4538
Published on এপ্রিল 20, 2020বৈশ্বিক মহামারী করোনাভাইরাসের সংক্রমণের শুরু থেকেই মাঠে রয়েছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আ. জ. ম. নাছির উদ্দীন এর নির্দেশে বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের প্রকোপ শুরু হওয়ার পর থেকে নাগরিক সচেতনতায় প্রথমে হ্যান্ড স্যানিটাইজার, সাবান ও মাস্ক বিতরণ কার্যক্রম শুরু হয়। শহরে করোনাভাইরাসের বিস্তার প্রতিরোধে নগরের ৬৮৪ টি হ্যান্ড ওয়াশ পয়েন্টে ৬০ লিটার ধারণক্ষমতার পানির ট্যাংক, ২৫ লিটার ধারণক্ষমতা সম্পন্ন বালতি এবং সাবান দিয়ে হাত ধোঁয়ার ব্যবস্থা করেছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পরেশন। নগরের হতদরিদ্র ১ লক্ষ ২৫ হাজার পরিবারের নিকট স্যানিটাইজিং সামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে। নিজস্ব পানির ভাউজার, ভ্যান গাড়ী এবং হ্যান্ড স্প্রে-মেশিন দ্বারা করোনা সংক্রমণের শুরুর দিক হতে অদ্যবধি নিয়মিতভাবে সমগ্র নগর জুড়ে জীবনুনাশক পানি ছিটানো হচ্ছে। নগররের কাঁচা বাজার সমূহে ক্রেতা সাধারণের সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে প্রবেশ ও প্রস্থান নিশ্চিত করা হচ্ছে। পরিচ্ছন্নতা কাজে নিয়োজিত পরিচ্ছন্ন কর্মীদের সাবান দিয়ে হাত ধোয়া নিশ্চিত করার পর ডোর টু ডোর আবর্জনা সংগ্রহ ও অপসারণ নিশ্চিত করা হচ্ছে এবং সকল পরিচ্ছন্ন কর্মীদেরকে টেকসই হ্যান্ড গ্লাভস্, মাস্ক ও হ্যান্ড স্যানিটাইজার প্রদান করা হয়েছে।
করোনা ভাইরাস সংক্রমণ শুরুর পর নগরজুড়ে সকল ধরনের বেসরকারি হাসপাতাল/চিকিৎসা কেন্দ্রে যখন সাধারণ জ্বর, সর্দি, হাঁচি ও কাঁশির চিকিৎসা বন্ধ হয়ে যায় তখন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন পরিচালিত সকল হাসপাতাল ও ৪১টি ওয়ার্ডের সকল স্বাস্থ্যকেন্দ্র সমূহে সাধরণ জ্বর, সর্দি, হাঁচি ও কাঁশিসহ সকল ধরনের বেসরকারি চিকিৎসা সেবা প্রদান অব্যাহত রাখা হয় ।
সাধারন মানুষ যাতে ফোন করে সেবা নিতে এবং হাসপ্তালে খবর পৌছাতে পারেন সেজন্য চসিক পরিচালিত জেনারেল হাসপাতালের হটলাইন চালু করা হয়। এর নম্বর হচ্ছে 01817-897019 এবং 031-634584। পাশাপাশি জেনারেল হাসপাতালকে করোনা রোগীদের চিকিৎসা দেওয়ার জন্য বিশেষভাবে প্রস্তুত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরশেন একটি নিজস্ব কল সেন্টার (১৬১০৪)- এর মাধ্যমে করোনা বিষয়ক তথ্য সেবা প্রদানের ব্যবস্থা করেছে। এই কল সেন্টার সেবা দিচ্ছে ২৪ ঘণ্টা।
করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) সংক্রমণ প্রতিরোধে পরিচালিত সকল ধরনের কার্যক্রম পর্যবেক্ষণের লক্ষ্যে চসিক দামপাড়াস্থ কার্যালয়ে কন্ট্রোল রুম স্থাপন ।
পরবর্তীতে লকডাউন শুরু হওয়ার পর থেকে কর্মহীন, ছিন্নমূল, অসহায় মানুষের খাদ্য সহায়তার হাত বাড়িয়েছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন। এবং তা চলমান থাকবে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আ. জ. ম. নাছির উদ্দীন।
