4601
Published on অক্টোবর 26, 2019ড. আতিউর রহমান:
হালে বাংলাদেশের বিস্ময়কর উন্নয়নের কথা দেশি-বিদেশি অনেক অর্থনীতিবিদ ও প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে শুনেছি। বিশ্বব্যাংকের সাবেক অর্থনীতিবিদ, উন্নয়ন বিশেষজ্ঞ প্রফেসর কৌসিক বসু গত বছরের মে মাসে ‘প্রজেক্ট সিন্ডিকেট’-এ লিখেছিলেন, ‘বাংলাদেশ কেন এমন তরতর করে এগোচ্ছে?’ ইংরেজিতে বুমিং শব্দটি ব্যবহার করেছিলাম। এরপর বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ, জাতিসংঘ, এডিবি, এইচএসবিসি, স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকসহ অসংখ্য আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান ও বিশেষজ্ঞ বাংলাদেশের চলমান উন্নয়ন উপাখ্যানকেই এশিয়ার তথা বিশ্বের সেরা বলতে দ্বিধা করেনি। বিশ্বখ্যাত রেটিং এজেন্সিগুলোও বাংলাদেশকে ইতিবাচক রেটিং করছে। সারা বিশ্বের বড় বড় বিনিয়োগকারীর চোখ এখন বাংলাদেশের ওপর। তাঁরা প্রায়ই আমার মতামত নেওয়ার জন্য যোগাযোগ করেন। তাই বুঝতে পারি তাঁদের আগ্রহের দিকটি। সারা বিশ্বের প্রবৃদ্ধির গতি যখন শ্লথ, আগামী বছর নাগাদ আরেকটি বিশ্ব আর্থিক মন্দা আঘাত হানতে পারে বলে জাতিসংঘ যখন আশঙ্কা প্রকাশ করছে, ঠিক তখনই বাংলাদেশের সাফল্যের গল্প বেশ জোরেশোরেই বলা হচ্ছে। আমরা দেশের ভেতরে নিজ দেশের সামষ্টিক অর্থনীতির বিস্ময়কর রূপান্তর অনেক আগে থেকে বললেও বিদেশিদের মুখ থেকে দেশের সাফল্য ও সম্ভাবনার কথা ইদানীং বেশ শুনছি। আর এসব আশাজাগানিয়া কথা শুনলে কার না ভালো লাগে। আরো ভালো লাগে এসব আশাবাদকে সুসংহত করে অত্যন্ত ‘স্মার্টলি’ যখন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বিদেশের ফোরামে উপস্থাপন করেন। তখন এই অর্জন এক নতুন মাত্রা পায়। কেননা তিনি এ কথাটি বলেন হৃদয় থেকে। আপন অভিজ্ঞতা থেকে। সম্প্রতি জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে যোগ দেওয়ার সময় নানা ফোরামে তিনি বাংলাদেশের উন্নয়নের সাফল্যের কথা বলেছেন। এর কয়েক দিন পরেই দিল্লিতে বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের ভারতীয় সামিটে তিনি আরো সুন্দর ও সংহত করে বাংলাদেশের উন্নতির গল্পটি বলেছেন। আর বলেছেন এর পেছনের কারণের কথা। বলেছেন এই গল্পের ভিত্তির কথা। এর প্রতি আস্থার কথা। বিশেষ করে দিল্লিতে অর্থনৈতিক শীর্ষ সম্মেলনে তিনি বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ কথা বলেছেন। সংক্ষেপে তাঁর কথাগুলো উপস্থাপন করলে এমন দাঁড়ায় :
এক. বাংলাদেশের মানুষের উদার সামাজিক মূল্যবোধ ও বাংলাদেশের চেতনায় তাদের আস্থা।
দুই. সমৃদ্ধির জন্য বাংলাদেশের মানুষের রয়েছে গভীর আকাঙ্ক্ষা, তাদের সহনশীলতা এবং নেতৃত্বের প্রতি অবিচল আস্থা।
তিন. বঙ্গবন্ধুর শোষণমুক্ত ও ন্যায়পরায়ণ সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্ন আমাদের উন্নত দেশ হওয়ার পথে এগিয়ে চলার আত্মবিশ্বাস জুগিয়ে চলেছে।
