, বাংলাদেশ খাদ্য উৎপাদনে উদ্বৃত্ত হলেও পুষ্টি নিরাপত্তার দিক থেকে পিছিয়ে আছে। অথচ, বাস্তবে আমরা দেখছি পুষ্টি সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণের জন্য খাদ্যের এ সব উপাদান বহনকারী মাছ, মাংস, ডিম, ফল, সবজি উৎপাদনে বাংলাদেশ অনেকদূর এগিয়ে স্বয়ংসম্পূর্ণ অবস্থায় চলে এসেছে। অর্থাৎ সুষম খাদ্যের ছয়টি প্রধান উপাদান কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন, ফ্যাট, ভিটামিন, খনিজ লবণ এবং পানির কোনোটিরই তেমন অভাব দেখছি না। তাই স্বীকার করতেই হবে সুষম খাদ্য গ্রহণের ক্ষেত্রে আমাদের জানার অভাব রয়েছে এবং খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তনে অনীহা আছে। আমরা যখন খাদ্য গ্রহণ করি তখন পুষ্টিকর কি না, তা চিন্তা না করে মুখোরোচক হলো কি না, তাতে বেশি গুরুত্ব দেই। এজন্য দেখা যাচ্ছে হাতের কাছে অনেক পুষ্টিকর খাবার থাকার পরেও আমাদের সচেতনতার অভাবে তা গ্রহণ করি না। এছাড়া আমাদের রন্ধনপ্রণালির মধ্যেও পুষ্টিমান বজায় রাখার ক্ষেত্রে ত্রুটি পরিলক্ষিত হয়।
আশার কথা সম্প্রতি বাংলাদেশ পুষ্টি পরিস্থিতির ক্ষেত্রে অগ্রগতির দিকে ধাবিত হচ্ছে, যেমন-
এছাড়াও বাংলাদেশ সরকার সম্প্রতি জাতীয় খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা নীতি ২০২০ প্রণয়ন করেছে।
সরকার এবং বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি যৌথভাবে স্কুল ফিডিং কর্মসূচি চালু করে যা বর্তমানে দেশের ১০৪টি উপজেলায় সম্প্রসারিত হয়েছে। এ কর্মসূচির আওতায় ৩২ দশমিক ৩৮ লাখ প্রাক-প্রাথমিক ও প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের বিশেষভাবে প্রস্তুতকৃত উচ্চ প্রোটিনসমৃদ্ধ বিস্কুট সরবরাহ করা হচ্ছে। জাতীয় স্কুল মিল্ক নীতিমালা ২০১৯ প্রণয়ন করা হয়েছে যার মাধ্যমে প্রাক-প্রাথমিক ও প্রাথমিক বিদ্যালয় গমন উপযোগী শিশুদের পুষ্টির মান উন্নয়নে অবদান রাখবে আশা করা যায়। নিঃসন্দেহে এগুলো সাম্প্রতিককালে খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা অর্জনে বাস্তব পদক্ষেপ এবং সফলতার পরিচয় বহন করে।
তবে এখানে আÍতুষ্টির কিছু নেই। পুষ্টি এবং খাদ্য নিরাপত্তা নিয়ে গ্লোবাল ফুড সিকিউরিটি ইনডেক্স (GFSI) এবং গ্লোবাল হাঙ্গার ইনডেক্সে (GHI) বাংলাদেশের অবস্থান ইতিপূর্বে যা তুলে ধরেছি তাতে আমাদের এই অবস্থান থেকে উত্তরণের জন্য আরো অনেকদূর এগিয়ে যেতে হবে।
সার্বিকভাবে এ অবস্থা মোকাবিলা করার জন্য নিম্নরূপ ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে:
১। বাংলাদেশের ডায়েটে প্রোটিনের স্বল্পতা অত্যন্ত দৃশ্যমান। বিশেষ করে নিম্নআয়ের জনগোষ্ঠীর খাদ্য তালিকায় প্রোটিনের অভাব পরিলক্ষিত হয়। তাই তাদের প্রোটিন সরবরাহের জন্য মাছ-মাংসের পাশাপাশি মাশরুম, বিভিন্ন ধরনের ডাল, বাদাম ইত্যাদি খাবার হিসেবে গ্রহণের জন্য উৎসাহিত করা প্রয়োজন। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট বিভাগের সম্প্রসারণ কর্মীগণ প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করতে পারেন।
২। অনেক প্রতিষ্ঠান পুষ্টিহীনতা নিয়ে কাজ করছে, তবে পুষ্টি কার্যক্রমে অবদান রাখার জন্য ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানকেও এগিয়ে আসা উচিত। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়, ফর্টিফাইড রাইস যেখানে মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট রয়েছে তা সাধারণ মানুষের কাছে এখনো ততটা জনপ্রিয় হয়ে উঠেনি। তাই ফর্টিফাইড রাইস বাজারজাতকরণের ক্ষেত্রে ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান এগিয়ে আসতে পারে।
