হাসুপা এর ছোট রাসেল সোনা

2513

Published on অক্টোবর 14, 2020
  • Details Image

তাজিন মাবুদ ইমনঃ

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কনিষ্ঠ পুত্র এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার আদরের ছোট ভাই শেখ রাসেল। ১৯৬৪ সালের ১৮ অক্টোবর ধানমন্ডিস্থ বঙ্গবন্ধু ভবনে তিনি জন্মগ্রহণ করেন।শেখ রাসেল মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কে হাসুপা ডাকত আদর করে। শেখ রাসেল ইউনিভার্সিটি ল্যাবরেটরি স্কুলের ছাত্র ছিল।

রাসেল নামকরণের সাথেও একটি ইতিহাস আছে। বঙ্গবন্ধু মুজিবের বই পড়ার প্রতি প্রচন্ড নেশা ছিল। লেখক দার্শনিক বার্ট্রান্ড রাসেলের বই তিনি প্রচুর পড়তেন এবং তর্জমা করে বেগম মুজিবকে শুনাতেন। বাবা মুজিব হয়তো সন্তানের মুখ দেখে অনুমান করেছিলেন- আমার এই সন্তান একদিন আপন প্রতিভায় দীপ্ত হয়ে উঠবে। হবে কোনো লেখক, দার্শনিক কিংবা বিশ্ব শান্তির নতুন কোনো কান্ডারী। শহীদ রাসেলের স্বল্প জীবন বিশ্লেষণ করলে আমরা সেটাই দেখতে পাই।

সে ছিল প্রচন্ড সাহসী, মানবিক ও রাজনৈতিক বোধ সম্পন্ন।রাজনৈতিক সচেতনতার কথাও আমরা জানতে পারি, ছোট্ট রাসেল একদিন মাকে জিজ্ঞেস করে মা আব্বার কাছে যাবে না? মা কোনো উত্তর দেয় না। দিবে কি করে তখন যে ছয় মাস ক্যান্টনমেন্টে আটকে রাখা হয়েছিল। কেউ কোনো খবরই জানতো না কোথায় আছে। ছেলেকে শুধু বুকে টেনে নিয়ে আদর করলো মা। রাসেল আবার জিজ্ঞাসা করলো মা আব্বার নাকি ফাঁসি হবে? মা ফাঁসি কি? মা বললেন তোমাকে একথা কে বলেছে। রাসেল উত্তর দেয় সেদিন কাকা, দুলাভাই আর কামাল ভাই বলেছিল আমি শুনেছি মা। এমনই রাজনৈতিক সচেতন ছিল রাসেল। বাবার সঙ্গে দেখা করতে গেলে জয় বাংলা স্লোগান দিত। এমনকি হরতালের দিনে বাসার সামনের লনে দাঁড়িয়ে হরতাল হরতাল বলে স্লোগান দিত।

রাসেল পিতার সান্নিধ্য বেশি না পেলেও যখন পেতো তখনই বঙ্গবন্ধুকে সবসময় অনুকরণ ও অনুসরণ করতো। জামা-জুতা হাঁটার স্টাইলসহ সব কিছুই অনুকরণ করতো। বঙ্গবন্ধুর প্রিয় পোশাক ছিল লুঙ্গি ও গেঞ্জি। সেজন্য রাসেলেরও ছোট লুঙ্গি ছিল। বঙ্গবন্ধুর চশমাটাও মাঝে মাঝে নিজের চোখে নিয়ে মজা করতো।মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা বলেন,বঙ্গবন্ধু দরিদ্র মানুষের সঙ্গে নিজের খাবার ভাগ করে খেতেন। তিনি সব সময় তা করতেন। ঠিক সেই গুণটি রাসেলের মধ্যেও ছিল। গ্রামে গেলে দরিদ্র শিশুদের যে কিছু দিতে হবে তা সে চিন্তা করতো। রাসেলের খুব শখ ছিল বড় হয়ে সে আর্মি অফিসার হবে। সে কাঠের বন্দুক বানাতো। সেটা নিয়ে খেলা করতো। শিশুদের প্রতি তার দরদ ছিলো। শিশুদেরকে সে কিছু না কিছু দিতো। বেঁচে থাকলে দেশের জন্য অনেক কিছু করতে পারতো রাসেল। কিন্তু ঘাতকরা একজন ছোট্ট শিশুকেও বাঁচতে দেয়নি।

১৯৭৫ সালে ১৫ আগস্ট শুধু বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেনি, বিশ্ব ইতিহাসের সবচেয়ে বর্বর ও নির্মমভাবে সপরিবারে শিশু রাসেলকেও হত্যা করেছে। বঙ্গবন্ধুসহ পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের বুলেটের আঘাতে একবারই হত্যা করেছে। কিন্তু শিশু রাসেলকে বুলেটের আঘাতে হত্যার করার আগেই কয়েকবার হত্যা করেছে। এগারো বছরের শিশু রাসেল আতঙ্কিত হয়ে কেঁদে কেঁদে বলেছিলেন, ‘আমি মায়ের কাছে যাবো’। পরবর্তী সময়ে মায়ের লাশ দেখার পর অশ্রুসিক্ত কণ্ঠে মিনতি করেছিলেন ‘আমাকে হাসু আপার (শেখ হাসিনা) কাছে পাঠিয়ে দিন’ বলে। পৃথিবীতে যুগে যুগে রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড ঘটেছে কিন্তু এমন নির্মম, নিষ্ঠুর এবং পৈশাচিক হত্যাকান্ড আর কোথাও ঘটেনি। মা, বাবা, দুই ভাই, ভাইয়ের স্ত্রী, চাচার লাশের পাশ দিয়ে হাঁটিয়ে নিতে নিতে শিশু রাসেলকে প্রতিটি লাশের সামনে মানসিকভাবেও খুন করেছে। একান্ত আপনজনের রক্তমাখা নীরব, নিথর দেহগুলোর পাশে নিয়ে গিয়ে শিশু রাসেলকে আতঙ্কিত করে তুলেছিল, জঘন্য কর্মকাণ্ডের দৃশ্যগুলো দেখিয়ে তাকে ভিতর থেকেও হত্যা করে সর্বশেষে বুলেটের নির্মম আঘাতে রাসেলের দেহ থেকে অবশিষ্ট প্রাণ ভোমরাটিকেও হত্যা করে খুনিরা।

লেখকঃ শিক্ষার্থী, প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়

Live TV

আপনার জন্য প্রস্তাবিত