1472
Published on আগস্ট 7, 2020মহসীন হাবিবঃ
কাউকে গভীরভাবে স্মরণ করা তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর সর্বোত্তম পথ এবং তাঁকে নির্লিপ্ত দৃষ্টিতে বিচার করাই সুবিবেচনাপ্রসূত কাজ। তাই আজ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জ্যেষ্ঠপুত্র শেখ কামালউদ্দিনের জন্মদিনে তাঁকে এবং তাঁর জীবদ্দশায় রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট বিচারের তাগিদ বোধ করছি। একজন প্রেসিডেন্টের ছেলে হিসেবে, একজন যুবক হিসেবে কেমন ছিলেন শেখ কামাল? কেমন ছিল তাঁর রাজনৈতিক প্রজ্ঞা, সৃজনশীলতা, বিচার-বিবেচনা, সেটা আজকের প্রজন্মের জেনে রাখা খুবই প্রয়োজন। কীভাবে এই মানুষটিকে তাঁর বাবা-মাসহ পরিবারের প্রায় সব মানুষকে হত্যা করে সেটা জায়েজ করতে ডাহা মিথ্যা, বিকৃত মস্তিষ্কপ্রসূত গল্প ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল, সেটা আজ আরেকবার কষ্টিপাথরে যাচাই করা আমাদের কর্তব্য হয়ে দাঁড়িয়েছে।
জন্মের পর থেকে শেখ কামালের জীবন কখনও অন্য আর দশটি শিশু-কিশোরের মতো স্বাভাবিক, দুশ্চিন্তামুক্ত ছিল না। তিনি যখন জন্মগ্রহণ করেন, সেই সময়টায় পিতা শেখ মুজিব একবার জেলখানায় ঢুকছেন, আবার কয়েকদিনের জন্য বের হচ্ছেন, আবার জেলখানায় চলে যাচ্ছেন। ছেলের মুখটাও ভালো করে দেখার ফুরসত পাচ্ছেন না। শিশু কামাল যখন কথা বলতে শিখেছেন, তখন দেখতেন একজন লম্বা-চওড়া মানুষ মাঝেমধ্যে বাড়িতে আসেন। তিনি হাচু আপার বাবা। তাঁরও লোকটার কোলে উঠতে ভীষণ ইচ্ছে করে। হাচু আপার মতো আব্বা ডাকতে ইচ্ছে করে। একদিন বঙ্গবন্ধু জেল থেকে ফিরে এলে কামাল হাচু আপাকে বললেন, ‘হাচু আপা, আমি তোমার আব্বাকে আব্বা ডাকি?’ বঙ্গবন্ধু সহাস্যে কামালকে কোলে তুলে নিয়ে বলেছিলেন, ‘আমি তো তোমারও আব্বা।’ এসব কোনো মিথ নয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সরল ভাষায়, অকপটে লেখা অসমাপ্ত আত্মজীবনীতে দেওয়া স্মৃতিচারণ। শেখ কামাল শাহিন স্কুলের ছাত্র ছিলেন। শাহিন স্কুল সবসময়ই ভালো স্টুডেন্টদের স্কুল। ১৯৬৬ সালে বঙ্গবন্ধু ৬ দফা ঘোষণার পর উত্তাল হয়ে ওঠে পূর্ব পাকিস্তান। তখন শেখ কামাল ম্যাট্রিক পরীক্ষার্থী। পিতা জেলখানায় ঢুকছেন-বের হচ্ছেনÑএমন পরিস্থিতিতে কামাল ১৯৬৭ সালে কৃতিত্বের সঙ্গেই ম্যাট্রিক এবং ১৯৬৯ সালে ঢাকা কলেজ (ঢাকা কলেজও পড়াশোনার জন্য সুবিদিত ছিল) থেকে ইন্টারমিডিয়েট পাস করেন। ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজবিজ্ঞান বিভাগে।
