2691
Published on জুলাই 8, 2020করোনা সংকটের শুরু থেকেই বাংলাদেশ তরুণেরা এগিয়ে এসেছে সংকটে পর্যুদস্ত মানুষের সেবায়। হাত বাড়িয়ে দিয়েছে যার যার অবস্থান থেকে। সরকারের তরুণ সাংসদ, দলের তরুণ নেতা, এই সংকট থেকে উত্তরনের সংগ্রামে কেউ পিছিয়ে নেই। তরুণদের এই সামগ্রিক প্রচেষ্টা নিয়ে আলোচনা করতে আগামী ৭ জুলাই রাত ৮ঃ৩০ মিনিটে আয়োজন করা হয় বিয়ন্ড দ্যা প্যানডেমিকের ১০ম পর্ব।
মঙ্গলবারে অনুষ্ঠিত এই পর্বের বিষয় নির্ধারন করা হয়েছে ‘করোনাসংকট মোকাবেলায় তরুণদের ভুমিকা’। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের এই বিশেষ ওয়েবিনার প্রচারিত হয় দলের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ ও ইউটিউব চ্যানেলে।
প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী ব্যারিস্টার শাহ আলী ফরহাদের সঞ্চালনায় এবারের পর্বে আলোচক হিসেবে যুক্ত হন বাংলাদেশ সরকারের পানিসম্পদ উপমন্ত্রী একেএম এনামুল হক শামীম এমপি, বাগেরহাট-২ আসনের সাংসদ শেখ সারহান নাসের তন্ময় এমপি, চট্টগ্রামের নারী সাংসদ খাদিজাতুল আনোয়ার সনি এমপি, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের উপ-দপ্তর সম্পাদক সায়েম খান, বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয়, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের কোভিড বিশেষায়িত হাসপাতালের মেডিসিন ও ইনফেকশাস ডিজিজ বিশেষজ্ঞ ডাঃ ফরহাদ উদ্দিন হাছান চৌধুরী মারুফ, মিশন সেভ বাংলাদেশ এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা ও সাধারণ সম্পাদক ইমরান কাদির এবং চ্যানেল ২৪ এর রিপোর্টার সাংবাদিক জিনিয়া কবির সুচনা।
পানিসম্পদ উপমন্ত্রী এ কে এম এনামুল হক শামীম বলেন, যুগে যুগে সংকটকালে সবসময় তরুনরাই গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা পালন করেছে। ভাষা আন্দোলন, স্বাধীনতা সংগ্রাম থেকে বর্তমান করোনা সংকটকালে সহায় দুস্থ মানুষের পাশে সবার আগে গিয়ে দাড়িয়েছে আমাদের তরুণ সমাজ। আমার নির্বাচনী এলাকায় ডাক্তার যাবে বাড়ি এই স্লোগানকে সামনে রেখে যখনই কেউ অসুস্থ হয়েছে খবর পেলেই ডাক্তার তার বাড়িতে ছুটে যেতেন, প্রাথমিক চিকিৎসা সেবা দিতেন। আমার এলাকা নদী ভাঙ্গন প্রবণ এলাকা, নদী ভাঙনের স্বীকার সেই সব মানুষের পাশে আমি সবসময় দাড়িয়েছি। আমার এলাকায় অসহায়, দুস্থ মানুষকে করোনাকালীন সংকটে খাদ্য সামগ্রী পৌছে দিয়েছি। আমরা হাওরঅঞ্চলসহ দেশের বন্যাকবলিত সমস্ত এলাকায় কৃষকদের ধান কেটে ঘরে তুলে দিতে পেরেছি। আলোচনা কালে তিনি ৯৮ সালে বন্যা মোকাবেলায় তরুনদের ভূমিকা নিয়েও কথা বলেন তিনি।