চার. পোশাক উৎপাদনের গণ্ডি থেকে বেরিয়ে একটি জ্ঞানভিত্তিক সমাজ গড়ার পথে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশের মানুষ উদ্ভাবনী চেতনা আর প্রযুক্তিকে সঙ্গী করে ঝুঁকি নিচ্ছে, চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করছে।
পাঁচ. বাংলাদেশের তারুণ্যদীপ্ত জনগোষ্ঠীর উদ্যম, ডিজিটাল দক্ষতা, দ্রুত নগরায়ণের আবহে এক নয়া সমাজ বাস্তবতার ইঙ্গিত করছে। এদের মধ্য থেকেই ২০৩০ সাল নাগাদ তিন কোটি মধ্যবিত্ত অগ্রসর ভোক্তা শ্রেণির উদ্ভব ঘটবে। নিঃসন্দেহে বিনিয়োগকারীদের জন্য এক বিশাল বাজার অপেক্ষা করছে।
ছয়. বাংলাদেশ কিভাবে ঝুঁকিকে সম্ভাবনায় রূপান্তর করে থাকে সেদিকটিও বিনিয়োগকারীদের তিনি আশ্বস্ত করেন। একই সঙ্গে এত সব ঝুঁকি সত্ত্বেও কী করে একটি দেশ বর্তমানে ৮.১ শতাংশ হারে প্রবৃদ্ধি অর্জন করছে, সে কথাটি মনে করিয়ে দেন। গত ১০ বছরে বাংলাদেশের মোট অর্থনীতির আকার কী করে প্রায় তিন গুণ বেড়েছে, কৃষিতে স্বয়ংসম্পূর্ণতা এসেছে, ইন্টারনেট ব্যবহারকারী জনগোষ্ঠীর মাপে এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলে পঞ্চম বৃহত্তম দেশে পরিণত হয়েছে, ডিজিটাল লেনদেন প্রসারের ফলে দ্রুত মুদ্রাবিহীন দেশে পরিণত হচ্ছে, ই-কমার্স লেনদেন ২৬ কোটি ডলার ছাড়িয়েছে, ছয় লক্ষাধিক আউটসোর্সিং নিজ উদ্যোক্তা নিজেদের নিয়োজিত রেখেছেন। দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে উদার বিনিয়োগ পরিবেশ নিশ্চিত করা গেছে এবং ভারত-চীন-আসিয়ান গতিময় প্রবৃদ্ধির ত্রিভুজের মধ্যমণি হতে পেরেছে। বাংলাদেশ এসব কারণেই নিজেদের ১৬ কোটি ২০ লাখ মানুষের বাইরেও দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার প্রায় ৩০০ কোটি মানুষের বাণিজ্য যোগাযোগের প্রাণকেন্দ্র হওয়ার দাবি রাখে।
সাত. এইচএসবিসি বলেছে, ২০৩০ সাল নাগাদ বাংলাদেশ ২৬তম বৃহত্তম অর্থনীতি হবে। এই গতিময়তার পেছনে দুটি বিষয় গুরুত্বপূর্ণ। ক. আমাদের মুক্ত সমাজ, ধর্মীয় সম্প্রীতি, উদার মূল্যবোধ এবং ধর্মনিরপেক্ষ সংস্কৃতি। খ. আমাদের মোট জনসংখ্যার দুই-তৃতীয়াংশই তরুণ, যাদের বেশির ভাগেরই বয়স ২৫ বছরের কম। তাদের দ্রুত দক্ষ করে তোলা, প্রযুক্তিতে প্রশিক্ষিত করা এবং প্রতিযোগিতামূলক শ্রমমূল্যে কাজে লাগানো সম্ভব।
আট. বাংলাদেশ একটি স্থিতিশীল ও মানবিক রাষ্ট্র, যাঁর নেতৃত্ব দায়িত্বশীল ও সংবেদনশীল, সামষ্টিক অর্থনীতির ভিত্তি মজবুত, মুক্ত ও বাস্তবভিত্তিক বাজার বিশ্বের সঙ্গে তাল মেলাতে সক্ষম। এই রাষ্ট্র একটি শান্তিকামী ও প্রগতিশীল জনগোষ্ঠীর আত্মবিশ্বাসী উন্নয়ন অভিযাত্রায় বিশ্বাসী। এই অভিযাত্রায় প্রতিনিয়ত শিখছে বাংলাদেশ।