টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে আওয়ামী লীগ ও প্রশাসনের সহায়তায় খাদ্য সহায়তা পেল ২৫ হাজার মানুষ

899

Published on এপ্রিল 17, 2020
  • Details Image

টাঙ্গাইলের মির্জাপুর এলাকায় প্রায় ২৫ হাজার পরিবার স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও প্রশাসনের মাধ্যমে খাদ্য সহায়তা পেয়েছে। তাদেরই একজন মির্জাপুর বাজারের ভ্যান চালক মানিক মিয়া। ঘরে পৌঁছে যাওয়া ত্রাণ সহায়তা হাতে নিয়ে হাসিমুখে তিনি জানান, করোনার কারণে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। কোন কাম কাজ নাই। ঘর থেকে বের হতে পারিনা। ১০ দিনের খাবার দিয়া গেছে। না খায়া ছিলাম, এখন পরিবার নিয়া কিছুদিন খাইতে পারব।

৬০ বছরের বৃদ্ধা মালতী বর্মণ। গ্রামের বাড়ি টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলার বাঁশতৈল ইউনিয়নের আদিবাসী পল্লী গায়রাবেতিল এলাকায়। কদিন আগেও তার বাড়িতে খাবার জন্য চাল ছিল না। পরিবার নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করেছেন। করোনা ভাইরাস দুর্যোগের এই সময়ে তিনি ১০-১২ দিনের খাদ্য সামগ্রী পেয়ে খুবই খুশি। মন খুলে দোয়া করলেন তিনি।

ভাদগ্রাম ইউনিয়নের গোড়াইল গ্রামের জাহানারা বেগম (৫০) ও বুড়িহাটি গ্রামের ফিরোজ মিয়া (৪৫) জানান, আমরা অসহায়ের মত জীবন যাপন করেছি। গত কয়েক দিনের ব্যবধানে এমপি, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, ইউএনও এবং বেশ কয়েক রাজনৈতিক দলের নেতার সহযোগিতা পেয়েছি। তারা আমাদের বাড়ি বাড়ি খোঁজ নিয়ে খাদ্য সহযোগিতা করেছেন। এখন আমরা ১৫-২০ দিন চলতে পারবো। তাদের মত অনেকেই এমন সাহায্য পাওয়ার কথা জানিয়েছেন।

কর্মহীন উজ্জল বণিক জানায়, কিছু দিন আগে আমার মা মারা গেছে। বাবাও জীবিত নেই। হাতে কম কাজ নাই। খুবই কষ্টের মধ্যে আছি। এমপি স্যার এবং শামীম ভাই আমাকে খাবারের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। আমি এখন পরিবার নিয়ে ১৫-২০ দিন চলতে পারবো।

গোড়াই ইউনিয়নের সোহাগপাড়া গ্রামের অসহায় আছিয়া বেগম জানান, মধ্যে ১৫-২০ দিন হলো খুবই কষ্ট হয়েছে। খাবার জুটত না। এলাকার ব্যবসায়ী শওকত হোসেন, হুমায়ুন কবীর ও মন্টু চেয়ারম্যান সাব আমাকে চাল, ডাল, লবণ, পিয়াজ, মরিচ, আলুসহ সাবান দিয়েছেন। আমি তাদের কাছে খুব কৃতজ্ঞ।

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আবদুল মালেক বলেছেন, সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে প্রশাসনের পাশাপাশি রাজনৈতিক দলের নেত্রীবৃন্দ, বিভিন্ন ব্যক্তি ও বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের কর্মীদের সঙ্গে সমন্বয় করে প্রতিটি এলাকায় যারা সাহায্য পাওয়ার যোগ্য তাদের তালিকা তৈরি করে সুষ্ঠু ভাবে তাদের হাতে খাদ্য সামগ্রী তুলে দেওয়া হচ্ছে। দুর্যোগ শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাদের এ কার্যক্রম চলবে বলে তিনি জানিয়েছেন।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. আশরাফুজ্জামান জানান, পৌরসভা ও ১৪ ইউনিয়নে সরকারি ভাবে এ পর্যন্ত ৬ হাজার পরিবারকে খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে। চাল, ডাল, লবণ, পিয়াজ, আলু ও সাবান দেওয়া হয়েছে। এছাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদের সমন্বয়ে ওএমএসের ১০ টাকা কেজি দরের চাল দেওয়া হয়েছে। আরো ২৫ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ পাওয়া গেছে।

উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. যুবায়ের হোসেন এবং মির্জাপুর থানার অফিসার ইনচার্জ মো. সায়েদুর রহমান বলেন, এলাকার কর্মহীন ও অসহায় পরিবারগুলো যাতে সঠিক ভাবে খাদ্য সহায়তা পান সে জন্য নিয়মিত মনিটরিং করা হচ্ছে। তাদের মনিটরিং ব্যবস্থা চলমান থাকবে বলে উল্লেখ করেন।

উপজেলা খাদ্য অফিস, প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয় এবং ইউএনও অফিস সুত্রে জানা যায়, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. একাব্বর হোসেন এমপির ব্যক্তিগত উদ্যোগে ৩ হাজার পরিবার, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা মীর এনায়েত হোসেন মন্টু ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক মীর শরীফ মাহমুদেও ব্যক্তিগত উদ্যোগে ২ হাজার পরিবার, উপজেলা আওয়ামীলীগের সহ সভাপতি ও হংকং শাখার আওয়ামী লীগের সভাপতি শিল্পপতি মো. আবুল কালাম আজাদ লিটনের ব্যক্তিগত উদ্যোগে ১ হাজার পরিবার, টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামীলীগের কার্যনির্বাহী সদস্য ও টাঙ্গাইল জেলা চেম্বার্স অব কমার্স এন্ড ইন্ডাসটিসের সভাপতি খান আহমেদ শুভ এর ব্যক্তিগত উদ্যোগে ১ হাজার ৫০০শ পরিবার, উপজেলা যুবলীগের আহবায়ক মো. শামীম আল মামুনের ব্যক্তিগত উদ্যোগে ৭৫০ জন পরিবার, উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি হাজী আবুল হোসেনের ব্যক্তিগত উদ্যোগে ৬০০শ পরিবার, উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতা মো. ইজ্জত আলী জনির ব্যক্তিগত উদ্যোগে ১ হাজার পরিবার, ব্যবসায়ী মো. শওকত হোসেনের ব্যক্তিগত উদ্যোগে ৪৫০ পরিবার, গোড়াই ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ (পূর্ব) সভাপতি মো. আশরাফ খানের ব্যক্তিগত উদ্যোগে ৫৫০ পরিবার, গোড়াই ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ (পশ্চিম) সভাপতি আলহাজ্ব মো. হুমায়ুন কবীরের ব্যক্তিগত উদ্যোগে ৬৫০ পরিবার, ই বি এস গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাফিউর রহমান খান ইউসুফজাই ও ইউসুফজাই ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মাকসুদুর রহমান খান ইউসুফজাই রেমনের ব্যক্তিগত উদ্যোগে ২ হাজার পরিবার, সোহাগপাড়ার ব্যবসায়ী মো. শওকত হোসেনের ব্যক্তিগত উদ্যোগে ৪৫০ পরিবার এবং বিভিন্ন ব্যক্তি ও সামাজিক সংগঠনের উদ্যোগে ২ হাজার পরিবারসহ সর্বমোট প্রায় ২৫ হাজার পরিবার এ পর্যন্ত খাদ্য সহায়তা পেয়েছে।

এ ব্যাপারে টাঙ্গাইল-৭ মির্জাপুর আসনের এমপি ও সড়ক পরিবহন এবং সেতু মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. একাব্বর হোসেন বলেন, আমার নির্বাচনী এলাকায় কোন পরিবার না খেয়ে মারা যাবে না। আমি ব্যক্তিগত উদ্যোগে সহায়তা চালিয়ে যাচ্ছি। এছাড়া উপজেলা প্রশাসন, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এবং আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে সমন্বয় করে ত্রাণ তৎপরতা জোরদার করা হয়েছে।

সৌজন্যেঃ দৈনিক ইত্তেফাক

Live TV

আপনার জন্য প্রস্তাবিত