তিনি আরো বলেন, প্রাকৃতিক ভাবে বাংলাদেশে বন্যাকবলিত দেশ। উত্তরাঞ্চলে বন্য পরিস্থিতি স্বাভাবিক হচ্ছে, ভাটি অঞ্চল দিয়ে পানি নেমে যেতে শুরু করেছে। করোনা সংকটের সময়ে আম্পানের হামলাও আমরা মোকাবেলা করেছি দৃঢ ভাবে। প্রতিটি নদী ভাঙ্গন এলাকায় বাঁধ নির্মানের জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। নদী ড্রেসিং করে নাব্যতা সংকট কমানোর চেষ্টাও অব্যহত রয়েছে। আগামি কয়েক বছরের মধ্যে নদী ভাঙ্গন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে নিয়ে আসতে পারবো বলেও তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
খাদিজাতুল আনোয়ার সনি এমপি বলেন, বাংলাদেশের জন্মলগ্নের আগ থেকেই তরুনরাই সকল সংগ্রাম আন্দোলন ও সংকটকালে তরুনরাই সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রেখেছেন। দেশের ক্রান্তিলগ্নে তরুনরাই সবার আগে এগিয়ে এসেছে, মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে। আমার এলাকা ফটিকছড়িতে সাধারন ছুটি ঘোষনা করার পর থেকেই তরুনদের সাথে সমন্বয় করে ডোর টু ডোর গিয়ে জনসচেতনতা তৈরির চেষ্টা করেছি। আমাদের পূর্নাঙ্গ চারটি আইসোলেশন সেন্টার চালু করেছি। আমাদের ২০ শয্যা বিশিষ্ট যে হাসপাল রয়েছে সেটিকে পূর্নাঙ্গ কোভিক হাসপাতাল প্রস্তুত করার কাজ চলছে। শুরুতে জনসচেতনতা তৈরি করতে হ্যান্ড স্যানিটাইজার দিয়েছি, মাস্ক দিয়েছি। দরিদ্র ও অসহায় মানুষের ঘরে ঘরে যুবক ও তরুন ভাইদের মাধ্যমে খাদ্য সামগ্রী পৌছে দিয়েছি। এসময় তিনি তরুনদের বাংলাদেশের শক্তি ও ভবিষৎ বলে উল্লেখ করেন।
তিনি আরো বলেন, নারীরা এখন সমঅধিকার পাচ্ছে, পুরুষের পাশাপাশি কাধে কাধ রেখে কাজ করে যাচ্ছে। তরুণ নারী ডাক্তার এবং পুলিশ যারা আছেন তারা ঘর সামলে নিজেদের কাজ করে যাচ্ছেন। অসহায় মানুষেকে সেবা দিচ্ছেন, দেশের নিরাপত্তায় কাজ করছেন। প্রতিটা ক্ষেত্রে নারির অধিকার নিশ্চিত করার জন্য জননেত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদও জানান তিনি।
উপ-দপ্তর সম্পাদক সায়েম খান বলেন, সামগ্রিক ভাবে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ তারুন্যের সংস্কৃতিকে ধারন করে। যদি দেখা যায় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটি থেকে শুরু করে ওয়ার্ড পর্যায়ের কমিটি পর্যন্ত সবজায়গাতে তারুন্যের অগ্রাধিকার দেয়া হচ্ছে। করোনা সংকট কালীন সময়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সমস্ত নেতা কর্মী মৃত্যুভয় অপেক্ষা করে অসহায় দুস্থ মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে। আমাদের দুর্যোগ মহামরি মোকাবেলার অভিজ্ঞতা ছিলো বলেই দুর্যোগ শুরুর পর থেকে দল ও সহযোগী সংগঠনের প্রতিটি নেতা কর্মী মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে। আওয়ামী লীগের পক্ষে দলীয় ও সহযোগী সংগঠনের নেতা কর্মীরা মিলে এপর্যন্ত ১ কোটি ২৫ লক্ষ পরিবারকে খাদ্য সহায়তা সহ অন্যান্য সহায়তা দিয়েছেন। সংকটকালে দলীয় সভাপতির দেয়া ৩১টি সুনিদৃষ্ট নির্দেশনা এবং তার নেয়া নানা পদক্ষেপের কথাও উল্লেখ করেন।