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিচক্ষণ এসব কথার সঙ্গে দ্বিমতের কোনো সুযোগই নেই। একজন দক্ষ রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা অর্থনীতির চৌকস ভাষায়ই তাঁর নেতৃত্বে অগ্রসরমাণ বাংলাদেশকে দক্ষতার সঙ্গে বিশ্বসভায় তুলে ধরেছেন। আমি তাঁর উপস্থাপনার সঙ্গে সম্পূর্ণ একমত। যেসব ধারণা তিনি হালে তুলে ধরছেন, আমি বড়জোর সেসবের সমর্থনে আরো কিছু শব্দ বা বাক্য যোগ করতে পারি। বিশেষ করে আজকের বাংলাদেশ যে বিনিয়োগ করার জন্য এক উর্বর ক্ষেত্র, সে কথাটি আরো জোর দিয়ে বলতে পারি। বলতে পারি কী সব নীতি সমর্থন ও সুযোগ সৃষ্টি করেছেন এবং করছেন তাঁর সরকার ও রেগুলেটরি প্রতিষ্ঠানগুলো, সেসব কথা আরেকটু খোলাসা করে বলতে পারি। বিশেষ করে বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণের জন্য বাংলাদেশ যেসব উদার নীতিমালা গ্রহণ করেছে সেসবের উল্লেখ করতে পারি। একই সঙ্গে সার্বিক বিশ্ব অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জগুলো সাফল্যের সঙ্গে মোকাবেলা করে তাঁর সরকার যেভাবে সাহসের সঙ্গে মাথা উঁচু করে এগিয়ে চলেছে সে গল্পটিও বলতে পারি। সর্বশেষ তিনি সুশাসনের ক্ষেত্র প্রসারিত করার জন্য দুর্নীতি, সন্ত্রাস, মাদক ও সামাজিক অনাচারবিরোধী যে যুদ্ধ শুরু করেছেন, সে বিষয়টির সঙ্গে যে বিনিয়োগ বিকাশের গভীর সংযোগ রয়েছে, সেদিকেও খানিকটা আলো ফেলতে পারি।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যথার্থই বলেছেন যে আমরা চলতে চলতেই শিখছি। মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে বিকশিত লড়াকু যে জাতীয় মনস্তত্ত্বের সূত্রপাত জাতির পিতা করে গিয়েছেন তাকেই মূলশক্তি হিসেবে বিকশিত করার যে অনুপম নেতৃত্ব দিয়ে চলেছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা, তারই সুফল দেশ ও জাতি আজ পেতে শুরু করেছে। এই অভিযাত্রা চালু থাকুক এবং বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলার স্বপ্ন পূরণে তিনি সফল হোন সে প্রত্যাশাই করছি।
বাংলাদেশ নিঃসন্দেহে উন্নয়ন অভিযাত্রার সঠিক পথেই রয়েছে। যেসব দেশ উন্নত হয়েছে তারা শুরুতে গ্রামীণ অর্থনীতিকে খুদে শিল্পায়নসহ শক্ত ভিত্তির ওপর দাঁড় করেছে এবং তারপর বস্ত্রশিল্পের বিপুল বিকাশ ঘটিয়েছে। এ দুটি মাইলস্টোন কিন্তু আমরা পার করে এসেছি। তা ছাড়া গ্রামীণ সমাজ উন্নয়নেও সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ওআরএস, টিকা, শিক্ষাসহ নানামাত্রিক উদ্ভানীমূলক উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এরপর জ্বালানি ও অবকাঠামো খাতের ব্যাপক উন্নতি হয়েছে এবং হচ্ছে। আমরা এই পথে এরই মধ্যে হাঁটতে শুরু করেছি। খুবই সাহসিকতার সঙ্গে আমাদের প্রধানমন্ত্রী বিদ্যুৎ সংকটের মোকাবেলা করে সারা দেশে জ্বালানি সরবরাহের উদ্যোগ নিয়েছেন। এখন তিনি সবুজ বিদ্যুতের উন্নয়নে ব্রতী হতে শুরু করেছেন। নেট-মিটারিং ‘রুফটফ সোলার সলিউশন’ উদ্যোগ নেওয়ার ফলে বস্ত্রশিল্পের জ্বালানি সরবরাহে সবুজায়ন দ্রুতই ঘটছে। এমনটিই কাম্য। সব শেষে উন্নত দেশ লোহা, স্টিল ও যন্ত্রপাতি উৎপাদনের কৌশল গ্রহণ করেছে। আমরাও হয়তো এদিকটায় যাচ্ছি। তবে ডিজিটাল অর্থনীতির বিকাশের যে নয়া সুযোগ এখন সৃষ্টি হয়েছে বাংলাদেশ বরং আগামী