সরকারি ত্রাণের জন্য স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলরের মাধ্যমে নাম অর্ন্তভুক্তির আহ্বান জানিয়েছেন সিটি মেয়র আ.জ.ম নাছির উদ্দীন। আগামী ২০ এপ্রিলের মধ্যে ৪১টি ওয়ার্ডের স্ব স্ব কাউন্সিলের কাছে তাদের নাম অর্ন্তভুক্তির জন্য অনুরোধ জানান তিনি।
শুক্রবার (১৭ এপ্রিল) এক বিবৃতিতে বলেছেন, নগরীর ৪১ টি ওয়ার্ডে তালিকাভূক্ত গরীব ও অস্বচ্ছল পরিবারের মাঝে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন ওয়ার্ড কাউন্সিলরের মাধ্যমে সরকারি ত্রাণ-সামগ্রী পৌঁছে দেয়া হচ্ছে। তবে তালিকাভূক্ত না হওয়ায় এখনও পর্যন্ত অনেক গরীব ও কর্মহীন অস্বচ্ছল পরিবার ত্রাণ-সামগ্রী বিতরণ কার্যক্রমের বাইরে রয়ে গেছেন। সরকারের লক্ষ্য হচ্ছে প্রত্যেক গরীব ও অস্বচ্ছল পরিবারের ঘরে ঘরে আপদকালীন ত্রাণ-সামগ্রী পৌঁছে দেয়া। সরকারি ভাবে যথেষ্ট ত্রাণ-সামগ্রী মজুদ রয়েছে। এছাড়া সরবরাহ অব্যাহত আছে বিধায় কারো অভুক্ত থাকার আশঙ্কা নেই।
প্রত্যেক গরীব ও কর্মহীন অস্বচ্ছল পরিবারের তালিকা হালনাগাদ করে দূর্যোগ নিরসন না হওয়া পর্যন্ত চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মাধ্যমে নগরীতে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।
ইতোমধ্যে সরকারিভাবে ৫৯০ টন খাদ্য সহায়তা পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ১৯০ টন বন্টন করা হয়েছে। এই সপ্তাহের মধ্যে বাকি ৪০০ টন বিলি করা হবে। এই দফায় মোট ১ লক্ষ ১৮ হাজার পরিবার ত্রাণ পাবে। একই সাথে লকডাউনের কারনে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের সহায়তা করে যাচ্ছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন। সরকারিভাবে বরাদ্দ প্রাপ্ত চালের সাথে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের অর্থায়নে ৩২ হাজার কেজি আলু এবং ৪ হাজার ১০০ কেজি ডাল বিতরণ করা হয়েছে, প্রস্তুত আছে ১ লক্ষ ১৪ হাজার বাজারের থলে।
সম্মুখে থেকে যারা লড়ছেন করোনার বিরুদ্ধে আর যারা সংবাদ পৌঁছে দেওয়ার জন্য নিজের জীবনের ঝুকি নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে তাদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজকে ৩৫০টি এবং ফৌজদার হাটস্থ বিআইটিআিইডি কে ১০০টি, বিএমএ চট্টগ্রাম শাখাকে ২০০টি ও গণমাধ্যম কর্মীদের ৭৫টি পিপিই প্রদান করা হয় । এছাড়াও চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নবনির্মিত ফ্লু কর্নারে ৫টি এসি সরবরাহ করা হয়েছে।
কোভিড-১৯ রোগে আক্রান্ত রোগী ও মৃতদেহ পরিবহণের নিমিত্ত সার্বক্ষণিকভাবে একটি নিজস্ব অ্যাম্বুলেন্স প্রস্তুত রয়েছে এবং যারা মৃত্যুবরন করছেন তাদের চসিক নিয়ন্ত্রণাধীন আরেফিন নগর কবরস্থানে কবরস্থ করা হচ্ছে।
করোনা ভাইরাস তথা কোভিড-১৯ বিষয়ে সাধারণ জনগণকে সচেতন করার লক্ষ্যে একাধিকবার স্থানীয় দৈনিক পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ এবং নগরের ৪১ টি ওয়ার্ডে লক্ষাধিক লিফলেট বিতরণ ও নিয়মিতভাবে মাইকিং-এর ব্যবস্থা করা হয়েছে।