তিনি আরো বলেন, রাজনীতিতে আসা বা প্রবেশের ভিন্ন কোন উপায় নেই, আমরা প্রতিনিয়তই রাজনীতির মধ্যেই আছি। আমদের জীবন-যাপনের যে ধারা সেই ধারায় যদি আমরা আদর্শিক ভাবে চলি, মানবিক প্রেম, দেশপ্রম নিয়ে চলি তাহলেই রাজনীতির পথে আমাদের পথ চলা শুরু হবে। এই সময়ে তিনি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের রাজনীতি পথ চলা নিয়ে সংক্ষিপ্ত আলাপ করেন।
চ্যানেল ২৪ এর স্টাফ রিপোর্টার জিনিয়া কবির সূচনা বলেন, গণমাধ্যম কর্মিদের কাজ হচ্ছে সঠিক তথ্য তুলে ধরা। আমাদের চ্যলেঞ্জ ছিলো সঠিক তথ্য তুলে আনা। করোনা সংকট মোকাবিলার ত্রুটি কিংবা হাসপাতালের সমন্বয়হীনতা তুলে ধরার পর স্বাস্থ্যসেবায় আরো সুদুরপ্রসারি ভাল ফলাফল লক্ষ করা যায়। গণমাধ্যম কর্মীরা জীবন বাজি রেখে কাগ করছে এই মহামারীতে। চিকিৎসা নিয়ে স্বচ্ছতা হওয়া উচিত। এমনকি টেস্ট এর ক্ষেত্রে কিট এর ব্যবহারে সঠিক দিক নির্দেশনা দেওয়া উচিত।
মেডিসিন ও ইনফেকশাস ডিজিজ বিশেষজ্ঞ, কোভিড বিশেষায়িত হাসপাতাল ঢাকা মেডিকেল কলেজ এর ডাঃ ফরহাদ উদ্দিন হাছান চৌধুরী মারুফ বলেন, করোনা আমাদের দেশের চ্যালেঞ্জ না সারা বিশ্বের চ্যালেঞ্জ এটা। আমরা অনেক রাজনৈতিকদের কথা শুনেছি, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সরকার যেভাবে এই মহামারি মোকাবিলা করেছে তার প্রশংসা করছি৷ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইতিমধ্যে ২ হাজার চিকিৎসক, মেডিকেল ট্যাকলোজিস্ট নিয়োগ দিয়েছেন। তরুন আরো ২ হাজার ডাক্তার এবং ৪ হাজার নার্স নিয়োগ দিবে সরকার। স্বাস্থ্য বিজ্ঞানে ১ শ কোটি টাকা বরাদ্ধ আছে এবারের বাজেটে ও চিকিৎসকদের জন্য প্রনোদণা চালু করেছেন। তিনি বলেন, মহামারি রোধে মাস্ক পরিধান, সামাজিক দুরত্ব বজায় রাখা উচিত। স্বাস্থ্য বিভাগ শুধু চিকিৎসকরা চালায় না। এটা অনেকের উপর নির্ভরশীল। যারা সুরোক্ষা সামগ্রী নিয়ে দূর্নীতি করেছে তাদেরকে গ্রেফতার করে শাস্তির আওতাও আনা হয়েছে।
বাংলাদেশ ছাত্রলীগ এর সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় বলেন, 'করোনার এই মহাসংকটে আপনারা জানেন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ প্রথম দিন থেকে কেন্দ্র থেকে তৃণমূলের প্রত্যেকটা নেতাকর্মী কাজ করে যাচ্ছে। কিছুদিন আগে শিক্ষার্থীদের বাড়ি ভাড়া সংক্রান্ত বিষয়ে যে সমস্যার সম্মুখীন হয়েছিলো আমরা ছাত্রলীগের সেচ্ছাসেবক টিক গঠন করে আমরা বাড়ির মালিকদের বুঝিয়ে এই সমস্যার সমাধান করছি এবং করোনার শুরুতেই আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দেশরত্ন শেখ হাসিনার নির্দেশে অসহায় কৃষকদের ধান কেটে বাড়ি পৌঁছে দিয়েছি। করোনায় আক্রান্ত হয়ে কোনো ব্যক্তি মারা গেলে তখন কিন্তু ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা এক হয়ে তাদের কিন্তু জানাজা ও দাফন করছেন।
