আওয়ামী লীগের রক্ষণাত্মক প্রচার নীতি বদলে দিয়েছেন জয়

4701

Published on জুলাই 28, 2020
  • Details Image

তৈমুর ফারুক তুষারঃ

আওয়ামী লীগ এদেশের স্বাধীনতায় নেতৃত্বদানের গর্বিত ঐতিহ্যের অধিকারী রাজনৈতিক দল। দলটি নানা ঐতিহাসিক বাঁকে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে। দীর্ঘ বছর ধরে দলটির রক্ষণাত্মক প্রচার নীতি চোখে পড়ত। দলটিকে তাদের বিরুদ্ধে নানা অপপ্রচার, অভিযোগের জবাব দেয়া নিয়েই ব্যস্ত থাকতে দেখা যেত। কিন্তু গত এক যুগে ধীরে ধীরে এই নীতি বদলে ফেলেছেন বঙ্গবন্ধুর দৌহিত্র সজীব ওয়াজেদ জয়। তিনি আওয়ামী লীগকে তথ্য ও প্রযুক্তিতে সমৃদ্ধ একটি দলে পরিণত করার কৌশল নেন। ডিজিটাল বাংলাদেশের নতুন বাস্তবতায় আওয়ামী লীগকে নতুনভাবে প্রস্তুত করতে উদ্যোগী হন। তিনি আওয়ামী লীগ বিরোধী প্রপাগান্ডার জবাব শুধু নয়, পাল্টা প্রচারের কৌশল নেন। দলের নেতাকর্মীদের সচেতন ও প্রশিক্ষিত করার কাজ শুরু করেন। বর্তমানে অন্য যেকোনো রাজনৈতিক দলের তুলনায় প্রচার শক্তিতে যে আওয়ামী লীগ এগিয়ে তার পেছনের মূল মানুষটিই হলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একমাত্র পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়।

বঙ্গবন্ধুর মতো প্রভাবশালী নেতাকেও সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশে বাসন্তির জাল পরিহিত ছবির প্রপাগান্ডাকে সামাল দিতে হিমশিম খেতে হয়েছে। ২০০৯ থেকে ২০১৪ মেয়াদে শেখ হাসিনার সরকারকেও নানা অপপ্রচার ও গুজব নাস্তানাবুদ করেছে। কিন্তু ২০২০ সালের আওয়ামী লীগ যেন অন্য এক আওয়ামী লীগ। সরকার ও দল বিরোধী যে কোনো অপপ্রচারকে তারা মুহুর্তেই উড়িয়ে দিচ্ছে। ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে তাদের আধিপত্য দৃশ্যমান। 

প্রচারে আওয়ামী লীগের এ আধিপত্য একদিনে আসেনি। দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে নানা মিথ্যা, অতিরঞ্জিত প্রচারণা কিভাবে মোকাবিলা করা যায় সেদিকে গুরুত্ব দেন জয়। তিনি তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করে কৌশল নির্ধারণ শুরু করেন। পেশাদার গবেষকদের পরামর্শ গ্রহণ করেন। এরপরই তিনি নিজের দলের নেতাকর্মীদের ডিজিটাল সক্ষমতা তৈরিতে মনোযোগী হন। সরকার ও দলের কর্মকাণ্ডের তথ্য প্রচার, সংরক্ষণ ও পুর্নব্যবহারের সহজ নেটওয়ার্ক তৈরির পরামর্শ দেন। দলের গুরুত্বপূর্ণ নেতা, মন্ত্রী, সংসদ সদস্যদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সক্রিয় হতে উদ্বুদ্ধ করেন। দলের দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেন। ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় প্রচারে এগিয়ে থাকতে নানা কৌশল নেন। সরকারের কর্মকাণ্ডের প্রচার ও সেবাপ্রাপ্তি সহজ করতে ডিজিটালাইইজেশনের প্রতি গুরুত্ব দেন। তৈরি করেন সরকারী তথ্য বাতায়ন। 

