4923
Published on জুন 7, 2020মোহাম্মদ রাশেদুল ইসলাম রাসেলঃ
ধর্মের উপর ভিত্তি করে ১৯৪৭ সালে ভারত ও পাকিস্তান নামক দুটি রাষ্ট্র জন্মলাভ করে। প্রায় ১২০০ মাইল ব্যাবধানে পাকিস্তানের দুই অংশের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের ভাষা ছিলো বাংলা। কিন্তু উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা স্বীকৃতি দেয়াকে কেন্দ্র করে পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের মাঝে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের পর সরকার বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দিতে বাধ্য হয়। এই আন্দোলনের সময় শেখ মুজিবুর রহমানকে কারারুদ্ধ করা হয়। তিনি কারাগারে থাকাবস্থায় ১৯৪৯ সালে আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা যুগ্ম সম্পাদক নির্বাচিত হন। তারপর দলটির সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়ে শেখ মুজিব পূর্ব পাকিস্তানের জনগণকে বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামের মাধ্যমে ঐক্যবদ্ধ করার চেষ্টা চালান। ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে তিনি প্রাদেশিক পরিষদে সদস্য নির্বাচিত হওয়া ছাড়াও অল্পসময়ের জন্য মন্ত্রীসভার সদস্য ছিলেন। তারপর জেনারেল আইয়ুব খান কর্তৃক সামরিক শাসন জারির পর শেখ মুজিব সহ বহু রাজনৈতিক নেতাকর্মী গ্রেফতার হন। রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ ঘোষিত হয়।
১৯৬৫ সালের পাক-ভারত যুদ্ধের বাস্তব অভিজ্ঞতার ফলে পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের মনে ব্যাপক ক্ষোভ সৃষ্টি হয়। কারণ, যুদ্ধকালীন সময় (১৭ দিন) পূর্ব পাকিস্তান ছিলো সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন এবং অরক্ষিত। সরকার পূর্ব পাকিস্তানের জন্য কোন ধরণের নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। ভারত ইচ্ছে করলে অনেকটা বিনাযুদ্ধেই পূর্ব পাকিস্তান দখল করে নিতে পারত। পূর্ব পাকিস্তানের নিরাপত্তায় পশ্চিম পাকিস্তান তথা সরকারের চরম অবহেলা ও অক্ষমতা এই অঞ্চলের জনগণ ও রাজনেতিক নেতৃবৃন্দের মনে ব্যাপক প্রশ্ন ও সন্দেহের সৃষ্টি হয়। ফলে পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ ও নেতৃত্বের মাঝে নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তা-ভাবনা শুরু হয়।
১৯৬৬ সালের ৫ ও ৬ ফেব্রুয়ারি লাহোরে বিরোধী দলসমূহের এক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। যা মূলত যুদ্ধ পরবর্তী রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও আইয়ুব খান কর্তৃক স্বাক্ষরিত 'তাসখন্দ চুক্তি' বিরোধীতা নিয়ে আলোচনার জন্য আহবান করা হয়েছিল। ৬ ফেব্রুয়ারি শেখ মুজিবুর রহমান বাঙালির মুক্তির সনদ নামে খ্যাত ঐতিহাসিক 'ছয় দফা কর্মসূচি' ঘোষণা করেন। এতে (১) সংসদীয় সরকার পদ্ধতি পুনঃপ্রবর্তন এবং সর্বজনীন ভোটাধিকার, (২) প্রতিরক্ষা ও পররাষ্ট্র ব্যতীত সকল বিষয় প্রদেশসমূহের হাতে ন্যস্ত করা, (৩) পাকিস্তানের দুই অংশের জন্য পৃথক মুদ্রা প্রবর্তন বা পৃথক কেন্দ্রীয় ব্যাংক স্থাপন, (৪) করারোপের সকল ক্ষমতা প্রদেশসমূহের হাতে অর্পণ, (৫) আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে প্রদেশসমূহের স্বাধীনতা, এবং (৬) প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় পূর্ব পাকিস্তানের স্বনির্ভরতা অর্জনের দাবি জানানো হয়।