গভীরভাবে বিশ্লেষণ করে দেখেছি, শেখ কামালের কোনো তুলনা আজও বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করেনি। তাঁর সম্পর্কে যত জেনেছি, বিস্মিত হয়েছি তত। বঙ্গবন্ধুর সন্তান সেটা তাঁর একমাত্র পরিচয় ছিল না। শেখ কামাল জন্মেছিলেন সহজাত প্রতিভা নিয়ে। তাঁর ধ্যানজ্ঞান ছিল রাজনীতি, খেলা, সংস্কৃতিচর্চা। সব মিলে কামাল ছিলেন এক মহানায়ক। তার বন্ধু তালিকা ছিল দীর্ঘ। কেউবা বয়সে বড়, কেউবা ছোটÑসবার সঙ্গে তিনি আন্তরিকতায় মিশতেন। এদের মধ্যে ছিলেন শাহান চৌধুরী (বিএনপি নেতা শমসের মবিন চৌধুরীর ছোট ভাই), কাজী আনোয়ারুল হক তারেক, রেজাউল, বরকত-ই-খোদা, আবুল ফজল মোহাম্মদ আবদুল হান্নান, মুনির হোসেন, রুহুল আমিন খোকা, র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী, কাজী ফিরোজ রশিদ, তওরীদ হোসেন, পিযুষ বন্দ্যোপাধ্যায়, ইকবাল মাহমুদ হাসান টুকু (বিএনপির সময়ের প্রতিমন্ত্রী), কাজী সালাউদ্দিন, কেএম মোজাম্মেল ওমর, মনজুর কাদের, মাশুরা হোসেন, রেজাইল করিম, শাহেদ রেজা, ডলি জহুরসহ অনেকে। এদের প্রায় সবাই শেখ কামাল সম্পর্কে যে স্মৃতিচারণ করেছেন, তা একই রকম। এদের কেউ বাংলাদেশে রাজনীতি বা ব্যবসা করেন, কেউ যুক্তরাষ্ট্রে থাকেন, কেউ লন্ডন; কেউ আওয়ামী লীগের সঙ্গে যুক্ত আবার কেউ আওয়ামীবিরোধী রাজনৈতিক দল বিএনপিতে চলে গেছেন। এরা সবাই তাঁর ঘনিষ্ঠ সান্নিধ্য পেয়েছেন। কিন্তু শেখ কামাল সম্পর্কে এদের কারও বক্তব্যে ফারাক নেই। আজও এদের কেউ শেখ কামালের চারিত্রিক ত্রæটির কথা বলতে পারেননি।
সদা হাস্যোজ্জ্বল কামাল ছিলেন ক্রিকেটার। ঢাকার ফার্স্ট ডিভিশনে খেলতেন। মূল খেলা ক্রিকেট হলেও তিনি ভীষণ ফুটবল পাগল ছিলেন। নিয়মিত ফুটবলও খেলতেন। তিনি বাস্কেটবল, ভলিবলও খেলতে পছন্দ করতেন। তাঁর হাতেই আবাহনী সমাজকল্যাণ সংস্থা গড়ে উঠেছিল আবাহনী ক্রীড়াচক্র হিসেবে। তিনি ধানমন্ডি ক্লাবের প্রথম প্রেসিডেন্ট ছিলেন। যেদিন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী এবং শেখ কামালের বড় বোন শেখ হাসিনা জার্মানি যাচ্ছিলেন, সেদিন কামালকে জিজ্ঞেস করেছিলেন জার্মানি থেকে তাঁর জন্য কী আনবেন? কামাল উত্তরে জানিয়েছিলেন, তার দলের জন্য অ্যাডিডাসের বুট-জুতা নিয়ে আসতে।
অন্যদিকে তিনি ছিলেন ছায়ানট সংগীত বিদ্যালয়ের কৃতী সেতারবাদক। তখনকার প্রাদেশিক শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক সপ্তাহ উপলক্ষে আয়োজিত প্রতিযোগিতায় ১৯৬৯ সালে তিনি দ্বিতীয় স্থান অর্জন করেছিলেন। কিন্তু নিজে সেতার বাজালেও গান পছন্দ করতেন ভীষণ। তাঁর প্রিয় একটি গান ছিল, ‘তুমি কি দেখেছ কভু, জীবনের পরাজয়।’ সেই সময় পপ সংগীতের একটি জোয়ার উঠেছিল। তিনি আযম খান, ফিরোজ শাহ, ফকির আলমগীর, ফেরদৌস ওয়াহিদকে সংগীতে প্রোমোট করেছেন। তাঁর সঙ্গে এদের সবার ব্যক্তিগত সম্পর্ক ছিল। কামাল স্পন্দন শিল্পীগোষ্ঠী গড়ে তুলেছিলেন। নাটকেও ছিল তাঁর ভীষণ আগ্রহ। প্রায়ই নাটক মঞ্চায়নের আয়োজন করতেন। ডলি জহুর তার সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘কামাল ভাই প্রায়ই রিহার্সেলের পর আমাকে বাসায় পৌঁছে দিতেন। কখনও তাঁর পকেটে পয়সা থাকত, কখনও থাকত না। যেদিন পয়সা থাকত সেদিন রিকশায় আর যেদিন পয়সা না থাকত সেদিন হেঁটে বাসায় পৌঁছে দিতেন। প্রেসিডেন্টের ছেলের পকেটে পয়সা না থাকা নিয়ে প্রায়ই অনেক বন্ধু-স্বজন তাঁর সঙ্গে তামাশা-টিপ্পনী করত। আমি ছাড়াও আরও মেয়ে ছিল। কামাল ভাই কোনোদিন আমাদের কারও দিকে একটু অন্যদৃষ্টিতে তাকাননি। তিনি সুলতানা আহমেদ খুকীকে পছন্দ করতেন। কিন্তু সে কথা মুখে বলতে পারতেন না লজ্জায়। আমাকে বলেছেন, তুই একটু ওকে বল না! আমি বলেছি, আপনি বলেন। এরপর লাজুক কামাল ভাইয়ের দুই বছর সময় লেগেছে তাঁর পছন্দের কথা সুলতানা আপাকে জানাতে। সুলতানা আপা বলেছেন, প্রেম-টেম করতে পারবেন না। বাড়িতে প্রস্তাব দিতে। অবশেষে বঙ্গবন্ধুর উদ্যোগে পারিবারিকভাবেই সেই বিয়ে হয়েছিল।’
যেদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গোলাগুলি হয়, সেদিন ক্যাপ্টেন আলমগীর ছাত্তার যাচ্ছিলেন নিজের বাসার দিকে। রাস্তায় শেখ কামালের সঙ্গে তার দেখা হয়। কামাল গাড়ি থেকে নামেন এবং আলমগীর ছাত্তার তার রিকশাটি ছেড়ে দেন। দুজন একটি দোকানে ঢোকেন। তখনই গোলাগুলির শব্দ পাওয়া যায়। কীসের শব্দ? দু’জনে অনুমান করেন গোলাগুলি হচ্ছে। কিছুক্ষণ পর কামাল আলমগীর ছাত্তারের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বাসায় চলে যান। আলমগীর ছাত্তারও বাসায় চলে যান। এর কিছুক্ষণ পর ছাত্তারের বাসায় একজন কনিষ্ঠ আত্মীয় এসে বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গোলাগুলি হচ্ছে, একপক্ষের নেতৃত্ব দিচ্ছেন শেখ কামাল। আলমগীর ছাত্তার তাকে ধমক দিয়ে বলেন, গোলাগুলির সময় শেখ কামাল আমার সঙ্গে ছিল। তুমি এমন ডাহা মিথ্যা কোথায় পেলে? তার স্ত্রী তাকে বলেন, এমন ডাহা মিথ্যা কথা বললে তুমি আর বাসায় আসবে না। এ বিবৃতি একাধিকবার দিয়েছেন আলমগীর ছাত্তার। তিনি এখনও সুস্থ-সবল আছেন। তখন যা কিছু ঘটত, জাসদ এবং আওয়ামী বিরোধীরা প্রথমেই শেখ কামালের নাম উচ্চারণ করতে অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছিল। মগবাজারে এক দোকানে