1953
Published on জুন 28, 2020ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া মোকাবেলায় স্থানীয় সরকারের সাফল্য- ঢাকার দুই মেয়রের ভূমিকা প্রশংসনীয়-এডিস মশার প্রাদুর্ভাব কমে যাওয়ায় দেশের হাসপাতালগুলোতে নতুন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি শূন্যের কোটায় নেমে এসেছে।
২৪ ঘন্টায় রাজধানী ঢাকাসহ দেশের কোন হাসপাতালে নতুন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়নি। গত ১ জানুয়ারি থেকে ২৪ জুন পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগ নিয়ে ৩১৮ জন ভর্তি হয়েছিলেন। এদের মধ্যে ৩১৪ জন সুস্থ হয়ে বাসায় চলে গেছেন। বর্তমানে চিকিৎসাধীন আছেন ৪ জন। চলতি বছর ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়ে দেশে কোন রোগীর মৃত্যুর তথ্য সরকারের কাছে নেই।
করোনার মহাদুর্যোগে ডেঙ্গু ও চিকনগুনিয়া থেকে নগরবাসীকে রক্ষায় দেশের অন্যান্য স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোর পাশাপাশি ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন ব্যাপক কার্যক্রম পরিচালনা করছে। ডেঙ্গুর বাহক এডিস মশার লার্ভা ও মশার উৎপত্তিস্থল ধ্বংস করতে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন নানাবিধ কার্যক্রম পরিচালনা করছে।
১৩ মে দ্বিতীয় মেয়াদে দায়িত্ব গ্রহণের পর ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনেরমেয়র মো. আতিকুল ইসলাম ডেঙ্গু থেকে নগরবাসীকে রক্ষায় মশক নিধনকে গুরুত্ব দিয়ে ব্যাপক কার্যক্রম গ্রহণ করেন। নগরবাসীকে ডেঙ্গু থেকে রক্ষায় নগরীর ৪০টি স্থানে বিনামূল্যে ডেঙ্গু টেস্ট ব্যবস্থার পাশাপাশি ৬ জুন থেকে থেকে ১০ দিনব্যাপী ওই সিটির ৫৪টি ওয়ার্ডে চালানো হয় বিশেষ পরিছন্নতা অভিযান বা চিরুনি অভিযান। গত ১৫ জুন শেষ হয় এই অভিযান। আগামী মাসেই ডিএনসিসির চিরুনি অভিযানের দ্বিতীয় পর্যায় শুরু হবে।
অভিযানকালে ১ হাজার ৬০১টিতে এডিস মশার লার্ভা এবং ৮৯ হাজার ৬২৬টি বাড়ি/স্থাপনায় এডিস মশা বংশবিস্তার উপযোগী পরিবেশ পাওয়ায় সংশ্লিষ্ট ভবন মালিকদের মোট ২৪ লাখ ১০ হাজার ৫শ’ টাকা জরিমানা করা হয়। পরবর্তীতে একই অপরাধে কেউ অভিযুক্ত হলে আরও কঠোর শাস্তি এমনকি জেল পর্যন্ত হতে পারে বলে সতর্ক করেছে ডিএনসিসি কর্তৃপক্ষ। এবারের চিরুনি অভিযানের অন্যতম সংযোজন ছিলো অ্যাপের মাধ্যমে ডাটা সংগ্রহ ও ব্যবস্থাপনা শুরু করা।
প্রথম ধাপে অভিযান পরিচালনার উদ্দেশে প্রতিটি ওয়ার্ডকে ১০টি সেক্টরে ভাগ করে প্রতিটি সেক্টরকে ১০টি সাবসেক্টরে ভাগ করা হয়েছিলো। প্রতিদিন প্রতিটি ওর্য়াডের ১টি সেক্টরে অর্থ্যাৎ ১০টি সাবসেক্টরে চিরুনি অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। প্রতিটি সাবসেক্টরে ৪ জন পরিচ্ছন্নতাকর্মী ও ১ জন মশক নিধনকর্মী সমন্বয়ে গঠিত টিম অর্থাৎ প্রতিটি ওয়ার্ডে প্রতিদিন ৪০ জন পরিচ্ছন্নতাকর্মী ও ১০ জন মশককর্মী বিভিন্ন বাসা-বাড়ি, স্থাপনা ও প্রতিষ্ঠানে যেয়ে কোথাও এডিস মশার লার্ভা আছে কিনা, কোথাও তিন দিনের বেশি পানি জমে আছে কিনা, ময়লা-আবর্জনা আছে কিনা যা এডিস মশার বংশবিস্তারে সহায়ক সেটি পরিদর্শনপূর্বক সেসকল স্থানে লার্ভা ধবংস করে কীটনাশক প্রয়োগ করেছে।
১৬ মে দায়িত্ব গ্রহণের পর ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস মশক নিধন ও পরিছন্নতার গতানুগতিক কার্যক্রমকে ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ নেন। মশক নিধনে তিনি ডিএসসিসির বছরব্যাপী কার্যক্রমের উদ্বোধন করা হয়। ৭ জুন মেয়র তাপস নগরীর নবাবগঞ্জ পার্কে এই মশকমুক্তকরণ কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন। নগরীর ৭৫টি ওয়ার্ডে বছরব্যাপী একযোগে এই কার্যক্রম চলবে।
মেয়র তাপসের পরিকল্পনা অনুযায়ী প্রতি ওয়ার্ডে ৮ জন মশককর্মী সকাল ৯টা থেকে শুরু করে দুপুর ১টা পর্যন্ত লার্ভিসাইডিং করছে। অন্যদিকে ওয়ার্ড প্রতি ১০ জন মশক ক্রু দুপুর আড়াইটা থেকে শুরু করে বিকেল সাড়ে ৬ টা পর্যন্ত ফগিং কার্যক্রম চালায়। ওয়ার্ড কাউন্সিলররা সরাসরি এসব কাজের সাথে সম্পৃক্ত রয়েছেন।
এদিকে ১৪ জুন থেকে জলাশয় এবং নর্দমা পরিস্কার কার্যক্রম শুরু হয়েছে। জলাশয়গুলোতে তেলাপিয়া মাছ চাষের পাশাপাশি পাতি হাঁস পালন করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে যাতে জলাশয়গুলো সচল থাকে এবং মশার লার্ভা থাকতে না পারে।
তথ্য সূত্র: বাসস।