শেখ মুজিবুর রহমান ছয় দফা কর্মসূচি প্রসঙ্গে বলেন, “আমি পূর্ব পাকিস্তানবাসীর বাঁচার দাবীরূপে ৬-দফা কর্মসূচী দেশবাসী ও ক্ষমতাসীন দলের বিবেচনার জন্য পেশ করিয়াছি। আমার প্রস্তাবিত ৬-দফা দাবীতেও এরা তেমনিভাবে পাকিস্তান দুই টুকরা করিবার দুরভিসন্ধি আরোপ করিতেছেন। আমার প্রস্তাবিত ৬-দফা দাবীতে যে পূর্ব পাকিস্তানের সাড়ে পাঁচ কোটি শোষিত-বঞ্চিত আদম সন্তানের অন্তরের কথাই প্রতিধ্বনিত হইয়াছে, তাতে আমার কোন সন্দেহ নাই। সর্বোপরি পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ, জাতীয় প্রতিষ্ঠান আওয়ামী লীগ আমার ৬ দফা দাবী অনুমোদন করিয়াছেন। ফলে ৬ দফা দাবী আজ পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের জাতীয় দাবিতে পরিণত হইয়াছে।” এ কর্মসূচি সম্পর্কে তিনি আরও বলেন, ‘আমি বাঙালির সামনে স্বাধিকারের সাঁকো দিলাম। এই সাঁকো বেয়ে একদিন বাঙালি স্বাধীনতা অর্জন করবে।’ যদিও সরকার এক প্রেসনোটের মাধ্যমে এই সম্মেলনের খবর প্রকাশের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেন। ১০ ফেব্রুয়ারি লাহোরে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে শেখ মুজিব তাঁর ছয় দফা সম্পর্কে ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে বলেন, “সাম্প্রতিক পাকিস্তান-ভারত যুদ্ধের পরিপ্রেক্ষিতে প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসন এবং দেশ রক্ষায় পূর্ব পাকিস্তানকে স্বয়ংসম্পূর্ণ করার প্রশ্নটা মুখ্য হইয়া দেখা দিয়াছে। ...দেশরক্ষা ও অর্থনীতি ক্ষেত্রে উভয় প্রদেশ যদি স্বয়ংসম্পূর্ণ ও আত্মনির্ভরশীল হয় তাহা হইলে জাতি তাহাদের মাতৃভূমির সংহতির বিরুদ্ধে পরিকল্পিত যে কোনো হামলা অধিকতর সাফল্যের সঙ্গে মোকাবিলা করিতে সক্ষম হইবে। ... প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসন জাতি ও সংহতির কোনো ক্ষতি তো করিবেই না বরং পাকিস্তানকে আরও বেশি শক্তিশালী করিবে।”
এই সময় পশ্চিম পাকিস্তানের পত্র-পত্রিকায় ছয় দফাকে বিচ্ছিন্নতাবাদী পরিকল্পনা আখ্যা দিয়ে খবর পরিবেশন করে। ১৪ ফেব্রুয়ারি করাচিতে পূর্ব পাকিস্তানের আইন ও পরিষদীয় দপ্তরের মন্ত্রী আবদুল হাই চৌধুরী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কর্তৃক পাকিস্তানকে ফেডারেল রাষ্ট্রে পরিণত করার প্রস্তাবকে ‘রাষ্ট্রদ্রোহী তৎপরতা’ বলে অভিহিত করেন। ১৯৬৬ খ্রিস্টাব্দের ২১ ফেব্রুয়ারি ছয় দফা দাবিসমূহ আওয়ামী লীগের ওয়ার্কিং কমিটিতে সর্বসম্মতভাবে আন্দোলনের কর্মসূচি হিসেবে গৃহীত হয়। ১৮ মার্চ আওয়ামী লীগের কাউন্সিল অধিবেশনে শেখ মুজিবুর রহমানের স্বনামে ‘আমাদের বাঁচার দাবি: ৬-দফা কর্মসূচী’ শীর্ষক একটি পুস্তিকা প্রচার করা হয়। এ পুস্তিকার ভাষ্য থেকে তৎকালীন পূর্ব বাংলার জাতীয়তাবাদী উত্থানের স্বরূপ পরিলক্ষিত হয়। সমগ্র পূর্ব বাংলা ঘুরে ঘুরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর ব্যাখ্যা প্রদান ও জনমত তৈরি করতে থাকেন। চট্টগ্রামের লালদিঘী ময়দানে ছয় দফার পক্ষে প্রথম সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। মার্চ মাসে স্বয়ং আইউব খান পূর্ব পাকিস্তানে এসে ছয় দফার বিরুদ্ধে অপপ্রচারে নামেন। ১৬ মার্চ তিনি রাজশাহীতে ছয় দফাকে ‘হিন্দু আধিপত্যাধীন যুক্তবাংলা গঠনের ষড়যন্ত্র’ ছাড়া আর কিছু নয় বলে অভিযোগ করেন।
পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠী ও এলিট শ্রেণীর ক্ষমতা পরিত্যাগের অনীহার কারণে তারাও এ ছয় দফা দাবিসমূহ প্রত্যাখ্যান করে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পেশকৃত এ ছয় দফা দাবি ছিল পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর দীর্ঘদিনের অনাচার ও বৈষম্যমূলক নীতির বিরুদ্ধে একটি বলিষ্ঠ পদক্ষেপ। ছয় দফার গুরুত্ব সম্পর্কে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেন, “৬ দফা বাংলার শ্রমিক, কৃষক, মজুর, মধ্যবিত্ত তথা আপামর মানুষের মুক্তির সনদ; ৬ দফা শোষকের হাত থেকে শোষিতের অর্থনৈতিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক অধিকার ছিনিয়ে আনার হাতিয়ার; ৬ দফা মুসলিম, হিন্দু, খৃস্টান, বৌদ্ধদের নিয়ে গঠিত বাঙালি জাতির স্বকীয় মহিমায় আত্মপ্রকাশ ও আত্মনির্ভরশীলতা অর্জনের চাবিকাঠি...৬ দফার সংগ্রাম আমাদের জীবন মরণের সংগ্রাম।”
ছয় দফা দাবিসমূহ প্রচারিত হবার পর পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের নিকট তা অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়ে উঠে। পূর্ব বাংলার মানুষ ছয় দফাকে তাদের মুক্তির সনদ হিসেবে গ্রহণ করে। বিচারপতি মোহাম্মদ ইবরাহীম ২৬ মার্চ সংবাদপত্রে দেয়া এক বিবৃতিতে ছয় দফাকে লাহোর প্রস্তাবের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ বলে বর্ণনা করেন। তিনি আইউব খানকে ‘অস্ত্রের ভাষা’ ত্যাগ করে ‘যুক্তির ভাষায়’ কথা বলতে পরামর্শ দেন। কিন্তু আইউব খান দমননীতির পথ বেছে নেন। ছয় দফার প্রচারকালে যশোর, ময়মনসিংহ, সিলেটসহ বিভিন্ন জায়গায় অনেকেই গ্রেফতার হন এবং সংশ্লিষ্ট জেলা আদালত থেকে মুক্তি পান। ১৯৬৬ সালের ৮ মে নারায়ণগঞ্জে কয়েকজন সঙ্গীসহ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে প্রতিরক্ষা বিধির ৩২(১)ক ধারায় গ্রেফতার করা হয়। এতে বঙ্গবন্ধুর জনপ্রিয়তা আরো বৃদ্ধি পায় এবং তিনি বাঙালি জাতীয়তাবাদের প্রতীক হিসেবে আবির্ভূত হন। ছয় দফা বাস্তবায়ন এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ কারাগারে বন্দি নেতা-কর্মীদের মুক্তির দাবিতে আওয়ামী লীগ নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনের দিকে অগ্রসর হয়। ১৯৬৬ সালের ৭ জুন পূর্ব বাংলায় সর্বাত্মক হরতাল পালিত হয়। আদমজী, সিদ্ধিরগঞ্জ ও ডেমরা এলাকার শ্রমিকরা ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে। তারা থানা আক্রমণ করে, সরকারি বাসে আগুন দেয়, সরকারি কর্মকর্তার গাড়ি ভস্মীভূত করে, ট্রেন লাইন বিচ্ছিন্ন করে এবং পুলিশের সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়।
এতদিন ছাত্র ও বুদ্ধিজীবী সম্প্রদায় রাজনৈতিক আন্দোলনে নেতৃত্বের ভূমিকা পালন করলেও দেশের শ্রমিকশ্রেণী প্রথমবারের মতো এ আন্দোলনে অংশগ্রহণ করায় তা ব্যাপকতা লাভ করে। ফলে রাজনীতিতে একটি মৌলিক পরিবর্তন পরিলক্ষিত হয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর কারাগারের রোজনামচা গ্রন্থে এ প্রসঙ্গে বলেন, “ছয় দফা যে পূর্ব বাংলার জনগণের প্রাণের দাবি পশ্চিমা উপনিবেশবাদী ও সাম্রাজ্যবাদীদের দালাল পশ্চিম পাকিস্তানের শোষকশ্রেণী যে পূর্ব বাংলার নির্যাতিত গরীব জনসাধারণকে শোষণ বেশি দিন করতে পারবেনা, সে কথা আমি এবার জেলে এসেই বুঝতে পেরেছি। বিশেষ করে ৭ জুনের যে প্রতিবাদে বাংলার গ্রামে-গঞ্জে মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে ফেটে পড়েছে, কোনো শাসকের চক্ষু রাঙানিতাদের দমাতে পারবে না।”