খুদার শিঙ্গাড়া খাওয়ানোর আবদার জানিয়েছিলেন শেখ কামাল এক সিনিয়র ভাইয়ের কাছে। তাঁরা একটি দোকানে, দোকানদার শেখ কামালকে দেখে কোনোক্রমেই পয়সা নিতে চাননি। কামাল বলেছিলেন, পয়সা না নিলে শিঙ্গাড়া খাব না। তারপরও দোকানদার কোনোক্রমেই পয়সা নেননি। সেই কাহিনী ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল, ‘শেখ কামাল দোকান থেকে জোর করে খেয়ে গেছেন।’ এমনই ছিল শেখ কামালের দুর্ভাগ্য! এমন অনেক আজগুবি কাহিনী পরিকল্পিতভাবে সহজ-সরল মানুষের কানে পৌঁছে দেওয়া হয়েছিল, যার রেষ আজও ব্যাপকভাবে আছে। শেখ কামাল যখন যুবক, তখন সিগারেট টানা ছিল একটি ফ্যাশন। কিন্তু কেউ কখনও দেখেনি শেখ কামাল একটি সিগারেট টেনেছেন। এই অমায়িক মানুষটি সব মতের মানুষের সঙ্গে মিশতেন। তাঁর বিরোধী ছাত্র সংগঠনেও একাধিক বন্ধু ছিল। অথচ এই মানুষটি সম্পর্কে কত ফিকশন রচনা করা হয়েছে উদ্দেশ্যমূলকভাবে তা চোখ বুজে ভাবলে শিউরে উঠতে হয়।
এমনই চলেছে মিথ্যাচার শেখ কামাল এবং তাঁর পরিবার সম্পর্কে। এর পেছনে ছিল যুক্তরাষ্ট্র ও পাকিস্তান এবং পেছন থেকে তাদেরই মদদ দেওয়া রাজনৈতিক দলগুলো। তখন বাংলাদেশে প্রধান বিরোধী দল ছিল জাসদ। সেই জাসদ ছিল এক বীভৎস জাসদ। কিছু তরুণ মুক্তিযোদ্ধা ছাত্রলীগ থেকে বের হয়ে জাসদ গঠন করার সঙ্গে সঙ্গে স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি গিয়ে জাসদের পেছনে দাঁড়ায়। দেখতে না দেখতে জাসদ একটি বড় দলে পরিণত হওয়ার একটাই কারণÑএটি একটি এন্টি-আওয়ামী লীগ প্লাটফর্মে পরিণত হয়েছিল।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট শেখ কামাল পরিবারসহ নিহত হওয়ার বছরে যার জন্ম, সেই মানুষটির বয়স এখন ৪৩ বছর। তারা শিশুকাল থেকেই হয়তো শুনতে শুনতে বড় হয়েছে যে, শেখ কামাল ব্যাংক ডাকাতি করতে গিয়েছেন (নাউজুবিল্লাহ)। সেদিনের সে ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী এবং শেখ কামালের সঙ্গীরা প্রায় সবাই বেঁচে আছেন। চিনুর বিরিয়ানি খেতে যাওয়ার পথে একটি ভুল বোঝাবুঝির মধ্যে পুলিশ গুলি চালিয়েছিল। এসপি মাহবুব বীরপ্রতীকসহ কামালের বন্ধুরা তার সাক্ষী, ছিলেন পরবর্তী সময়ে বিএনপির প্রতিমন্ত্রী ইকবাল মাহমুদ টুকুও। পরদিন জাসদের পত্রিকা গণশক্তিতে আ স ম আবদুর রব (যিনি এইচএম এরশাদের ¯ৈ^রাচারী সরকারের গৃহপালিত বিরোধী দলের নেতা হয়েছিলেন) প্রথম ছড়িয়ে দিয়েছিলেন যে, ব্যাংক ডাকাতি করতে গিয়ে শেখ কামাল গুলি খেয়েছেন। যে মানুষটির সারাদিন কাটত খেলাধুলা, সংগীত, নাটক ও সংগঠন নিয়ে, যিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মতো