প্রচার ও নীতি নির্ধারণের কৌশলে এগিয়ে থাকতে দল ও সরকারের কর্মকাণ্ডের মূল্যায়ন, তথ্য সংগ্রহ ও সংরক্ষণ এবং গবেষণার জন্য একটি পেশাদার প্রতিষ্ঠান তৈরির দিকে গুরুত্ব দেন জয়। যুক্তরাষ্ট্রের রিপাবলিকান দলের ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইনস্টিটিউট (আইআরআই), ডেমোক্র্যাটদের ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক ইনস্টিটিউট (এনডিআই) এর মতো প্রতিষ্ঠান থেকে উদ্বুদ্ধ হয়ে সজীব ওয়াজেদ জয় আওয়ামী লীগের জন্য এমন একটি প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন। এরপরই তিনি আওয়ামী লীগের সেন্টার ফর রিসার্চ এন্ড ইনফরমেশন (সিআরআই) কে নতুন আঙ্গিকে সাজাতে উদ্যোগী হন। সিআরআই হলো বাংলাদেশে প্রথম কোনো রাজনৈতিক দলের নীতি গবেষণা ও তথ্য সংরক্ষণ প্রতিষ্ঠান। সিআরআই এর মাধ্যমে সজীব ওয়াজেদ জয় এদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে একটি নতুন দিকের সূচনা করেন। তিনি সিআরআই এর লেটস টক নামের অনুষ্ঠানের মাধ্যমে নতুন প্রজন্মের সঙ্গে সরাসরি মতবিনিময় শুরু করেন। এই অনুষ্ঠানে দলমত নির্বিশেষে তরুন প্রজন্মের প্রতিনিধিরা অংশ নিয়ে সরাসরি রাজনৈতিক নেতাদের প্রশ্ন করতে পারেন। এর ফলে দলের নেতাকর্মীদের বাইরের মানুষদের আওয়ামী লীগ সম্পর্কে দৃষ্টিভঙ্গি জানা ও তাদের প্রভাবিত করার একটি সুযোগ তৈরি হয়েছে। তরুণ প্রজন্মের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ তৈরিতে জয় সুচিন্তা ফাউন্ডেশনকেও সক্রিয় করেন। সুচিন্তার মাধ্যমেও দলীয় নেতাকর্মীদের বাইরের মানুষদের সঙ্গে চিন্তার বিনিময় শুরু করেন। 

এদের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ১৯৭১ সালের ২৭ জুলাই জন্ম নেওয়া সজীব ওয়াজেদ জয় আজ পঞ্চাশে পা দিলেন। ১৯৭৫ সালে মাত্র ৪ বছর বয়সে মা শেখ হাসিনার সঙ্গে তাকেও নিজ দেশ ছেড়ে ভারতে আশ্রয় নিতে হয়েছিল। এরপর থেকে আজ অবধি আর দেশে স্থায়ীভাবে থাকা হয়নি তাঁর। জয় তার বন্ধুদের সঙ্গে আলাপচারিতায় প্রত্যক্ষ রাজনীতিতে সক্রিয় হওয়ার বিষয়ে বারবার বলে থাকেন, আমার কাছে দলের পদ বা প্রধানমন্ত্রী হওয়াটা মূখ্য নয়। দেশের মানুষের জন্য কাজ করাটাই বড় কথা। মানুষের প্রয়োজন হলে রাজনীতিতে সক্রিয় হব।

হয়তো সময়ের প্রয়োজন পড়লে সজীব ওয়াজেদ জয় রাজনীতিতে সক্রিয় হবেন। কিন্তু এর আগেই তিনি দেশ ও দলের যে পরিবর্তন আনতে পেরেছেন তা যেকোনো বিচারেই গুরুত্বপূর্ণ। তিনি একটি দরিদ্র দেশকে তথ্য-প্রযুক্তিনির্ভর করে গড়ে তোলার অসম্ভব স্বপ্নকে সফলতার সঙ্গে বাস্তবে রূপ দিয়েছেন। এখন সমৃদ্ধ ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে আউট সোর্সিং এর খাতকে তিনি দেশের সর্বোচ্চ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের খাতে পরিণত করতে কাজ করছেন। এ লক্ষ্যে তিনি পাঁচটি বিষয়কে প্রাধান্য দিচ্ছেন। প্রথম বিষয় হলো, সরকারকে ডিজিটাল করা। দ্বিতীয়, শিক্ষাব্যবস্থাকে আইসিটিভিত্তিক করা। তৃতীয়, দেশের অভ্যন্তরে একটি আইটি ইন্ডাস্ট্রি গড়ে তোলা। চতুর্থ, আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন। পঞ্চম, সাধারণ মানুষের জন্য সুবিধাজনক একটি আইসিটি পলিসি তৈরি করা। এগুলোর বাস্তবায়ন সম্ভব হলে দেশে তথ্য ও প্রযুক্তি খাতে একটি বিপ্লব আসবে এটি নিঃসন্দেহে বলা যায়। 

ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার কাজে দেশপ্রেমকে প্রাধান্য দিয়েছেন জয়। এ কাজে তিনি বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নের প্রস্তাব প্রত্যাখান করেছেন। তিনি বিশ্বব্যাংকের পরামর্শে নয়, এদেশের বাস্তবতায় এখানকার চাহিদা অনুসারে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে চেয়েছেন। তিনি বলেছেন, আমাদের ডিজিটাল বাংলাদেশ আমরা নিজেরাই গড়ব।

ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার মূল কারিগর জয় দলীয় রাজনীতিতে যুক্ত হওয়ার ক্ষেত্রেও মুন্সিয়ানার পরিচয় দিয়েছেন। মা শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও টানা ৩ বারের মতো প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন। কিন্তু জয় দলীয় রাজনীতিতে কোনো হস্তক্ষেপের চেষ্টা করেননি। বরং তিনি দলের বাইরের মানুষদের কিভাবে প্রভাবিত করা যায় সে চেষ্টা করে যাচ্ছেন। তিনি নানা অনুষ্ঠানের মাধ্যমে দলের বাইরের নানা বয়স ও শ্রেণি পেশার মানুষদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপনে উদ্যোগী হয়েছেন। তাদের মতামত শুনে দলীয় নীতি নির্ধারকদের নানা পরামর্শ দিয়েছেন। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে খ্যাতিমান গবেষকদের দিয়ে নানা গবেষণা পরিচালনা করে সেসব তথ্য, উপাত্ত দিয়ে দল ও সরকারকে সহযোগিতা করেছেন। আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা দল ও সরকার সামলাচ্ছেন। জয় এসবে জড়িত না হয়ে সম্পূর্ণ নতুন একটি দিকে সম্পৃক্ত থেকে মায়ের কাজে সহযোগিতা করছেন। এ কারনেই তিনি আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের সন্তান তারেক রহমানের চেয়ে এগিয়ে রয়েছেন। তারেক রহমান তার মা খালেদা জিয়া ক্ষমতায় থাকার সময়ে দলীয় পদ ও সরকারের নানা কাজে হস্তক্ষেপ করে যে অভ্যন্তরীণ কোন্দল সৃষ্টি করেছিলেন তা আওয়ামী লীগে ঘটেনি। 

এখন পর্যন্ত জয় দল এবং সরকারের নানা কর্মকান্ড সফলতার সঙ্গে এগিয়ে নিয়েছেন। ড. মোহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে গ্রামীণ ব্যাংক নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে জয়ের আর্থিক হিসেব নিকেষ খতিয়ে দেখা হয়েছিল। তখন জয় বলেছিলেন, ‘আই ডোন্ট কেয়ার। সৎ থাকলে সুবিধা আছে। কাউকে ভয় পেতে হয় না।’ আমরা আশা করি, জয় যে সৎ সাহস নিয়ে এমন উক্তি করেছিলেন তার সেই অবস্থান সর্বদা অক্ষুণ্ণ থাকবে। বঙ্গবন্ধুর দৌহিত্র হিসেবে তিনি সততার সঙ্গে মানুষের জন্য কাজ করে যাবেন।

সৌজন্যেঃ কালের কণ্ঠ

Live TV

আপনার জন্য প্রস্তাবিত