দিনে সেদিকেই বেশি বেশি বিনিয়োগ করবে। সনাতনি শিল্পায়নের পাশাপাশি নয়া শিল্পায়নের এই কৌশল গ্রহণ করতে শুরু করেছে বাংলাদেশ। এই কৌশলের সঙ্গে আমাদের প্রযুক্তিপ্রিয় তরুণ প্রজন্মকে উপযুক্ত শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ দেওয়ার যেসব উদ্যোগ বর্তমান সরকার নিচ্ছে তার ইতিবাচক প্রভাব নিশ্চয় আমাদের গতিময় অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ধারাকে টেকসই করতে সাহায্য করবে।
প্রধানমন্ত্রী যথার্থই বলেছেন, খুবই দ্রুত হারে মধ্যবিত্ত ভোক্তার প্রসার ঘটছে। প্রতিবছর ২০ লাখেরও বেশি ভোক্তা যুক্ত হচ্ছে, যাদের মাথাপিছু আয় পাঁচ হাজার ডলারেরও বেশি। এরা প্রযুক্তিপ্রিয়। ব্র্যান্ডপ্রিয়। এখন বাংলাদেশে ১০টি শহর আছে, যেখানে এমন ভোক্তার সংখ্যা তিন লাখেরও বেশি। ২০২৫ সালে এমন ৩৩টি শহর আমরা দেখতে পাব। এদের বলা হয় শৌখিন ভোক্তা। এর পেছনে কাজ করেছে দ্রুত প্রসারমাণ রপ্তানিমুখী শিল্পায়ন ও ডিজিটাইজেশন। স্বল্প ও মোটামুটি শিক্ষিত নারীর আনুষ্ঠানিক কর্মে যোগদানের ফলে শিক্ষার প্রসার ঘটছে। বাংলাদেশের আয় অর্জনকারী ও মোট জনসংখ্যার সমানুপাত ভারত ও ইন্দোনেশিয়ার চেয়েও কম। তার মানে খাবার জোগানের চাপ কম। অন্যান্য ভোগে বরং ব্যয় বাড়ন্ত। আর তাই সামগ্রিক বাজারের আকার বাড়ছে। এখন গ্রামে এয়ারকন্ডিশনার, ফ্রিজ, স্মার্টফোন, এলইডি টেলিভিশন, উন্নত স্যানিটারি পণ্য, স্যাম্পু, সাবান ও অন্যান্য লাইফস্টাইল পণ্য দেদার বিক্রি হচ্ছে। ইউনিয়ন ডিজিটাল কেন্দ্রের কল্যাণে গ্রামেও ই-কমার্স প্রসারিত হচ্ছে। জীবন যাপনের সুযোগ বাড়ে এমন পণ্য সহজেই গ্রামেও ঢুকছে। মোবাইল ব্যাংকিং ও এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের কারণে লেনদেন আধুনিক ও সহজ হয়েছে। শহর ও গ্রামের ভোগের ধরন মিলেমিশে একাকার হয়ে যাচ্ছে। আর্থিক অন্তর্ভুক্তির কারণে গ্রামে ভোগের পরিমাণ বাড়ছে। অভ্যন্তরীণ চাহিদার প্রসার ঘটছে। বিদ্যুৎ ও অবকাঠামোর উন্নয়নে বর্তমান সরকার মনোযোগী হওয়ার কারণে বাড়ন্ত ওই ভোগের জোগান দিতে বিনিয়োগ চাহিদাও বাড়ছে। বাড়ছে খুদে ও মাঝারি উদ্যোক্তার সংখ্যা। তাঁদের মধ্যে নারীর সংখ্যা ব্যাপক।
বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য অনেক সুযোগ-সুবিধাসম্পন্ন নীতিমালা বাংলাদেশ এরই মধ্যে চালু করে ফেলেছে। যেমন—বিদেশিরা বাংলাদেশে শতভাগ মালিকানায় ব্যবসা কম্পানি খুলতে পারেন, স্থানীয় উপকরণ ব্যবহারের কোনো বাধ্যবাধকতা নেই, জাতীয়করণের ভয় নেই, কর দেওয়ার পর পুরো লভ্যাংশ বিদেশে নেওয়ার সুযোগ এবং পিপিপির মাধ্যমে অবকাঠামো খাতে বিনিয়োগের বিপুল সুযোগ রয়েছে। যখন তখন ব্যবসা গুটিয়ে নিতে পারেন। পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের সুযোগ অবারিত। নির্মাণাধীন বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিদেশি বিনিয়োগের আকাশছোঁয়া সুযোগ মিলবে। তাঁরা স্থানীয় ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে পারেন। নিজের দেশের মূল কম্পানি থেকেও বিনা সুদে ঋণ আনতে পারেন। বিদেশি আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ পেতেও কোনো বাধা নেই। বিদেশি কর্মীদের বেতনের ৭৫ শতাংশ তাঁদের দেশে পাঠাতে এবং কম্পানির আয় করা লভ্যাংশ পাঠাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কোনো পূর্বানুমতি লাগে না। রয়ালটি, কারিগরি সহায়তা ফি, মার্কেটিং কমিশন, ফ্র্যাঞ্চাইজি ফি পাঠাতেও অনুরূপ সুযোগ মেলে। তা ছাড়া বিডা ও ইকোনমিক জোন কর্তৃপক্ষ থেকে বেশ কিছু সার্ভিস এক জায়গা থেকে পাওয়ার যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক ও এনবিআরসহ সব রেগুলেটরি প্রতিষ্ঠান আরো সহজে কী করে ব্যবসা-বাণিজ্য করা যায় সে বিষয়ে নানা ধরনের উদ্যোগ নিচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংক তার লেনদেন ব্যবস্থায় অটোমেশনে বৈপ্লবিক সব পরিবর্তন এনেছে। প্রতিটি ব্যাংককে বাংলাদেশ ব্যাংক বিদেশি বিনিয়োগকারীদের সহযোগিতার জন্য এফডিআই হেল্প ডেস্ক স্থাপনের নির্দেশনা দিয়েছে। শুল্ক সহজ করার ক্ষেত্রেও এনবিআর দ্রুত উদ্যোগ নিচ্ছে। সে জন্য সম্প্রতি বিশ্বব্যাংক ব্যবসায় সহজীকরণের ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে অগ্রগামী ২০টি দেশের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছে।
প্রধানমন্ত্রী দিল্লিতে বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য দেয় এসব সুযোগ-সুবিধার খানিকটা ইঙ্গিত দিয়েছেন। আমি এই নিবন্ধে সেসবের আরেকটু বিস্তারিত আলোচনা করলাম। শক্তিশালী রাজনৈতিক নেতৃত্বের সুফল দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীরা এরই মধ্যে পেতে শুরু করেছেন। আমার বিশ্বাস, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দুর্নীতি ও অনাচারবিরোধী যে অভিযান হালে চালু করেছেন, এর ঢেউ আর্থিক খাতেও গিয়ে পড়বে। যাঁরা জালিয়াতি করেন, ক্ষমতার অপব্যবহার করেন, মিথ্যা তথ্য ও সংযোগ ব্যবহার করে আর্থিক খাতে খেলাপি ঋণসহ নানা মাত্রিক বিশৃঙ্খলা ও অনাচার করে যাচ্ছেন, তাঁরাও ছাড় পাবেন বলে মনে হয় না। এ জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও সংশ্লিষ্ট সব সংস্থাকে শক্তিশালী ও ন্যায়পরায়ণ ভূমিকা পালনে সুদৃঢ় থাকতে হবে। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, পুরো দেশ এর সুফল পাবে। অর্থনীতি ভরসার পাটাতন শক্তিশালী ও প্রসারিত হবে। সৎ ও তরুণ উদ্যোক্তারা এমন শুভ উদ্যোগের সুফল নিশ্চয় পাবেন। আগামী দিনের সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার যে মহতী উদ্যোগ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সাহসিকতার সঙ্গে গ্রহণ করেছেন, তা অব্যাহত থাকবে এবং এর সুফল সবাই পাবেন তেমনটিই প্রত্যাশা করছি।
লেখক : বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও সাবেক গভর্নর, বাংলাদেশ ব্যাংক
সৌজন্যেঃ দৈনিক কালের কণ্ঠ