একজন পিতার সন্তান, তাঁর ব্যাংক ডাকাতির গল্প নিরেট দেলোয়ার হোসেন সাঈদীকে চাঁদে দেখা যাওয়ার মতো গল্প ছাড়া আর কিছুই নয়। কোন দুঃখে কামাল ডাকাতি করবেন? টাকা চাইলে তাঁর টাকার অভাব ছিল? বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর ডালিমের স্ত্রীকে অপহরণ চেষ্টার এক বানোয়াট গল্প তৈরি করা হয় এই ভয়ে যে, বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদে মানুষ ক্ষোভে ফেটে পড়তে পারে। অথচ এমন কোনো ঘটনার কথা খোদ ডালিমের কোনো বিবৃতিতেও নেই। একটি বিয়ের অনুষ্ঠানে গাজী গোলাম মুস্তফার ছেলের সঙ্গে ডালিমের পরিবারের যে অনাকাক্সিখত ঘটনা ঘটেছিল তার কোনো কিছুর সঙ্গে শেখ কামালের সংশ্লিষ্টতা ছিল না। সে ঘটনার পূর্ণ ব্যাখ্যা সব পক্ষ থেকেই আছে। বরং ডালিমের সঙ্গে শেখ কামালের একটি সুসম্পর্ক ছিল। কিন্তু পানি ঘোলা করা যাদের উদ্দেশ্য, তারা নীতিনৈতিকতা দেখবে কেন? সেই ধারাবাহিকতায় আওয়ামী লীগ এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পরিবারকে খাটো করতে বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া একাধিকবার কামালের ডাকাতির গল্প বলেছেন ন্যূনতম দায়িত্ববোধ না রেখে। যদি সত্যিই ডাকাতি করতে গিয়েছিল বলে তিনি বিশ্বাস করে থাকেন, তাহলে সেই দলের টুকুকে কেন তিনি মন্ত্রী বানালেন? যুক্তরাষ্ট্র ছিল এই পালে হাওয়া দিত। কারণ প্রথম তারা বাংলদেশের স্বাধীনতা ঠেকাতে চেয়েছিল। সেটা না পেরে বঙ্গবন্ধু সমাজতন্ত্রের দিকে যাচ্ছে বলে সর্বদা তাদের সন্দেহ ছিল। বঙ্গবন্ধু যখন ১৯৭৫ সালের জানুয়ারি মাসে ভ‚মি সংস্কার আইন করেন, তখন যুক্তরাষ্ট্র আরও বেশি বিশ্বাস করতে শুরু করে যে, বঙ্গবন্ধু সমাজতন্ত্রের দিকে আগাচ্ছেন। তাই মরিয়া হয়ে উঠেছিল তারা বঙ্গবন্ধুকে নিশ্চিহ্ন করতে। প্রপাগান্ডাসহ যত রকম সহায়তা দরকার, তা যুক্তরাষ্ট্র পেছন থেকে করেছে। তখন ইসলামিস্টরা তাদের শত্রু ছিল না। ছিল বন্ধু। তাদের তখন সব মাথাব্যথা ছিল সমাজতন্ত্র নিয়ে। সে ইতিহাস দীর্ঘ।
কামালের প্রিয় গানটির অন্তরায় আছে ‘প্রতিদিন কত খবর আসে যে কাগজের পাতা ভরে, জীবনপাতার অনেক খবর রয়ে যায় অগোচরে।’ সত্যিই বাংলাদেশে অসংখ্য পত্রিকা প্রতিদিন প্রকাশিত হচ্ছে। কত খবর প্রকাশিত হচ্ছে। কিন্তু শেখ কামালের জীবনের নানা দিক আমাদের অগোচরেই থেকে যাচ্ছে। তাই ইতিহাসের স্বার্থেই আমাদের বারবার তাঁকে তুলে ধরা প্রয়োজন, মানুষের সত্য জানা প্রয়োজন। একটি জাতি তার নেতাদের সম্পর্কে ভুল তথ্য জানলে তা জাতির জন্য অভিশাপ বয়ে আনে বৈকি।