আমরা বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ধারণ দেশরত্ন শেখ হাসিনার ভ্যানগার্ড হয়ে কাজ করে যাচ্ছি। স্বাধীনতার পূর্ববর্তী সময় থেকে এখন পর্যন্ত দেশের প্রতিটি ক্রান্তিকালে কিন্তু বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কাজ করে যাচ্ছে। ছাত্রলীগ যে তারুণ্যনির্ভর সংগঠন তা কিন্তু এই করোনার সময়ে দেখিয়ে দিয়েছে।
আপনারা জানেন, আমরা 'হ্যালো ছাত্রলীগ' অ্যাপসের মাধ্যমে সারা দেশে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের সাথে সমন্বয় করে সম্পূর্ণ পরিচয় গোপণ রেখে খাবার পৌছে দিয়েছি। নেত্রী আমাদের প্রশংসা করেছেন একাধিকবার, সুতরাং ছাত্রলীগের যেই গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস আছে তা ধারণ করে আমরা কাজ করতে পারবো। এছাড়া শিক্ষার্থীদের যেকোনো যৌক্তিক আন্দোলনে আমরা বাংলাদেশ ছাত্রলীগ পাশে থাকবো।
মিশন সেভ বাংলাদেশ এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা ও সাধারণ সম্পাদক ইমরান কাদির বলেন, ২৬ তারিখ থেকে লকডাউন হয়, আমরা সিদ্ধান্ত নেই এই সংকটে কিছু করার। আমরা প্রথমে ৫ টি এলাকায় ২ হাজার রিকশা. চালকদের মাঝে খাবার দেই , ১ হাজার টাকা করে ১০ দিনের খাবার দেওয়া হয়। করোনায় কাজ করার আমরা দ্রুত সরকার থেকে পারমিশন পাই। এরপর আমরা সরকারকে সহায়তা করি বিভিন্ন ভাবে। আমরা প্রায় ২ কোটি টাকা ফান্ড রেইজ করেছি। এরপরে সাকিব আল হাসান আমাদের সাথে যুক্ত হবার পরে আমারা ১২১ টি প্রতিষ্ঠানের সাথে কানেক্ট হয়ে কাজ করছি। আমরা যে যেখানে আছি আমরা যেন সেভাবে সহয়তা করি। অনেক ভাল কিছু হচ্ছে এই ফাউন্ডেশন এর সাহায্যে। এই ধরনের সিচুয়েশন যদি ভবিষ্যৎ এ ও আসে যাথে সবকিছু স্মুথভাবে করা যায় সেগুলো রেপিড রেসপন্স এর মাধ্যমে কাজ করা যায়।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সামাজিক মাধ্যম ছাড়াও পর্বটি আরো প্রচারিত হয় বিজয় টিভির পর্দায় এবং সমকাল, ইত্তেফাক, ভোরের কাগজ, যুগান্তর, বিডিনিউজ২৪, বাংলানিউজ২৪, জাগোনিউজ২৪, বার্তা২৪, সারাবাংলা, বিজয় টিভি এবং চ্যানেল আই'র ফেসবুক পেজে।
এপর্যন্ত বিয়ন্ড দ্যা প্যান্ডেমিকের নয়টি পর্ব অনুষ্ঠিত হয়েছে। সর্বশেষ পর্বটি প্রচারিত হয়েছে গত ৪ জুলাই। করোনা মোকাবেলায় তৃণমূল আওয়ামী লীগের ভুমিকা নিয়ে সাজানো এই পর্বে অন্যতম আলোচক ছিলেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আফম বাহাউদ্দিন নাছিম এবং সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আফজাল হোসেন।