৩। খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তাহীনতা থেকে দরিদ্র মানুষকে রক্ষা করার জন্য সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিতে চাল ছাড়াও অন্যান্য পুষ্টিকর খাবার অন্তর্ভুক্ত করার উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে।
৪। মাইক্রোনিউট্রিয়েন্টের ঘাটতি কমানোর জন্য শাকসবজি একটা অনন্য ভ‚মিকা পালন করে থাকে। জমির যেহেতু স্বল্পতা রয়েছে তাই ভার্টিক্যাল ফার্মিংয়ের দিকে নজর দিতে হবে। যাতে বসতবাড়িসহ নিজস্ব জমির সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত হয়।
৫। পুষ্টিযুক্ত শিশুখাদ্য গ্রহণের ব্যাপারে প্রত্যেকটি পরিবারকে সচেতন করার পাশাপাশি বিশুদ্ধ পানি ও পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।
৬। উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি, কৃষি বহুমুখীকরণ, টেকসইভাবে কৃষি নিবিড়তা বৃদ্ধিকরণ এবং পুষ্টি কার্যক্রমসমূহের প্রকল্পে উন্নত ও জলবায়ু উপযোগী প্রযুক্তির বিকাশ ঘটিয়ে মাঠ পর্যায়ের সম্প্রসারণ ও অভিযোজন করা প্রয়োজন।
৭। পুষ্টি সংবেদনশীল খাদ্য ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠায় বেসরকারি খাতকে সহযোগিতা করার জন্যে দুর্বল বিপণন অবকাঠামো ও ব্যবস্থাপনাকে সংস্কার করা অতি জর“রি।
৮। নিরাপদ খাদ্য সরবরাহের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে নিরাপদ খাদ্য আইন ব্যবস্থা বাস্তবায়নের মাধ্যমে খাদ্যে ভেজাল নিয়ন্ত্রণ অভিযোগ প্রতিকারের বিষয়টি অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে সমাধান করা।
৯। সর্বোপরি নিরাপদ ও গুণাগুণসম্পন্ন খাদ্যের ব্যাপক প্রচারের জন্য সরকারের পাশাপাশি অন্যান্য সামাজিক প্রতিষ্ঠানকে আরো এগিয়ে আসতে হবে।
খাদ্য উৎপাদনে দেশের ব্যাপক সফলতা সত্ত্বেও প্রায় ১৭ কোটি মানুষের খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে গিয়ে বাংলাদেশ কিছু চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে পারে। উপরন্তু ২০৩০ সালের মধ্যে জনসংখ্যা ১৮ কোটি ছাড়িয়ে যাবার সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়াও ভবিষ্যতের জলবায়ু পরিবর্তনজনিত অভিঘাতসহ কিছু নেতিবাচক প্রবণতা, ক্ষুধার অবসান, খাদ্য নিরাপত্তা ও উন্নত পুষ্টিমান অর্জন এবং টেকসই কৃষি প্রসারে বর্তমানে চ্যালেঞ্জগুলোকে আরো বাড়িয়ে তুলতে পারে এমন আশঙ্কা আছে। তাই সরকারের সংশিষ্ট মন্ত্রণালয়, উন্নয়ন সহযোগী ও সব অংশীজনের সমন্বয়, সহযোগিতা ও অংশীদারিত্বের মাধ্যমে নিরাপদ খাদ্য উৎপাদন ও পুষ্টি চাহিদা প্রচেষ্টায় সংশিষ্ট সবাইকে আরো জোরদার প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে।
খাদ্য উৎপাদন ও পুষ্টির ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনার বিচক্ষণ নেতৃত্বে বাংলাদেশের সাম্প্রতিক যে অগ্রগতি হয়েছে তা এসডিজির লক্ষ্যমাত্রা এবং ভিশন ২০৪১-এর অভীষ্ট অর্জনে সহায়ক হবে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকীতে এ প্রত্যাশা রইল।
লেখক : সভাপতি, বাংলাদেশ কৃষি অর্থনীতিবিদ সমিতি ও সাবেক সিনিয়র সচিব, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়।
সৌজন্যেঃ দৈনিক ইত্তেফাক