ছয় দফা কর্মসূচীর খবর প্রকাশ করায় সরকার দৈনিক ইত্তেফাক সহ অনেক পত্রিকা বন্ধ করে দেয়। মানিক মিয়া সহ অনেকই গ্রেফতার হন। দমন-নীপিড়ন এতো কঠোর ছিলো যে, ১৯৬৬ সালের সেপ্টেম্বর মাসে প্রায় ৯,৩৩০ জন আওয়ামী লীগ কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়। আইউব খান ছয় দফার সমর্থকদের গোলযোগকারী আখ্যা দিয়ে বলেন, বাঙালির এই প্রস্তাবিত পথ দেশকে গৃহযুদ্ধের দিকে ঠেলে দেবে এবং ভারত পূর্ব পাকিস্তান দখল করে নিবে। তিনি ‘অস্ত্রের ভাষা’ ব্যবহারের হুমকি দেন। ছয় দফা আন্দোলন দমনের জন্য সরকার কেবল রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের গ্রেফতার করেই ক্ষান্ত হয়নি। পূর্ব বাংলার ভাষা এবং সংস্কৃতির উপরও নগ্ন হামলা চালানো হয়। প্রতিবাদের ফলে সরকার এই সময় রবীন্দ্রসংগীত নিষিদ্ধ করার অপচেষ্টা চালিয়ে ব্যর্থ হয়। ১৯৬৭ সালের ২৫ জুন ১৮ জন বাঙালি বুদ্ধিজীবী সরকারি বক্তব্যের সমালোচনা করে বিবৃতি প্রদান করেন।
ছয় দফা কর্মসূচি পূর্ব বাংলার জনগণের নিকট ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে ওঠার কারণে পাকিস্তান সরকার বঙ্গবন্ধুকে জেলে আটক রেখেছিলেন। এই সময়কার বিভিন্ন স্মৃতি আমরা বঙ্গবন্ধুর 'কারাগারের রোজনামচা' গ্রন্থে দেখতে পাই। জেল-জুলুম-নির্যাতনের শিকার হলেও শেখ মুজিব একবিন্দু পরিমাণ আপোষ করেননি সামরিক সরকারের সাথে। সমগ্র পূর্ব বাংলাব্যাপী আন্দোলনের বিস্তৃতি লাভ করায় সরকার আরও কঠোর চিন্তা-ভাবনা শুরু করে। ১৯৬৮ সালে শেখ মুজিবকে প্রধান আসামী করে সরকার 'আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা' দায়ের করে। রাষ্ট্রদ্রোহী হিসেবে তাঁদের ফাঁসির জন্য প্রহসনের বিচার শুরু হয়। যার কারণে জনগণের মাঝে আরও বেশি ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। শুরু হয় ছাত্র-শ্রমিক-কৃষকের সমন্বয়ে তীব্রতর আন্দোলন। একই সময় ছাত্রদের 'এগার দফা' কর্মসূচী ছয় দফা আন্দোনলকে গণঅভ্যূত্থানে পরিণত করে। পতন হয় আইয়ুব খানের। মুক্তিলাভ করেন শেখ মুজিবুর রহমান। তিনি ভূষিত হন 'বঙ্গবন্ধু' উপাধিতে। আভির্ভাব হন বাঙালির মুক্তির নায়ক হিসেবে। যার পেছনে ছয় দফা কর্মসূচী অন্যতম প্রধান প্রভাবক হিসেবে কাজ করে। ছয় দফা দাবিসমূহ জনগণের নিকট ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করার কারণে ১৯৭০ সালে অনুষ্ঠিত পাকিস্তানের সাধারণ নির্বাচনে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। কিন্তু সামরিক সরকার ক্ষমতা হস্তান্তর না বিপরীতে ব্যাপক হত্যাকাণ্ড ও দমন-নীপিড়ন চালায়। শুরু হয় ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধ। ছয় দফা রূপান্তরিত হয় এক দফা, বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলন। ১৬ ডিসেম্বর পৃথিবীর বুকে আবির্ভাব ঘটে এক নতুন রাষ্ট্র - বাংলাদেশ।
বঙ্গবন্ধু ছয় দফার জনক থেকে হয়ে উঠেন বাঙালির জাতির জনক।
লেখকঃ সাবেক সদস্য, প্রচার ও প্রকাশনা বিষয়ক উপকমিটি, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